প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ জি-২০-র ডিজিটাল অর্থনীতি সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভাষণ দিয়েছেন।
তাঁর ভাষণে প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই বেঙ্গালুরুতে বিশিষ্টজনেদের স্বাগত জানান। এই শহরকে তিনি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং শিল্পোদ্যোগের ভাবনায় সমৃদ্ধ বলে বর্ণনা করেন। ডিজিটাল অর্থনীতি নিয়ে আলোচনার জন্য বেঙ্গালুরুই সব থেকে উপযুক্ত স্থান বলে তাঁর অভিমত।
ডিজিটাল ইন্ডিয়া উদ্যোগের সূচনা হয়েছিল ২০১৫ সালে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৯ বছরে ভারতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন বাস্তবায়িত হয়েছে, তার পুরো কৃতিত্ব এই উদ্যোগের। তিনি বলেন, উদ্ভাবনের প্রতি অবিচল আস্থার মাধ্যমে ভারতে ডিজিটাল পরিবর্তন বাস্তবায়িত হয়েছে এবং এই পরিবর্তন কার্যকর করার ক্ষেত্রে দেশ অঙ্গীকারবদ্ধ। একই সঙ্গে এই উদ্যোগের সুফল থেকে যাতে কেউ বঞ্চিত না হন, সেদিকে খেলায় রাখা হয়েছে।
এই পরিবর্তন যে গতিতে রূপায়িত হয়েছে এবং এর মাধ্যমে যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তার ফলে ভারতের ৮৫ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সুবিধা হয়েছে। বিশ্বে সবথেকে সস্তায় ইন্টারনেট ডেটা পাওয়া যায় এই দেশেই। দেশ প্রযুক্তির সাহায্যে প্রশাসনে পরিবর্তন নিয়ে আসছে এবং এই প্রশাসনকে আরও দক্ষ, সমন্বিত, গতিশীল ও স্বচ্ছ করে তুলছে। এই প্রসঙ্গে তিনি অনন্য ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থাপনা - আধারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। ১৩০ কোটি দেশবাসী এই ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত। তিনি ‘জ্যাম’ ত্রিধারার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন— যেখানে জনধন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, আধার এবং মোবাইলের মধ্যে সংযোগ ঘটানো হয়েছে। এর ফলে, আর্থিক সমন্বয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউপিআই-এর মাধ্যমে এখন প্রতি মাসে এক হাজার কোটি লেনদেন হয়। সারা বিশ্বের মোট ডিজিটাল লেনদেনের ৪৫ শতাংশই ভারতে হয়। প্রধানমন্ত্রী প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে যে অপচয় হত, তা বন্ধের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের সুফলের কথা উল্লেখ করেন। এর ফলে, ৩,৩০০ কোটি মার্কিন ডলার সশ্রয় হয়েছে। কোভিড টিকাকরণের সময় কো-উইন পোর্টালের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি জানান, এই ব্যবস্থায় ২০০ কোটি টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল পদ্ধতিতে শংসাপত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতিশক্তি প্ল্যাটফর্মের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পরিকাঠামোর উন্নয়ন এবং পণ্য পরিবহণে গতি এসেছে। এর ফলে, আর্থিক সাশ্রয় হয়েছে। গভর্মেন্ট ই-মার্কেট প্লেস বা জেম ব্যবস্থাপনায় অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য সংগ্রহ করার ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এসেছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য ওপেন নেটওয়ার্কের ফলে এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বেড়েছে। "ডিজিটাল পদ্ধতিতে কর ব্যবস্থাকে পরিচালনা করায় পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ হয়েছে, যা ই-গর্ভন্যান্সের উদাহরণ।" বর্তমানে কৃত্রিম মেধার সাহায্যে অনুবাদের নতুন একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে, যার নাম ভাষিনী। এর ফলে ভারতের বিভিন্ন ভাষার মধ্যে ডিজিটাল সমন্বয় গড়ে উঠবে।
ভারতের অতুলনীয় বৈচিত্রের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশে প্রচুর ভাষা এবং উপভাষা রয়েছে। সারা বিশ্বে যতগুলি ধর্ম অনুসরণ করা হয়, সেগুলির সবকটিরই অ্নুসারীর বাস ভারতে। "প্রাচীন ঐতিহ্য থেকে আধুনিক সংস্কৃতি - ভারতে সকলের জন্যই সবকিছুই রয়েছে"। শ্রী মোদী বলেন, “বৈচিত্রের কারণে ভারত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের আদর্শ পরীক্ষাগার; ভারতে যে সমাধানসূত্রগুলি পাওয়া যায় সেগুলি পৃথিবীর যে কোন স্থানে সহজে প্রয়োগ করা যায়। ভারত কোভিড অতিমারীর সময়ে সারা বিশ্বের কল্যাণে কো-উইন প্ল্যাটফর্মটি অন্যদেশকেও ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছিল।“ ভারত অনলাইনে আন্তর্জাতিক স্তরের একটি ডিজিটাল পণ্যের ভান্ডার গড়ে তুলেছে। মূলত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলি যাতে এই ভান্ডারের সুযোগ থেকে যাতে বঞ্চিত না হয় তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
কর্মীগোষ্ঠী ডিজিটাল পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক স্তরের পরিকাঠামো সংক্রান্ত ভান্ডার গড়ে তোলায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষপ্রকাশ করেন। ভারতের ডিজিটাল সরকারি পরিকাঠামো গতিশীল, সুরক্ষিত এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সমাধানে সমন্বিত এক উদ্যোগ। ডিজিটাল দক্ষতার ক্ষেত্রে অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে তোলা এবং ভার্চুয়াল উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপনের যে সিদ্ধান্ত মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে নেওয়া হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী তাকে স্বাগত জানান। ডিজিটাল অর্থনীতি যখন কোন নিরাপত্তাজনিত সমস্যার মুখোমুখি হয়, তখন সারা বিশ্বজুড়ে তার প্রভাব পড়ে। একটি সুরক্ষিত, আস্থাশীল এবং প্রাণবন্ত ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য জি-২০ গোষ্ঠীর শীর্ষ পর্যায়ে নীতি প্রণয়নে সহমত গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শ্রী মোদী বলেন, "প্রযুক্তি বর্তমানে আমাদের সবাইকে যুক্ত করেছে। সকলের জন্য এই ব্যবস্থা সমন্বিত এবং সুস্থায়ী উন্নয়নকে নিশ্চিত করবে।" তিনি বলেন, জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি একটি সমৃদ্ধশালী ও সুরক্ষিত আন্তর্জাতিক ডিজিটাল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ভিত গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছে। আর্থিক সমন্বয় এবং উৎপাদনশীলতা সরকারিস্তরে ডিজিটাল পরিকাঠামোর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতে পারে। কৃষক এবং ছোট ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল পদ্ধতির সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়াও আন্তর্জাতিক স্তরে ডিজিটাল স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা ছাড়াও কৃত্রিম মেধার নিরাপদ প্রয়োগ করতে হবে। মানব জাতির বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য একটি প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থাপনা যাতে গড়ে তোলা যায় তার ওপর প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেন। "এক্ষেত্রে চারটি সি-কনভিকশন (দৃঢ় বিশ্বাস), কমিটমেন্ট (প্রতিশ্রুতি), কো-অডিনেশন (সমন্বয়) এবং কোলাবরেশন (যৌথ উদ্যোগ)-এর প্রয়োজন।" কর্মীগোষ্ঠীর আলোচনার মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্ত আমাদের সঠিক দিকে নিয়ে যাবে বলে আশাপ্রকাশ করে তিনি তাঁর ভাষণ শেষ করেন।