“আমরা, অর্থাৎ দেশের জনসাধারণ – এই কথাটি একাধারে আহ্বান, আস্থা ও শপথ গ্রহণের প্রতীকী ব্যঞ্জনা। সংবিধানের এই শক্তির মধ্যেই নিহিত রয়েছে ভারতাত্মার মনোবল। এই শক্তিই আবার ভারতকে গণতন্ত্রের জননী রূপে বিশ্বে পরিচিতি এনে দিয়েছে। আধুনিক সময়কালে জাতির সাংস্কৃতিক ও নৈতিক আবেগগুলির জন্ম হয়েছে দেশের সংবিধানকে ঘিরেই।”
সংবিধান দিবস উপলক্ষে আজ দেশের শীর্ষ আদালতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। ১৯৪৯ সালের এরকমই একটি দিনের কথা প্রসঙ্গত স্মরণ করেন তিনি। কারণ, এই দিনটিতেই দেশের এক নতুন ভবিষ্যতের সূচনা হয়েছিল। স্বাধীনতার এই অমৃত মহোৎসবকালে সংবিধান দিবসের গুরুত্বের কথাও তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সংবিধান রচনার সঙ্গে যুক্ত ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর সহ অন্যান্যদের উদ্দেশে এদিন গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।
স্বাধীনতার বিগত ৭০ বছরে দেশের উন্নয়নের যাত্রাপথে তথা ভারতীয় সংবিধানের প্রসার ও প্রচারে আইন, বিচার ও প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত অসংখ্য মানুষের অবদান রয়েছে। আজকের এই বিশেষ দিনটিতে তাঁদের সকলকেই অশেষ ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
এই প্রসঙ্গে ভারতের ইতিহাসে এক অন্ধকারময় দিনের কথাও স্মরণ করেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, সেই বছরটিতে দেশ যখন সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ দিনটি উদযাপনে ব্যস্ত, ঠিক তখনই এই ২৬ নভেম্বর তারিখটিতেই ভারতকে এক জঘন্যতম সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের শিকার হতে হয়। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছিল তারা ছিল মানুষ তথা মানবতার শত্রু। মুম্বাইতে সেই কাপুরুষোচিত জঙ্গি হামলায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশে আরও একবার শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী।
শ্রী মোদী বলেন, বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ভারতের উন্নয়নশীল অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি সকলের কাছেই এক আশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের স্থিতিশীলতা সম্পর্কে যাবতীয় আশঙ্কা ও উদ্বেগকে তুচ্ছ প্রমাণ করে ভারত এখন সর্বশক্তি নিয়ে এগিয়ে চলেছে তার বৈচিত্র্যের গর্বকে সঙ্গে করে। দেশের এই সাফল্যের মূলে রয়েছে আমাদের সংবিধান।
গণতন্ত্রের জননী রূপে ভারত যেভাবে সংবিধানের আদর্শকে আরও মজবুত করে তোলার মাধ্যমে জনমুখী নীতিগুলির বাস্তবায়ন তথা নারী ও দরিদ্রের ক্ষমতায়ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে বিশেষ আনন্দ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের আইনগুলি এখন আরও সহজ ও সরল করে তোলা হয়েছে যার ফলে সাধারণ মানুষও তার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন। বিচার যাতে সঠিক সময়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় সেই লক্ষ্যে বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে যে কর্তব্যগুলির কথা উল্লেখ করেছিলেন আজ তার পুনরাবৃত্তি করে বলেন, এই কর্তব্য সম্পাদন হল সাংবিধানিক শক্তিরই এক বহিঃপ্রকাশ। দেশের অমৃতকালকে ‘কর্তব্যকাল’ রূপে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, স্বাধীনতার এই অমৃতকালেই দেশের স্বাধীনতার ৭৫টি বছর পূর্ণ হতে চলেছে। এর মধ্য দিয়ে আগামী ২৫ বছরের লক্ষ্যে আমরা উন্নয়নের যাত্রাপথে সামিল হয়েছি। তাই, জাতি গঠনের উদ্দেশ্যে কর্তব্য পালনের সেই মন্ত্রই হল আমাদের কাছে সর্বাগ্রগণ্য।
শ্রী মোদী বলেন, স্বাধীনতার এই অমৃতকাল হল এমনই একটি সময়কাল যা জাতি গঠনের কাজে দেশবাসীকে কর্তব্যনিষ্ঠ হয়ে ওঠার আহ্বান জানায়। ব্যক্তিগত তথা প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে কর্তব্য পালনই হল আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এই কর্তব্যপথ অনুসরণ করেই উন্নয়নের নতুন নতুন শিখরে দেশকে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর এক সপ্তাহকালের মধ্যেই ভারত জি-২০-র সভাপতিত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে চলেছে। তাই, সঙ্ঘবদ্ধভাবে বিশ্বের দরবারে দেশের খ্যাতি ও সম্মানকে তুলে ধরা আমাদের সমবেত দায়িত্ব। গণতন্ত্রের জননী রূপে ভারতের যে পরিচিতি রয়েছে তাকে আরও সুসংহত করে তুলতে হবে।
দেশের যুবশক্তির কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, আমাদের সংবিধান একাধারে উদার চিন্তাভাবনা, ভবিষ্যৎ দর্শন ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য সুপরিচিত। তাই, ভারতের অগ্রগতির ইতিহাসে যুবশক্তির ভূমিকা ও অবদানেরও এক স্বতন্ত্র স্বীকৃতি প্রাপ্য।
ভারতের সংবিধান সম্পর্কে দেশের যুব সমাজকে সচেতন করে তোলার ওপরও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মানুষে মানুষে সমতা ও ক্ষমতায়নের যে কথা বলা হয়েছে সংবিধানের নীতিগুলিতে, সে সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে হবে বর্তমান প্রজন্মের তরুণ ও যুবকদের। সংবিধান রচনার পেছনে যে ইতিহাস ও কর্মপ্রচেষ্টা রয়েছে সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে হবে তাঁদের। এর মধ্য দিয়েই দেশের সংবিধান সম্পর্কে তাঁদের আগ্রহ ও ঔৎসুক্য বৃদ্ধি পাবে।
দেশের সংবিধান রচনাকালে যে ১৫ জন মহিলা সদস্য যুক্ত ছিলেন তাঁদের মধ্যে দাক্ষায়নী ভেলাযুধানের কথা বিশেষভাবে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দাক্ষায়নী এসেছিলেন সমাজের অবহেলিত মানুষদের প্রতিনিধি হয়ে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সংবিধান রচনার কাজে তাঁর অবদানের কথা খুব কমই শোনা যায়। দলিত ও শ্রমজীবী মানুষের বহু বিষয়কেই তিনি সেই সময় সামনে আনতে পেরেছিলেন। একইসঙ্গে দুর্গাবাঈ দেশমুখ, হংস মেহতা এবং রাজকুমারী অমৃত কাউর সহ অন্যান্য মহিলা সদস্যের কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, নারীকল্যাণ সম্পর্কিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁরা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। দেশের যুব সমাজ যখন এই সত্যগুলি জানতে পারবেন, তখন অনেক প্রশ্নেরেই উত্তর খুঁজে পাওয়া তাঁদের পক্ষে সহজ হয়ে উঠবে। শুধু তাই নয়, এর মধ্য দিয়ে সংবিধানের প্রতি তাঁদের আনুগত্যও বৃদ্ধি পাবে যা দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র তথা ভবিষ্যৎকে আরও শক্তিশালী করে তোলার পক্ষে কাজ করে যাবে।
শ্রী মোদী বলেন, স্বাধীনতার এই অমৃতকালে দেশের প্রয়োজন হল সংবিধানের প্রতি এই আনুগত্য, যা দেশকে এক উন্নত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে। আজ এই সংবিধান দিবসে সেই লক্ষ্যে আমাদের আবার নতুন করে সঙ্কল্পবদ্ধ হয়ে ওঠার শক্তি সঞ্চারিত হবে এর মধ্য দিয়ে।
আজ সংবিধান দিবসের ঐ অনুষ্ঠানে ই-আদালত কর্মসূচির আওতায় কয়েকটি নতুন উদ্যোগেরও সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলির মধ্যে রয়েছে – ভার্চ্যুয়াল জাস্টিস ক্লক, JustIS মোবাইল অ্যাপ ২.০, ডিজিটাল আদালত এবং S3WaaS ওয়েবসাইট।
দেশের শীর্ষ আদালতে আয়োজিত আজকের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধান বিচারপতি ডঃ ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, কেন্দ্রীয় আইন ও বিচার মন্ত্রী শ্রী কিরেন রিজিজু, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কাউল ও এস আব্দুল নাজির, কেন্দ্রীয় আইন ও বিচার প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক এস পি বাঘেল, দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল শ্রী আর ভেঙ্কটরামানি, ভারতের সলিসিটর জেনারেল শ্রী তুষার মেহতা এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শ্রী বিকাশ সিং।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ই-আদালত কর্মসূচির আওতায় যে উদ্যোগগুলির আজ সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী, তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল বাদী-বিবাদী, আইনজীবী এবং বিচার ব্যবস্থার কাছে আইসিটি-র মাধ্যমে আদালত সংক্রান্ত বিশেষ পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া।
‘ভার্চ্যুয়াল জাস্টিস ক্লক’ হল এমনই একটি উদ্যোগ যার মাধ্যমে আদালত পর্যায়ে বিভিন্ন তথ্যগত পরিসংখ্যান তুলে ধরা হবে। কোনও মামলার সূচনা, তার নিষ্পত্তি অথবা মামলা মুলতুবি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য এর মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব হবে। দেশের আদালতগুলির কাজকর্মকে আরও স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ করে তোলাই এই উদ্যোগের এক বিশেষ লক্ষ্য। কোন মামলা বর্তমানে কোন অবস্থায় রয়েছে তার খুঁটিনাটিও জানা সম্ভব হবে এই ব্যবস্থায়। ‘ভার্চ্যুয়াল জাস্টিস ক্লক’-এর মাধ্যমে জনসাধারণ জেলা আদালতগুলির ওয়েবসাইটে বিভিন্ন তথ্যের খুঁটিনাটি সংগ্রহ করতে পারবেন।
অন্যদিকে, ‘JustIS মোবাইল অ্যাপ ২.০’ হল এমনই একটি মাধ্যম যার সাহায্যে বিচার বিভাগীয় আধিকারিকরা আরও সুষ্ঠুভাবে আদালত তথা মামলা পরিচালনার কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। কোন কোন মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে বা কোনগুলির নিষ্পত্তি হয়েছে, সে সম্পর্কেও তাঁরা অবহিত হতে পারবেন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে দেশের উচ্চ আদালত এবং শীর্ষ আদালতের বিচারপতিদের কাজকর্মে সুবিধা হবে। দেশের সবক’টি রাজ্য ও জেলায় মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তাঁরা তথ্যের হদিশ পাবেন।
আবার, ডিজিটাল আদালত হল এমনই একটি পদক্ষেপ যার মাধ্যমে বিচারপতিরা ডিজিটাল আকারে আদালতের যাবতীয় রেকর্ড দেখতে পাবেন। আদালতের কাজকর্মে কাগজের ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যেই এই বিশেষ উদ্যোগ।
‘S3WaaS ওয়েবসাইট’ হল এমনই একটি কাঠামো যার মাধ্যমে জেলা আদালতগুলির বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য ও পরিষেবার কাজগুলি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। এটি হল এক ধরনের ক্লাউড সার্ভিস। একাধিক ভারতীয় ভাষায় এই ওয়েবসাইটগুলি তৈরি করা হবে। ফলে, তা হয়ে উঠবে নাগরিক-বান্ধব। এটির আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল দেশের দিব্যাঙ্গজনরাও উপকৃত হবেন এর মাধ্যমে।
PM @narendramodi extends Constitution Day greetings to the nation. pic.twitter.com/Xk6l6J8hZp
— PMO India (@PMOIndia) November 26, 2022
PM @narendramodi pays tribute to those who lost their lives during 26/11 terror attack in Mumbai. pic.twitter.com/NjRgk6lbWq
— PMO India (@PMOIndia) November 26, 2022
‘We the people’ एक आह्वान है, एक प्रतिज्ञा है, एक विश्वास है। pic.twitter.com/XTTVOWAQ4e
— PMO India (@PMOIndia) November 26, 2022
आज़ादी का ये अमृतकाल देश के लिए कर्तव्यकाल है। pic.twitter.com/EkmHnQooLv
— PMO India (@PMOIndia) November 26, 2022
Our Constitution is youth centric. pic.twitter.com/t35sgsDrlv
— PMO India (@PMOIndia) November 26, 2022
The eyes of the entire world are set on India. pic.twitter.com/j8Nht97FSt
— PMO India (@PMOIndia) November 26, 2022