প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ গুয়হাটি হাইকোর্টের প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে গুয়াহাটির শ্রীমন্ত শঙ্করদেব কলাক্ষেত্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি আসাম পুলিশের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ‘আসাম কপ’ – এর সূচনাও করেছেন। এই অ্যাপের মাধ্যমে কোনও ঘটনায় অভিযুক্ত এবং কোনও যানবাহনকে ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিনাল নেটওয়ার্ক ট্র্যাকিং সিস্টেম এবং ‘বাহন’ (জাতীয় স্তরের নিবন্ধীকৃত ব্যবস্থা) – এর সাহায্যে খোঁজা সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, গুয়াহাটি হাইকোর্টের প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী উদযাপনে অংশগ্রহণ করতে পারার সুযোগ পেয়ে তিনি আনন্দিত। দেশ যখন স্বাধীনতার ৭৫তম জন্ম উদযাপন করছে, সেই সময় গুয়াহাটি হাইকোর্টও ৭৫ বছর পূর্তি উপযাপন করছে। এখন সময় এসেছে এই আদালতের বিভিন্ন অভিজ্ঞতাকে সংরক্ষিত করা। নতুন লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ঘটানো পরবর্তী পদক্ষেপ, যেখানে দায়বদ্ধতাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। “গুয়াহাটি হাইকোর্টের নিজস্ব ঐতিহ্য ও পরিচিতি রয়েছে”। এই হাইকোর্টের আওতাধীন অঞ্চল সর্ববৃহৎ। কারণ, আসাম ছাড়াও অরুণাচল প্রদেশ ও নাগাল্যান্ড রাজ্যও এই আদালতের আওতাধীন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৭টি রাজ্যে গুয়াহাটি হাইকোর্টের আওতাধীন ছিল। শ্রী মোদী উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের প্রসঙ্গ তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন। তিনি আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি সহ সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি - বিশেষ করে আসামকে এই অনুষ্ঠানে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আজ বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্ম জয়ন্তী। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের সাম্য সংক্রান্ত মূল্যবোধই আধুনিক ভারতের ভিত্তি ।
শ্রী মোদী গত স্বাধীনতা দিবসে দিল্লির লালকেল্লা প্রাকার থেকে যে ভাষণ দেন, সেই ভাষণে ভারতের উচ্চাকাঙ্খী সমাজ সম্পর্কে তাঁর ভাবনার কথা বিস্তারিতভাবে জানান। আজকের অনুষ্ঠানে সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ বিচার ব্যবস্থার শক্তিশালী ও স্পর্শকাতর ভূমিকা পালন করা উচিৎ, যাতে একবিংশ শতাব্দীর ভারতবাসীর সীমাহীন উচ্চাকাঙ্খা পূরণ করা সম্ভব হয়। একটি শক্তিশালী, প্রাণবন্ত এবং আধুনিক বিচার ব্যবস্থা আমরা যাতে গড়ে তুলি, সেই প্রত্যাশাই আমাদের সংবিধান করে। আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগের একত্রে দায়বদ্ধতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা হাজার হাজার সেকেলে আইন বাতিল করেছি, বিভিন্ন বিধিনিষেধ শিথিল করেছি”। ইতোমধ্যেই ২ হাজারটি এ ধরনের আইন প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং ৪০ হাজার বিভিন্ন নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত নানা বিষয়ে অতীতে যেখানে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনা হ’ত, বর্তমানে তা প্রত্যাহার করার ফলে আদালতগুলিতে মামলার বোঝা কমেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “সরকার অথবা বিচার ব্যবস্থা, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতা সাধারণ নাগরিকদের সহজ জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত”। দেশের বিচার ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের অপরিসীম সুযোগ রয়েছে। সরকার বর্তমানে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে। প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর, আধার এবং ডিজিটাল মিশনের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, এর মধ্য দিয়ে দেশের দরিদ্র মানুষের অধিকার নিশ্চিত হচ্ছে। পিএম স্বামীত্ব যোজনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর ফলে, দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর অতিরিক্ত মামলার বোঝা কমেছে। বর্তমানে উন্নত দেশগুলিতেও সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকায় নানা সমস্যা দেখা দেয়। ভারতে ১ লক্ষেরও বেশি গ্রামে ড্রোনের সাহায্যে মানচিত্র তৈরি করা হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে সম্পত্তি কার্ড পৌঁছে গেছে। ফলস্বরূপ, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদের কারণে যে মামলাগুলি করা হ’ত, তার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে এবং মানুষের জীবনযাত্রা সহজতর হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচার ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের জন্য প্রযুক্তির যথেষ্ট প্রয়োগের প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্টের ই-কমিটির কাজের প্রশংসা করে ই-কোর্ট মিশনের তৃতীয় পর্যায়ের কথা তিনি জানান। এবারের বাজেটে এই বিষয়টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আজ বিশ্ব জুড়ে বিচার ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম মেধাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। “কৃত্রিম মেধার সাহায্যে সাধারণ নাগরিকদের জন্য বিচার ব্যবস্থার সুবিধা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে”।
বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য বিকল্প ব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় পর্যায়ে একটি ঐতিহ্যশালী বিকল্প ব্যবস্থাপনা রয়েছে। এই অঞ্চলের স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন রীতিনীতি সম্বলিত ৬টি পুস্তক গুয়াহাটি হাইকোর্ট প্রকাশ করেছে। এর প্রশংসা করে তিনি আঞ্চলিক রীতি-নীতিগুলিকে আইনের পাঠক্রমে যুক্ত করার অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সহজে বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে সঠিক্ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। এর ফলে, নাগরিকদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি পাবে। সমস্ত আইন সহজ-সরল ভাবে বোঝানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘ভাষিনী’ পোর্টালের সাহায্যে প্রত্যেক নাগরিক যাতে তাঁর ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন, সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আদালতগুলিও এই পোর্টালের সুফল পেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাঁরা সামান্য অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে বছরের পর বছর ন্যায় বিচারের আশায় বসে রয়েছেন, তাঁদের প্রতি সরকার ও বিচার ব্যবস্থার সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন। এইসব মানুষগুলির মামলা লড়ার জন্য অর্থও অনেক সময় থাকে না। বিভিন্ন সংশোধনাগারে আটক এইসব বন্দীদের আর্থিক সাহায্যও দেওয়ার কথা এবারের বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রাজ্যের মাধ্যমে কেন্দ্র অর্থ সাহায্য পাঠাবে।
শ্রী মোদী একটি শ্লোকের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, “যাঁরা ধর্মকে রক্ষা করেন, ধর্মও তাঁদের সুরক্ষা দেয়”। আমাদের ধর্ম এই বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিয়েছে। দেশকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজের ক্ষেত্রে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। এই ভাবনা থেকেই ‘বিকশিত ভারত’ – এর লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।
অনুষ্ঠানে আসামের রাজ্যপাল শ্রী গুলাব চাঁদ কাটারিয়া, আসামের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী পেমা খান্ডু, কেন্দ্রীয় আইন ও ন্যায় বিচার মন্ত্রী শ্রী কিরেণ রিজিজু, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হৃষিকেশ রায় এবং গুয়াহাটি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সন্দীপ মেহতা সহ বিশিষ্ট জনেরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রেক্ষাপট:
গুয়াহাটি হাইকোর্ট ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আসাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং অরুণাচল প্রদেশ – এই ৭টি রাজ্যের মামলার নিষ্পত্তি ২০১৩ সাল পর্যন্ত এই আদালত থেকে হ’ত। ২০১৩ সালে মণিপুর, মেঘালয় ও ত্রিপুরায় পৃথক হাইকোর্ট তৈরি হয়েছে। বর্তমানে আসাম, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম এবং অরুণাচল প্রদেশ – এই রাজ্যগুলির মামলার নিষ্পত্তি গুয়াহাটি হাইকোর্ট থেকে হয়ে থাকে। নাগাল্যান্ডের কোহিমা, মিজোরামের আইজল এবং অরুণাচল প্রদেশের ইটানগরে এই হাইকোর্টের তিনটি স্থায়ী বেঞ্চ রয়েছে।
गुवाहाटी हाइकोर्ट की अपनी एक अलग विरासत रही है, अपनी एक पहचान रही है। pic.twitter.com/03M7ppDXKr
— PMO India (@PMOIndia) April 14, 2023
आज डॉ. बाबा साहेब आंबेडकर की जयंती है।
— PMO India (@PMOIndia) April 14, 2023
हमारे संविधान के निर्माण में बाबा साहेब की मुख्य भूमिका रही है। pic.twitter.com/gFnB2LJCUp
21वीं सदी में हर भारतवासी के सपने और उसकी आकांक्षाएँ असीम हैं। pic.twitter.com/heF4JARnW8
— PMO India (@PMOIndia) April 14, 2023
We repealed thousands of archaic laws, reduced compliances. pic.twitter.com/2qugunoGZt
— PMO India (@PMOIndia) April 14, 2023