হরিয়ানার রেওয়ারিতে আজ ৯,৭৫০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। কয়েকটি প্রকল্প তিনি উৎসর্গ করেন জাতির উদ্দেশেও। আজকের এই প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে নগর পরিবহণ, রেল, স্বাস্থ্য ও পর্যটন ক্ষেত্রের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। এই উপলক্ষে আয়োজিত এক প্রদর্শনীও ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর আজকের এই কর্মসূচি উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ সমাবেশে তিনি ২০১৩ সালে রেওয়ারির একটি কর্মসূচিতে তাঁর উপস্থিতির কথা প্রসঙ্গত স্মরণ করেন তিনি। ঐ সময় প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তিনি রেওয়ারি সফরে গিয়েছিলেন। রেওয়ারির জনসাধারণের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসার কথা তুলে ধরে শ্রী মোদী বলেন, সাধারণ মানুষের আশীর্বাদকে তিনি তাঁর জীবনের এক বিশেষ সম্পদ বলে মনে করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাম্প্রতিক সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ও কাতার সফর প্রসঙ্গে বলেন যে বিশ্ব মঞ্চেও ভারতীয়দের এখন যথেষ্ট সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয়। আগামী বছরগুলিতে ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি রূপে উন্নীত করার লক্ষ্যে যে সংকল্প তিনি গ্রহণ করেছেন তা সফল করে তোলার জন্য জনসাধারণের কাছ থেকে আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
শ্রী মোদী বলেন, বিকশিত ভারত গঠনের লক্ষ্যে হরিয়ানার উন্নয়ন একান্ত জরুরী। হরিয়ানার উন্নয়নে যে প্রকল্পগুলির আজ উদ্বোধন ও শিলান্যাস হল তার একটি সার্বিক চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের সড়ক ও রেল নেটওয়ার্ক অত্যাধুনিক করে গড়ে তোলার পাশাপাশি সকল রকম সুযোগ-সুবিধা সমন্বিত হাসপাতালও এখানে গড়ে তোলা হবে। এইমস রেওয়ারি, গুরুগ্রাম মেট্রো, কয়েকটি নতুন রেলপথ এবং নতুন নতুন ট্রেন চালুর কথাও আজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। এর পাশাপাশি 'অনুভব কেন্দ্র জ্যোতিশ্বর' নামে একটি স্মারক কেন্দ্র স্থাপন করার কথাও স্থান পায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে। 'অনুভব কেন্দ্র জ্যোতিশ্বর' প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে এর মাধ্যমে ভাগবত গীতায় বর্ণিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষাদর্শ বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, ভারতীয় সংস্কৃতিতে হরিয়ানারও যে একটি গৌরবময় স্থান রয়েছে - এই বার্তাও পৌঁছে দেওয়া হবে অন্যান্যদের কাছে।
মোদীর গ্যারান্টি সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে এর অন্তর্নিহিত অর্থ কী তা সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেছে হরিয়ানা রাজ্যটি। অযোধ্যা ধামে শ্রীরাম মন্দির স্থাপিত হওয়ার ঘটনা এর এক উজ্জ্বল সাক্ষ্য বহন করে। সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করার ঘটনাকে মোদী গ্যারান্টির আর এক দৃষ্টান্ত বলে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল দলিত আদিবাসী ও অনগ্রসর মানুষ তাঁদের হৃত অধিকার এখন ফিরে পেয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে একটি পদ একটি পেনশন নীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটিও এক ধরনের মোদী গ্যারান্টি। এর জন্য রেওয়ারির প্রাক্তন যুদ্ধকর্মীদের এক লক্ষ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। হরিয়ানার বহু প্রাক্তন যুদ্ধকর্মী এর সুফল ভোগ করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেওয়ারিতে একটি এইমস গড়ে তোলার তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আজকের শিলান্যাস পর্বে এই প্রকল্পটিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটিও মোদী গ্যারান্টির আর একটি নজির বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এইমস-এর নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হলে তিনি নিজে এর উদ্বোধন করবেন বলেও আজ প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, উন্নততর চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়টি তিনি অবশ্যই দেখবেন। গত ১০ বছরে দেশের বিভিন্ন স্থান ও অঞ্চলে ১৫টি নতুন এইমস স্থাপনে মঞ্জুরি দেওয়া হয়েছিল। রেওয়ারিতে এইমস-এর নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হলে সেটি হবে দেশের ২২তম এইমস। শ্রী মোদী তাঁর ভাষণে আর একটি তথ্য তুলে ধরে বলেন যে গত ১০ বছরে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৩০০টিরও বেশি মেডিকেল কলেজ। হরিয়ানার প্রত্যেকটি জেলায় যাতে অন্তত একটি করে মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়, তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী।
অতীত এবং বর্তমানের সরকার ও শাসন ব্যবস্থার তুলনামূলক দৃষ্টান্ত তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদা দেশে উন্নয়নের গতি ছিল খুবই শ্লথ ও মন্থর। কিন্তু কেন্দ্রের বর্তমান সরকারের আমলে দেশব্যাপী উন্নয়নের এক নতুন জোয়ার এসেছে। দরিদ্র সাধারণ মানুষের কল্যাণে কেন্দ্রীয় সরকার রচিত বিভিন্ন নীতির সফল রূপায়ণের দিক থেকে হরিয়ানা বর্তমানে রয়েছে এক শীর্ষ স্থানে। কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে এই রাজ্যটির অগ্রগতি গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করার মতো। অতীতে দক্ষিণ হরিয়ানার উন্নয়ন নানা দিক থেকে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেখানে উন্নয়নমূলক কর্মসূচি এখন নতুন গতি লাভ করেছে। রেল, সড়ক, মেট্রো পরিষেবা সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই হরিয়ানায় এখন কর্মযজ্ঞ চলছে পূর্ণ মাত্রায়। দিল্লি - মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ের দিল্লি - দউসা - লালসট সেকশনের প্রথম পর্যায়টির ইতিমধ্যে সূচনা হয়েছে। ভারতের দীর্ঘতম এই মহাসড়কপথটি হরিয়ানার গুরুগ্রাম, পালওয়াল ও নু এই তিনটি জেলা অতিক্রম করে গেছে।
প্রাসঙ্গিক ভাবে আর একটি তথ্য তুলে ধরে শ্রী মোদী বলেন, ২০১৪-র পূর্ববর্তী বছরগুলিতে হরিয়ানার জন্য রেল বাজেটে বছরে বরাদ্দের গড় পরিমাণ ছিল ৩০০ কোটি টাকার মতো। কিন্তু বর্তমানে অর্থাৎ গত ১০ বছরে এই অঙ্ক পৌঁছে গেছে বার্ষিক ৩,০০০ কোটি টাকায়। রোটাক - মেহম - হাঁসি এবং জিন্দ - সোনিপত সেকশনে নতুন রেলপথের কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি আম্বালা ক্যান্টনমেন্ট - দাপার সেকশনে ডবল রেলপথ চালুর কথা ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর সুবাদে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের অধিবাসীদের জীবনযাত্রা আরও সহজ হয়ে ওঠার পাশাপাশি বাণিজ্যিক কাজকর্মেও বিশেষ গতি সঞ্চারিত হবে। ফলে, উপকৃত হবেন লক্ষ লক্ষ মানুষ।
হরিয়ানায় জলের যোগানের কাজে রাজ্য সরকারের সাফল্যের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার অফিস ও প্রতিষ্ঠান এখানে স্থাপিত হওয়ার ফলে যুবকদের নতুন নতুন কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে।
পোশাক ও বস্ত্রশিল্পে হরিয়ানার সুখ্যাতির কথা বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রাজ্যটি থেকে বর্তমানে দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থানে ৩৫ শতাংশেরও বেশি কার্পেট রপ্তানি করা হয়। সারা দেশে উৎপাদিত পোশাকের ২০ শতাংশ স্থানই অধিকার করে রয়েছে এই রাজ্যটি। হরিয়ানার বস্ত্রশিল্প ক্ষেত্রে ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির অবদানের সপ্রশংস উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানিপত যেমন হ্যান্ডলুম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত, ফরিদাবাদ তেমনি অন্যান্য বস্ত্র উৎপাদনের জন্য সুখ্যাতি অর্জন করেছে। তৈরি পোশাকের জন্য গুরুগ্রাম ইতিমধ্যেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বস্ত্রশিল্প ক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে প্রয়োগ করে বিশেষ সাফল্য দেখিয়েছে সোনিপত। আবার হাতে বোনা নয় এই ধরনের পোশাক উৎপাদনের দিক থেকে ভিওয়ানি একটি সুপরিচিত নাম। গত ১০ বছরে দেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অনুশিল্প তথা ক্ষুদ্রায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির বিকাশে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দ করেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এর ফলে দেশের প্রাচীন ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কুটির শিল্পগুলি আবার নতুন জীবন লাভ করেছে। হরিয়ানা রাজ্যটিতেও গড়ে উঠেছে হাজার হাজার নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান।
রেওয়ারিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশ্বকর্মা কর্মসূচির আওতায় হস্তশিল্প ও পিতলের কাজ যে ভাবে আরও উন্নত হয়ে উঠেছে তার বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী - বিশ্বকর্মা যোজনা চালু হওয়ার পর থেকে ১৮টি ভিন্ন ভিন্ন পেশায় নিযুক্ত দেশের প্রথাগত শিল্পী ও কারিগররা বিশেষ ভাবে উপকৃত হয়েছেন। এই ভাবেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লক্ষ লক্ষ সুফলভোগী প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছেন। প্রথাগত এই সমস্ত শিল্পী ও কারিগর এবং তাঁদের পরিবারগুলির জীবনযাত্রায় সার্বিক রূপান্তর ঘটাতে কেন্দ্রীয় সরকার ১৩,০০০ কোটি টাকা ব্যয় করবে বলে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
"যাঁরা ব্যাঙ্কের কাছ থেকে গ্যারান্টি লাভের আশা করতে পারেন না তাদের জন্যই রয়েছে মোদী গ্যারান্টি" - একথা ঘোষণা করে শ্রী মোদী বলেন, দেশের ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য যেমন প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি চালু করা হয়েছে, মুদ্রা যোজনার আওতায় তেমনি দরিদ্র, দলিত, পিছিয়েপড়া মানুষ এবং অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়গুলিকে নিয়ে আসা হয়েছে। রাস্তার হকার ও পণ্য বিক্রেতাদের জন্য চালু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী স্বনিধি যোজনা।
হরিয়ানায় নারী কল্যাণে যেসমস্ত কর্মসূচি রূপায়িত হচ্ছে তার একটি সার্বিক রূপরেখা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দরিদ্র পরিবারগুলির মহিলাদের কাছে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস ও পাইপ লাইনের মাধ্যমে জলের যোগান নিশ্চিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি হরিয়ানার লক্ষ লক্ষ মহিলা সহ স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির ১০ কোটি কর্মীকে কল্যাণমূলক কর্মসূচির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা। লাখপতি দিদি কর্মসূচি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এপর্যন্ত এক কোটি মহিলা লাখপতি দিদি রূপে সম্মানিত হয়েছেন। এবছরের বাজেট ঘোষণা অনুযায়ী লাখপতি দিদির সংখ্যা ৩ কোটিতে উন্নীত করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। নমো ড্রোন দিদি কর্মসূচির প্রসঙ্গটিও এদিন স্পর্শ করে যায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি বলেন, দেশের কৃষি ক্ষেত্রে ড্রোন দিদিদের কাজে লাগানোর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে, নমো ড্রোন দিদিরা অতিরিক্ত আয় ও উপার্জনের সুযোগ লাভ করবেন।
হরিয়ানাকে প্রভূত সম্ভাবনাময় একটি রাজ্য বলে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন যে হরিয়ানাকে একটি উন্নত রাজ্যে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে সরকার সর্বোত ভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি, পর্যটন, বাণিজ্য ও বস্ত্রশিল্প প্রতিটি ক্ষেত্রেই নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিনিয়োগের একটি বিশেষ রাজ্য বলে ক্রমশ পরিচিতি লাভ করছে হরিয়ানা। বিনিয়োগ বৃদ্ধির হাত ধরে রাজ্য গড়ে উঠতে চলেছে কর্মসংস্থানের প্রভূত সুযোগ-সুবিধা।
আজকের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হরিয়ানার রাজ্যপাল বন্দারু দত্তাত্রেয় এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী মনোহরলাল খট্টর।
विकसित भारत बनाने के लिए हरियाणा का विकसित होना बहुत ज़रूरी है: PM @narendramodi pic.twitter.com/06onISw92h
— PMO India (@PMOIndia) February 16, 2024
आज पूरा विश्व भारत में निवेश के लिए उत्सुक है।
— PMO India (@PMOIndia) February 16, 2024
और निवेश के लिए हरियाणा एक उत्तम राज्य बनकर उभर रहा है: PM @narendramodi pic.twitter.com/U6nrCMt2gx