প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ তামিলনাড়ুর থুথুকুড়িতে ১৭,৩০০ কোটি টাকার বেশি একগুচ্ছ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেছেন। তিনি ভি.ও.চিদম্বরনার বন্দরের আউটার হারবার কন্টেনার টার্মিনালের শিলান্যাস করেছেন। এই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রথম দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত পরিবেশ-বান্ধব হাইড্রোজেন জ্বালানি চালিত জলযান, বিভিন্ন রেল ও সড়ক প্রকল্প জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন শ্রী মোদী। এছাড়াও, ১০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৭৫টি লাইটহাউজে পর্যটন সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার সূচনা করেছেন তিনি। অনুষ্ঠানে যে রেল প্রকল্পগুলি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছে, সেগুলি হল : বাঞ্চি মানিয়াচ্ছি-নাগেরকয়েল রেললাইনে দ্বিতীয় লাইন, বাঞ্চি মানিয়াচ্ছি-তিরুনেলভেলি শাখা এবং মেলাপ্পালায়াম-আরালভয়মোলি শাখায় দ্বিতীয় লাইন। এছাড়াও, ৪,৫৮৬ কোটি টাকার একগুচ্ছ সড়ক প্রকল্পও জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে বলেন, থুথুকুড়িতে তামিলনাড়ুর উন্নয়নের নতুন এক অধ্যায় রচিত হয়েছে। উন্নত ভারতের সড়ক মানচিত্রে একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করা হল। প্রত্যেকে আজ ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ ভাবনাকে প্রত্যক্ষ করতে পারছেন। যদিও অনুষ্ঠানটি থুথুকুড়িতে হচ্ছে, কিন্তু দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে আগামীদিনে উন্নয়নযাত্রা অনুভূত হবে।
প্রধানমন্ত্রী ‘বিকশিত ভারত’ বাস্তবায়নে তামিলনাড়ুর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দু’বছর আগে চিদম্বরনার বন্দরের সম্প্রসারণের জন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্পের সূচনা ক্রা হয়, যাতে এই বন্দর জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। “সেই গ্যারান্টি আজ বাস্তবায়িত হল।” ভি.ও.চিদম্বরনার বন্দরের আউটার হারবার কন্টেনার টার্মিনালের শিলান্যাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। আজ ৯০০ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছে। এছাড়াও, ১৩টি বন্দরের জন্য ২,৫০০ কোটি টাকার একগুচ্ছ প্রকল্পের কাজের সূচনা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলি তামিলনাড়ুর উন্নয়নে সহায়ক হবে এবং রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
শ্রী মোদী বলেন, আজ যে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির সূচনা হয়েছে তার কাজ বর্তমান সরকারের সময়কালেই বাস্তবায়িত হয়েছে। পূর্বতন সরকারগুলি এই প্রকল্পগুলির বিষয়ে গুরুত্ব দেয়নি। “আমি তামিলনাড়ুকে সেবা করার জন্য এবং তার ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের জন্য এসেছি।”
‘হরিৎ নৌকা উদ্যোগ’-এর আওতায় ভারতে দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত প্রথম পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানি, হাইড্রোজেন-চালিত জলযান তার যাত্রা শুরু করল। এটি কাশীর জন্য তামিলনাড়ুর জনসাধারণের উপহার। কাশী তামিল সঙ্গমম-এ তামিলনাড়ুর জনগণের উৎসাহ-উদ্দীপনা তাঁর নজরে এসেছে। ভি.ও.চিদম্বরনার বন্দরকে দেশের প্রথম পরিবেশ-বান্ধব হাইড্রোজেন জ্বালানির বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে : সামুদ্রিক জলকে লবণমুক্ত করার কেন্দ্র, হাইড্রোজেন উৎপাদন কেন্দ্র এবং বাঙ্কারের বিশেষ সুবিধা। “আজ সারা বিশ্ব যে বিকল্প পথের সন্ধান করছে, তামিলনাড়ু তাকে সহযোগিতা করবে।”
প্রধানমন্ত্রী আজ এই অনুষ্ঠানে যে রেল ও সড়ক প্রকল্পগুলির শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের ফলে দক্ষিণ তামিলনাড়ু এবং কেরালার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এর ফলে, তিরুনেলভেলি ও নাগেরকয়েলে যানজট দূর হবে। তামিলনাড়ুতে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ ব্যয়ে চারটি সড়ক প্রকল্পের আধুনিকীকরণের কাজ হবে। এর ফলে, রাজ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার মানোন্নয়ন ঘটবে, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কম সময়ে যাওয়া যাবে। ফলস্বরূপ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে।
শ্রী মোদী বলেন, আজ দেশে সম্পূর্ণ সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। তামিলনাড়ুতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য এবং বিভিন্ন সুযোগ তৈরি করার জন্য সড়ক, মহাসড়ক এবং জলপথ দপ্তর একযোগে কাজ করছে। বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাজ্যের উন্নয়নে গতি আনা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে দেশের গুরুত্বপূর্ণ লাইটহাউজগুলিকে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করার জন্য তাঁর পরামর্শের কথা উল্লেখ করেন। বেতার অনুষ্ঠান ‘মন কি বাত’-এর একটি পর্বে তিনি এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। ১০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৭৫টি লাইটহাউজে পর্যটন ব্যবস্থাপনা উৎসর্গ করা হল। “একসঙ্গে ৭৫টি জায়গায় উন্নয়নমূলক কাজের সূচনা হয়েছে, এটিই নতুন ভারত”। এই ৭৫টি জায়গা আগামীদিনে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী জানান, গত ১০ বছরে তামিলনাড়ুতে ১,৩০০ কিলোমিটার রেল প্রকল্পের কাজ হয়েছে। ২ হাজার কিলোমিটার রেলপথের বৈদ্যুতিকীকরণের কাজ শেষ হয়েছে। রেলপথের ওপর উড়ালপুল এবং বিভিন্ন জায়গায় আন্ডারপাস তৈরি করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি রেল স্টেশনের মানোন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। বর্তমানে এই রাজ্যে পাঁচটি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চলাচল করে। ফলে, যাত্রীরা আন্তর্জাতিক মানের পরিষেবা পাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকার তামিলনাড়ুর বিভিন্ন সড়ক প্রকল্পের জন্য ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। “দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার সহজ জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছে।”
জলপথ পরিবহণ এবং সমুদ্রপথে পরিবহণের ক্ষেত্রে দেশের বিরাট সম্ভাবনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ক্ষেত্রগুলি ‘বিকশিত ভারত’ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ভিত তৈরি করবে। দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে তামিলনাড়ুও এর সুফল পাবে। তামিলনাড়ুতে ১২টি ছোট বন্দর সহ তিনটি বৃহৎ সমুদ্র বন্দর রয়েছে। “সামুদ্রিক ক্ষেত্রের উন্নয়নের অর্থ তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলির উন্নয়ন নিশ্চিত হওয়া।” গত এক দশকে ভি.ও.চিদম্বরনার বন্দরে ৩৫ শতাংশের বেশি জাহাজ চলাচল করছে। গত বছর এই বন্দরে ৩ কোটি ৮০ লক্ষ টন পণ্য ওঠানো-নামানো হয়েছে। এই বন্দরের বার্ষিক উন্নয়ন ১১ শতাংশ। ‘সাগরমালা’ প্রকল্পের মতো বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। “দেশের অন্যান্য বন্দরেও এই ধরনের উন্নয়ন আগামীদিনে নিশ্চিত হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলপথ এবং সামুদ্রিক পরিবহণে ভারত নতুন রেকর্ড গড়ছে। পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে দেশ ৩৮ ধাপ উঠে এসেছে। গত এক দশকে বন্দরগুলির পণ্য পরিবহণের ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়েছে। এই সময়কালে জাতীয় জলপথের পরিমাণ আটগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সমুদ্রপথে যাত্রী পরিবহণ চারগুণ বেড়েছে। এর সুফল তামিলনাড়ু এবং আমাদের যুব সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছচ্ছে। “আমি নিশ্চিত, তামিলনাড়ু উন্নয়নের পথ ধরে আরও এগিয়ে যাবে। আপনারা আমাদের তৃতীয়বার সেবা করার সুযোগ দিলে, আরও উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে সেই দায়িত্ব পালনের গ্যারান্টি আমি দিচ্ছি।”
তাঁর বর্তমান সফরকালে তামিলনাড়ুর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের ভালোবাসা ও আশীর্বাদ প্রাপ্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যের প্রতি দায়বদ্ধ। রাজ্যের মানুষের থেকে যে ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন, তা এই রাজ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিফলিত হবে।
তাঁর ভাষণের শেষে প্রধানমন্ত্রী সকলকে মোবাইল ফোনের আলো জ্বালাতে অনুরোধ করেন। এর মধ্য দিয়ে তামিলনাড়ু এবং কেন্দ্রীয় সরকার ‘উন্নয়ন উৎসব’ উদযাপন করবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে রাজ্যের রাজ্যপাল শ্রী আর এন রবি, কেন্দ্রীয় বন্দর, জাহাজ চলাচল ও জলপথ মন্ত্রী শ্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ডঃ এল মুরুগন উপস্থিত ছিলেন।
প্রেক্ষাপট :
প্রধানমন্ত্রী থুথুকুড়িতে একটি জনসভায় ভি.ও. চিদাম্বরনার বন্দরে একটি আউটার হারবার কন্টেনার টার্মিনালের শিলান্যাস করেন। পূর্ব উপকূলের জন্য ভি.ও. চিদাম্বরনার বন্দরকে ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণ একটি পদক্ষেপ। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ভারতের সুদীর্ঘ উপকূল এবং সহায়ক ভৌগোলিক অঞ্চলকে সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। এই বড় পরিকাঠামো প্রকল্পটি কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ঘটাবে।
দেশের প্রথম পরিবেশ-বান্ধব হাইড্রোজেন বন্দর হিসেবে ভি.ও. চিদাম্বরনার পোর্টকে গড়ে তুলতে অন্যান্য একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে আছে নোনতা জল পরিশোধন কেন্দ্র, হাইড্রোজেন উৎপাদন এবং সংরক্ষণ কেন্দ্র।
প্রধানমন্ত্রী হরিৎ নৌকা উদ্যোগের অধীনে ভারতের প্রথম দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি গ্রীন হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়ে এই জাহাজের সূচনা করেন। এই জাহাজটি তৈরি করা হয়েছে কোচিন শিপইয়ার্ডে এবং এটা পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানী এবং দেশের শূন্য কার্বন নিঃসরণের দায়বদ্ধতার লক্ষ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী তাঁর অনুষ্ঠানে ১০ টি রাজ্য / কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৭৫ টি লাইট হাউসে পর্যটন ব্যবস্থা জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তামিলনাড়ুর ৪ টি সড়ক প্রকল্প জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। এগুলি তৈরি হয়েছে প্রায় ৪,৫৮৬ কোটি টাকা খরচে। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে আছে ৮৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কে জিত্তনদহল্লি-ধর্মপুরী শাখাকে চার লেন করা; ৮১ নম্বর জাতীয় সড়কের মীনসুরত্তী-চিদাম্বরম শাখাকে দু-লেন করা এবং ৮৩ নম্বর জাতীয় সড়কে নাগাপত্তিনম–থাঞ্জাভুর শাখাকে দু-লেন করা। এই প্রকল্পগুলির লক্ষ্য যোগাযোগের উন্নতি করা, যাতায়াতের সময় কমানো, আর্থ সামাজিক বৃদ্ধি এবং এই অঞ্চলের তীর্থ যাত্রার সুবিধা করা।
Today, Tamil Nadu is writing a new chapter of progress in Thoothukudi.
— PMO India (@PMOIndia) February 28, 2024
Many projects are being inaugurated or having foundation stones laid: PM @narendramodi pic.twitter.com/Z8NsYdVfBM
Tamil Nadu will play a crucial role in India's journey of becoming a 'Viksit Bharat'. pic.twitter.com/9s9uno0nET
— PMO India (@PMOIndia) February 28, 2024
Today, the country is working with the 'whole of government' approach. pic.twitter.com/QNcRHViFIx
— PMO India (@PMOIndia) February 28, 2024