Quoteভারতের ধর্মীয় রীতি-নীতি দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত : প্রধানমন্ত্রী
Quoteউপবাস ভাবনা-চিন্তার মানসিকতাকে ত্বরান্বিত করে, চিরাচরিত পন্থা থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু ভাবতে সাহায্য করে : প্রধানমন্ত্রী
Quoteচ্যালেঞ্জ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ কিন্তু তা কখনই কারোর উদ্দেশ্যের কারণ হতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী
Quoteবহু স্বাধীনতা সংগ্রামী, স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছেন, আর মহাত্মা গান্ধী সত্যের পথ অবলম্বন করে জাতিকে জাগ্রত করেছেন এবং এক গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন : প্রধানমন্ত্রী
Quoteস্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাড়ুদার থেকে শিক্ষক, তন্তুবায় থেকে সেবক-সেবিকা প্রত্যেককে যুক্ত করার অনন্য ক্ষমতা গান্ধীজির ছিল : প্রধানমন্ত্রী
Quoteযখন আমি কোনো বিশ্ব নেতার সঙ্গে করমর্দন করি তখন সেই করমর্দন আসলে মোদী করে না, ১৪০ কোটি ভারতবাসী করেন : প্রধানমন্ত্রী
Quoteআমরা যখন শান্তির কথা বলি তখন সারা বিশ্ব তা শোনে, আমাদের শক্তিশালী সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী
Quoteখেলাধূলার মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বের মানুষ জাতি নির্বিশেষে একত্রিত হন এবং সকলের মধ্যে একটি নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন হয় : প্রধানমন্ত্রী
Quoteভারত ও চীনের মধ্যে সহযোগিতা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : প্রধানমন্ত্রী
Quoteকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়ন মূলত একটি যৌথ প্রচেষ্টা, কোনো দেশ এককভাবে এটি সম্পূর্ণরূপে বিকাশ করতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী
Quoteমানবিক কল্পনার ভিত্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক কিছু তৈরি করতে পারে, তবে কোনো প্রযুক্তিই মানুষের সীমাহীন সৃজনশীলতা এবং কল্পনার বিকল্প হতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী
Quoteআমি আমার দেশের জন্য কঠোর পরিশ্রম থেকে কখনো পিছপা হব না, খারাপ উদ্দেশ্যে কিছু করব না এবং ব্যক্তিগত লাভের জন্য কোনো কাজ করব না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ পডকাস্টে লেক্স ফ্রিডম্যানের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেছেন। মতবিনিময়ের সময় যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, শ্রী মোদী কিভাবে উপবাসের সময়কালে সব কাজ করতে পারেন, তখন প্রধানমন্ত্রী লেক্সকে প্রথমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তাঁকে সম্মান জানানোর জন্য লেক্স যে উপবাস করেছেন তা অভূতপূর্ব। “ভারতের ধর্মীয় রীতি-নীতি দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত”। ভারতের সুপ্রিম কোর্টও বলেছে, হিন্দুত্ব কোনো রীতিনীতি নয়, বরং জীবনের পথ চলার এক মাধ্যম।  শৃঙ্খলাপরায়ণ হওয়া এবং জীবনের বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে সমতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে উপবাস খুবই সহায়ক হয়। উপবাস ভাবনা-চিন্তার মানসিকতাকে ত্বরান্বিত করে, চিরাচরিত পন্থা থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু ভাবতে সাহায্য করে। শ্রী মোদী বলেন, উপবাস করার অর্থ শুধুমাত্র খাদ্য গ্রহণ না করাই নয়, এটি আসলে শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ বের করার একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। তিনি জানান, উপবাসের আগে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিছু আয়ুর্বেদিক এবং যোগ-এর রীতিনীতি অনুসরণ করেন। উপবাসকালে জল পান করার ওপর তিনি গুরুত্ব দেন। উপবাসের সময়কালে তিনি আত্মবিশ্লেষণের ওপর গুরুত্ব দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুল জীবনে মহাত্মা গান্ধীর আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি উপবাস করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমবার তিনি যখন উপবাস করেছিলেন সেই সময় তিনি অনুভব করেন যে আগের থেকে অনেক বেশি শক্তি সঞ্চয় করেছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে শক্তি সম্পর্কে তাঁর ধারণা জন্মায়। উপবাস করার ফলে তাঁর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সময় তিনি অনেক কিছু নতুনভাবে ভাবতে পারেন, অতুলনীয় কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয় তাঁর।

আন্তর্জাতিক স্তরে একজন নেতা হিসেবে তিনি যখন দায়িত্ব পালন করেন, তখন কখনও-সখনও তিনি উপবাস করেন। এই সময়কাল এক নাগাড়ে ন’দিন পর্যন্তও হয়। এ বিষয়ে জানতে  চাইলে শ্রী মোদী বলেন, এটি আসলে ভারতীয় সংস্কৃতি চতুর্মাসের ফল। বর্ষার সময় আমাদের হজম করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। সেই সময়কালে বহু ভারতবাসী দিনে একবার খাদ্য গ্রহণ করেন। তিনি নিজে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে দেওয়ালির পর নভেম্বর পর্যন্ত ৪-৪.৫ মাস এই পন্থা অনুসরণ করেন। সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবর মাসে নবরাত্রি উদযাপনের সময় ৯ দিন তিনি শুধু গরম জল খান, অন্য কিছু খান না। মার্চ অথবা এপ্রিল মাসে চৈত্র নবরাত্রির সময়কালে তিনি বিশেষ এক পন্থা অনুসরণ করেন। সেই সময় তিনি প্রতিদিন একটিই ফল খান। অর্থাৎ, কোনবার যদি পেঁপে খাওয়া শুরু করেন, তাহলে ৯ দিন ধরে শুধুমাত্র পেঁপেই খান। গত ৫০-৫৫ বছর ধরে তিনি এই পন্থা অনুসরণ করে আসছেন।

 

|

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমে তাঁর এই উপবাস করার নিয়মগুলি আগে একেবারেই ব্যক্তিগত স্তরে ছিল। কাউকে তিনি এ বিষয়ে জানাতেন না। তবে, পরবর্তীতে তিনি যখন মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন সকলে এই বিষয়গুলি সম্পর্কে অবগত হন। তবে, এই বিষয় নিয়ে তিনি বেশী ভাবনাচিন্তা করেন না, কারণ তিনি নিজের জীবন অপরের কল্যাণে উৎসর্গ করেছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, একবার হোয়াইট হাউজে তদানিন্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি শ্রী বারাক ওবামার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময় তিনি উপবাস করেছিলেন।

তাঁর শৈশবের জীবন সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর-গুজরাটের মেহসনা জেলার বড়নগরে তাঁর জন্ম। ঐতিহাসিক দিক দিয়ে এই অঞ্চল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীন যুগে বড়নগর ছিল বৌদ্ধদের জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। চীনা দার্শনিক হিউয়েন সাং-এর মতো বিশিষ্ট  ব্যক্তিত্বরা এখানে এসেছিলেন। তাঁর গ্রামে বৌদ্ধ, জৈন এবং হিন্দু সংস্কৃতির সহাবস্থান ছিল। ইতিহাস শুধুমাত্র বইয়ের পাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। বড়নগরের মতো জায়গায় ইঁট-কাঠ-পাথরের দেওয়ালেও সেই ইতিহাস থাকে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি বড়নগরে খননকার্য শুরু করেন। সেই সময় জানা যায়, ২,৮০০ বছর আগেও সেখানে একটি শহরের অস্তিত্ব ছিল। ফলশ্রুতিতে বড়নগরে বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক মানের সংগ্রহালয় গড়ে তোলা হয়েছে। বিশেষ করে প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করা ছাত্রছাত্রীরা এখানে জ্ঞানার্জনের জন্য আসেন। এ ধরনের একটি ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জন্মগ্রহণকে সৌভাগ্যের বিষয় বলে তিনি মনে করেন। শৈশবে তিনি এমন এক বাড়িতে থাকতেন যেখানে জানালা ছিল না, চূড়ান্ত দারিদ্র্যের শিকার ছিল তাঁর পরিবার। তবে, দারিদ্র্যকে তিনি পথচলার ক্ষেত্রে কোনো বাধা বলে মনে করতেন না। তাঁর বাবা শৃঙ্খলাপরায়ণ এবং কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন। তিনি সময় মেনে চলতেন। তাঁর মা একাধারে ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী, পাশাপাশি সকলের যত্ন নিতেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর মায়ের চিরাচরিত কিছু রীতিনীতি মেনে চলার কথা উল্লেখ  করেন। সেগুলি তাঁর জীবনদর্শনে সহায়ক হয়েছে। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি যখন শপথ গ্রহণ করেন, তখনই তাঁর পরিবারের সম্পর্কে সব তথ্য জনসমক্ষে আসে।

শ্রী মোদী তরুণ সম্প্রদায়কে ধৈর্য্যশীল ও আত্মবিশ্বাসী হওয়ার পরামর্শ দেন। চ্যালেঞ্জ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ কিন্তু তা কখনই কারোর কোন স্বার্থ চরিতার্থ করার  কারণ হতে পারে না। যুব সমাজকে এই পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি তিনি বলেন, যখন আমরা কোনো সঙ্কটের মুখোমুখি হই, তখন আসলে তা আমাদের শক্তির পরীক্ষা নেয়। অর্থাৎ, সঙ্কট আমাদের হারাতে পারে না। প্রতিটি সঙ্কট নতুন নতুন সম্ভাবনা এবং উন্নয়নের সুযোগ এনে দেয়। জীবনে শর্টকাটের কোনো স্থান নেই। এই প্রসঙ্গে তিনি রেল স্টেশনে ব্যবহৃত একটি প্রতীকের কথা উল্লেখ করেন। রেল স্টেশনে রেল লাইন পারাপারের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করা হয় এবং সেখানে বলা হয়, আপনি যদি শর্টকাট পন্থা অবলম্বন করেন, তাহলে আপনার জীবনের সময়ও ছোট হয়ে যেতে পারে। সাফল্য অর্জনের জন্য তিনি ধৈর্য্য ও সংযমের ওপর গুরুত্ব দেন। জীবনে চলার পথে সাফল্য যে আসবেই, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। যেখানে প্রচুর সম্পদ রয়েছে, সেই সম্পদকে সমাজের জন্য কাজে লাগাতে হবে এবং নিজের উন্নতিও করতে হবে। শ্রী মোদী বলেন, সারা জীবন ধরে শিখতে হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা কথা উল্লেখ করেন। তিনি যখন তাঁর বাবার চায়ের দোকানে থাকতেন, সেই সময় নানা বিষয় সম্পর্কে আলোচনা শুনতেন,  যার থেকে নিজেও সমৃদ্ধ হয়েছেন। অনেকেই বড় কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করেন, অথচ সেই লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলে হতাশ হয়ে পড়েন। তিনি ফলের আশায় না থেকে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দেন। তাহলেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনো যায়। পাওয়ার থেকে কোন কিছু দেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি যুব সম্প্রদায়কে পরামর্শ দেন তাঁরা যাতে সমাজের জন্য কিছু করেন এবং সেই লক্ষ্যে তাঁদের কাজ করতে হবে।

 

|

তাঁর হিমালয় যাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি ছোট্ট শহরে তাঁর বেড়ে ওঠা যেখানে সকলে একসঙ্গে মিলেমিশে থাকেন। তিনি প্রায়শই স্থানীয় গ্রন্থাগারে যেতেন। সেখানে স্বামী বিবেকানন্দ এবং ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের বইগুলি পড়ে অনুপ্রাণিত হতেন। সেই বই পড়ার সময় তাঁর নিজের শারীরিক সীমাবদ্ধতা কতটা তা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করার ইচ্ছা হয়। এর জন্য তিনি শীতকালে বাড়ির বাইরে ঘুমোতেন। স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা তাঁকে কতটা প্রভাবিত করেছিল, সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শ্রী মোদী বিবেকানন্দের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর অসুস্থ মায়ের জন্য মা কালীর কাছে প্রার্থনা করতে গিয়েও তা চাইতে পারেননি। সেই সময়ে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় তিনি আত্মোপলব্ধি করেন, অন্যের জন্য সেবা করাই তাঁর ব্রত হওয়া উচিত। একটি বিয়ে বাড়িতে গিয়ে শ্রী মোদী সকলের সঙ্গে আনন্দ না করে কিভাবে এক সাধুর সেবা করেছিলেন, সেই প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেন। তাঁর গ্রামে সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখলে দেশের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত হতেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবনের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করা এবং সেই পথ অনুসরণ করার ক্ষেত্রে স্বামী আত্মস্থানন্দজির মতো সন্ন্যাসীদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিশনে থাকার সময় তিনি বহু সাধুর সান্নিধ্য লাভ করেছেন, তাঁদের ভালোবাসা এবং আশীর্বাদ পেয়েছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি হিমালয়ে থাকার সময় তাঁর অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নেন। হিমালয় অঞ্চলে বসবাসকালে তিনি তাঁর ভেতরে যে শক্তি রয়েছে, সে বিষয়টি উপলব্ধি করেন। তাঁর ব্যক্তিগত উন্নতিতে ধ্যান, অন্যকে সেবা করা এবং ভক্তিভাবের ভূমিকার কথা তিনি উল্লেখ করেন।

রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী আত্মস্থানন্দজির সঙ্গে তাঁর অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনসেবায় নিয়োজিত হওয়ার সিদ্ধান্ত সেই সময়েই তিনি গ্রহণ করেন। অনেকে হয়তো তাঁকে প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চেনেন, কিন্তু তিনি আধ্যাত্মিক নীতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। অন্যকে সেবা করার মানসিকতা তাঁর তৈরি হয়েছিল যখন তিনি দেখেছেন তাঁর মা শিশুদের প্রতি যত্ন নিতেন, হিমালয়ের কাছে গিয়ে সেই বিশাল পর্বতের ব্যাপ্তি তিনি অনুভব করেছেন। এর  ফলেই বর্তমানে তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর কাছে একজন সাধু এবং একজন নেতার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, কারণ দু’জনেই একই মূল্যবোধে চালিত হন। তিনি বলেন, আমাদের পোশাক এবং কাজের কারণে বাহ্যিক পরিবর্তন ঘটতে পারে, কিন্তু মানুষের প্রতি সেবা করার অঙ্গীকার সব সময়েই বজায় থাকবে। তিনি শান্তভাবে, একনিষ্ঠ হয়ে প্রতিটি দায়িত্ব পালন করেন।  

 

|

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর প্রভাব তাঁর জীবনে কতটা, জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে শৈশবে দেশাত্মবোধক গান শুনতে তাঁর খুব ভালো লাগত। ছোটবেলায় মকোশী নামে এক ব্যক্তি তাঁদের গ্রামে আসতেন। তিনি যে গানগুলি গাইতেন, তাতে শ্রী মোদী খুবই প্রভাবিত হতেন। এরই ফলশ্রুতিতে পরবর্তীকালে তিনি আরএসএস-এ যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। আরএসএস-এ যোগদানের পর তিনি লেখাপড়া থেকে শুরু করে শরীরচর্চা – সবকিছুই গুরুত্ব সহকারে অনুশীলন করতেন এবং এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে দেশের জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা পেতেন। আরএসএস জীবনের অর্থ সম্পর্কে স্পষ্ট এক ধারণা দেয়। আরএসএস সকলকে শিক্ষা দেয়, মানুষের সেবা করা আসলে ঈশ্বর সেবারই সামিল। খুব শীঘ্রই এই প্রতিষ্ঠানের শতবার্ষিকী উদযাপন হবে। বিশ্বজুড়ে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লক্ষ লক্ষ সদস্য রয়েছে। সেবা ভারতীর মতো আরএসএস-এর উদ্যোগের কথা তিনি উল্লেখ করেন যেখানে বস্তি অঞ্চলে ১ লক্ষ ২৫ হাজার পরিষেবা প্রদান করা হয়। এইসব কাজ কোনরকমের সরকারি সাহায্য ছাড়াই করা হয়। বনবাসী কল্যাণ আশ্রম আরএসএস-এর আরেকটি উদ্যোগ যেখানে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে ৭০ হাজার স্কুল রয়েছে যে স্কুলে একজন শিক্ষকই ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া করান। আরএসএস-এর বিদ্যা ভারতী উদ্যোগের মাধ্যমে ২৫ হাজার স্কুলে প্রায় ৩০ লক্ষ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। এই সংগঠন শিক্ষা এবং মূল্যবোধের ওপর গুরুত্ব দেয় যাতে ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে। এর মধ্য দিয়ে তারা কখনই সমাজের বোঝা হয়ে উঠবে না। ইন্ডিয়ান লেবার ইউনিয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, লক্ষ লক্ষ শ্রমিক এর সদস্য। এখানে প্রচলিত শ্রম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শ্রমজীবীদের সঙ্ঘবদ্ধ করা হয়। আরএসএস-এর থেকে তিনি জীবনের মূল্যবোধ সম্পর্কে জেনেছেন এবং স্বামী আত্মস্থানন্দজির কাছ থেকে তিনি আধ্যাত্মিক নানা পরামর্শ পেয়েছেন। তাই, আরএসএস এবং স্বামী আত্মস্থানন্দজির প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের একটি সাংস্কৃতিক পরিচিতি রয়েছে। এ দেশের সভ্যতা হাজার হাজার বছরের পুরনো। আমাদের দেশে ১০০-র বেশি ভাষা এবং হাজারের বেশি উপ-ভাষা রয়েছে। প্রতি ২০ মাইল অন্তর ভারতের ভাষা, রীতিনীতি, খাদ্যাভ্যাস এবং বস্ত্র পরিধানের পন্থাপদ্ধতি বদলায়। বিপুল এই বৈচিত্র্যের মধ্যেও একটি অভিন্ন সূত্র গোটা দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। তিনি ভগবান শ্রীরাম-এর প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন যা সারা ভারতজুড়ে অনুরণিত হয়ে থাকে। ভগবান শ্রীরাম-এর নাম এক এক অঞ্চলে এক একরকম। গুজরাটে যিনি রামভাই নামে পরিচিত, তামিলনাড়ুতে তাঁর পরিচয় রামচন্দ্রন হিসেবে। আবার মহারাষ্ট্রে লোকে তাঁকে চেনেন রাম ভাও নামে। ভারতের এই অনন্য সংস্কৃতিক বন্ধন দেশকে  এক সুতোয় বেঁধে  রেখেছে। স্নান করার সময় এ দেশের মানুষ একসঙ্গে সব নদ-নদীকে স্মরণ করেন। তাঁরা যে মন্ত্রোচ্চারণ করেন সেই মন্ত্রে গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরী, সরস্বতী, নর্মদা, সিন্ধু এবং কাবেরীর কথা উল্লেখ থাকে। একতার এই ভাবনা ভারতীয় সংস্কৃতিতে গভীরভাবে প্রোথিত রয়েছে। আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং রীতিনীতিতে তার প্রতিফলন দেখা যায়। জম্মুদ্বীপ থেকে শুরু করে কূলদেবতাকে বন্দনা করা – সর্বত্রই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে স্মরণ করা হয়। আজও অতীতের সেই সংস্কৃতিকে মেনে চলা হয়। পশ্চিমী বিশ্ব,  রাষ্ট্র হিসেবে একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে বিবেচনা করে। কিন্তু, ভারতের সংস্কৃতি তার সাংস্কৃতিক বন্ধনে আবদ্ধ। প্রাচীন যুগ থেকে এ দেশে নানা ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা যায়, কিন্তু এ দেশের ঐক্য তার সাংস্কৃতিক রীতিনীতির মধ্যেই যুক্ত রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই তীর্থযাত্রা ভারতের ঐক্যের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল। শঙ্করাচার্য চারটি তীর্থক্ষেত্রকে গড়ে তুলেছিলেন। আজও লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী বিভিন্ন তীর্থস্থান দর্শন করেন। তাঁরা রামেশ্বরম থেকে জল নিয়ে কাশীতে আসেন এবং কাশী থেকে জল নিয়ে রামেশ্বরমে যান। ভারতের হিন্দু ক্যালেন্ডার দেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ রীতিনীতির প্রতিফলন।  

 

|

মহাত্মা গান্ধীর স্বাধীনতা আন্দোলনের ভূমিকা প্রসঙ্গে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহাত্মাজির মত তিনিও গুজরাটে জন্মেছেন এবং গুজরাটি তাঁরও মাতৃভাষা। গান্ধীজি বিদেশে অ্যাটর্নি হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েও ভারতের জনসাধারণের জন্য কাজ করতে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেন। পারিবারিক মূল্যবোধ এবং কর্তব্যবোধের কারণে তাঁর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ। আজও গান্ধীজির নীতি এ দেশের প্রতিটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। গান্ধীজি পরিচ্ছন্নতার পক্ষে জোড়ালো সওয়াল করতেন। তাঁর জীবনশৈলী নিয়ে আজও আলোচনা হয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সারা দেশ যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, লক্ষ লক্ষ মানুষ যখন দেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, কারাবরণ করেছেন, তখন বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী সেই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। মহাত্মা গান্ধী সেই সময়ে সত্যের পথ অবলম্বন করে জাতিকে জাগ্রত করেছেন এবং এক গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাড়ুদার থেকে শিক্ষক, তন্তুবায় থেকে সেবক-সেবিকা প্রত্যেককে যুক্ত করার অনন্য এক ক্ষমতা গান্ধীজির ছিল। গান্ধীজি সাধারণ নাগরিকদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সেনানীতে পরিণত করেন। ডান্ডি অভিযানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক চিলতে লবন এক বিপ্লবের সূচনা করেছিল। বাকিমহ্যাম প্যালেসে রাজা জর্জের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় মহাত্মাজি শুধু একটি কাপড় পরিধান করেই গিয়েছিলেন। তিনি রাজা জর্জের পোশাক সম্পর্কে কৌতুকপূর্ণ মন্তব্য করে বলেন, “আপনাদের রাজা এত বেশি পোশাক পরিধান করেছেন যা আসলে আমাদের দু’জনের চাহিদাই পূরণ করেছে।” গান্ধীজির জনগণের শক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়ার মন্ত্র আজও অনুরণিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের প্রতিটি উদ্যোগ এবং সমাজে কোন কিছুর পরিবর্তন ঘটানোর সময় তিনি শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগের ওপর নির্ভর করেন না, তিনি সমগ্র জনসাধারণকেই সেই উদ্যোগে সামিল করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহাত্মা গান্ধীর সেই ঐতিহ্য আসলে আবহমান কাল ধরে চলে এসেছে। তিনি বলেন, ১৪০ কোটি ভারতবাসী এবং এ দেশের শাশ্বত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যই তাঁর শক্তি। “যখন আমি কোনো বিশ্ব নেতার সঙ্গে করমর্দন করি তখন সেই করমর্দন আসলে মোদী করে না, ১৪০ কোটি ভারতবাসী করেন”। ২০১৩ সালে যখন তাঁর দল তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে, সেই সময় তিনি প্রচুর সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন। সমালোচকরা তাঁর কাছে জানতে চান, বিদেশ নীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে তিনি কতটা বোঝেন। শ্রী মোদী বিনয়ের সঙ্গে জানান, সেই সময় তিনি জবাব দিয়েছিলেন, “ভারত কারোর সামনে মাথা নত করবে না, কারোর প্রতি চোখ উঁচিয়েও কথা বলবে না। ভারত তার সমকক্ষ প্রতিটি রাষ্ট্রের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে চলবে।” তাঁর বিদেশ নীতির মূল কথা এটিই। তাঁর কাছে দেশই প্রথম। বিশ্বশান্তি এবং ভ্রাতৃত্ববোধ সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে ভারত সওয়াল করে এসেছে। ভারতের এই ভাবনা আসলে ‘সারা বিশ্ব অভিন্ন এক পরিবার’ – ধারণা থেকে এসেছে। পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির জন্য “এক সূর্য, এক বিশ্ব, এক গ্রিড” এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অভিন্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য “এক পৃথিবী, এক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা”র ধারণাটি এর থেকেই এসেছে। বিশ্বের কল্যাণে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে ভারত। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করার সময় মূল ভাবনা ছিল “এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ”। ভারত সারা বিশ্বের কাছে প্রকৃতির সঙ্গে তার অভিন্ন যোগসূত্রের কথা তুলে ধরে। “কোনো দেশই একা থাকতে পারে না। আমাদের প্রত্যেককেই প্রত্যেকের জন্য প্রয়োজন”। আন্তর্জাতিক যে কোন উদ্যোগে সকলকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি রাষ্ট্রসঙ্ঘের মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রাসঙ্গিকতার বিষয়টি উল্লেখ করেন। এখন সময় এসেছে, এ ধরনের সংস্থার কার্যকারিতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা করার।

ইউক্রেনের শান্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ভগবান বুদ্ধ এবং মহাত্মা গান্ধীর দেশের মানুষ। শান্তির পথ অনুসরণের শিক্ষাই তাঁরা দিয়েছেন। আমরা যখন শান্তির কথা বলি তখন সারা বিশ্ব তা শোনে, আমাদের শক্তিশালী সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। ভারত কোনো সংঘাতের পথে যায় না। যেখানেই সম্ভব হয় সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত অগ্রসর হয়। শ্রী মোদী বলেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেন, দুটি রাষ্ট্রের সঙ্গেই তাঁর সম্পর্ক ভালো। তিনি রাষ্ট্রপতি পুতিনকে বলতেই পারেন যে এই সময়ে যুদ্ধ করা উচিত নয়। আবার, রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কিকে বলতে পারেন, যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো সমাধান বেরিয়ে আসে না, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনার এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে দু’পক্ষকেই একসঙ্গে বসাতে হবে। এই সংঘাতের ফলে দক্ষিণী বিশ্বের ওপর যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে খাদ্য, জ্বালানি এবং সার সরবরাহের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিনি শান্তির জন্য সমগ্র বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমি নিরপেক্ষ নই। আমি শান্তি পক্ষে এবং আমি শান্তির জন্য সোচ্চার হয়েছি।”

 

|

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৭ সালের দেশভাগ হৃদয় বিদারক এক ঘটনা। বহু রক্ষক্ষরণ হয়েছে সেই সময়। পাকিস্তান থেকে আহত ও শবদেহ সমেত ট্রেন এসেছে এ দেশে। শান্তিপূর্ণ এক সহাবস্থান আশা করা হলেও পাকিস্তান সেই পথ অনুসরণ করেনি। তারা ভারতের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ করার ইন্ধন যুগিয়েছে। যারা রক্তপাত এবং জঙ্গিবাদকে সাহায্য করে, তাদের চিন্তাভাবনা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের এই সমস্যা শুধু ভারতেরই নয়, সারা বিশ্বের কাছে এক সমস্যার কারণ। প্রায়শই দেখা যায়, সব সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগাযোগ রয়েছে। তিনি ওসামা বিন লাদেনের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। লাদেন পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিল। তিনি পাকিস্তানকে রাষ্ট্রীয় মদতে সন্ত্রাসবাদকে সাহায্য করার নীতি থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। তিনি প্রশ্ন করেন, “আপনাদের দেশকে অরাজক ব্যবস্থার দিকে ঠেলে দিলে আপনারা কি পাবেন?” তিনি জানান, ব্যক্তিগতভাবে তিনি লাহোর সফর করেছিলেন শান্তির জন্য। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের সময় তিনি পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ জানান। এর মধ্য দিয়ে শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতি ভারতের অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার উদ্যোগটি ফুটে ওঠে। এই প্রসঙ্গে তিনি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। অথচ তাঁর সব উদ্যোগ শত্রুতা এবং বিশ্বাসঘাতকতার মতো বিভিন্ন ঘটনার কারণে ব্যর্থ হয়েছে।  

খেলাধূলায় শক্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধূলার মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বের মানুষ জাতি নির্বিশেষে একত্রিত হন এবং সকলের মধ্যে একটি নিবিড় যোগাযোগ গড়ে ওঠে। তিনি বলেন, খেলাধূলার বিষয়ে তিনি তেমন বিশেষজ্ঞ নন, কিন্তু সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট ম্যাচের ফলাফলের প্রসঙ্গটি তিনি উল্লেখ করেন। ফুটবল খেলায় ভারতের যথেষ্ট উৎসাহ রয়েছে। আমাদের মহিলা ফুটবল দল খুব ভালো খেলছে। পুরুষদের দলও যথেষ্ট উন্নতি করছে। ৮০-র দশকে মারাদোনা ছিলেন সকলের কাছে নায়ক। বর্তমান প্রজন্ম মেসিকে সেই সম্মান দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি মধ্যপ্রদেশের শাহদোল সফরের সময় দেখেছেন, সেখানকার মানুষ কতটা ফুটবল পাগল। ঐ অঞ্চলের তরুণ খেলোয়াড়রা নিজেদের গ্রামকে ‘মিনি ব্রাজিল’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে চার প্রজন্ম ধরে সকলে ফুটবলের প্রতি আসক্ত। ঐ অঞ্চল থেকে প্রায় ৮০ জন জাতীয় স্তরের খেলোয়াড় উঠে এসেছেন। প্রতি বছর তাঁরা যে ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে সেখানে ২০-২৫ হাজার দর্শক খেলা দেখতে আসেন। ফুটবলের প্রতি ভারতীয়দের আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে। এই খেলা দলগত খেলার এক আদর্শ প্রতীক।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি শ্রী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হিউস্টনে তিনি ‘হাউডি মোদী’ সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে তিনি এবং রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প ভাষণ দেন। তাঁরা একসঙ্গে স্টেডিয়াম ঘুরে দেখেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের সাহস ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেন। হোয়াইট হাউজ সফরকালে ট্রাম্প সব রীতিনীতি ভেঙে শ্রী মোদীকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে দেখান। মার্কিন ইতিহাসের বিষয়ে ট্রাম্পের যথেষ্ট সম্মান রয়েছে। ট্রাম্প যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন না, সেই সময়েও তাঁদের দু’জনের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। ট্রাম্পকে মহান এক মধ্যস্থতাকারী বলে উল্লেখ করেছেন শ্রী মোদী। তিনি বলেন, বিভিন্ন আলোচনায় তিনি সব সময়েই ভারতের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছেন। ভারতের জনসাধারণ তাঁকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালনে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ। এলন মাস্ক, তুলসী গ্যাবার্ড, বিবেক রামস্বামী এবং জে ডি ভান্স-এর সঙ্গে তাঁর সাম্প্রতিক মার্কিন সফরের সময় ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। ডিওজিই মিশনে মাস্কের উৎসাহের কথা তিনি উল্লেখ করেন এবং জানান যে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর এ দেশের বিভিন্ন অদক্ষ ও ক্ষতিকারক রীতিনীতিকেও তিনি বর্জন করতে উদ্যোগী হন। তাঁর সরকার ১০ কোটির বেশি ভুয়ো নাম বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প থেকে বাদ দিয়েছেন। ফলে, বহু অর্থের সাশ্রয় হয়েছে। প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের কারণে তাঁর সরকার ৩ লক্ষ কোটি টাকার অর্থ সাশ্রয় করেছে। জেম পোর্টালের সূচনা হয়েছে। এর ফলে, সরকারের বিভিন্ন দপ্তর যে  জিনিসপত্র কেনা-বেচা করে, তাতে অর্থের সাশ্রয় হয়েছে এবং গুণমান বৃদ্ধি পেয়েছে। ৪০ হাজার অপ্রয়োজনীয় রীতিনীতি এবং ১,৫০০ সেকেলে আইন বাতিল করা হয়েছে। এই দৃঢ় পরিবর্তনগুলি ভারত গ্রহণ করায় বিশ্বজুড়ে এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডিওজিই নিয়ে এখন চর্চা হচ্ছে।

ভারত ও চিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুটি দেশের জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে অভিন্ন ইতিহাস রয়েছে যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন কল্যাণমূলক পদক্ষেপ নিতে সহায়ক হয়েছে। আজ সারা বিশ্বের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৫০ শতাংশেরও বেশি হয় ভারত ও চিনের থেকে। দুটি দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ রয়েছে। চিনে বৌদ্ধ ধর্মের যথেষ্ট প্রভাব আছে। এই বৌদ্ধ ধর্মের উৎপত্তি ভারতে। দুই দেশের মধ্যে বিবাদ থাকতেই পারে, তবে সেই বিবাদ যাতে সংঘাতে পরিণত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উভয় রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর পন্থা হল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা চালানো। তাহলেই দুই দেশের মধ্যে সুস্থায়ী এবং সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। ২০২০ সালে সীমান্ত অঞ্চলে যে বিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল, তার প্রেক্ষিতে উদ্ভুত উত্তেজনার বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেন। তবে, তাঁর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি শি-র সাম্প্রতিক বৈঠক সীমান্ত অঞ্চলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে এনেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিশ্বজুড়ে স্থিতাবস্থা ও সমৃদ্ধি আনার ক্ষেত্রে ভারত ও চিনের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। তাই তিনি দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার প্রতি সওয়াল করেন।

কোভিড-১৯ মহামারীর সময়কালে পৃথিবীর প্রতিটি দেশ নিজেদের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করতে পেরেছে। এক্ষেত্রে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গটি তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তির পরিবর্তে পৃথিবীতে বর্তমানে অনিশ্চয়তা এবং সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। এই সংগঠনের সংস্কারের অভাবে এর গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পাচ্ছে। তিনি বিবাদের পরিবর্তে সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেন। সম্প্রসারণবাদ, পারস্পরিকভাবে যোগাযোগ বজায় রেখে না চলা এই বিশ্বের ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। এখন প্রতিটি দেশই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। পৃথিবীজুড়ে যেসব সংঘাত চলছে, সেগুলি সম্পর্কে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, সর্বত্র শান্তি ফিরে আসবে।  

 

|

২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার বিষয়ে তিনি জানান, সেই সময়ে সেখানে অশান্ত এক পরিবেশ বিরাজ করছিল। এই প্রসঙ্গে তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন ঘটনার কথা উল্লেখ করেন যার মধ্যে রয়েছে কান্দাহারের বিমান অপহরণ, লালকেল্লায় আক্রমণ এবং ৯/১১ জঙ্গি হানা। এরকম এক উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম দায়িত্ব গ্রহণ করেন।  সেই সময় ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, সেই ক্ষতি থেকে বেরিয়ে এসে সকলের পুনর্বাসন করাও তাঁর আরেকটি কর্তব্য ছিল। এই পরিস্থিতিতে গোধরার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর শাসনকালের আগেও গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইতিহাস রয়েছে। বিচার ব্যবস্থা গোধরার ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তেরর পর জানিয়েছে যে তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ ছিলেন। ২০০২ সালের পর গত ২২ বছরে গুজরাট একটি শান্তিপূর্ণ রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এর মূল কারণ, সেখানে সার্বিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সমালোচনার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সমালোচনা হল গণতন্ত্রের আস্থা”। প্রকৃত ঘটনা  মানুষের কাছে পৌঁছনো এবং যে কোন সমালোচনার ক্ষেত্রে তথ্যনির্ভর আলোচনা হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি গঠনমূলক সমালোচনার পক্ষে। তবে, ভিত্তিহীন অভিযোগের বিষয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। “কোনো অভিযোগ নিয়ে আসলে কারোরই লাভ হয় না, বরং তার থেকে অহেতুক সংঘাতের সৃষ্টি হয়।” সাংবাদিকতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত। সাংবাদিকতার সময় অনেক ক্ষেত্রে একপেশে বক্তব্য তুলে ধরায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি মনে করেন, প্রকৃত সংবাদিকতা সত্য ঘটনা এবং গঠনমূলক উদ্যোগের মধ্য দিয়ে করা উচিত।

রাজনীতিতে তাঁর অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম জীবনে তিনি সংগঠনের জন্য কাজ করতেন। বিভিন্ন নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন এবং নির্বাচনী প্রচারে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতেন। গত ২৪ বছরে গুজরাট এবং ভারতের জনগণ তাঁর ওপর আস্থা রেখেছেন। তিনি অবিচলভাবে এই পবিত্র দায়িত্বকে পালন করছেন। দেশের প্রতিটি নাগরিক যাতে সরকারের সমস্ত কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির সুবিধা পায়, এক্ষেত্রে ধর্ম, বর্ণ বা কোনো নীতি যেন বৈষম্যের কারণ না হয়, তা নিশ্চিত করা তাঁর অন্যতম দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রশাসনের মূল ভিত্তি হল জনগণ, নির্বাচন নয়। আমরা জনগণ এবং দেশের কল্যাণে নিয়োজিত।” জনগণের সেবা করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা এক নিবেদিত পুরোহিতের মত বলেই তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তাঁর কোনো বন্ধু বা আত্মীয় নেই, এই পদে আসীন হয়ে তাঁর কোনো ব্যক্তি-স্বার্থ চরিতার্থ হবে না। তিনি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছেন এবং তাঁদের আস্থা অর্জন করতে চান। বিশ্বের বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়ায় তিনি গর্ববোধ করেন। এই দলের জন্য লক্ষ লক্ষ স্বেচ্ছাসেবক নিরলসভাবে কাজ করেছেন। এই স্বেচ্ছাসেবকরা ভারত এবং দেশের নাগরিকদের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এক্ষেত্রে তাঁদের ব্যক্তি-স্বার্থের কথা তাঁরা বিবেচনা করেননি। তাঁর দলের প্রতি মানুষের আস্থা বিভিন্ন নির্বাচনের ফলাফলের থেকে প্রকাশ পায়। তাকে তিনি ভগবানের আশীর্বাদ বলে উল্লেখ করেছেন।

ভারতে নির্বাচন আয়োজনের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের কথা তুলে ধরেন। এই নির্বাচনে নিবন্ধীকৃত ভোটার ছিল ৯৮ কোটি। এই সংখ্যা উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যার চাইতেও বেশি। মোট ভোটারদের মধ্যে ৬৪ কোটি ৬০ লক্ষ ভোটদাতা তাঁদের মতাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভারতে ১০ লক্ষের বেশি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ছিল। ২,৫০০-র বেশি নিবন্ধীকৃত রাজনৈতিক দল এ দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যুক্ত। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্গম জায়গায় হেলিকপ্টারে করে ভোটিং মেশিন পাঠানো হয়েছে। গুজরাটের গির অরণ্যে একজন মাত্র ভোটারের জন্য ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতা প্রকাশ পায়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে ভারতের নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি। তিনি বলেন, বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলির এ দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা নিয়ে চর্চা করা উচিত, তাহলে তারা জানতে পারবে এ দেশের মানুষের রাজনীতির বিষয়ে সচেতনতা কতটা রয়েছে ও বিভিন্নক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কতটা উন্নত।   

তাঁর নেতৃত্বের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি নিজেকের প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে ‘প্রধান সেবক’ হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। তিনি মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান, ক্ষমতা দখল করা তাঁর উদ্দেশ্য নয়। “আমি রাজনীতিতে এসেছি ক্ষমতা দখলের জন্য নয়, মানুষকে পরিষেবা দিতে।”

একাকিত্বের বিষয়ে তাঁর মত জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি কখনই নিজেকে একা বলে মনে করেন না। তিনি সব সময়েই ‘ওয়ান প্লাস ওয়ান’ দর্শনে বিশ্বাসী। অর্থাৎ, তিনি নিজে এবং ভগবান। জাতি এবং জনগণের জন্য কাজ করাকে তিনি মহৎ কাজ বলে মনে করেন। মহামারীর সময়কালে তিনি ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে প্রশাসন পরিচালনার একটি মডেল তৈরি করেছিলেন। সেই সময় তিনি তাঁর দলের যেসব স্বেচ্ছাসেবকের বয়স ৭০ বার তার বেশি, তাঁদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ রাখতেন এবং তাঁদের ভালোমন্দের খোঁজখবর নিতেন।

কিভাবে এত কঠোর পরিশ্রমী হলেন, সেই প্রসঙ্গে শ্রী মোদী বলেন, তাঁর চারপাশে কৃষক, শ্রমিক, সেনাবাহিনীর সদস্য এবং মায়েদের কঠোর পরিশ্রম দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন। “আমি কিভাবে ঘুমোব? কেমন করে বিশ্রাম নেব? আমার চোখের সামনেই তো অনুপ্রেরণার বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে।” সহ-নাগরিকরা তাঁর প্রতি যে আস্থা রেখেছেন, তার থেকেই তিনি কাজ করার উৎসাহ পান। ২০১৪ সালে নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার থেকে তিনি বিচ্যুত হননি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আমার দেশের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে পিছিয়ে যাব না, কখনও অসৎ উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করব না এবং ব্যক্তিগত লাভের জন্য কোনো কিছু করব না।” তিনি আরও বলেন, “আমার পক্ষে যতটা করা সম্ভব, আমি ততটা করব। এর জন্য যতটা পরিশ্রম করতে হয় আমি তা করব। আজও আমার ক্ষমতা আগের মতই শক্তিশালী রয়েছে।”

সর্বকালের সেরা গণিতজ্ঞ শ্রীনিবাস রামানুজনের প্রতি শ্রী মোদীর  গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। তিনি বলেন, রামানুজনের জীবন ও কাজ বিজ্ঞান এবং আধ্যাত্মিকতার মধ্যে নিবিড় যোগাযোগের আদর্শ উদাহরণ। রামানুজন বিশ্বাস করতেন যে দেবীর তিনি পুজারী, তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গণিত সম্পর্কে তাঁর ধারণা তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জ্ঞানের বিভিন্ন উৎসের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, নতুন নতুন ধারণাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। “কেউ কেউ তথ্যের সঙ্গে জ্ঞানকে ভুল করে এক করে ফেলেন। জ্ঞান অনেক গভীর একটি জিনিস যা বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে আহরণ করতে হয়।”   

বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি কিসে প্রভাবিত হন, এই প্রশ্ন করলে শ্রী মোদী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের আগে তিনি ভারতের ৮৫-৯০ শতাংশ জেলা সফর করেছেন। সেই সময় তিনি তৃণমূলস্তরের মানুষের সঙ্গে মিশে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। “আমি তখন কোনো ব্যাগপত্র বইতাম না। আমি একা একাই চলতাম।” তিনি বলেন, আমার কাছে ‘দেশই সর্বাগ্রে’। এই ভাবনাটি তিনি মহাত্মা গান্ধীর থেকে পেয়েছেন। গান্ধীজি যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় দেশের দরিদ্র মানুষের কথা বিবেচনা করতেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যখন আমার কাছে এসে কোন কিছু বলেন, সেটি শুধুমাত্র আমার কাছে তথ্যের সূত্র হিসেবেই বিবেচিত হয় না, আমি তা থেকে অনেক কিছু শিখিও। নতুন নতুন জিনিস শেখার মানসিকতা তাঁর রয়েছে।  এই প্রসঙ্গে তিনি কোভিড-১৯ মহামারীর সময়কালে দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন। “আমি দরিদ্র মানুষকে ভুখা পেটে ঘুমোতে দিইনি। দৈনন্দিন চাহিদার থেকে সামাজিক উত্তেজনাকে আমি বড় করে দেখিনি।” ভারতকে সেই সময় মুদ্রাস্ফীতির সমস্যার মুখোমুখি তিনি করেননি, বরঞ্চ দ্রুত উন্নয়নশীল এক অর্থনীতির রাষ্ট্র হিসেবে তাকে বিশ্বের কাছে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যে কোন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে তিনি প্রস্তুত। “যে জিনিসটি আমার দেশের জন্য, আমাদের জনগণের জন্য সঠিক, আমি সেটি গ্রহণ করতে যে কোন রকমের ঝুঁকি নিতে পারি।” এক্ষেত্রে কোন কিছু ভুল হলে তার দায় তিনি অন্য কারোর ওপর দেবেন না, সেই দায় নিজের কাঁধে তুলে নেবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি ভুল করতেই পারি, কিন্তু আমি কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করব না।”  

কৃত্রিম মেধা নিয়ে ভারতের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কৃত্রিম মেধা যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে উদ্ভাবন করতে হবে, এককভাবে কোনো দেশের পক্ষে তা করা সম্ভব নয়।” সারা বিশ্ব কৃত্রিম মেধা নিয়ে যে কাজই করুক না কেন, ভারতকে সঙ্গে না নিলে সেই কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ভারতের যথেষ্ট প্রতিভা রয়েছে যা আসলে আমাদের শক্তি। “কৃত্রিম মেধা মানুষের বুদ্ধি এবং ক্ষমতার মাধ্যমে তৈরি হওয়া এক প্রযুক্তি। অন্যদিকে ভারতের যুবশক্তির কাছে প্রকৃত মেধা রয়েছে।” প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে দেশে দ্রুত হারে ৫জি প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি উল্লেখ করেন যা পৃথিবীর অনেক দেশের থেকে বহুলাংশে এগিয়ে রয়েছে। এই প্রসঙ্গে তিনি চন্দ্রযানের মতো ব্যয়সাশ্রয়ী উদ্যোগের কথাও জানান। হলিউডের যে কোন জনপ্রিয় সিনেমার থেকেও অনেক কম পয়সায় ভারতের মহাকাশ মিশনের কাজ চলছে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের দক্ষতা এবং উদ্ভাবন শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। এই সাফল্যের কারণেই সারা বিশ্ব ভারতের প্রতিভার প্রতি আস্থাশীল। শ্রী মোদী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের নেতৃত্বদানের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেন। অধ্যবসায় এবং একসঙ্গে কাজ করার মানসিকতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। “ভারতে যাঁরা বড় হয়েছেন, বিশেষ করে যৌথ পরিবার বা উন্মুক্ত সমাজ থেকে যাঁরা উঠে এসেছেন, তাঁদের পক্ষে জটিল পরিস্থিতিতে কাজ করা এবং বড় বড় দলের সঙ্গে কাজ করা অনেক সহজ।” ভারতীয় পেশাদাররা অনেক সহজে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কৃত্রিম মেধা মানবসম্পদকে সরিয়ে দিতে পারে বলে যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কৃত্রিম মেধা মানুষের কল্পনার আধারের ওপর ভিত্তি করে যে কোন জিনিস তৈরি করতে পারে, কিন্তু কোনো প্রযুক্তিই মানুষের মাথা থেকে বেরোনো সৃজনশীলতা অথবা কল্পনার ক্ষমতার জায়গা নিতে পারে না।”

শিক্ষা, পরীক্ষা এবং ছাত্রছাত্রীদের সাফল্যের মত বিষয়গুলি নিয়ে মতবিনিময়ের সময় শ্রী মোদী বলেন, ছাত্রছাত্রীদের ওপর স্কুল এবং তাদের পরিবার বেশ কিছু বিষয় চাপিয়ে দেয়। তাঁদের সাফল্য পরীক্ষার স্থানাধিকারের ওপর বিবেচনা করা হয়। এর ফলে, ছাত্রছাত্রীরা মনে করে, দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার ওপরই তাদের জীবন নির্ভর করছে। ভারতের নতুন শিক্ষানীতি এই ভাবনাকে পরিবর্তন করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ‘পরীক্ষা পে চর্চা’র মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের চিন্তামুক্ত থাকার বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়। পরীক্ষা কখনই কোনো মানুষের ক্ষমতাকে বিচার করতে পারে না। “অনেকেই আছেন যাঁরা লেখাপড়ায় খুব ভালো ফল করতে পারেননি, কিন্তু তাঁরা ক্রিকেট মাঠে সেঞ্চুরি করেছেন। কারণ, তাঁদের শক্তি আসলে এইখানেই নিহিত রয়েছে।” তিনি ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ দেন, যে কাজটাই তারা করবে, সেটি যেন নিষ্ঠা সহকারে করে। এর মধ্য দিয়ে যে দক্ষতা তারা অর্জন করবে, তাই তাদের সাফল্যের চাবিকাঠি হবে। মানসিক চাপ এবং বিভিন্ন সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী অভিভাবকদের পরামর্শ দেন, তাঁরা যেন সন্তানকে নিজেদের স্টেটাস সিম্বল হিসেবে ব্যবহার না করেন। জীবন শুধুমাত্র পরীক্ষাকে ঘিরে আবর্তিত হয় না। তিনি ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ দেন, পরীক্ষার জন্য তারা নিজেদেরকে তৈরি করুক এবং  আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাক। তিনি মনে করেন, প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে এবং ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের প্রতি আস্থা বজায় রাখার পরামর্শ দেন তিনি। এর মধ্য দিয়েই তারা সাফল্য অর্জন করবে।  
কোন কিছু শেখার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাবনা-চিন্তার কথাও সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেন। তিনি বলেন, “আমি যখন কারোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি, তখন আমি পুরো সেই মুহূর্তে মনোনিবেশ করি। এর ফলে তখন নতুন নতুন ধারণা করায়ত্ত করতে আমার সুবিধা হয়।” তিনি সকলকে এই অভ্যাসটি অনুসরণ করার পরামর্শ দেন যার মাধ্যমে শেখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তিনি কোন কিছু শেখার পর অর্জিত শিক্ষাকে কাজে লাগানোর ওপরও গুরুত্ব দেন। “বিখ্যাত ড্রাইভারদের জীবনের কথা পড়লেই আপনি দুর্দান্ত ড্রাইভার হতে পারবেন না। আপনাকে স্টিয়ারিং ধরতে হবে এবং রাস্তায় নামতে হবে।” তিনি মৃত্যুর অনিবার্যতার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে বলেন, জীবনের গুরুত্ব সকলকে উপলব্ধি করতে হবে এবং মৃত্যুভয়কে এড়িয়ে চলতে হবে কারণ, মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। “নিজেকে সমৃদ্ধ করুন, জীবনের মান উন্নত করুন যাতে মৃত্যু না আসা পর্যন্ত আপনি সঠিকভাবে জীবনযাপন করতে পারেন।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি আশাবাদী। তিনি নিরাশা বা নেতিবাচক ভাবনা-চিন্তা থেকে দূরে থাকেন। যে কোন সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। “যুগে যুগে মানুষের স্বভাব হল পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা।” মানুষ যখন পুরনো ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন এবং বিভিন্ন সংস্কারকে বাস্তবায়িত করেন, তখনই তিনি ব্যতিক্রমী সাফল্য অর্জন করেন।

আধ্যাত্মিকতা, ধ্যান এবং বিশ্বজনীন কল্যাণের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী গায়ত্রী মন্ত্রের তাৎপর্যের কথা উল্লেখ করেন। সূর্যের ঔজ্জ্বল্যের প্রতি সমর্পিত এক আধ্যাত্মিক জ্ঞানের বর্ণনা এই গায়ত্রী মন্ত্রে করা হয়েছে। অনেক হিন্দু মন্ত্রই বিজ্ঞান এবং প্রকৃতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। প্রতিদিন এই মন্ত্রোচ্চারণ করলে তার দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া সম্ভব। ধ্যান আমাদের অমনোযোগীতা থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে। তিনি হিমালয়ে বসবাসের সময় তাঁর এক অভিজ্ঞতার কথা সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেন। সেই সময়ে এক সন্ন্যাসী তাঁকে শেখান, একটি পাত্র থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ার সময় যে অদ্ভুত ছন্দ তৈরি হয়, তার মধ্য দিয়ে কিভাবে মনোনিবেশ করা যায়। তিনি এই অভ্যাসকে “অধ্যাত্ম অনুরণন” বলে বর্ণনা করেন যার মাধ্যমে তিনি মনঃসংযোগ করার শক্তি অর্জন করেন, যা তাঁকে ধ্যান করতে সাহায্য করে। হিন্দু দর্শনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়ের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্র জড়িত আছে। “হিন্দুরা কখনই ব্যক্তিকল্যাণের কথা ভাবেনি। আমরা জাগতিক কল্যাণ এবং সকলের সমৃদ্ধি চেয়ে এসেছি।” প্রতিটি হিন্দু মন্ত্র শান্তিকে আহ্বান জানায়, জীবনের অর্থ যেখানে নিহিত রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মুনি-ঋষিদের আধ্যাত্মিক প্রথা প্রতিফলিত হয়। মতবিনিময়ের অন্তিম পর্বে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাবনাকে সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার যে সুযোগ  পেয়েছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যে অভিজ্ঞতা তিনি সঞ্চয় করেছেন, সেগুলি এতদিন তাঁর কাছেই তিনি রেখে দিয়েছিলেন, আজ এই কথোপকথনের মাধ্যমে তিনি সেগুলি প্রকাশ করলেন।

Click here to read full text speech

Explore More
প্রত্যেক ভারতীয়ের রক্ত ফুটেছে: মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী

জনপ্রিয় ভাষণ

প্রত্যেক ভারতীয়ের রক্ত ফুটেছে: মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী
Northeast hold keys to a $30 trillion economy

Media Coverage

Northeast hold keys to a $30 trillion economy
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
PM to visit Sikkim, West Bengal, Bihar and Uttar Pradesh on 29th and 30th May
May 28, 2025
QuotePM to participate in Sikkim@50: Where Progress meets purpose and nature nurtures growth
QuotePM to lay the foundation stone of City Gas Distribution project in Alipurduar and Cooch Behar districts in Alipurduar, West Bengal
QuotePM to inaugurate, lay the foundation stone and dedicate to the nation multiple development projects worth over Rs 48,520 crore in Karakat, Bihar
QuotePM to lay the foundation stone and inaugurate multiple development projects worth around Rs 20,900 crore at Kanpur Nagar, Uttar Pradesh

Prime Minister Shri Narendra Modi will visit Sikkim, West Bengal, Bihar and Uttar Pradesh on 29th and 30th May.

On 29th May, Prime Minister will visit Sikkim where he will participate in the “Sikkim@50: Where Progress meets purpose and nature nurtures growth” programme at around 11 AM. He will also lay the foundation stone and inaugurate multiple development projects in Sikkim and address the gathering on the occasion.

Later, Prime Minister will visit West Bengal where he will lay the foundation stone of City Gas Distribution project in Alipurduar and Cooch Behar districts in Alipurduar at around 2:15 PM.

Further, Prime Minister will visit Bihar and inaugurate the new terminal building of Patna Airport at around 5:45 PM.

On 30th May, at around 11 AM, he will inaugurate, lay the foundation stone and dedicate to the nation multiple development projects worth over Rs 48,520 crore in Karakat, Bihar. He will also address a public function.

Thereafter, Prime Minister will visit Uttar Pradesh where he will lay the foundation stone and inaugurate multiple development projects worth around Rs 20,900 crore at Kanpur Nagar at around 2:45 PM. He will also address a public function.

PM in Sikkim

Marking 50 glorious years of Statehood, Prime Minister will participate in Sikkim@50: Where Progress meets purpose and nature nurtures growth. The Government of Sikkim has planned a year long series of activities under the theme “Sunaulo, Samriddha and Samarth Sikkim”, celebrating the essence of Sikkim’s cultural richness, tradition, natural splendour and its history.

Prime Minister will also lay the foundation stone and inaugurate multiple development projects in Sikkim. Projects include a new 500-bedded District hospital worth over Rs 750 crore in Namchi district; Passenger Ropeway at Sangachoeling, Pelling in Gyalshing District; Statue of Bharat Ratna Atal Bihari Vajpayee ji at Atal Amrit Udyan at Sangkhola in Gangtok District among others.

Prime Minister will also release the Commemorative coin, souvenir coin and stamp of 50 years of Statehood.

PM in West Bengal

In a significant step towards expanding the City Gas Distribution (CGD) network in India, Prime Minister will lay the foundation stone of the CGD project in Alipurduar and Cooch Behar districts of West Bengal. The project, worth over Rs 1010 crore, aims to provide Piped Natural Gas (PNG) to more than 2.5 Lakh households, over 100 commercial establishments and industries besides providing Compressed Natural Gas (CNG) to vehicular traffic by establishing around 19 CNG stations in line with the Minimum Work Program (MWP) targets stipulated by the Government. It will provide convenient, reliable, environment-friendly and cost-effective fuel supply and create employment opportunities in the region.

PM in Bihar

On 29th April, Prime Minister will inaugurate the newly constructed passenger terminal of Patna Airport. The new terminal built at a cost of around Rs 1200 crore can handle 1 crore passengers per year. He will also lay the foundation stone of the new civil enclave of Bihta Airport worth over Rs 1410 crore. The Bihta airport will serve the town which is rapidly emerging as an educational hub near Patna, housing IIT Patna and the proposed NIT Patna campus.

On 30th May, Prime Minister will inaugurate, lay the foundation stone and dedicate to the nation multiple development projects worth over Rs 48,520 crore in Karakat.

Boosting power infrastructure in the region, Prime Minister will lay the foundation stone for the Nabinagar Super Thermal Power Project, Stage-II (3x800 MW) in Aurangabad district worth over Rs 29,930 crore, which will aim at ensuring energy security for Bihar and eastern India. It will boost industrial growth, create job opportunities, and provide affordable electricity in the region.

In a major boost to the road infrastructure and connectivity in the region, Prime Minister will lay the foundation stone for various road projects including the Four-Laning of the Patna–Arrah–Sasaram section of NH-119A, and the Six-Laning of the Varanasi–Ranchi–Kolkata highway (NH-319B) and Ramnagar–Kacchi Dargah stretch (NH-119D), and construction of a new Ganga bridge between Buxar and Bharauli. These projects will create seamless high-speed corridors in the state along with boosting trade and regional connectivity. He will also inaugurate the four Laning of Patna – Gaya – Dobhi section of NH – 22, worth around Rs 5,520 crore and four Laning of the elevated highway and at grade improvements at Gopalganj Town on NH – 27, among others.

In line with his commitment to improving rail infrastructure across the country, Prime Minister will dedicate to the nation the 3rd Rail Line between Son Nagar – Mohammad Ganj worth over Rs 1330 crore, among others.

PM in Uttar Pradesh

Prime Minister will lay the foundation stone and inaugurate multiple development projects aimed at boosting the region's infrastructure and connectivity. He will inaugurate the Chunniganj Metro Station to Kanpur Central Metro Station section of Kanpur Metro Rail Project worth over Rs 2,120 crore. It will include 14 planned stations with five new underground stations integrating key city landmarks and commercial hubs into the metro network. Additionally, he will also inaugurate road widening and strengthening work of G.T. Road.

In order to boost power generation capacity in the region, multiple projects will be undertaken. Prime Minister will lay the foundation stone of a 220 kV substation in Sector 28 at Yamuna Expressway Industrial Development Authority (YEIDA), Gautam Buddh Nagar to meet the growing energy demands of the region. He will also inaugurate 132 kV Substations worth over Rs 320 crore at Ecotech-8 and Ecotech-10 in Greater Noida.

Prime Minister will inaugurate a 660 MW Panki Thermal Power Extension Project in Kanpur worth over Rs 8,300 crore enhancing Uttar Pradesh's energy capacity. He will also inaugurate three 660 MW units of Ghatampur Thermal Power Project worth over Rs 9,330 crore bolstering the power supply significantly.

Prime Minister will also inaugurate Rail over bridges over Panki Power House Railway Crossing and over Panki Dham Crossing on Panki Road at Kalyanpur Panki Mandir in Kanpur. It will support the Panki Thermal Power Extension Project's logistics by facilitating coal and oil transport while also alleviating traffic congestion for the local population.

Prime Minister will inaugurate 40 MLD (Million Liters per Day) Tertiary Treatment Plant at Bingawan in Kanpur worth over Rs 290 crore. It will enable the reuse of treated sewage water, promoting water conservation and sustainable resource management in the region.

In a major boost to road infrastructure in the region, Prime Minister will lay the foundation stone for widening and strengthening of Gauria Pali Marg for industrial development in Kanpur Nagar District; and widening and strengthening of road to connect Narwal Mode (AH-1) on Prayagraj Highway to Kanpur Defence Node (4 lane) under Defence Corridor in Kanpur Nagar District which will significantly improve connectivity for the Defence Corridor, enhancing logistics and accessibility.

Prime Minister will also distribute certificates and cheques to the beneficiaries of PM Ayushman Vay Vandana Yojna, National Livelihood Mission and PM Surya Ghar Muft Bijli Yojana.