প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আজ এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে করোনা সংক্রমণ সম্প্রতি যেখানে বেশি হয়েছে সে রকম ১১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীরা অংশগ্রহণ করেন।
দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর শহর সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এই ভাইরাস যথেষ্টভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধি করেছে। প্রধানমন্ত্রী মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একজোট হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। মহামারীর প্রথম ঢেউকে প্রতিহত করার জন্য ভারতের সাফল্যের সবথেকে বড় ভিত্তি ছিল আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ও কৌশল। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, বর্তমান সংকট মেটাতে একইভাবে আমাদের সেই একই ভাবে উদ্যোগী হতে হবে।
সমস্ত রাজ্যগুলিকে এই লড়াইয়ে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রক প্রতিটি রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে, পরিস্থিতির ওপর কড়াভাবে নজর রাখছে এবং বিভিন্ন সময়ে রাজ্যগুলিকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
অক্সিজেন সরবরাহ প্রসঙ্গে রাজ্যগুলির উত্থাপিত প্রসঙ্গ প্রধানমন্ত্রী শুনেছেন। তিনি বলেছেন, অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি করার জন্য নিরবচ্ছিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর এবং মন্ত্রক একযোগে কাজ করছে। শিল্পের জন্য ব্যবহৃত অক্সিজেন বর্তমান সঙ্কটের চাহিদা মেটানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
শ্রী মোদী সমস্ত রাজ্যকে অনুরোধ জানিয়েছেন, তারা যাতে ওষুধ এবং অক্সিজেনের চাহিদা পূরণে সকলকে একযোগে সমন্বিতভাবে কাজ করেন। অক্সিজেন এবং ওষুধপত্রের মজুতদারি ও কালোবাজারি রুখতে রাজ্যগুলিকে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্য কোন রাজ্যের জন্য অক্সিজেন পরিবহণের সময় ট্যাঙ্কারকে যাতে আটকানো না হয় প্রধানমন্ত্রী সেটি নিশ্চিত করতে প্রতিটি রাজ্যকে অনুরোধ করেছেন। রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেন পরিবহণের জন্য তিনি রাজ্যগুলিকে উচ্চপর্যায়ের সমন্বয় কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। এই কমিটির কাজ হবে কেন্দ্র থেকে নির্ধারিত অক্সিজেন রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে যত দ্রুত সম্ভব পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীদের জানিয়েছেন গতকাল তিনি অক্সিজেন সরবরাহের ওপর একটি বৈঠকের পৌরহিত্য করেছেন এবং আজ অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানোর সমস্ত পন্থা নিয়ে আলোচনা করতে আর একটি বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অক্সিজেনের ট্যাঙ্কারের পরিবহণের সময় হ্রাস করতে কেন্দ্র সম্ভাব্য সব দিকগুলি বিবেচনা করছে। এই কারণে রেল অক্সিজেন এক্সপ্রেসের সূচনা করেছে। ফাঁকা অক্সিজেনের ট্যাঙ্কারগুলি বিমান বাহিনী নিয়ে যাচ্ছে, যাতে পরিবহণের সময় হ্রাস পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সম্পদের মানোন্নয়নের সঙ্গে আমাদের নমুনা পরীক্ষার ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেছেন, মানুষ যাতে নমুনা পরীক্ষার সুযোগ খুব সহজেই পায় তার জন্য বিপুল পরিমাণে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
শ্রী মোদী জোর দিয়ে বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে আমাদের টিকাকরণ অভিযান যাতে শ্লথ না হয়ে পরে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেছেন, ভারত বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এ পর্যন্ত কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে ১৩ কোটির বেশি টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে। ৪৫ বছরের ওপরে সমস্ত নাগরিক, স্বাস্থ্যকর্মী, সামনের সারিতে থাকা করোনা যোদ্ধাদের কেন্দ্র বিনামূল্যে টিকা দিচ্ছে। পয়লা মে থেকে ১৮ বছরের ঊর্দ্ধে সব নাগরিক টিকা পাবেন বলে শ্রী মোদী জানিয়েছেন। বেশি সংখ্যক মানুষ যাতে টিকা নিতে পারেন সরকারকে তার জন্য বিশেষভাবে উদ্যোগী হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংক্রমিতদের চিকিৎসা করা জন্য সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালের নিরাপত্তা বজায় রাখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অক্সিজেন লিক ও হাসপাতালে আগুন লাগার ঘটনায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মীদের সুরক্ষাবিধি সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
শ্রী মোদী প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন মানুষ যাতে আতঙ্কিত হয়ে কেনাকাটা না করেন সে বিষয়ে তাঁদের সচেতন করে তুলতে হবে। তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে দেশজুড়ে মহামারীর এই দ্বিতীয় ঢেউকে আমরা প্রতিহত করতে পারবো।
এর আগে নীতি আয়োগের সদস্য ডঃ ভি কে পাল সংক্রমণের নতুন ঢেউকে প্রতিহত করার জন্য কি কি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন। চিকিৎসা পরিষেবার সুযোগ বৃদ্ধি এবং রোগীদের চিকিৎসার জন্য পরিকল্পনার বিষয়েও তিনি জানান। এছাড়া চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ, চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা, কন্টেনমেন্ট, টিকাকরণ এবং এলাকাগতভাবে মানুষকে এই প্রক্তিয়ায় যুক্ত করার বিষয়েও ডঃ পাল বিশদে জানিয়েছেন।
আলোচনার সময় বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা বর্তমান সংক্রমণের ঢেউ আটকাতে কি কি ব্যবস্থা নিয়েছেন সে বিষয়ে তাঁদের উদ্যোগের কথা জানান। তাঁরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ এবং নীতি আয়োগের পরিকল্পনার ফলে তাঁদের পক্ষে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সুবিধা হয়েছে।