প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রায় যোগ দেন। শ্রী মোদী সেখানে নির্মিত স্টলগুলি ঘুরে দেখেন। বিকশিত ভারত সংকল্প ভ্যান পরিদর্শন করেন এবং এই উপলক্ষে আয়োজিত ক্যুইজের অনুষ্ঠানটিও দেখেন। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মত বিনিময় করেন এবং এই ভাষণও দেন। অনুষ্ঠানে বিকশিত ভারত সংকল্প শপথ পাঠ করানো হয়।
সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশজুড়ে বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রায় সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের সাংসদদের অংশগ্রহণের জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, বারাণসীর সাংসদ হিসেবে এবং শহরের একজন সেবক হিসেবে তিনি বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রায় যোগ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পকে সময় বেঁধে নির্দিষ্ট সুবিধাভোগীদের কাছে নির্বিঘ্নে পৌঁছতে বলেন। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, “সুবিধাভোগীদের সরকারের পিছনে দৌঁড়নো দরকার নেই, বরং সরকারকে পৌঁছতে হবে সুবিধাভোগীদের কাছে”। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ৪ কোটি পরিবারকে পাকা বাড়ি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে শ্রী মোদী বলেন, যেকোনো প্রকল্পই সম্পূর্ণ হওয়া দরকার এবং নজর রাখতে হবে যারা সেই সুবিধা থেকে বাদ পড়েছেন তাদের কাছেও যাতে পৌঁছনো যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রার লক্ষ্য হল সুবিধাভোগীদের অভিজ্ঞতাকে নথিভুক্ত করা, সেই সঙ্গে যাঁরা এপর্যন্ত বাদ পড়েছেন তাঁদের বিষয়টিও নজরে রাখা। “বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা আমার কাছে একটি পরীক্ষা স্বরূপ ” জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জনসাধারনের কাছ থেকে জানতে চান কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করা গেছে কি না। ইতিপূর্বে সুবিধাভোগীদের সঙ্গে তাঁর মত বিনিময়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত এবং আয়ুষ্মান কার্ডের মতো প্রকল্পের সুবিধার কথা তুলে ধরেন। সরকারি প্রকল্পগুলি রূপায়ণে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের সদর্থক কাজের উপর আলোকপাত করে শ্রী মোদী বলেন, প্রকল্পের বাস্তবায়ন তাদেরকে নতুন ভাবে উদ্যমী করে তোলে এবং তারা আত্মতৃপ্তি পান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সরকারি প্রকল্পের বাস্তবায়ন সরকারি কর্মীদের মনে আত্মতৃপ্তির নতুন দিশা দেয় এবং বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রার মধ্য দিয়েই তা সম্ভব”।
প্রকল্প সমূহের রূপায়নে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পগুলির সফল বাস্তবায়নের মধ্যেই নিহিত রয়েছে রূপান্তরমূলক শক্তি। তিনি বলেন, প্রকল্পগুলি রূপায়নে রান্নাঘর ধোঁয়ার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছে, পাকা বাড়ি তৈরি হচ্ছে তা জানতে পারায় এক নতুন আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয়, দরিদ্র মানুষেরা ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন। এসবের মধ্য দিয়ে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস এক পরম আত্মতৃপ্তির কারণ হয়ে ওঠে।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী বলেন, সফল প্রকল্পসমূহ নাগরিকদের মধ্যে অংশীদারিত্বের বোধ জাগ্রত করে। কোনো ব্যক্তি ঋণের সুযোগ বা অন্যান্য সুবিধা পেলে তখন তাঁর মনে হয় দেশটা তার, রেল পথ তার, অফিস তার, হাসপাতাল তার। এই অংশীদারিত্বের মনোভাব জাগ্রত হলে দেশের জন্য কোনো কিছু মনোভাবও তৈরি হয়। শ্রী মোদী বলেন, এর মধ্য দিয়ে আগামী প্রজন্মের জন্য উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ার এক আস্থাবোধ মানুষের মধ্যে জন্ম নেয়।
প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতাপূর্ব সময়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, সেই সময়ে দেশে যাবতীয় কাজেরই অভিন্ন লক্ষ্য ছিল ভারতের স্বাধীনতা অর্জন। তিনি বলেন, “প্রত্যেক নাগরিক দেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে কাজ করতেন”। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে এমন এক ঐক্যের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল যাতে ব্রিটিশরা ভারত ছাড়তে বাধ্য হন। প্রত্যেক নাগরিককে যুক্ত করে বিকশিত ভারতের সংকল্প পূরণের লক্ষ্যে দেশকে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিকশিত ভারতের বীজ যখন একবার বপন করা হয়েছে, আগামী ২৫ বছরে তার ফল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভোগ করতে পারবে”। তিনি বলেন, “প্রত্যেক নাগরিককে অনুরূপ মনোভাবাপন্ন হয়েই আজ সংকল্প নিতে হবে”।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা একটি জাতীয় প্রয়াস এবং একটি পবিত্র কাজ, তা কোনো একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নয়। জনসাধারনকে সরাসরি এর সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কেউ যদি এব্যাপারটি সম্বন্ধে খবরের কাগজ পড়েই সন্তুষ্ট থাকেন, তাহলে এর গুরুত্ব অনুধাবনে তিনি পিছিয়ে থাকবেন”। এই যাত্রার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগ দিতে পেরে তিনি নিজেও আত্মসন্তুষ্ট বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
প্রধানমন্ত্রী সুবিধাভোগী এবং নাগরিকদের এই যাত্রা নিয়ে সক্রিয়ভাবে প্রচারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “সদর্থক কৃতকর্ম, সদর্থক পরিবেশ গড়ে তোলা”। বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রাকে এক বিরাট সংকল্পের আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী জোরের সঙ্গে বলেন, ‘সব কা প্রয়াস’-এর মধ্য দিয়েই তার বাস্তবায়ন ঘটবে। তিনি ভাষণ শেষে বলেন, বিকশিত ভারত আর্থিকভাবে সক্ষম হয়ে নাগরিকদের যাবতীয় সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানে সক্ষম হয়ে উঠবে। “বিকশিত ভারতের সংকল্পের মধ্যেই নিহিত রয়েছে যাবতীয় সমস্যা কাটিয়ে ওঠার পথ। আমি কাশীর মানুষদের নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি, আপনাদের প্রতিনিধি হিসেবে এবং যে জাতীয় দায়িত্ব আপনারা আমার উপর অর্পণ করেছেন তা পূর্ণ করতে আমি চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখবো না”। এই বলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণ শেষ করেন।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সমাবেশস্থলে উপস্থিত ছিলেন।