প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৬টি রাজ্যের ৬টি জায়গায় গ্লোবাল হাউজিং টেকনোলজি চ্যালেঞ্জের (জিএইচটিসি) আওতায় লাইট হাউস প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন। তিনি ব্য়য় সাশ্রয়ী, স্থিতিশীল আবাসনের জন্য অ্যাফোডেবল সাসটেনবল হাউজিং অ্যাসেলারেটর – ইন্ডিয়ার (আশা – ইন্ডিয়া) বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছেন। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহরাঞ্চল) মিশনের (পিএমএওয়াই – ইউ) বাস্তবায়নের কাজে যারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে, তাদের তিনি বার্ষিক পুরস্কার দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নতুন, ব্যয় সাশ্রয়ী, বৈধ গবেষণা উদ্ভাবন প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় আবাসন নির্মাণের সার্টিফিকেট কোর্স ‘নবরীতি’র সূচনা করেছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী হরদীপ সিং পুরী ছাড়াও উত্তরপ্রদেশ, ত্রিপুরা, ঝাড়খন্ড, তামিলনাডু, গুজরাট, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে বলেছেন, আজ নতুন উদ্যম নিয়ে এগিয়ে চলার দিন এসেছে, যাতে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের জন্য নতুন প্রযুক্তিতে গৃহ নির্মাণ করা যায়। এই বাড়িগুলিকে কারিগরি যুক্তিতে লাইট হাউস প্রকল্পের বাড়ি বলা হলেও আসলে এই ৬টি প্রকল্প, দেশের আবাসন ক্ষেত্রের জন্য বাতিঘরের ভূমিকা পালন করবে।
প্রধানমন্ত্রী, লাইট হাউস প্রকল্পকে বর্তমান সরকারের আবাসন ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোগের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেছেন, যে একটা সময়ে আবাসন প্রকল্পগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পেত না এবং গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে গুণমান ও বৈচিত্রের দিকটি নিয়ে চিন্তা করা হতো না, আজ এই সমস্ত প্রকল্পগুলিকে দ্রুত শেষ করার জন্য দেশ, ভিন্ন পথ ও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আলাদা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন মন্ত্রক, এখন শুধুমাত্র বড় বড় কাঠামোর ক্ষেত্রেই গুরুত্ব দিচ্ছে না, একই সঙ্গে নতুন উদ্যোগের জন্য যেগুলি যথাযথ, সেবিষয়েও ভাবনা – চিন্তা করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় ৫০টির বেশি নির্মাণ সংস্থা নানা ধরণের উদ্ভাবনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, বর্তমান বিশ্ব সঙ্কট নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে উদ্ভাবন ও বিভিন্ন প্রক্রিয়া গ্রহণের ক্ষেত্রে সুযোগ এনে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আজ থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৬টি লাইট হাউস প্রকল্প একইভাবে কাজ শুরু করেছে। এই প্রকল্পগুলি আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে গড়ে তোলা হবে। এর ফলে দরিদ্রদের জন্য সুন্দর, ব্যয় সাশ্রয়ী ও আরামপ্রদ বাড়ি নির্মাণে কম সময় লাগবে। এই বাড়িগুলি নির্মাণ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে এসেছে। যেমন – ইন্দোরে ইঁট, বালির পরিবর্তে প্রিফ্যাব্রিকেটেড স্য়ান্ডুইজ প্যানেল সিস্টেমে বাড়ি বানানো হচ্ছে। রাজকোটে ফরাসী প্রযুক্তির সাহায্য়ে এই ধরণের বাড়ি নির্মাণ করা হবে। এখানে বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য সুড়ঙ্গে মনোলিথিক কংক্রিট কনস্ট্রাকশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। চেন্নাইতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফিনল্যান্ডে যেমনটি ব্যবহার করা হয়, সেই রকম প্রিকাস্ট কংক্রিট ব্যবস্থাপনায় বাড়ি বানানো হবে। এই বাড়িগুলি দ্রুত বানানো যাবে এবং এগুলি সস্তায় বানানো সম্ভব। জার্মানির ত্রিমাত্রিক নির্মাণ প্রক্রিয়ার সাহায্যে রাঁচিতে বাড়ি বানানো হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি ঘরকে আলাদাভাবে বানিয়ে লেগো ব্লক খেলনার মতো ঘরগুলিকে পরে জুড়ে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগরতলায় নিউজিল্যান্ডের ইস্পাত কাঠামোর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এগুলি ভূমিকম্প প্রতিরোধী। কানাডার প্রযুক্তি ব্য়বহার করা হবে লক্ষ্মৌএ। এখানে ক্লাস্টার এবং রঙের প্রয়োজন হবে না। বাড়ির দেওয়াল আগে থেকে তৈরি করা হবে এবং বাড়ি দ্রুত বানানো হবে। প্রত্যেক জায়গায় ১২ মাসের মধ্যে হাজার হাজার বাড়ি বানানো যাবে। এগুলির মাধ্যমে আমাদের পরিকল্পনাকারী, স্থপতি, ইঞ্জিনিয়ার এবং ছাত্র-ছাত্রীরা নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে বিভিন্ন বিষয় জানতে পারবেন। তিনি বলেছেন, এর সঙ্গে নির্মাণ ক্ষেত্রে যুক্ত ব্যক্তিদের নতুন প্রযুক্তির বিষয়ে দক্ষ করে তুলতে যে সার্টিফিকেট কোর্সটি চালু হবে, তার মাধ্যমে তাঁরা গৃহ নির্মাণে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ প্রয়ুক্তি ও উপাদানগুলির সম্বন্ধে ধারণা পাবেন।
শ্রী মোদী বলেছেন, দেশে গৃহ নির্মাণে আধুনিক প্রযুক্তি সংক্রান্ত গবেষণা ও নতুন উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে আশা – ইন্ডিয়া কর্মসূচী শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারতেই ২১ শতকের উপযোগী নতুন ও ব্যয় সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা যাবে। এই কর্মসূচীর আওতায় ৫টি শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তিকে বাছাই করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, শহরে যে সব দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষ বসবাস করেন, তাঁদের সব থেকে বড় স্বপ্ন নিজের একটি বাড়ি। কিন্তু বহু বছর ধরে মানুষ তাঁদের এই স্বপ্ন পূরণ হবে না বলে ভেবে ছিলেন। মনের মধ্যে আশা করলেও মূল্যবৃদ্ধির কারণে সেই চাহিদা অপূর্ণ থাকতো। জনসাধারণ যে কোনো আইনী বিষয়ে তাঁদের আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন। ব্যাঙ্কে উঁচু সুদের হার এবং ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা সমস্যা দেখা দেওয়ায় নিজের একটা বাড়ির স্বপ্ন আর পূরণ হতো না। কিন্তু গত ৬ বছরে ‘আমারও একটি নিজের বাড়ি হতে পারে’, সাধারণ মানুষের মধ্যে এই আস্থা অর্জিত হওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শহরগুলিতে খুব কম সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় লক্ষ লক্ষ বাড়ি তৈরি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাড়ির মালিকের প্রত্যাশা অনুযায়ী স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে এবং উদ্ভাবনের উপর গুরুত্ব দিয়ে পিএম আবাস যোজনার নির্মাণে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। বিদ্যুৎ, জল, গ্যাসের সংযোগ যাতে প্রত্যেকটি বাড়িতে থাকে, সেবিষয়ে একটি পুরো প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে। জিও-ট্যাগিং এবং সুবিধাভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানোর ফলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়েছে।
মধ্যবিত্তদের সুবিধের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেছেন, তাঁরা গৃহ ঋণের সুদের উপর বিশেষ ছাড় পাচ্ছেন। অসম্পূর্ণ আবাসন প্রকল্পগুলি শেষ করার জন্য ২৫,০০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে মধ্যবিত্তদের সুবিধে হবে। ‘রেরা’ –র মতো বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে বাড়ির মালিকদের মধ্যে আস্থা অর্জিত হয়েছে। তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থ কেউ প্রতারণা করে নিয়ে যাবে না, এই বিশ্বাস তাদের মধ্যে জন্মেছে। রেরার আওতায় ৭০০০ প্রকল্প নথিভুক্ত হয়েছে এবং হাজার হাজার অভিযোগের আইন অনুযায়ী নিষ্পত্তিও করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাড়ির চাবি পাওয়ার মানে শুধু বাসস্থানের অধিকার নিশ্চিত হওয়া নয়, এই চাবি মর্যাদা, প্রত্যয়, নিরাপদ ভবিষ্যৎ, নতুন পরিচিতি ও প্রসারিত সম্ভাবনার দরজাও খুলে দেয়। সকলের জন্য আবাসন – হাউজিং ফর অল –এর কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। এর ফলে কোটি কোটি দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
শ্রী মোদী বলেছেন, আয়ত্ত্বের মধ্যে বাড়ি ভাড়া পাওয়ার প্রকল্প – অ্যাফোরডেবল রেন্টিং হাউজিং কমপ্লেক্স স্কীম করোনা মহামারীর সময়ে নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে অন্য জায়গায় যে সব শ্রমিক কাজ করতে যান, তাঁরা যাতে যথাযথ মূল্যে বাড়ি ভাড়া নিতে পারেন, তার জন্য শিল্প সংস্থা ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরকার কাজ করছে। তারা যেখানে থাকেন সে জায়গাগুলো বেশিরভাগ সময় অস্বাস্থ্যকর এবং যথাযথ হয় না। তাঁদের কাজের জায়গার কাছাকাছি কোথাও যেন তাঁরা কম টাকায় বাড়ি ভাড়া পান, সেই জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমাদের শ্রমিক ভাইরা যাতে মর্যাদার সঙ্গে থাকতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।
প্রধানমন্ত্রী, রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রকে সাহায্য করার জন্য যে সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেবিষয়গুলিও উল্লেখ করেছেন। সস্তায় বাড়ির জন্য করের হার ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা, জিএসটির হার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সহজে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করার কারণে নির্মাণ ক্ষেত্রে আমাদের স্থান ১৮৫ থেকে উঠে ২৭ নম্বর স্থানে পৌঁছেছে। ২০০০-এর বেশি শহরে নির্মাণ সংক্রান্ত অনুমতি এখন অনলাইনের মাধ্যমে হচ্ছে।
শ্রী মোদী আরো জানিয়েছেন, ভারতের গ্রামাঞ্চলে ২ কোটির বেশি বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। এবছর গ্রামাঞ্চলে আবাসনের কাজে গতি আনতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।