প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কোচি-ম্যাঙ্গালুরু প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন। 'এক দেশ এক গ্যাস গ্রিড' ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। কোচি-ম্যাঙ্গালুরু গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পের উদ্বোধনে দুই রাজ্যের রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীরা ছাড়াও কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।
এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী এই পাইপলাইন প্রকল্পটিকে কেরল ও কর্ণাটকের মানুষের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এই পাইপলাইনের ফলে দুই রাজ্যের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। গ্যাস-ভিত্তিক অর্থনীতির দ্রুত সম্প্রসারণ আত্মনির্ভর ভারত গঠনের উদ্দেশ্য পূরণে অত্যন্ত আবশ্যক। তাই, এই প্রকল্প সরকারের 'এক দেশ এক গ্যাস গ্রিড' গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারকেই প্রতিফলিত করে।
কোচি-ম্যাঙ্গালুরু গ্যাস পাইপলাইনের একাধিক সুবিধার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পাইপলাইন দুই রাজ্যের মানুষের জীবনযাপনে মানোন্নয়ন ঘটাবে। এমনকি দরিদ্র, মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং শিল্পোদ্যোগীদের খরচ কমাতে সাহায্য করবে। শ্রী মোদী বলেন, এই গ্যাস পাইপলাইনটি একাধিক শহরে গ্যাস বন্টন ব্যবস্থার ভিত্তি হয়ে উঠবে এবং এই শহরগুলিতে সিএনজি-ভিত্তিক পরিবহণ ব্যবস্থার প্রসারে সাহায্য করবে। এই গ্যাস পাইপলাইন ম্যাঙ্গালোর তৈল শোধনাগারে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির চাহিদা মেটাবে এবং দুই রাজ্যে দূষণের মাত্রা কমাতে সাহায্য করবে। তিনি আরও বলেন, দূষণের মাত্রা কম হলে তা পরিবেশের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ে। পক্ষান্তরে, লক্ষ লক্ষ চারাগাছ রোপণের সদৃশ্যতাই প্রতিফলিত হয়। পরিবেশের প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যে এবং স্বাস্থ্যক্ষেত্রে তাঁদের খরচ কমে। তিনি আরও বলেন, দূষণের পরিমাণ কমলে এবং দূষণমুক্ত বায়ুর মাত্রা বাড়লে তা পর্যটকদের আরও বেশি আকৃষ্ট করে। কোচি-ম্যাঙ্গালুরু পাইপলাইন নির্মাণে ১২ লক্ষ কর্মদিবস তৈরি হয়েছে এবং এই পাইপলাইনটি দুই রাজ্যে স্বনিযুক্তির ক্ষেত্রে এক অনুকূল বাতাবরণ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। এই পাইপলাইনটির ফলে দুই রাজ্যের সারশিল্প, পেট্রো-রসায়ন এবং বিদ্যুৎক্ষেত্রও লাভবান হবে। জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের কোটি কোটি বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয়ের ক্ষেত্রেও এই প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একবিংশ শতাব্দী হবে সেই দেশগুলি যারা যোগাযোগ ও দূষণমুক্ত শক্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে যে গতিতে কাজ হচ্ছে তা আগে কখনও দেখা যায়নি। তিনি বলেন, ২০১৪-র পূর্বে বিগত ২৭ বছরে কেবল ১৫ হাজার কিলোমিটার প্রাকৃতিক গ্যাসের পাইপলাইন বসানো হয়েছিল। কিন্তু এখন ১৬ হাজার কিলোমিটারের বেশি গ্যাস পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে, যা আগামী ৫-৬ বছরের মধ্যেই শেষ হবে। শ্রী মোদী উদাহরণ দিয়ে বলেন, সিএনজি জ্বালানি স্টেশনের সংখ্যা বাড়ছে। একইসঙ্গে, পিএনজি এবং এলপিজি সংযোগ আগের তুলনায় লক্ষ্যণীয় পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, রান্নার গ্যাসের সংযোগ ব্যবস্থায় অগ্রগতির ফলে কেরোসিনের ঘাটতি মেটানো গেছে। বহু রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নিজেদের কেরোসিনমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ থেকে সরকার তেল ও গ্যাসক্ষেত্রে একাধিক সংস্কার করেছে। তেল ও গ্যাসের অনুসন্ধান ও উৎপাদন, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তার বিপণন ও বন্টনে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। 'এক দেশ এক গ্যাস গ্রিড' গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থ ব্যবস্থাকে গ্যাস-ভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিণত করার চেষ্টা চলছে কারণ, গ্যাসের একাধিক পরিবেশগত উপকারিতা রয়েছে। শ্রী মোদী বলেন, ভারতের শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণ বাড়াতে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শক্তিক্ষেত্রে প্রাকৃতিক গ্যাসের অংশ বর্তমানে ৬ শতাংশ যা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। গ্যাস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের কোচি-ম্যাঙ্গালুরু প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন 'এক দেশ এক গ্যাস গ্রিড' গড়ে তোলার লক্ষ্যেই একটি পদক্ষেপ। পরিচ্ছন্ন জ্বালানি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই পাইপলাইন দেশে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির যোগান বাড়াতে সাহায্য করবে বলেও শ্রী মোদী অভিমত প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ শক্তি চাহিদা পূরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যৎ শক্তি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে শক্তির উৎসগুলিতে বৈচিত্র্যকরণের চেষ্টা চলছে। এই প্রসঙ্গে তিনি গুজরাটে প্রস্তাবিত বিশ্বের বৃহত্তম পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের কথা উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে তিনি জৈব জ্বালানির উৎপাদন ও ব্যবহারে গুরুত্ব দেন। শ্রী মোদী বলেন, চাল ও আখ থেকে ইথানল নিষ্কাশনের লক্ষ্যে কাজ চলছে। আগামী ১০ বছরে পেট্রোলে ২০ শতাংশে হারে ইথানল মিশ্রণের এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য স্থির হয়েছে। সরকার প্রতিটি নাগরিককে সুলভে দূষণমুক্ত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহে অঙ্গীকারবদ্ধ বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান। প্রধানমন্ত্রী যখন দক্ষিণের এই দুটি উপকূলীয় রাজ্যের গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পের উদ্বোধনে ভাষণ দিচ্ছেন, তখন তিনি উপকূল এলাকার দ্রুত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়নেও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির কথা তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে শ্রী মোদী বলেন, কর্ণাটক, কেরল ও দক্ষিণের অন্যান্য উপকূলীয় রাজ্যগুলিতে নীল অর্থনীতির উন্নয়নে এক সুসংবদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। নীল অর্থনীতি আত্মনির্ভর ভারত গঠনের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপকূল এলাকায় সড়ক এবং বন্দরগুলির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে মাল্টি-মোডাল যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শ্রী মোদী বলেন, “আমরা উপকূল অঞ্চলকে সহজে জীবনযাপনের এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের এক আদর্শ মডেল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছি।"
উপকূল অঞ্চলে মৎস্যজীবীদের প্রসঙ্গের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এঁরা কেবল মহাসমুদ্রের সম্পদের ওপরই নির্ভরশীল নন, বরং তাঁরা সমুদ্রসম্পদের অভিভাবক। এই লক্ষ্যে সরকার উপকূল অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণ ও সমৃদ্ধকরণে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। গভীর সমুদ্রে যাঁরা মৎস্য শিকার করেন তাঁদেরকে সাহায্যের পাশাপাশি, পৃথক মৎস্যচাষ দপ্তর, সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা এবং কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা শিল্পোদ্যোগী তথা সাধারণ মৎস্যজীবীদের কাছেও পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ২০ হাজার কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ যোজনা চালু করার প্রসঙ্গে উল্লেখ করে বলেন, এই কর্মসূচির ফলে কেরল ও কর্ণাটকের লক্ষ লক্ষ মৎস্যজীবী সরাসরি লাভবান হবেন। ভারত দ্রুততার সঙ্গে মৎস্যসম্পদ রপ্তানিতে অগ্রগতি করছে। ভারতকে প্রক্রিয়াজাত গুণমানবিশিষ্ট সামুদ্রিক খাদ্যপণ্যে এক অগ্রণী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সবরকম চেষ্টা চলছে। কৃষকদের পাশাপাশি, সমুদ্রসম্পদ আহরণকারীদের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে ভারত। এই লক্ষ্যে সমুদ্রসম্পদ আহরণকারীদের পাশাপাশি সামুদ্রিক খাদ্যপণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করা হচ্ছে।