“আমাদের সরকার দেশের প্রতিটি পরিবারের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তার সূচনা হয় মহিলাদের সুস্বাস্থ্য ও সম্মান থেকে”।
ছত্তিশগড়ের মহিলাদের ক্ষমতায়নকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী মহতারি বন্দনা যোজনার সূচনা করেছেন এবং এর প্রথম দফার জন্য অর্থ মঞ্জুর করেছেন। এই প্রকল্পে ছত্তিশগড়ে প্রতি মাসে বিবাহযোগ্যা মহিলাদের ১ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। মহিলাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও আর্থিক নিরাপত্তা দিতে এবং লিঙ্গসাম্য আনতে ও পরিবারের মহিলাদের ভূমিকাকে মজবুত করার লক্ষ্যে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে।
২০২৪ সালের পয়লা জানুয়ারি তারিখ অনুযায়ী, ২১ বছরের বেশি বয়সী যোগ্য বিবাহহিত মহিলাদের এই প্রকল্পের সুবিধা প্রদান করা হবে। এছাড়াও, বিধবা, বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া মহিলা এবং আলাদা থাকেন এমন মহিলারা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। আনুমানিক ৭০ লক্ষ মহিলা এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হবেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তাঁর ভাষণে মা দন্তেশ্বরী, মা বমলেশ্বরী ও মা মহামায়াকে প্রণাম জানান। তিনি সম্প্রতি তাঁর ছত্তিশগড় সফরকালে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস অনুষ্ঠানের কথাও স্মরণ করেন। শ্রী মোদী বলেন, আজ সরকার মহতারি বন্দনা যোজনার প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে। সামগ্রিকভাবে ৬৫৫ কোটি টাকা এর জন্য ব্যয় হচ্ছে। বিভিন্ন স্থান থেকে এই অনুষ্ঠানে যুক্ত নারী শক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি এবং ব্যক্তিগতভাবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারায় ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কাশী বিশ্বনাথ ধামে তিনি দেশের নাগরিকদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রার্থনা করেছেন বলেও জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন থেকে আপনারা প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে পাবেন – এটি মোদীর গ্যারান্টি”।
শ্রী মোদী বলেন, “যখন দেশের মা ও বোনেরা শক্তিশালী হয়ে ওঠেন, তখন পরিবার শক্তিশালী হয়। তাই, আমাদের সরকারের লক্ষ্য দেশের মা ও বোনেদের শক্তিশালী করে তোলা”। মহিলারা তাঁদের নামে পাকা বাড়ি পাচ্ছেন, উজ্জ্বলা গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়া হচ্ছে মহিলাদের নামে, ৫০ শতাংশ জন ধন অ্যাকাউন্ট মহিলাদের নামে এবং মুদ্রা যোজনার ঋণ গ্রহণকারীর ৬৫ শতাংশই মহিলা। ১০ কোটিরও বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা উপকৃত হয়েছেন এবং ১ কোটিরও বেশি মহিলা লাখপতি দিদি হয়েছেন। ৩ কোটি লাখপতি দিদি তৈরি করার লক্ষ্য পূরণ করার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগামীকালের ‘নমো দিদি’ অনুষ্ঠান জনগণের জীবনে বিশেষ পরিবর্তন আনবে।
পরিবারের ভালো থাকার উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহিলাদের ভালো থাকার উপরেই একটি পরিবারের ভালো থাকা নির্ভর করে। তিনি বলেন, “প্রতিটি পরিবারের সামগ্রিক বিকাশের জন্য আমাদের সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মহিলাদের সুস্বাস্থ্য ও সম্মান থেকেই তার সূচনা হয়”। গর্ভবতী মহিলাদের, বিশেষ করে নবজাতক শিশু ও মায়েদের মৃত্যু সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে গর্ভবতী মহিলাদের বিনামূল্যে টিকাকরণ, গর্ভকালীন অবস্থায় ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থ সাহায্য, বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা এবং আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মতো সামনের সারির স্বাস্থ্য কর্মীদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবার সুবিধা রয়েছে।
যথাযথ শৌচাগারের সুবিধা না থাকায় মহিলাদের এতদিন যে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হ’ত, সেকথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে সেই দিন এখন অতীত। এক সময় শৌচাগার না থাকায় মহিলারা অনেক কষ্ট করেছেন”। বর্তমানে মহিলাদের সম্মান রক্ষায় প্রতি বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণ করে সরকার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেকথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী মোদী নির্বাচনের সময় তাঁর সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের কথা উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি মহতারি বন্দনা যোজনা বাস্তবায়িত করার বিষয়টিতে জোর দেন। পাশাপাশি, ১৮ লক্ষ পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজও দ্রুততার সঙ্গে চলছে বলে তিনি জানান।
কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের বকেয়া বোনাস যথাসময়ে দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। অন্যদিকে, ছত্তিশগড়ের ধানচাষীদের সহায়তার জন্য অটলজির জন্মবার্ষিকীতে রাজ্য সরকার ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকার যে বোনাস দিয়েছে – সেকথাও তিনি উল্লেখ করেন। ছত্তিশগড়ে সরকার ৩ হাজার ১০০ টাকা প্রতি ক্যুইন্টাল দরে চাষীদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করবে বলে জানান।
প্রধানমন্ত্রী সকলের অংশগ্রহণে, বিশেষ করে মহিলাদের সামগ্রিক অংশগ্রহণ সুসংহত উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন। পরিশেষে, বিজেপি সরকার ছত্তিশগড়বাসীর উন্নয়নের জন্য সকল প্রতিশ্রুতি পূরণ করার লক্ষ্যে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।
ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিষ্ণুদেও সাঁই, অন্যান্য মন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধিরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।