সুধীবৃন্দ,
নমস্কার !
“ওয়ান সান, ওয়ান ওয়ার্ল্ড, ওয়ান গ্রিড” (এক সূর্য, এক বিশ্ব, এক গ্রিড) –এর সূচনায় আপনাদের সকলকে স্বাগত জানাই। আন্তর্জাতিক সৌর জোট ও বৃটেনের গ্রীণ গ্রিড ইনিশিয়েটিভের উদ্যোগের ফলে আজ আমার দীর্ঘ দিনের “ওয়ান সান, ওয়ান ওয়ার্ল্ড, ওয়ান গ্রিড”–এর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হল। সুধীবৃন্দ, জীবাশ্ব জ্বালানীর সাহায্যে শিল্প বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল। জীবাশ্ব জ্বালানী ব্যবহার করে অনেক দেশ সমৃদ্ধ হয়েছে, কিন্তু আমাদের পৃথিবী, আমাদের পরিবেশ আরো দরিদ্র হয়েছে। জীবাশ্ব জ্বালানীর কারণে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আজ প্রযুক্তি আমাদের একটি বিকল্পের সন্ধান দিয়েছে।
সুধীবৃন্দ,
হাজার হাজার বছর আগে সূর্য উপনিষদে বলা হয়েছিল, সূর্যাদ ভবন্তি ভূতানি, সূর্যেণ পালিতাণি তু ।। অর্থাৎ সূর্যের থেকেই সব কিছুর সৃষ্টি। সব শক্তির উৎস সূর্য। সূর্যের মাধ্যমে যে শক্তি পাওয়া যায়, তার সাহায্যে সব কিছ পরিচালিত হয়। পৃথিবীতে জীবনের সৃষ্টির সময় থেকে সব জীবের জীবনচক্র এবং তাদের জীবনযাত্রা সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সঙ্গে যুক্ত। যতক্ষণ প্রকৃতির সঙ্গে এই যোগাযোগ বজায় ছিল, ততদিন আমাদের গ্রহ সুস্থ ছিল। কিন্তু আধুনিক যুগে সূর্যের তৈরি শৃঙ্খলকে অতিক্রম করে মানুষ এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। তার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়েছে এবং মানুষ তার পরিবেশকে ধ্বংস করেছে। আমরা যদি প্রকৃতির সঙ্গে জীবনের সমতা ফিরিয়ে আনতে চাই, তাহলে সূর্যের আলোকিত পথ আমাদের অনুসরণ করতে হবে। মানব জাতিকে রক্ষা করতে আরো একবার আমাদের সূর্যের সঙ্গে চলতে হবে।
সুধীবৃন্দ,
এক বছরে মানব জাতি যে পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে, সূর্য সেই পরিমাণ শক্তি পৃথিবীকে এক ঘন্টায় দেয় এবং এই বিপুল শক্তি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল। সৌর শক্তির একমাত্র সমস্যা হল এটি শুধু দিনের বেলা পাওয়া যায়, আর প্রকৃতির ওপর নির্ভর করতে হয়। “ওয়ান সান, ওয়ান ওয়ার্ল্ড, ওয়ান গ্রিড”হল এই সমস্যার সমাধান। বিশ্বজুড়ে গ্রিডের থেকে স্বচ্ছ জ্বালানি সব জায়গায়, সব সময় পাওয়া যাবে। এর ফলে জ্বালানী সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা কমবে এবং সৌর প্রকল্পের উপযোগিতা বাড়বে। এই সৃজনশীল উদ্যোগ কার্বনের নিঃসরণ কমাবে, পাশাপাশি জ্বালানী ক্ষেত্রে ব্যয় হ্রাস করবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চল ও দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতার নতুন বাতাবরণ সৃষ্টি করবে। এক সূর্য, এক বিশ্ব, এক গ্রিড এবং পরিবেশবান্ধব গ্রিড উদ্যোগের সমন্বয়ে বিশ্বজুড়ে একটি সমন্বিত বিপুল গ্রিড গড়ে তোলা যাবে বলে আমি আশাবাদী।
আমি আজ আপনাদের একটি তথ্য জানাতে চাই। আমাদের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো পৃথিবীর জন্য একটি সৌর শক্তি গণনার অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে। এই ক্যালকুলেটরটির সাহায্যে কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনো জায়গার সৌর শক্তির সম্ভবানা সম্পর্কে পরিমাপ করা যাবে। কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে সৌর প্রকল্প কতটা কার্যকর হবে, তা এই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে জানা যাবে। এর ফলে “ওয়ান সান, ওয়ান ওয়ার্ল্ড, ওয়ান গ্রিড”–এর উদ্যোগ আরো শক্তিশালী হবে।
সুধীবৃন্দ,
আরো একবার আমি আন্তর্জাতিক সৌরজোটকে অভিনন্দন জানাই, আমার বন্ধু বরিসকে তাঁর সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ। যে সব দেশের নেতৃবৃন্দ আজ এখানে উপস্থিত হয়েছেন, তাদের সকলকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই।
ধন্যবাদ !