দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে আজ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর ২০০তম জন্ম জয়ন্তীর বর্ষব্যাপি উদযাপনের সূচনা করেন। এই উপলক্ষে তিনি একটি স্মারক লোগোর আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছানোর পর আর্য সমাজে সরাসরি উপস্থাপিত সুদৃশ্য অনুষ্ঠান স্থল প্রধানমন্ত্রী পায়ে হেঁটে যান এবং যজ্ঞ স্থলে আহুতি অর্পণ করেন। এরপর মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর বার্তা ভারতের অন্যান্য প্রান্তে তথা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে এলইডি মশাল যুব প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেন তিনি।
সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর ২০০তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপনের এই অনুষ্ঠান সমগ্র বিশ্বের কাছে ভবিষ্যৎ গড়ার এক অনুপ্রেরণার কেন্দ্র হয়ে থাকবে। বিশ্বকে আরও ভালোভাবে বসবাসযোগ্য করে তোলার জন্য দয়ানন্দ সরস্বতীর আদর্শের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হিংসা, দ্বেষ এবং অস্থিরতার সময়কালে মহর্ষি দয়ানন্দের প্রদর্শিত পথ আশা সঞ্চার করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পুণ্য অনুষ্ঠান বর্ষব্যাপী উদযাপন করা এবং সরকার মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর ২০০তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মানবতার সেবায় নিরন্তর প্রক্রিয়ার ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যজ্ঞ স্থলে আহুতি অর্পণ করতে পেরে তিনি কৃতার্থ বোধ করছেন। স্বামীজি যেখানে জন্মেছিলেন সেই পুণ্য ভূমিতে জন্মলাভ সৌভাগ্যের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহর্ষি দয়ানন্দের জীবন এবং তাঁর আদর্শ এখনও অনুরূপ আকর্ষণীয়।
দয়ানন্দ সরস্বতী যখন জন্মেছিলেন সেই সময় ভারতের অবস্থার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শত শত বছর ধরে দাসত্বের ভারে দেশ ক্লান্ত এবং জীর্ণ হয়েছে এবং নিজের প্রতি আস্থা ও আত্মবিশ্বাস হারাতে বসেছে। তিনি বলেন, নানাভাবে চেষ্টা হয়েছে ভারতের আদর্শ ও সংস্কৃতি এবং তার শিকড়কে ধ্বংস করে দেবার। ভারতের ঐতিহ্য এবং তার ধর্মগ্রন্থে কোনো রকম ঘাটতির মনোভাবকে স্বামীজি সম্পূর্ণ খারিজ করে দেন। তিনি উল্লেখ করেন এগুলির প্রকৃত অর্থ আমরা ভুলেছি। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, একটা সময় ছিল যখন ভারতকে খাটো করতে বেদের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং প্রথা ও ঐতিহ্যের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। সেই সময়কালে মহর্ষি দয়ানন্দের প্রয়াস রক্ষক হিসেবে দেখা দেয়। “মহর্ষিজি বৈষম্য এবং অস্পৃশ্যতার মতো সামাজিক দুরাচারের বিরুদ্ধে প্রবল প্রচারাভিযান শুরু করেন” একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি যে কর্তব্য পথের কথা বলেছেন তার বিরুদ্ধে যে প্রতিক্রিয়া সে কথা উল্লেখ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহর্ষি তাঁর সময়কালে অনুরূপ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ব্যাখ্যা করে বলেন, “মিথ্যাচার বশত ধর্মের সঙ্গে মন্দ ভাবকে জড়ানো হয়েছিল স্বামীজি তা সরিয়ে ধর্মকে আলোকশিখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে স্বামীজির লড়াইকে মহাত্মা গান্ধী তাঁর সব থেকে বড় অবদান হিসেবে গণ্য করতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজে মহিলাদেরকে নিয়ে একপেশে চিন্তার বিরুদ্ধে মহর্ষি দয়ানন্দজি যুক্তিযুক্ত এবং সোচ্চার স্বর হিসেবে দেখা দেন। মহিলাদের বিরুদ্ধে কোনো রকম বৈষ্যমের প্রবল প্রতিবাদ করেন মহর্ষি দয়ানন্দজি এবং মহিলাদের শিক্ষার জন্য তিনি প্রচারাভিযান চালান। এসব ঘটনা দেড়শো বছরেরও পুরনো বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজও এই সময়কালে এমন সমাজ রয়েছে যা মহিলাদেরকে শিক্ষা এবং সম্মানের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। কিন্তু মহর্ষি দয়ানন্দ মহিলাদের সম অধিকারের যে আওয়াজ তুলেছিলেন তা পশ্চিমের দেশগুলিতেও অপূর্ণ বাস্তব হিসেবে রয়ে গেছে।
মহর্ষিজির সাফল্য এবং অসামান্য গুণের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্য সমাজ প্রতিষ্ঠা হওয়ার ১৫০ বছর এবং তাঁর জন্মের ২০০ বছর পরেও তাঁর প্রতি সম্মান এবং তাঁর ভাবধারার প্রতি নিষ্ঠা আজও অমলিন থাকায় অমৃতকালে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীজির ২০০তম জন্মবার্ষিকী এক পুণ্য প্রেরণা হিসেবে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে।
শ্রী মোদী বলেন, গভীর আস্থার সঙ্গে স্বামীজির শিক্ষাকে দেশ অনুসরণ করছে। “বেদের পথে ফেরা”র জন্য স্বামীজির আহ্বানের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ দেশ দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করার ডাক দিয়েছে।” ভারতের মানুষ আধুনিকতার পথ যেমন গ্রহণ করেছেন ঠিক তার পাশাপাশি সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করার মধ্যে দিয়ে তাদের আস্থাবোধ ফুটে উঠছে।
প্রধানমন্ত্রী ভারতে ধর্মের বিস্তৃত ভাবধারার ব্যাখ্যা করে বলেন, আচার সর্বস্যতার বাইরে ধর্মকে জীবনের পথ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের কাছে ধর্মের প্রথম ব্যাখ্যা হল দায়িত্ববোধ।” তিনি বলেন, স্বামীজি বহুমুখী নেতৃত্বের দায়িত্বভার একদিকে যেমন ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক, তার পাশাপাশি তা সমন্বয় সাধকের। ভারতীয় জীবনে মুনি ঋষি ও সাধকদের বৃহত্তম ভূমিকার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় দর্শন, যোগ, অঙ্কশাস্ত্র, নীতি, কূটনীতি, বিজ্ঞান এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাদের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রাচীন ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে স্বামীজি এক বিরাট ভূমিকা পালন করেছিলেন।
মহর্ষি দয়ানন্দের শিক্ষার ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর জীবৎকালে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। মহর্ষি যদিও বিপ্লবী ভাবধারায় বিশ্বাসী ছিলেন, তিনি তাঁর আদর্শকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে কিভাবে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন এবং কয়েক দশক ধরে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহুবিধ কল্যাণ কাজে তারা কিভাবে সক্রিয় যোগদান করেছিল সেকথা প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। পরোপকারিনী সভার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহর্ষি নিজে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং বেদের ঐতিহ্যকে গুরুকুল ধারা ও বিভিন্ন প্রচার পুস্তিকার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে তিনি কিভাবে নিয়ে গিয়েছিলেন। কুরুক্ষেত্র গুরুকুল, স্বামী শ্রদ্ধানন্দ ট্রাস্ট এবং মহর্ষি দয়ানন্দ ট্রাস্ট প্রভৃতি সংগঠন যুবকদের জীবন গড়ে তুলতে সুদুরপ্রসারী ভূমিকা নেয় বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, মহর্ষির আদর্শে গড়ে ওঠা জীবন প্রভাত ট্রাস্ট সমাজসেবায় এবং গুজরাটে ২০০১এর বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর ত্রাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ দেশ অবৈষ্যমের নীতি এবং প্রয়াসকে প্রত্যক্ষ করছে যা স্বামীজির কাছে অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত হত। “দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া এবং নিম্নবিত্তদের সেবাই আজ দেশের কাছে প্রথম যজ্ঞ” বলে জানান তিনি। আবাসন, চিকিৎসা এবং মহিলা সশক্তিকরণের কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন তিনি। নতুন শিক্ষা নীতি ভারতীয়ত্বের ওপর জোর দিয়েই আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটাচ্ছে। স্বামীজি এই শিক্ষাই দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী উপলব্ধি সঞ্জাত ব্যক্তি বলতে স্বামীজির ব্যাখ্যার উল্লেখ করে বলেন, একজন ব্যক্তি যখন নিজে যা গ্রহণ করেন তার থেকে বেশি প্রদান করেন তখন তিনি উপলব্ধি সঞ্জাত ব্যক্তি চিহ্নিত হন। পরিবেশের মধ্যে অযুত বলয়ে এর প্রাসঙ্গিকতা রয়ে গেছে। স্বামীজি বেদের এই জ্ঞানকে গভীরভাবে আত্মস্থ করেছিলেন যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মহর্ষিজি ছিলেন বেদ শিক্ষার ছাত্র এবং জ্ঞান মার্গের সাধক।” তিনি বলেন, ভারত আজ সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে। মিশন লাইফ-এর এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জি২০র প্রধান বিষয় হিসেবে পরিবেশকে তুলে ধরা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাচীন জ্ঞান ভিত্তির পাশাপাশি আধুনিক ভাবধারার প্রসারে আর্য সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি তাদেরকে প্রাকৃতিক চাষের ওপর জোর দিতে বলেন। শ্রী অন্নের ওপরে জোর দেওয়ার কথাও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
মহর্ষির ব্যক্তিত্ব থেকে অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী একটি গল্পের অবতারণা করেন। একজন ইংরেজ অফিসার মহর্ষির সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন এবং ভারতে ব্রিটিশ শাসন চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি মহর্ষিকে আবেদন করতে বলেন। এর উত্তরে মহর্ষি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, “স্বাধীনতা আমার অন্তরাত্মা আর এটাই ভারতের বার্তা।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামী, প্রতিষ্ঠান নির্মাতা এবং দেশপ্রেমিক স্বামীজির থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন যেমন লোকমান্য টিলক, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস, বীর সাভারকার, লালা লাজপত রায়, লালা হরদয়াল, চন্দ্রশেখর আজাদ, রামপ্রসাদ বিসমিল প্রমুখ। মহাত্মা হংসরাজ, স্বামী শ্রদ্ধানন্দজি, ভাই পরমানন্দজি প্রমুখ মহর্ষিজির দ্বারা যাঁরা অনুপ্রাণিত তাঁদের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বামীজির শিক্ষার উত্তরাধিকার বহন করছে আর্য সমাজ এবং প্রত্যেক ‘আর্য বীর’এর কাছে দেশের অনেক প্রত্যাশা। তিনি জানান, পরের বছর আর্য সমাজের দেড়শ বছর পূর্তির সূচনা হবে। ভাষণের শেষে প্রধানমন্ত্রী এই স্মরণীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য সকলকে সাধুবাদ জানান। তিনি এই বলে ভাষণ শেষ করেন যে ‘মহর্ষি দয়ানন্দজির নানাবিধ প্রচেষ্টা থেকে অমৃতকালে দেশ অনুপ্রাণিত হবে।’
গুজরাটের রাজ্যপাল শ্রী আচার্য দেবব্রত, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী শ্রী জি কিষাণ রেড্ডি, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী শ্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল, শ্রীমতী মীনাক্ষ্মী লেখি, দিল্লি আর্য প্রতিনিধি সভার সভাপতি শ্রী ধরমপাল আর্য, দিল্লি আর্য প্রতিনিধি সভার মহামন্ত্রী শ্রী বিনয় আর্য, সর্বদেশিক আর্য প্রতিনিধি সভার সভাপতি শ্রী সুরেশ চন্দ্র আর্য অন্যদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রেক্ষাপট
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর ১৮২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেন। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক। সামাজিক অসাম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তুলতে তিনি ১৮৭৫ সালে আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক পুনর্জাগরণে আর্য সমাজ, সমাজ সংস্কার এবং শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
महर्षि दयानंद सरस्वती जी का दिखाया मार्ग करोड़ों लोगों में आशा का संचार करता है। pic.twitter.com/BpLHb0A2Ik
— PMO India (@PMOIndia) February 12, 2023
महर्षि दयानन्द जी ने आगे आकर वेदों के बोध को समाज में पुनर्जीवित किया। pic.twitter.com/rFuMEzois3
— PMO India (@PMOIndia) February 12, 2023
महिलाओं को लेकर भी समाज में जो रूढ़ियाँ पनप गईं थीं, महर्षि दयानन्द जी उनके खिलाफ भी एक तार्किक और प्रभावी आवाज़ बनकर उभरे। pic.twitter.com/gKKBYcnCAj
— PMO India (@PMOIndia) February 12, 2023
आज देश पूरे गर्व के साथ ‘अपनी विरासत पर गर्व’ का आवाहन कर रहा है। pic.twitter.com/BdKXqYdST0
— PMO India (@PMOIndia) February 12, 2023
जो गरीब है, जो पिछड़ा और वंचित है, उसकी सेवा आज देश के लिए सबसे पहला यज्ञ है। pic.twitter.com/AWEHh1EuQP
— PMO India (@PMOIndia) February 12, 2023