প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে প্রায় ১৯,২৬০ কোটি টাকার একগুচ্ছ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শিলান্যাস ও সূচনা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে - দিল্লি-ভদোদরা এক্সপ্রেসওয়ে জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা - গ্রামীণ ও শহরের আওতায় নির্মিত ২ লক্ষ ২০ হাজারেরও বেশি বাড়ির গৃহ প্রবেশের সূচনা এবং সুবিধাপ্রাপকদের হস্তান্তর, জল জীবন মিশন প্রকল্পগুলির শিলান্যাস, আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মিশনের আওতায় ৯টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, আইআইটি ইন্দোরের শিক্ষা ভবন জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ ও ক্যাম্পাসের অন্যান্য বাড়ি তথা হস্টেলের শিলান্যাস এবং ইন্দোরে বহুমুখী লজিস্টিক্স পার্কের শিলান্যাস।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোয়ালিয়রের ভূমি বীরত্ব, আত্মসম্মান, ঐতিহ্য, সঙ্গীত, স্বাদ এবং সর্ষে চাষের জন্য বিখ্যাত। দেশের বহু বিপ্লবী এবং সশস্ত্র বাহিনীর বহু সৈনিকের ধাত্রীভূমি এই অঞ্চল। রাজমাতা বিজয় রাজে সিন্ধিয়া, কুশাভাউ ঠাকরে এবং অটল বিহারী বাজপেয়ীর উল্লেখ করে তিনি বলেন, গোয়ালিয়রের এই ভূমি শাসক দলের নীতি ও নেতৃত্বকে নতুন আকার দিয়েছে। দেশের জন্য এখানকার বহু সন্তান আত্মবিসর্জন দিয়েছেন। গোয়ালিয়রের ভূমির মধ্যেই প্রেরণা নিহিত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রজন্মের নাগরিকরা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেও নতুন ভারত গঠন এবং তাকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাঁদের কাঁধে রয়েছে। আজ যে প্রকল্পগুলির সূচনা ও শিলান্যাস করা হল তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সরকার মাত্র একদিনে এতগুলি প্রকল্প নিয়ে এসেছে, যা বহু সরকার এক বছরেও আনতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দশেরা, দেওয়ালি ও ধনতেরাসের আগে প্রায় ২ লক্ষ পরিবার নতুন বাড়িতে গৃহপ্রবেশ করছেন। সংযোগসাধনের একগুচ্ছ প্রকল্পও জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছে। উজ্জয়িনীর বিক্রম উদ্যোগপুরী এবং বহুমুখী লজিস্টিক্স পার্ক মধ্যপ্রদেশে শিল্পের বিকাশে আরও গতির সঞ্চার করবে। গোয়ালিয়র আইআইটি-র নতুন প্রকল্প এবং আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর আওতায় বিদিশা, বাইতুল, কাটনি, বুরহানপুর, নরসিংপুর, দামোহ ও শাজাপুরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলার উল্লেখ করেন তিনি।
এইসব উন্নয়নমূলক প্রকল্পের যাবতীয় কৃতিত্ব ডবল ইঞ্জিন সরকারের বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিল্লি ও ভোপালে সরকার একই নীতির দ্বারা পরিচালিত হলে উন্নয়নের গতি বাড়বে। ডবল ইঞ্জিনের অর্থ মধ্যপ্রদেশের দ্বিগুণ উন্নয়ন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত কয়েক বছরে সরকার মধ্যপ্রদেশকে পিছিয়ে পড়া একটি রাজ্য থেকে দেশের প্রথম ১০টি রাজ্যের মধ্যে নিয়ে এসেছে। এখন লক্ষ্য হল শীর্ষস্থানীয় তিনটি রাজ্যের মধ্যে মধ্যপ্রদেশকে নিয়ে যাওয়া। দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে ভেবে-চিন্তে ভোট দিতে রাজ্যবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্ব এখন ভারতের মধ্যে নিজেদের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে। গত ৯ বছরে দশম স্থান থেকে উঠে এসে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। সরকারের পরবর্তী মেয়াদে ভারত বিশ্বের প্রথম তিনটি অর্থনীতির মধ্যে জায়গা করে নেবে, এটা মোদীর গ্যারান্টি।
দেশের ৪ কোটি পরিবারকে পাকা বাড়ি দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দরিদ্র, দলিত, পিছিয়ে পড়া ও আদিবাসী পরিবারগুলিকে পাকা বাড়ি দেওয়ার গ্যারান্টি মোদী দিয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়েছে। শুধু মধ্যপ্রদেশেই দরিদ্র পরিবারগুলিকে লক্ষ লক্ষ পাকা বাড়ি দেওয়া হয়েছে। আজও এমন বেশ কিছু বাড়ির গৃহপ্রবেশ হল বলে তিনি উল্লেখ করেন। পূর্ববর্তী সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে প্রতারণাপূর্ণ প্রকল্পে গরীবদের নিম্নমানের বাড়ি দেওয়া হত। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে এখন সুবিধাভোগীদের প্রয়োজনমাফিক বাড়ি তৈরি হয়। কাজ যেমন এগোয়, সেইমতো সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যায়। পুরো প্রক্রিয়ার ওপর প্রযুক্তির সাহায্যে নজরদারি চলে। এই বাড়িগুলিতে শৌচালয়, বিদ্যুৎ সংযোগ, নলবাহিত জলের সংযোগ এবং উজ্জ্বলা গ্যাসের সংযোগ থাকে। জল জীবন মিশনের আওতায় যে প্রকল্পগুলির আজ সূচনা হয়েছে, সেগুলির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে এই বাড়িগুলিতে পানীয় জল পৌঁছে যাবে।
এই বাড়িগুলির মালিকানা পরিবারের মহিলা সদস্যদের নামে হওয়ায় কোটি কোটি বোন ‘লক্ষপতি’ হয়ে উঠেছেন বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। সম্প্রতি পাশ হওয়া ‘নারীশক্তি বন্দন অধিনিয়ম’-এর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মোদীর গ্যারান্টি মানে সব প্রতিশ্রুতি পূরণ নিশ্চিত হওয়া”। দেশের উন্নয়ন যাত্রায় মাতৃশক্তির আরও বৃহত্তর অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগেকার সরকারের আমলে গোয়ালিয়র ও চম্বল বিশৃঙ্খলা এবং অনুন্নয়নের জ্বলন্ত নিদর্শন ছিল। সামাজিক ন্যায়বিচার পদে পদে লঙ্ঘিত হত। কিন্তু, সরকারের কঠোর পরিশ্রমে এই দুটি স্থান এখন সুযোগ ও সম্ভাবনার মুক্ত ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আধুনিক পরিকাঠামো এবং মজবুত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কৃষক ও শিল্পমহল – উভয়ের পক্ষেই সুবিধাজনক।” কিন্তু, সরকার যদি উন্নয়ন বিরোধী হয়, তাহলে সবকিছুই ভেঙে পড়ে। অপরাধ ও তোষণ বাড়ে, অপরাধী, দাঙ্গাবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্তরা মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়ায়। এর জেরে মহিলা, দলিত, পিছিয়ে পড়া শ্রেণী ও আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার বাড়ে। এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি যাতে না হয়, সেদিকে সতর্ক নজর রাখতে প্রধানমন্ত্রী মধ্যপ্রদেশের মানুষের প্রতি অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সরকার প্রতিটি শ্রেণী এবং প্রতিটি অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য নিবেদিত। যাঁদের খবর কেউ রাখে না, মোদী তাঁদের খবর নেয়, তাঁদের পুজো করে।” এই প্রসঙ্গে তিনি দিব্যাঙ্গদের সহায়তায় নেওয়া বিভিন্ন ব্যবস্থা এবং একটি অভিন্ন সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরিতে সরকারের উদ্যোগের উল্লেখ করেন। তিনি জানান, আজ গোয়ালিয়রে দিব্যাঙ্গ ক্রীড়াবিদদের জন্য একটি ক্রীড়াকেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে। একইভাবে, যে ক্ষুদ্র কৃষকরা দশকের পর দশক ধরে অবহেলিত ছিলেন, তাঁদের উন্নয়নেও সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পিএম কিষাণ সম্মান নিধি-র আওতায় এ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষুদ্র কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২৮ হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে। আগে দানাশস্য নিয়ে কেউ মাথা ঘামাত না, অথচ দেশের আড়াই কোটি ক্ষুদ্র কৃষক দানাশস্য উৎপাদন করেন। তাঁর সরকার মিলেটকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বের দরবারে তাকে তুলে ধরেছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
পিএম বিশ্বকর্মা যোজনার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আওতায় কুমোর, কামার, কাঠের মিস্ত্রি, স্বর্ণকার, মালাকর, দর্জি, ধোপা, চর্মজীবী, নাপিতদের মতো পেশার লোকেরা প্রভূত উপকৃত হচ্ছেন। সমাজের যে অংশ পিছনে পড়েছিল তাঁদের সামনে নিয়ে আসতে মোদী ব্যাপক প্রচারাভিযান চালু করেছে। এই যোজনার আওতায় সরকার তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যয়ভার বহন করবে এবং আধুনিক সরঞ্জাম কেনার জন্য ১৫ হাজার টাকা করে দেবে। এছাড়া, সহজ শর্তে তাঁদের লক্ষ লক্ষ টাকার ঋণ দেওয়া হবে। মোদী নিজেই বিশ্বকর্মাদের ঋণের জামিন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী শিবরাজ সিং চৌহান, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র সিং তোমর, ডঃ বীরেন্দ্র কুমার, শ্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, সাংসদ ও মধ্যপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রীরা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।