পশ্চিমবঙ্গকে একটি বিকশিত রাজ্য রূপে গড়ে তোলার কাজে আজ আমরা আরও একধাপ এগিয়ে গেলাম। এই রাজ্যের অধিবাসীদের জীবনযাত্রাকে আরও সহজ করে তোলার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ, সড়ক এবং রেল পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করার সুযোগ পেয়ে আমি নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করছি।
আজ নদীয়ার কৃষ্ণনগরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধনকালে এই মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। কয়েকটি প্রকল্প তিনি উৎসর্গ করেন জাতির উদ্দেশেও।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের এই প্রকল্পগুলি পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নে বিশেষভাবে সাহায্য করবে। এছাড়াও, এই রাজ্যের যুব সমাজের জন্য উন্নততর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এই উন্নয়ন প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে।
উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বিদ্যুতের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে শ্রী মোদী বলেন যে, তাঁর সরকার বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে পশ্চিমবঙ্গকে স্বনির্ভর করে তুলতে আগ্রহী। এই রাজ্যের পুরুলিয়া জেলায় অবস্থিত রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায়ে দুটি ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রকল্প রূপায়ণ প্রচেষ্টায় এই রাজ্যে ১১ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। প্রকল্পটি রূপায়িত হলে এই রাজ্যের শক্তি তথা বিদ্যুতের চাহিদা অনেকটাই পূরণ হবে। শুধু তাই নয়, এর ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিকাশেও গতিসঞ্চার ঘটবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৭ ও ৮ নম্বর ইউনিটের ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজেশন (এফজিডি) সম্পর্কিত প্রকল্পটি রূপায়িত হবে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে। দেশের পরিবেশ রক্ষার কাজে কেন্দ্রীয় সরকার যে বিশেষভাবে সজাগ, এই ঘটনা তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
পশ্চিমবঙ্গকে ‘পূর্বের প্রবেশদ্বার’ রূপে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশের স্বার্থে পূর্ব ভারতের উন্নয়নে অফুরন্ত সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং, রেল, সড়ক, বিমান এবং জলপথের মাধ্যমে আধুনিক সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে তাঁর সরকার বিশেষভাবে সচেষ্ট। ১২ নম্বর জাতীয় মহাসড়কের ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফারাক্কা – রায়গঞ্জ সেকশনটিকে চারলেনের রাস্তায় রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে যে প্রকল্পের কাজে হাত দেওয়া হয়, তা সড়কপথে যাতায়াতের সময়কে প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনবে। এর ফলে, নিকটবর্তী শহরগুলির মধ্যে যান চলাচল যেমন আরও সহজ হয়ে উঠবে, তেমনই সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষদের অর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টার ক্ষেত্রেও তা বিশেষভাবে সহায়ক হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মতে, পরিকাঠামোর দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে পশ্চিমবঙ্গের গৌরবময় ইতিহাসে রেলের এক বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু, পূর্ববর্তী সরকারগুলি এই রাজ্যের সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ঐতিহ্য সংরক্ষণের কাজে সেরকমভাবে আগ্রহ দেখায়নি। ফলে, উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক বড় ধরনের ফাঁক রয়ে গেছে।
গত ১০ বছরে পশ্চিমবঙ্গের রেল পরিকাঠামোকে আরও জোরদার করে তুলতে কেন্দ্রীয় সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার কথা ব্যক্ত করে শ্রী মোদী বলেন যে, পূর্বের তুলনায় এখন এই রাজ্যের রেল পরিকাঠামোর প্রসার ও আধুনিকীকরণে দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, আজকের এই বিশেষ দিনটিতে চারটি রেল প্রকল্পের আধুনিকীকরণ ও উন্নয়ন সম্পর্কিত সরকারি প্রচেষ্টার কথা সকলের সামনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলি আজ উৎসর্গীকৃত হ’ল জাতির উদ্দেশে। শুধু তাই নয়, পশ্চিমবঙ্গকে একটি বিকশিত রাজ্য রূপে গড়ে তোলার কাজে কেন্দ্রীয় সরকার যে কৃত সংকল্প, সেকথাও আজ প্রমাণিত হ’ল এই ঘটনার মধ্য দিয়ে। এজন্য তিনি রাজ্যবাসীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
গতকাল হুগলির আরামবাগে রেল, বন্দর এবং পেট্রোলিয়াম ক্ষেত্রের যে ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের কয়েকটি প্রকল্পের তিনি শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেছিলেন, সেকথাও আজ স্পর্শ করে যায় প্রধানমন্ত্রীর এদিনের ভাষণে।
আজকের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ডঃ সি ভি আনন্দ বোস এবং কেন্দ্রীয় বন্দর, জাহাজ চলাচল ও জলপথ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী শ্রী শান্তনু ঠাকুর।
উল্লেখ্য, রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটির উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ প্রকল্প এবং ১২ নম্বর জাতীয় মহাসড়কের ফারাক্কা – রায়গঞ্জ সড়ক পথটিকে চারলেনের রাস্তায় রূপান্তরের প্রকল্প ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ৯৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগে পশ্চিমবঙ্গের যে ৪টি রেল প্রকল্প আজ জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন, সেগুলি হ’ল – দামোদর – মহিশিলা রেলপথকে ডবল লাইনে রূপান্তর, রামপুরহাট ও মুরারই – এর মধ্যে তৃতীয় লাইন স্থাপন, বাজারসৌ – আজিমগঞ্জ রেলপথটিকে ডবল লাইনে রূপান্তর এবং আজিমগঞ্জ ও মুর্শিদাবাদের মধ্যে একটি নতুন রেলপথ স্থাপন।