জার্মান চ্যান্সেলর হের ওলাফ শলৎস – এর আমন্ত্রণে আমি দোসরা মে জার্মানের বার্লিন সফর করবো। এরপর, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মিস মেট্টে ফ্রেডেরিকসেন – এর আমন্ত্রণে ৩রা ও ৪ঠা মে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন সফর করবো। সফরকালে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের পাশাপাশি, ভারত – নর্ডিক দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেব। দেশে ফেরার সময় আমি ফ্রান্সের প্যারিসে যাব এবং ফরাসী রাষ্ট্রপতি মিঃ ইমান্যুয়েল ম্যাক্রঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবো।
আমার বার্লিন সফরকালে চ্যান্সেলর শলৎস – এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ হবে। এর আগে তিনি যখন জার্মানীর ভাইস চ্যান্সেলর এবং অর্থমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময় আমি জি-২০ সম্মেলনে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। এই সম্মেলন গত বছর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আমরা ভারত – জার্মানী ষষ্ঠ আন্তঃসরকারি আলোচনায় যৌথভাবে পৌরোহিত্য করবো। দ্বিবার্ষিক এই আলোচনা ভারত শুধুমাত্র জার্মানীর সঙ্গেই করে থাকে। এই উপলক্ষে বেশ কয়েকজন ভারতের মন্ত্রী জার্মানী সফর করবেন এবং তাঁরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলির জার্মান মন্ত্রীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবেন।
জার্মানীতে নতুন সরকার গঠনের পর ছয় মাসের মধ্যে এই আন্তঃসরকারি আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমি মনে করি, এর মাধ্যমে আমরা মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন বিষয়কে সহজেই চিহ্নিত করতে পারবো।
২০২১ সালে ভারত ও জার্মানী কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরির ৭০ বছর উদযাপন করেছে। দুটি দেশ ২০০০ সাল থেকে কৌশলগত অংশীদার। চ্যান্সেলর শলৎস – এর সঙ্গে আমি কূটনৈতিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করবো। যে বিষয়গুলি নিয়ে আমরা উভয়েই চিন্তিত।
আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বের একটি স্তম্ভ হ’ল – ভারত ও জার্মানীর মধ্যে দীর্ঘ দিনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক। চ্যান্সেলর শলৎস এবং আমি একটি বাণিজ্য সংক্রান্ত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখবো। কোভিড পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য এই বৈঠক আমাদের শিল্প সংস্থাগুলিকে বাড়তি উৎসাহ যোগাবে।
ইউরোপের মূল ভূখন্ডে ১০ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় বংশোদ্ভূত বসবাস করেন। এদের মধ্যে অনেকেই জার্মানীতে বসবাস করেন। ইউরোপের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আর তাই, আমি এই মহাদেশ সফরকালে সেখানে বসবাসরত আমাদের ভাই-বোনেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবো।
বার্লিন থেকে আমি কোপেনহেগেন যাব। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ফ্রেডেরিকসেন - এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করব। এই বৈঠকে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা ছাড়াও ডেনমার্কের সঙ্গে যে পরিবেশ-বান্ধব কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে, তার অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হবে। আমি ভারত – ডেনমার্ক বাণিজ্য সংক্রান্ত গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেব এবং ডেনমার্কে বসবাসরত ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সঙ্গে মতবিনিময় করবো।
ডেনমার্কের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি, আমি ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সুইডেন এবং নরওয়ের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে ভারত নর্ডিক দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেব। সম্মেলনে আমরা ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ভারত – নর্ডিক প্রথম শীর্ষ সম্মেলন থেকে এ পর্যন্ত আমাদের সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করবো। সম্মেলনে কোভিড পরবর্তী সময়ে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার, জলবায়ু পরিবর্তন, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানী, সারা বিশ্ব জুড়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং সুমেরু অঞ্চলে ভারত – নর্ডিক সহযোগিতা নিয়ে মতবিনিময় করবো।
সম্মেলনের ফাঁকে আমি অন্য ৪টি নর্ডিক রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবো এবং ভারতের সঙ্গে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পর্যালোচনা করবো।
স্থিতিশীল, পুনর্নীকরণযোগ্য জ্বালানী, ডিজিটাইজেশন এবং উদ্ভাবনের বিষয়ে নর্ডিক রাষ্ট্রগুলি ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এই সফর নর্ডিক অঞ্চলের সঙ্গে আমাদের বহুপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরও প্রসারিত করতে সাহায্য করবে।
দেশে ফেরার সময় আমি প্যারিসে আমার বন্ধু রাষ্ট্রপতি ম্যাক্রঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবো। রাষ্ট্রপতি ম্যাক্রঁ অতি সম্প্রতি পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনের ফল প্রকাশের ১০ দিনের মধ্যে আমার সফর তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানাবার সুযোগ করে দেবে। একই সঙ্গে, দুটি দেশের সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্বকে এই সফর আরও মজবুত করবে। এর মধ্য দিয়ে ভারত – ফ্রান্স কৌশলগত অংশীদারিত্বের পরবর্তী পর্যায় নির্ধারিত হবে।
রাষ্ট্রপতি ম্যাক্রঁ এবং আমি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ের পর্যালোচনা করবো এবং উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, উভয় দেশ যেহেতু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী বজায় রেখে চলে, তাই আমরা দুটি দেশ একে-অন্যের সঙ্গে সহযোগিতা করবো।
আমি এমন একটি সময় ইউরোপ সফর করছি, যখন এই অঞ্চল বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন। সফরকালে আমাদের ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতার ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করতে আমি উদ্যোগী হব। কারণ, শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনে ভারতের পথ চলার ক্ষেত্রে এই দেশগুলি গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী।