প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন দিল্লিতে আজ লাচিত বরফুকনের ৪০০তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে বর্ষব্যাপী উদযাপনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। এই উপলক্ষে ‘লাচিত বরফুকন – আসামস হিরো হু হল্টেড দ্য মুঘলস’ – বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অকথিত বীরদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের প্রধানমন্ত্রীর দিশা মতো লাচিত বরফুকনকে সম্মান জানাতে তাঁর ৪০০তম জন্ম জয়ন্তীর বর্ষব্যাপী উদযাপনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে আজ অনুষ্ঠিত হয়। আসামের অহম রাজ্যত্বের সৈন্যদলের বিখ্যাত জেনারেল ছিলেন লাচিত বরফুকন। তিনি মোঘলদেরকে পরাজিত করেন এবং ঔরঙ্গজেবের নেতৃত্বে মোঘলদের ক্রমাগত রাজ্য বিস্তারের পথকে থমকে দেন।
সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আসাম রাজ্যের প্রতি তাঁর সম্মান প্রদর্শন করেন যেখানে লাচিতের মতো বীর সন্তানরা জন্ম নিয়েছেন। “তাঁর ৪০০তম জন্মবার্ষিকীতে লাচিত বরফুকনের বীরত্বের প্রতি নতমস্তকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। আসামের সংস্কৃতি রক্ষায় তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন” – বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
শ্রী মোদী বলেন, দেশ যখন ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ উদযাপন করছে তখন লাচিত বরফুকনের ৪০০তম জন্ম জয়ন্তী পালিত হচ্ছে। আসামের ইতিহাসে বীর লাচিতের জয়গাথা এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায় বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। এই উৎসব উপলক্ষে ভারতের চিরন্তন সংস্কৃতি, চিরকালীন বীরত্ব এবং চিরন্তন অস্তিত্বের এই মহান ধারাকে আমি সম্মান জানাই। এই দাসত্বের মানসিকতা থেকে ভারতের মুক্ত হওয়ার কথা পুনরায় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে আমরা ভারতের ঐতিহ্যে আত্মশ্লাঘা অনুভব করি। ভারত কেবলমাত্র তার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকেই উদযাপন করছে না, তার ইতিহাসের যাত্রাপথে অপতিত বীর বীরঙ্গনাদের কাজকেও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। লাচিত বরফুকনের মতো মা ভারতীয় অমর সন্তানরা অমৃতকালের সঙ্কল্পের রূপদানের অনুপ্রেরণাস্বরূপ। তাঁরা আমাদের গৌরবময় ইতিহাস এবং পরিচয় সম্পর্কে দেশবাসীকে অবহিত করে এবং দেশের জন্য আত্মনিবেদনের উৎসাহ যোগায়।
মানব অস্তিত্বের হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর বুকে অনেক সভ্যতার আগমন ঘটেছে। তাদের অনেকগুলিকেই দুর্দমনীয় মনে হলেও সময়ের রথচক্রে তারা নতজানু হয়েছে। অন্য সভ্যতাগুলির সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতার ব্যতিক্রম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্যসব সভ্যতাগুলির অবশিষ্টাংশ থেকে বিশ্ব আজ তাদের মূল্যায়নের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ভারত ইতিহাসের যাতাপথে অজানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও বহিঃশত্রুর অকল্পনীয় সন্ত্রাস সহ্য করেও একই শক্তি এবং অনুভূতির সঙ্গে আজও চিরন্তন হয়ে রয়েছে। এর কারণ হল, যখনই এই সঙ্কট ঘনিভূত হয়েছে, কিছু ব্যক্তিত্বের উদয় হয়েছে সেই সঙ্কট নিরসনে। এই অধ্যায় জুড়ে সাধক এবং বিদ্বানেরা ভারতের আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে রক্ষা করতে উদয় হয়েছেন। লাচিত বরফুকনের মতো বীর হৃদয় মানবেরা দেখিয়েছেন যে ধর্মান্ধতা এবং সন্ত্রাসের বিনাশ হয় কিন্তু, ভারতীয় জীবনের অমরণ দীপশিক্ষা চিরন্তন থেকে যায় বলে প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন।
আসামের ইতিহাসের ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের সাংস্কৃতিক যাত্রার মূল্যবান ঐতিহ্যের সঙ্গে তা যুক্ত। চিন্তা, আদর্শ, সমাজ, সংস্কৃতি, বিশ্বাস এবং ধারার এ এক মিলনক্ষেত্র। আসাম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অতুলনীয় বীরত্বের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানকার মানুষেরা প্রত্যক্ষ করেছেন তুর্ক, আফগান, মোঘলদের বিভিন্ন সময় হটিয়ে দেওয়া হয়েছে। মোঘলরা যদিও গুয়াহাটি দখল করেছিল, লাচিত বরফুকনের মতো বীর মানব মোঘল সাম্রাজ্যের স্বৈরাতান্ত্রিক শাসকদের হাত থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছিল। বীর লাচিত বরফুকনের যে বীরত্ব প্রদর্শিত হয়েছিল সরাইঘাটে তা কেবলমাত্র দেশমাতৃকার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার নিদর্শনই নয়, সমগ্র আসাম এলাকাকে সংযুক্ত করতে তিনি একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করেছিলেন। সেখানকার প্রত্যেক নাগরিক মাতৃভূমির রক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন, “লাচিত বরফুকনের বীরত্ব ও সাহসিকতা আসামের পরিচয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত।”
শ্রী মোদী আরও বলেন, “ভারতের ইতিহাস দাসত্বের ইতিহাস নয়। ভারতের ইতিহাস হল বীরের আত্মপ্রকাশের ইতিহাস। অনন্ত বীর মানবের সাহসিকতার তা এক নিদর্শনস্বরূপ। তিনি আরও বলেন, ভারতের ইতিহাস হল স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে অদম্য সাহস এবং বীরত্ব নিয়ে প্রতিরোধের। দাসত্বের সময়কালে ষড়যন্ত্র হিসেবে যে ইতিহাস লেখা হয়েছিল দুর্ভাগ্যক্রমে স্বাধীনতার পরেও আমাদেরকে তাই শেখানো হয়েছে। স্বাধীনতার পরেও যে সমস্ত বিদেশিরা আমাদেরকে দাস করে রেখেছিল তাদের সেই সমস্ত বিষয়সূচিগুলি পরিবর্তনের দরকার ছিল যা করা হয়নি। এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অদম্য প্রতিরোধের কাহিনী জোর করে চেপে রাখা হয়েছে। এই শোষণকালে বীরত্বের অনেক গল্পগাথা রয়েছে। মূল ধারায় এগুলিকে জায়গা না দেওয়ার যে ভুল হয়েছে তাকে এখন আমরা সংশোধনের চেষ্টা চালাচ্ছি।” তিনি বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠান যে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এই পরিবর্তন তাকেই সূচিত করে।
এইসব বীরদের জীবনগাথা উদযাপনের বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আসাম সরকারকে প্রধানমন্ত্রী সাধুবাদ জানান। এই সমস্ত বীরদের স্মরণে বিভিন্ন সংগ্রহালয় এবং স্মৃতিসৌধ তৈরি হওয়ার উল্লেখ করেন তিনি। আত্মত্যাগ এবং বীরত্বের ইতিহাস তরুণ প্রজন্ম যাতে জানতে পারে সেজন্যই এই উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “লাচিত বরফুকনের জীবন ‘দেশই প্রথম’ – এই মন্ত্রে আমাদেরকে উজ্জীবিত করে। তাঁর জীবন আমাদেরকে আত্মপরতার ঊর্ধ্ব উঠে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে। তাঁর জীবন আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছে যে স্বজনপোষণ ও পরিবারতন্ত্র নয়, দেশের স্বার্থই সর্বাগ্রে।”
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, “কোনও রাষ্ট্র যখন তার প্রকৃত অতীতকে জানতে পারে তখন সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে; আমাদের ইতিহাস সম্বন্ধে বোধ যেন কয়েকটি দশক বা শতকের মধ্যে আটকে না থাকে তা স্থির করা আমাদের দায়িত্ব।” ভারতরত্ন ভূপেন হাজারিকার কয়েকটি লাইনকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্রমাগত স্মরণের মধ্য দিয়েই আমরা আগামী প্রজন্মকে ইতিহাসের সঠিক চিত্রপট উপহার দিতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব দেন ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের মতোই লাচিত বরফুকনকে নিয়ে একটা বড় নাটক উপস্থাপনা করার এবং দেশের সমস্ত প্রান্তে তা নিয়ে যাওয়া। এর ফলে, ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ – এই সঙ্কল্প আরও বেশি জোরদার হবে। “ভারতকে আমাদের উন্নত রাষ্ট্র করে তুলতে হবে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে করতে হবে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হাব। আমি স্থির নিশ্চিত, বীর লাচিত বরফুকনের ৪০০তম জয়ন্তী সেই সঙ্কল্প পূরণে আমাদেরকে সাহস যোগাবে এবং দেশকে লক্ষ্য অর্জনে আমাদেরকে সাহায্য করবে” – বলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছনোর পর বিজ্ঞান ভবনের পশ্চিম দ্বারে গ্রামীণ আসামকে যেভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তা তিনি প্রত্যক্ষ করেন এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ওপর এক প্রদর্শনী তিনি ঘুরে দেখেন। এরপর লাচিত বরফুকনের আলোকচিত্রের সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা জানান।
আসামের রাজ্যপাল অধ্যাপক জগদীশ মুখী, মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্বশর্মা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল, সাংসদ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, শ্রী তোপোন কুমার গগৈ এবং আসাম সরকারের অন্যান্য প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব দেন ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের মতোই লাচিত বরফুকনকে নিয়ে একটা বড় নাটক উপস্থাপনা করার এবং দেশের সমস্ত প্রান্তে তা নিয়ে যাওয়া। এর ফলে, ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ – এই সঙ্কল্প আরও বেশি জোরদার হবে। “ভারতকে আমাদের উন্নত রাষ্ট্র করে তুলতে হবে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে করতে হবে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হাব। আমি স্থির নিশ্চিত, বীর লাচিত বরফুকনের ৪০০তম জয়ন্তী সেই সঙ্কল্প পূরণে আমাদেরকে সাহস যোগাবে এবং দেশকে লক্ষ্য অর্জনে আমাদেরকে সাহায্য করবে” – বলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
PM @narendramodi begins his speech by bowing to the great land of Assam. pic.twitter.com/rCgewISras
— PMO India (@PMOIndia) November 25, 2022
India is celebrating the 400th birth anniversary of Lachit Borphukan at a time when the country is marking 'Azadi Ka Amrit Mahotsav.' pic.twitter.com/vrRP15l3Ej
— PMO India (@PMOIndia) November 25, 2022
Saints and seers have guided our nation since time immemorial. pic.twitter.com/40cuMiZWzc
— PMO India (@PMOIndia) November 25, 2022
The history of India is about emerging victorious, it is about the valour of countless greats. pic.twitter.com/pG58Mn7CZ0
— PMO India (@PMOIndia) November 25, 2022
Countless greats fought the evil forces but unfortunately their valour wasn't recognised. pic.twitter.com/ZhNY88JO0Q
— PMO India (@PMOIndia) November 25, 2022
Lachit Borphukan's life inspires us to live the mantra of 'Nation First.' pic.twitter.com/nsSfwcR6VT
— PMO India (@PMOIndia) November 25, 2022