কাকতালীয়ভাবে আজ যেদিন আমরা করোনা সঙ্কট নিয়ে কথা বলছি, সেদিনটি দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবার ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। দু'বছর আগে আজকের দিনেই আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার সূত্রপাত হয়েছিল।
মাত্র দু'বছরের মধ্যেই এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১ কোটি ২৫ লক্ষেরও বেশি দরিদ্র রোগীর বিনামূল্যে চিকিৎসা সম্ভব হয়েছে। আজ আমি এই কর্মসূচির মাধ্যমে, আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে গরীবদের চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানকারী সমস্ত চিকিৎসক ও চিকিৎসা-কর্মীদের বিশেষভাবে প্রশংসা করছি।
বন্ধুগণ,
আমাদের আজকের আলোচনার সময় এমন অনেক বিষয় সামনে এসেছে যেগুলির মাধ্যমে ভবিষ্যতের রণনীতি রচনার পথ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
এটা ঠিক যে ভারতে সংক্রমণের ক্ষেত্রে লাগাতার বৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু আজ আমরা প্রতিদিন ১০ লক্ষেরও বেশি পরীক্ষাও করছি, আর সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের সংখ্যাও দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অনেক রাজ্যের ভেতরে স্থানীয় স্তরে বেশ কিছু উন্নত ধরনের চিকিৎসা পরিষেবা ও প্রতিরোধ দেখা যাচ্ছে। এই ধরনের অভিজ্ঞতাগুলিকে আমাদের সকল কোভিড যোদ্ধাদের অবহিত করে তাঁদেরকে আরও উৎসাহিত করতে হবে।
বন্ধুগণ,
বিগত মাসগুলিতে করোনা চিকিৎসা সংক্রান্ত যে পরিষেবাগুলির আমরা বিকাশ ঘটিয়েছি সেগুলি আমাদের করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উপযোগী প্রমাণিত হয়েছে। একদিকে যেখানে আমাদের করোনা সংক্রান্ত পরিকাঠামো আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে, তেমনই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে যথাযথ 'ট্র্যাকিং' ও 'ট্রেসিং'-এর নেটওয়ার্ক আরও উন্নত করতে উন্নততর প্রশিক্ষণ সুনিশ্চিত করতে হবে।
আজই সুনির্দিষ্ট করোনা প্রতিরোধ পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফান্ড বা এসডিআরএফ-এর ব্যবহার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বেশ কিছু রাজ্য এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিল। এখন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, এসডিআরএফ-এর ব্যবহারের সীমাকে ৩৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করে দেওয়া যেতে পারে। এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যগুলি করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও বেশি অর্থ পেতে পারবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমি আপনাদের জানাতে চাই। এই যে এক-দু'দিনের স্থানীয় লকডাউন হয়, সেগুলি করোনা প্রতিরোধে কতটা কার্যকরী হয় তা প্রত্যেক রাজ্যকে স্থানীয় স্তরে পর্যালোচনা করতে হবে। এমন তো নয়, যে এর ফলে আপনাদের রাজ্যের অর্থনৈতিক গতিবিধি স্বাভাবিক হতে সমস্যা হচ্ছে?
আমার অনুরোধ, আপনারা সবাই এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে ভাবুন।
বন্ধুগণ,
কার্যকরী 'টেস্টিং', ‘ট্রেসিং', ‘ট্রিটমেন্ট', ‘সার্ভেইলেন্স' এবং স্পষ্ট প্রতিবেদন – এই বিষয়গুলিতে আপনাদের আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
অধিকাংশ সংক্রমণেই যেহেতু কোনরকম পূর্ব লক্ষণ নেই, সেজন্য কার্যকরী প্রতিবেদন অত্যন্ত জরুরি কারণ, এক্ষেত্রে সাধারণতঃ নানারকম গুজব রটতে থাকে। সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করে যে এই টেস্টিং প্রক্রিয়াতে কোনও ভুল নেই তো? শুধু তাই নয়, অনেকবার কেউ কেউ সংক্রমণের গুরুত্বকে ছোট করে দেখার মতো ভুলও করতে শুরু করেছেন। সমস্ত পর্যালোচনা অনুযায়ী, এই সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্কের ভূমিকা অত্যন্ত কার্যকরী। মাস্ক পড়ার অভ্যাস চালু করা অত্যন্ত কঠিন, কিন্তু একে দৈনন্দিন জীবনের একটি অনিবার্য নিরাপত্তার উপায় হিসেবে গ্রহণ করাতে পারলে আমরা অবশ্যই সার্থক পরিণাম পাব।
বন্ধুগণ,
আমাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে যে তৃতীয় বিষয়টি উঠে এসেছে তা হল একটি রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যের মধ্যে যাতায়াত, যানবাহন পরিষেবা ও মাল পরিবহণ থেমে থাকার ফলে সাধারণ নাগরিকদের অহেতুক সমস্যা হচ্ছে। এর ফলে জনজীবন প্রভাবিত হচ্ছে এবং মানুষের জীবন-জীবিকাতেও প্রভাব পড়ছে।
যেমন গত কয়েক দিন ধরে বেশ কিছু রাজ্যে অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে সমস্যার কথা জানতে পেরেছি। জীবন রক্ষক অক্সিজেনের অবাধ সরবরাহ সুনিশ্চিত করতে সবরকম প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
ভারত এই কঠিন সময়েও গোটা বিশ্বে জীবনরক্ষাকারী ওষুধ সরবরাহ সুনিশ্চিত করেছে। এক্ষেত্রে একটি রাজ্যের সঙ্গে অন্য আরেকটি রাজ্যের ওষুধপত্র লেনদেন ও সরবরাহ ব্যবস্থা যাতে মসৃণ হয় সেটা আমাদের সবাইকে মিলেমিশে সুনিশ্চিত করতে হবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশ করোনার সময়ে সংযম, সংবেদনশীলতা, সংবাদ এবং সহযোগিতার এই মেলবন্ধনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমাদের ভবিষ্যতেও এই মেলবন্ধনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রেক্ষিতে এখন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
আমাদের মিলিত প্রয়াস অবশ্যই সফল হবে, এই কামনা নিয়ে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।