ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে মারাঠী স্বীকৃতি লাভ করার মুহূর্তটি প্রত্যেকের কাছে গর্বের: প্রধানমন্ত্রী
মারাঠীর পাশাপাশি বাংলা, পালি, প্রাকৃত এবং অসমিয়া ভাষা ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পেয়েছে, এই উপলক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ভাষাগুলির সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে আমি অভিনন্দন জানাই: প্রধানমন্ত্রী
মারাঠী ভাষার ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ: প্রধানমন্ত্রী
মহারাষ্ট্রের অনেক বিপ্লবী নেতা ও চিন্তাবিদ মারাঠী ভাষার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ করেছেন: প্রধানমন্ত্রী
ভাষা শুধুমাত্র যোগাযোগেরই মাধ্যম নয়, ভাষা সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাহিত্যের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে অভিজাত মারাঠী ভাষা অনুষ্ঠানে   জানান, কেন্দ্রীয় সরকার মারাঠীকে সরকারিভাবে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। এই মুহূর্তের তাৎপর্য সম্পর্কে তিনি বলেন, মারাঠী ভাষার ইতিহাসে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মারাঠীভাষী জনসাধারণের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করার এই প্রক্রিয়ায় তিনিও সামিল ছিলেন বলে আনন্দ প্রকাশ করেন। এর মাধ্যমে মহারাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণ হ’ল। এই উপলক্ষ্যে তিনি রাজ্যের জনগণকে অভিনন্দন জানান। শ্রী মোদী ঘোষণা করেন যে, বাংলা, পালি, প্রাকৃত ও অসমিয়াও ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। এই উপলক্ষ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট ভাষাগুলির সঙ্গে যুক্ত সকলকে অভিনন্দন জানান। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মারাঠী ভাষার ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই ভাষা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষের মধ্যে জ্ঞানের বিস্তার ঘটিয়েছে। মারাঠী ভাষায় সন্ত জ্ঞানেশ্বর বেদান্তের চর্চা করেছেন। জ্ঞানেশ্বরী গীতার মাধ্যমে ভারতের আধ্যাত্মিক চেতনাকে জাগ্রত করেছেন। সন্ত নামদেব মারাঠীর মাধ্যমে আধ্যাত্ম চেতনার পথ দেখিয়েছেন। সন্ত তুকারাম মারাঠী ভাষায় ধর্মীয় চেতনাকে জাগ্রত করেছেন। সন্ত চোখামেলা সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনকে শক্তিশালী করেছেন। ‘আমি মহারাষ্ট্রের মহান সাধু-সন্ত এবং মারাঠী ভাষাকে সশ্রদ্ধচিত্তে প্রণাম জানাই’। মারাঠীর ধ্রুপদী ভাষার মার্যাদা পাবার অর্থ – দেশ ছত্রপতি শিবাজী মহারাজকে তাঁর ৩৫০তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। 
স্বাধীনতা আন্দোলনে মারাঠী ভাষার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, মহারাষ্টের বিপ্লবী নেতা ও চিন্তাবিদরা এই ভাষাকে ব্যবহার করে মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও ঐক্যবোধ গড়ে তুলেছে। লোকমান্য তিলক তাঁর মারাঠী সংবাদপত্র কেশরীর মাধ্যমে বিদেশি শাসনের ভিতকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। মারাঠী ভাষায় তাঁর ভাষণ প্রতিটি ভারতবাসীর হৃদয়ে স্বরাজের চেতনাকে জাগ্রত করেছিল। ন্যায় বিচার ও সাম্যের জন্য লড়াইয়ে মারাঠী ভাষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গোপাল গণেশ আগরকরের মতো বিশিষ্ট জনেরা এই ভাষার সাহায্যে সমাজ সংস্কারে ব্রতী হয়েছেন। শ্রী আগরকরের সূধাকর সংবাদপত্র ঘরে ঘরে সমাজ সংস্কারের ভাবনাকে জাগ্রত করেছে। আরেক বিশিষ্ট মারাঠী ব্যক্তিত্ব গোপালকৃষ্ণ গোখলে স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মারাঠী ভাষা ভারতের অমূল্য ঐতিহ্যকে সংরক্ষণে সহায়তা করেছে। আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রসারে এই ভাষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। স্বরাজ, স্বদেশী ভাবনা, মাতৃভাষা এবং সংস্কৃতির প্রতি গর্ববোধ করার ক্ষেত্রে এই ভাষার অবদান অপরিসীম। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় গণেশ উৎসব ও শিব জয়ন্তী উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বীর সাভারকরের বৈপ্লবিক চিন্তাধারা, বাবাসাহেব আম্বেদকরের নেতৃত্বে সাম্যবাদ আন্দোলন, মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য মহর্ষী কার্ভের নেতৃত্বে আন্দোলন ছাড়াও মহারাষ্ট্রের শিল্পায়ন ও কৃষি কাজে সংস্কারে মারাঠী ভাষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য মারাঠী ভাষার কারণে আরও সমৃদ্ধ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভাষা শুধুমাত্র যোগাযোগেরই মাধ্যম নয়, ভাষা সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাহিত্যের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত”। শ্রী মোদী বলেন, ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ এবং অন্যান্য নায়কদের বীরগাঁথা বহু যুগ ধরে পোবাড়া লোকগীতির মাধ্যমে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। আজকের প্রজন্মের জন্য পোবাড়া এক অমূল্য উপহার। আমরা যখন গণপতিকে পুজো করি, তখন ‘গণপতি বাপ্পা মৌরয়া’ শব্দগুলি মনের মধ্যে বিশেষ ভাবের সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে ভক্তিভাব জাগ্রত হয়। মারাঠী ভাষার এই শব্দগুলি সমগ্র দেশের অধ্যাত্ম চেতনার সঙ্গে যুক্ত। একইভাবে যাঁরা শ্রী বিট্টলের অভং শোনেন, স্বাভাবিকভাবেই তাঁরাও মারাঠী ভাষার মাধ্যমে যুক্ত হন।

শ্রী মোদী মারাঠী সাহিত্যিক, লেখক, কবি এবং অগণিত মারাঠী ভাষা প্রেমীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রতিভাবান সাহিত্যিকদের লেখনীই এই ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিতে সহায়তা করেছে। বালশাস্ত্রী জাম্ভেকর, মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলে, সাবিত্রীবাঈ ফুলে, কৃষ্ণজী প্রভাকর খাদিলকর, কেশবসুত, শ্রীপাদ মহাদেব মাতে, আচার্য আত্রে, আন্নাভাউ সাথে, শান্তাবাঈ শেলকে, গজানন দিগম্বর মাতগুলকর, কুসুমাঘরাজের মতো বিশিষ্ট জনেদের অবদান অনস্বীকার্য। মারাঠী সাহিত্য অত্যন্ত প্রাচীন। বিনোবা ভাবে, শ্রীপাদ অমৃত ডাঙ্গে, দুর্গাবাঈ ভগবত, বাবা আমতে, দলিত সাহিত্যিক দয়া পাওয়ার, বাবাসাহেব পুরন্দার মারাঠী সাহিত্যের দিকপাল। পুরুষোত্তম লক্ষণ দেশপান্ডে, ডঃ অরুণা ধেরে, সাহিত্য অ্যাকাডেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত নামদেব কামলে সহ বিভিন্ন মারাঠী সাহিত্যিকের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আশা বাগে, বিজয়া রাজাধ্যক্ষা, থেয়েটার ব্যক্তিত্ব চন্দ্রকান্ত কুলকারনির মতো বিশিষ্ট জনেরা বহুদিন ধরে মারাঠী ভাষার ধ্রুপদী স্বীকৃতির জন্য স্বপ্ন দেখেছেন। 
শ্রী মোদী ভি শান্তারাম এবং দাদাসাহেব ফালকের মতো বিশিষ্ট জনেদের অবদানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, মারাঠী চলচ্চিত্র, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। মারাঠী থিয়েটার সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের কন্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। বাল গন্ধর্ভ, ভীমসেন যোশী এবং লতা মঙ্গেশকরের অবদান সঙ্গীত জগতে অনস্বীকার্য।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের একটি তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, আমেদাবাদে থাকার সময় একটি মারাঠী পরিবার তাঁকে এই ভাষা শিখিয়েছিল। আজ এই ভাষা ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পাওয়ার ফলে ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার কাজে গতি আসবে। বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তিবিশেষ এবং ছত্রাছাত্রীরা – যাঁরা এই ভাষার জন্য কাজ করে চলেছেন, তাঁরা উৎসাহিত হবেন। এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি হবে। 
স্বাধীনতার পর এই প্রথম সরকার আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষাদানের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। শ্রী মোদী বলেন, নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি অনুসারে, ডাক্তারী ও ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠক্রমে মারাঠী ভাষায় লেখাপড়া করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং কলা ক্ষেত্রের মতো বিভিন্ন বিষয়ে মারাঠী ভাষায় আরও বেশি বই পাওয়া যাচ্ছে। মারাঠী সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক আঙিনায় পৌঁছে দিতে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা প্রশংসার যোগ্য। ভাষিনী অ্যাপ – এ মারাঠী ভাষার অনুবাদ সম্ভব হওয়ায় অন্যান্য ভাষার মানুষের কাছে সহজেই এই ভাষা সম্পর্কে ধারণা তৈরি হচ্ছে। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত উদযাপনের মধ্য দিয়ে আমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেল। এই ভাষার উন্নয়নে প্রতিটি মারাঠী ভাষীকে সচেষ্ট হতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে এই ভাষা নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। পরিশেষে, মারাঠী ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন জানিয়েছেন। 

 

Click here to read full text speech

 

 

 

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
Cabinet approves minimum support price for Copra for the 2025 season

Media Coverage

Cabinet approves minimum support price for Copra for the 2025 season
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
সোশ্যাল মিডিয়া কর্নার 21 ডিসেম্বর 2024
December 21, 2024

Inclusive Progress: Bridging Development, Infrastructure, and Opportunity under the leadership of PM Modi