প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ প্রবাসী ভারতীয় দিবস সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী করোনা মহামারীর সময়ে প্রবাসী ভারতীয়রা যেসব দেশে থাকেন সেই সব দেশে তাঁদের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, বিভিন্ন রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে আলোচনার সময় যখন সেই সব রাষ্ট্রপ্রধানরা তাঁদের দেশে চিকিৎসক, প্যারা মেডিকেল কর্মী অথবা সাধারণ নাগরিক হিসেবে ভারতীয়দের ভূমিকার প্রশংসা করতেন তখন তিনি গর্ব অনুভব করতেন। কোভিডের বিরুদ্ধে প্রবাসী ভারতীয়দের ভারতেও যে অবদান রয়েছে তিনি সেই প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছন।
ওয়াইটুকে সঙ্কটের মোকাবিলার সময়ে ভারতের ভূমিকা এবং ভারতীয় ওষুধ নির্মাণকারী সংস্থাগুলির বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে মানবজাতির কল্যাণে ভারতের দক্ষতার কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন সঙ্কটের মোকাবিলা করতে ভারত সবসময়ই সামনের সারিতে রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত যে নেতৃত্ব দিয়েছে তার ফলে সারা পৃথিবী এই সব সমস্যা দূরীকরণের শক্তি অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারতীয় খাদ্যাভ্যাস, পোষাক পরিচ্ছদ, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং বাণিজ্যিক মূল্যবোধের প্রতি সারা বিশ্বের যে আস্থা অর্জিত হয়েছে তার কৃতিত্ব প্রবাসী ভারতীয়দের। প্রবাসী ভারতীয়দের আচার আচরণ ভারতীয় জীবনশৈলি ও মুল্যবোধের প্রতি উৎসাহ তৈরি করে। সেটি কৌতুহল থেকে ক্রমশ রীতিতে পরিণত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারত আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার যে লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে প্রবাসী ভারতীয়রা তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন। তাঁরা ভারতে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহারের মধ্য দিয়ে এগুলির প্রতি বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় সম্প্রদায়কে এই মহামারীর মোকাবিলায় দেশের ক্ষমতা সম্পর্কে বিশদে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এধরণের গণতান্ত্রিক ঐক্যবোধের আর কোনো উদাহরণ নেই। প্রথমে পিপিই কিট, মাস্ক, ভেন্টিলেটর বা নমুনা পরীক্ষার কিট তৈরির ক্ষেত্রে যে নির্ভরশীলতা ছিল সেই অবস্থা থেকে ভারত বের হয়ে এসে আত্মনির্ভরতা অর্জন করেছে এবং বিদেশে এই সব পণ্য রপ্তানি করা শুরু করেছে। বিশ্বের ওষুধের ভাণ্ডার হিসেবে ভারত সারা পৃথিবীকে সাহায্য করে। বৃহত্তম টিকাকরণ কর্মসূচীতে কিভাবে ভারত প্রস্তুতি নিচ্ছে, গোটা বিশ্ব তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এদেশে দেশীয় পদ্ধতিতে দুটি টিকা তৈরি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির মোকাবিলায় মহামারীর সময়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি অর্থ পাঠানোর বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসার কথা উল্লেখ করেছেন। একইভাবে দরিদ্রদের ক্ষমতায়ণ এবং পুনর্নবীকরণ জ্বালানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে ভারতের গৌরব বৃদ্ধি হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ভারতের মহাকাশ কর্মসূচী ও বিভিন্ন প্রযুক্তির নতুন উদ্যোগের সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেছেন, নিরক্ষর ভারতের দীর্ঘদিনের তকমা এর মাধ্যমে দূর হয়েছে। সম্প্রতি শিক্ষা থেকে শুরু করে শিল্পোদ্যোগ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সংস্কার হাতে নেওয়া হয়েছে তার সুফল পাওয়ার জন্য তিনি প্রবাসী ভারতীয়দের আহ্বান জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে দেশে উৎপাদন শিল্পকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য উৎপাদন ভিত্তিক ভর্তুকি প্রকল্পের কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী ভারতীয়দের আশ্বস্ত করে বলেছেন, মাতৃভূমি তাঁদের সবরকমের সহায়তা করবে। তিনি বন্দে ভারত মিশনের কথা উল্লেখ করেছেন। যেখানে ৪৫ লক্ষের বেশি ভারতীয়কে করোনার সময়ে দেশে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বিদেশী বসবাসরত ভারতীয়দের কর্মক্ষেত্রে অধিকারের জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগের কথাও জানিয়েছেন। উপসাগরীয় অঞ্চল সহ বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব পরিযায়ী কর্মীরা ফিরে আসছেন তাঁদের জন্য স্কিল্ড ওয়ার্কার অ্যারাইভ্যাল ডেটা বেস ফর এমপ্লয়মেন্ট সাপোর্ট – স্বদেশ প্রকল্পের কথা প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে আরও ভালো যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য গ্লোবাল প্রবাসী রিস্তা পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে।
সুরিনামের রাষ্ট্রপতি শ্রী চন্দ্রিকা পরসাদ সান্তোখি এই অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব ও মূল ভাষণ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। শ্রী সান্তোখির সঙ্গে শীঘ্রই তাঁর দেখা হবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেছেন। শ্রী মোদী প্রবাসী ভারতীয় সম্মান ও প্রশ্নোত্তর প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তিনি দেশের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে প্রবাসীদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রবাসী ভারতীয়দের ভূমিকা সম্বলিত বিভিন্ন তথ্যাদি একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রাখার জন্য তিনি প্রবাসী ভারতীয়দের এবং বিভিন্ন ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের একটি পোর্টাল তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছেন।