প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী, ১১ই জানুয়ারী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রশাসকদের সঙ্গে কোভিড – ১৯ টিকাকরণের প্রস্তুতি সংক্রান্ত পর্যালোচনা বৈঠকে পৌরহিত্য করেছেন।
ভাইরাসের বিরুদ্ধে সমন্বিত লড়াইঃ-
প্রধানমন্ত্রী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু বার্ষিকীতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যগুলির সব সময়ে সমন্বয় ও যোগাযোগ রেখে চলা এবং সময় মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তিনি প্রশংসা করেছেন। এর ফলে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ কম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই মহামারীর সূচনায় মানুষের মধ্যে যে ভয় ও আতঙ্ক ছিল, তা এখন কমে গেছে। এর প্রতিফলন হিসেবে অর্থনৈতিক কাজকর্মে ইতিবাচক প্রভাব নজরে আসছে। রাজ্য সরকারগুলি এই যুদ্ধে যে ভূমিকা পালন করেছে, তিনি তারও প্রশংসা করেছেন।
বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ কর্মসূচীঃ-
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১৬ই জানুয়ারী থেকে বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ অভিযান শুরু হবার মধ্য দিয়ে দেশ, এই লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে পৌঁছাবে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, জরুরী পরিস্থিতিতে যে দুটি টিকা ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া গেছে, সেগুলি ভারতে তৈরি হওয়ায়টি গর্বের বিষয়। পৃথিবীর অন্যান্য টিকার সঙ্গে তুলনা করলে, এই দুটি টিকার আর্থিক মূল্য যথেষ্ট কম। বিদেশী টিকার উপর নির্ভর করলে, ভারতকে যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। প্রধানমন্ত্রী, এই প্রসঙ্গে টিকাকরণের বিষয়ে ভারতের বিপুল অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এর ফলে টিকাকরণের এই উদ্যোগটিতে যথেষ্ট সুবিধা হবে। রাজ্যগুলির সঙ্গে পরামর্শের পর বিশেষজ্ঞ ও বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে আলাপ – আলোচনায় কাদের প্রথম টিকা দেওয়া হবে, সেবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথমে সরকারী এবং বেসরকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া হবে। তাঁদের সঙ্গে সাফাই কর্মচারী, অন্যান্য সামনের সারিতে থাকা কর্মীরা, পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনী, হোমগার্ড, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা স্বেচ্ছাসেবক সহ অসামরিক প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের জওয়ানরা এবং নজরদারীর সঙ্গে জড়িত রাজস্ব আধিকারিকরাও এই টিকা পাবেন। এধরণের মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। প্রথম পর্যায়ে যে ৩ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে, তার জন্য কোনো অর্থ রাজ্য সরকারগুলিকে বহন করতে হবে না। কেন্দ্রই এই খরচ বহন করবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন।
দ্বিতীয় পর্বে যাদের বয়স ৫০ এর উপর এবং ৫০ এর কম যাঁরা নানা জটিল অসুখে ভুগছেন অথবা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তাদের টিকা দেওয়া হবে। সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সঙ্গে টিকাকরণের প্রস্তুতি, পরিকাঠামো ও লজিস্টিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশজুড়ে টিকাকরণের মহড়ার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের সর্বজনীন টিকাকরণের পূর্বের অভিজ্ঞতা সহ কোভিডের জন্য সাধারণ পরিচালন পদ্ধতি এবং নতুন নতুন প্রস্তুতির বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশজুড়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা এবং সর্বজনীন টিকাকরণের অভিজ্ঞতা এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। নির্বাচনে বুথ পর্যায়ে কৌশলকে একাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
কো-উইনঃ-
টিকাকরণের এই প্রক্রিয়ায় কাদের টিকা দেওয়া হবে এবং কাদের টিকা নেওয়া প্রয়োজন, তা চিহ্নিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। এর জন্য কো-উইন ডিজিটাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। আধারের সহায়তায় সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করা হবে এবং দ্বিতীয় ডোজটি যাতে যথাযথ সময়ে দেওয়া হয়, সেটিও নিশ্চিত করা হবে। কো – উইনে টিকাকরণ সংক্রান্ত সমস্ত প্রকৃত তথ্য আপলোড করার বিষয়টির গুরুত্বের কথা প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন।
টিকার প্রথম ডোজটি দেওয়ার পর কো-উইন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে টিকা সংক্রান্ত শংসাপত্র দেবে। এই শংসাপত্রের মাধ্যমে দ্বিতীয় ডোজটি কবে দেওয়া হবে, সেটি মনে করানো হবে। চূড়ান্ত পর্বেও একটি শংসাপত্র দেওয়া হবে।
আগামী কয়েক মাসে ৩০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনাঃ-
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারতে টিকাকরণের উদ্যোগ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, এটিকে অনুসরণ করবে। তিনি বলেছেন, গত ৩ – ৪ সপ্তাহ ধরে প্রায় ৫০টি দেশে কোভিড – ১৯ এর টিকাকরণ প্রক্রিয়া চলছে। এপর্যন্ত মাত্র ২.৫ কোটি মানুষ এই টিকা পেয়েছেন। আগামী কয়েক মাসে ৩০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা ভারত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো জানিয়েছেন, টিকাকরণের সময় যদি কেউ অস্বস্তি অনুভব করেন, তাহলে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সর্বজনীন টিকাকরণ কর্মসূচীতে এই ব্যবস্থাপনা রয়েছে। এর মাধ্যমে টিকাকরণ কর্মসূচীকে আরো দৃঢ় করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী, কোভিড সংক্রান্ত সমস্ত বিধি মেনে চলার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। যারা টিকা নেবেন, তাঁদেরও ভাইরাস সংক্রমণ আটকাতে এই নিয়মগুলি মেনে চলতে হবে। তিনি বলেছেন, টিকাকরণের বিষয়ে যে কোনো গুজব আটকাতে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর এর জন্য ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন, এনওয়াইকে, এনএসএস, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ইত্যাদি সংগঠনের সাহায্য নিতে হবে।
বার্ড ফ্লু চ্যালেঞ্জের মোকাবিলাঃ-
কেরালা, রাজস্থান, হিমাচলপ্রদেশ, গুজরাট, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি ও মহারাষ্ট্র – এই ৯টি রাজ্যে বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করেছেন। এই সমস্যার মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় মৎস ও প্রাণী পালন এবং দুগ্ধশিল্প মন্ত্রক, একটি পরিকল্পনা করেছে। তিনি জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে জেলাশাসকরা মূল ভূমিকা পালন করবেন। যে সব রাজ্যগুলিতে বার্ড ফ্লুর সমস্যা দেখা দেয় নি, সেখানে সব সময় নজরদারী চালাতে হবে। তিনি আশা করেন, বন, স্বাস্থ্য ও পশুপালন দপ্তরের মধ্যে যথাযথ সমন্বয়ের ফলে আমরা খুব শীঘ্রই এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পারবো।
টিকাকরণের প্রস্তুতি এবং মূল্যায়নঃ-
প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীদের নেতৃত্বে বিশ্বে অন্যান্য দেশের থেকে ভারত, অনেক ভালো কোভিড সমস্যার মোকাবিলা করতে পেরেছে বলে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। রাজ্যগুলি এপর্যন্ত যে সমন্বয়ের উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি টিকাকরণ কর্মসূচী পর্যন্ত বজায় রাখতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীরা টিকার প্রস্তুতির বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা টিকা সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং বেশ কিছু বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যেগুলির বিষয়ে বৈঠকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
টিকাকরণের কর্মসূচী সম্পর্কে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জনসাধারণের অংশগ্রহণ অর্থাৎ জনভাগিদারীর উপর এই টিকাকরণের প্রক্রিয়াটি চলবে। বর্তমান স্বাস্থ্য পরিষেবার কোনো বিঘ্ন না ঘটিয়ে সুষ্ঠুভাবে এটি বাস্তবায়িত করা হবে। টিকাকরণের লজিস্টিকের বিষয়েও তিনি সার্বিক কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন।