প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে আত্মনির্ভর ভারত গড়ার বিষয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তব্য রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামে উৎপাদন বাড়িয়ে এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বেসরকারী সংস্থাগুলির অংশগ্রহণ বাড়িয়ে এই লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং এবং তাঁর সহযোগীরা প্রতিরক্ষা সরঞ্জামে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার জন্য নিরলসভাবে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী তার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, আজকের এই আলোচনা সভা লক্ষ্য অর্জনে নিশ্চিতভাবে পথ দেখাবে।
ভারত যখন স্বাধীনতা লাভ করেছিল, সেই সময়ই প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় পরিবেশ গড়ে তুলতে যথেষ্ট সুযোগ ছিল বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়ে যথাযথ কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পরিস্থিতি এখন বদলাচ্ছে, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কার আনার জন্য নিয়মিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়ার সরলীকরণ, বিভিন্ন সংস্থার এই ক্ষেত্রে যোগদান নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা এবং রপ্তানী বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আধুনিক ও আত্মনির্ভর ভারত গড়ার জন্য প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আস্থার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ পদ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা এখন বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আত্মপ্রত্যয়ী ভারতের প্রতিফলন ঘটেছে। তিন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় এবং সহযোগিতা চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফের মাধ্যমে আরো ভালোভাবে হচ্ছে। এর ফলে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একইভাবে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ৭৪ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যদিয়ে নতুন ভারতের আত্ম প্রত্যয় বৃদ্ধির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।
শ্রী মোদী বলেছেন, দেশে উৎপাদিত সামগ্রী কেনার জন্য ১০১ রকমের পণ্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এর ফলে ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের অগ্রগতি হবে। তিনি আরো বলেছেন, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সংগ্রহের ক্ষেত্রে এবং দেশে উৎপাদিত সামগ্রীর পরীক্ষা – নিরীক্ষার জন্য সরকার, বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিগুলি বীমাকরণের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে তাতে কর্মচারী এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র – দুপক্ষেরই লাভ হবে।
অত্যাধুনিক সরঞ্জামে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবনের উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ডিআরডিওর পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থাগুলি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকেও গবেষণা ও উদ্ভাবনে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী, বিদেশী সংস্থাগুলির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্ব দিয়েছেন।
সংশোধন, সংস্কার এবং রূপান্তর – এই মন্ত্রে সরকার, কাজ করে চলেছে। স্বত্বাধিকার, কর ব্যবস্থা, ঋণ খেলাপি এবং মহাকাশ এবং আনবিক শক্তির ক্ষেত্রে বেশ কিছু সংস্কার হাতে নেওয়া হয়েছে।
পরিকাঠামোর উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তরপ্রদেশ এবং তামিলনাডুতে দুটি প্রতিরক্ষা করিডর তৈরি করা হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ এবং তামিলনাডু সরকারের সঙ্গে অত্যাধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। আগামী ৫ বছরে এক্ষেত্রে ২০,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পোদ্যোগ এবং নতুন উদ্যোগের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের উৎসাহিত করতে আইডেস্ক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখান থেকেও ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে। ৫০টির বেশি নতুন উদ্যোগী সংস্থা উন্নত প্রযুক্তি এবং তার সাহায্যে সেনাবাহিনীতে ব্যবহারের জন্য উৎপাদিত পণ্যের কাজ শুরু হয়েছে।
ভারতকে ক্ষমতাশালী করে তুলতে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিকে আরো সহনশীল হয়ে উঠতে হবে। আরো স্থায়ী ব্যবস্থা এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি বজায় রাখতে নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করতে হবে। প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার এই ধারণার সাহায্যে ভারত, একদিন তার বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রগুলিকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহের বিশ্বাসযোগ্য অংশীদার হয়ে উঠবে। এর ফলে কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং সামগ্রিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারত যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন।
প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন এবং তা বিদেশে রপ্তানীর নীতি তৈরি করা হয়েছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় নীতি গড়তে বিভিন্ন পরামর্শ প্রধানমন্ত্রী, জনসাধারণের কাছে আহ্বান করেছেন।
তাঁর বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের সমস্যা আমরাই মেটাবো,আজ আমাদের মধ্যে এই মানসিকতাই তৈরি হয়েছে।