বন্ধুগণ,
প্রথমেই আমি আপনাদের সকলকে, বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে, বিশেষত, আমাদের খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের প্রত্যেককে এই বিশেষ উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানাই। মেরি খ্রিসমাস!
এই বিশেষ ও পবিত্র অনুষ্ঠানে আপনারা সকলে আমার বাড়িতে সমবেত হওয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। যখন ইন্ডিয়ান মাইনরিটি ফাউন্ডেশন প্রস্তাব রেখেছিল, সকলে মিলে একসঙ্গে খ্রিসমাস উদযাপন করার, তখন আমি প্রস্তাব দিই, তা হলে সেই অনুষ্ঠানটি আমার বাড়িতে হবে না কেন। আর তাই, এখানে এই আয়োজন করা হয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত। অনিলজী অসম্ভব সাহায্য করেছেন। তাই আমি তাঁর প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। মাইনরিটি ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগের জন্যও আমি কৃতজ্ঞ।
খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নতুন কিছু নয়; যথেষ্ট পুরনো। অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক আমাদের মধ্যে রয়েছে। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন আমি প্রায়শই খ্রীস্টান সম্প্রদায় এবং তাঁদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। মণিনগর, যেখান থেকে আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতাম, সেখানে প্রচুর খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী বসবাস করেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বছর কয়েক আগে মহান পোপের সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। আমার জীবনে সেটি প্রকৃত অর্থেই এক স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল। সামাজিক সম্প্রীতি, বিশ্ব জুড়ে ভ্রাতৃত্ববোধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সর্বাঙ্গীন উন্নয়ন সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি, যাতে এই পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে তোলা যায়।
বন্ধুগণ,
আমরা খ্রিসমাসের মাধ্যমে যীশু খ্রীস্টের জন্মদিনটি উদযাপন করি। এর মধ্য দিয়ে তাঁর জীবন, মূল্যবোধ এবং যে বার্তা তিনি দিয়েছেন, তা স্মরণ করা হয়। প্রভূ যীশু করুণা ও সেবার আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি এমন এক সমাজ গড়ে তুলতে ব্রতী হয়েছিলেন, যেখানে প্রত্যেকের জন্য ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত হবে এবং সমাজে যথাযথ সমন্বয় ঘটবে। জাতীয় উন্নয়নে আমাদের উদ্যোগকে এই মূল্যবোধগুলি পথ দেখায়।
বন্ধুগণ,
সমাজের বিভিন্ন ধারা্র মধ্যে আমরা এক অভিন্ন মূল্যবোধ উপলব্ধি করি, যা আমাদের সকলের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পবিত্র বাইবেল ঈশ্বরের উপহারগুলিকে কাজে লাগিয়ে অন্যকে সেবা করতে গুরুত্ব আরোপ করে। এটি সেবাই পরম ধর্ম – সেই ভাবনারই প্রতিফলন। পবিত্র বাইবেলে সত্যের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, বলা হয় – সত্যই আমাদের মুক্তির পথ দেখায়। কাকতালিয়ভাবে প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করার এই ভাবনাটি পবিত্র উপনিষদেও রয়েছে। আমাদের অভিন্ন মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যকে পাথেয় করে আমরা সকলে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে পারি। একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক ভারতকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একতা, সম্প্রীতি এবং ‘সবকা প্রয়াস’ – এর ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।
বন্ধুগণ,
মহান পোপ একবার খ্রিসমাস উপলক্ষে তাঁর ভাষণে — যাঁরা দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য কাজ করে চলেছেন, তাঁদের জন্য আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, দারিদ্র্য ব্যক্তি-বিশেষের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে। মহান পোপের এই বক্তব্য আসলে আমাদের উন্নয়নের ভাবনার প্রতিফলন। আমাদের মন্ত্র হ’ল, ‘সবকা সাথ – সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস – সবকা প্রয়াস’।
সরকারের দায়িত্ব পালন করার সময় প্রত্যেকটি মানুষের কাছে যাতে উন্নয়নের সুফল পৌঁছয়, আমরা তা নিশ্চিত করছি। খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য, বিশেষত দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষরাও দেশের উন্নয়ন যাত্রার সুফল পাচ্ছেন। আমার মনে আছে, যখন আমরা মৎস্যজীবীদের জন্য পৃথক একটি দপ্তর চালু করি, তখন খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের অনেকে, বিশেষত মৎস্যজীবী ভাই ও বোনেরা আমাদের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তাঁরা আমাকে সম্মানিতও করেছেন।
বন্ধুগণ,
খ্রিসমাস উপলক্ষে আমি বলতে চাই, দেশের জন্য খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরা যে কাজ করেছেন, সেই অবদানকে ভারত গর্বের সঙ্গে স্বীকৃতি জানায়। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় খ্রীস্টান সম্প্রদায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বাধীনতা আন্দোলনে বহু খ্রীস্টান নেতা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে্ন। এক্ষেত্রে সেন্ট স্টিফেনস্ কলেজের অধ্যক্ষ সুশীল কুমার রুদ্রের পরামর্শ ও তিনি পেয়েছিলেন, বলে জানান মহাত্মা গান্ধী।
বন্ধুগণ,
খ্রীস্টান সম্প্রদায় সমাজকে পথ দেখানোর ক্ষেত্রে সবসময়েই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যে কোনও সমাজ সেবার কাজে আপনারা সামনের সারিতে সবসময় থাকেন এবং দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষদের সেবা করেন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভারত জুড়ে খ্রীস্টীয় প্রতিষ্ঠানগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বন্ধুগণ,
২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ে তোলার যে লক্ষ্য আমরা নিয়েছি, তা পূরণ করার জন্য আমাদের দ্রুতগতিতে উন্নয়ন যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। উন্নয়নের এই যাত্রায় আমাদের সবচেয়ে বড় শরিক যুবসম্প্রদায়। তাই, যুবসম্প্রদায়কে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। এর মধ্য দিয়ে সুস্থায়ী উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। ফিট ইন্ডিয়া, মিলেটের ব্যবহার, পুষ্টির উপর গুরুত্ব আরোপ, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা এবং মাদক বিরোধী আন্দোলন – প্রতিটি উদ্যোগই আজ জনআন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আমি খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দকে, বিশেষত যাঁরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের এই বিষয়গুলিতে সচেতনতা গড়ে তুলতে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
খ্রিসমাসের সময় উপহার দেওয়ার একটি রীতি রয়েছে। এই মুহূর্তে আমি প্রকৃত অর্থেই একটি উপহার পেয়েছি। আর তাই, এই অনুষ্ঠানে আমরা ভাবনাচিন্তা করবো কিভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উন্নত বিশ্ব গড়ে তোলা যায়। সুস্থায়ী জীবনযাপন ‘মিশন লাইফ’ উদ্যোগের মূলমন্ত্র। ভারত আন্তর্জাতিক স্তরে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
এই কর্মসূচিতে পৃথিবী-বান্ধব জীবনশৈলী গ্রহণ করার জন্য সকলকে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে। সমাপ্তিজী তাঁর বইয়ের মাধ্যমে পরিবেশ-বান্ধব যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা বিভিন্ন সামগ্রীর পুনর্ব্যবহার এবং সেগুলিকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার উপর গুরুত্ব দিচ্ছি। শ্রী অন্ন-কে আমাদের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছি এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কার্বন নিঃসরণ যাতে হ্রাস পায়, তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছি। আমি মনে করি, খ্রীস্টান সম্প্রদায় সামাজিকভাবে অত্যন্ত সচেতন। তাঁরা এই উদ্যোগের বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
বন্ধুগণ,
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ’ল স্থানীয় পণ্যের জন্য সোচ্চার হওয়া। আমরা যখন স্থানীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছি, আমরা যখন ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ পণ্যগুলির প্রচার চালাচ্ছি, তখন আমরা একঅর্থে দেশের জন্যই কাজ করছি। ‘ভোকাল ফর লোকাল’ মন্ত্রের সাফল্য লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, বহু মানুষ স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন। আর তাই, আমি খ্রীস্টান সম্প্রদায়কে ‘ভোকাল ফর লোকাল’ – এর জন্য নেতৃত্ব দিতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
উৎসবের এই মরশুমে আমরা সমস্ত দেশবাসীর সঙ্গে একযোগে মিলিত হই এবং দেশকে শক্তিশালী করে তুলি। ভারতে বৈচিত্র্যের মধ্যে যে ঐক্য রয়েছে, এই উৎসব তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলুক।
আরও একবার আপনাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। যাঁরা এই সময়েও মুম্বাই থেকে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছেন, তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আপনাদের অনেকের আশীর্বাদ ও পরামর্শ আমি পেয়ে থাকি। আর আজ আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য আমার হ’ল।
আরও একবার আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। যেসব শিশুরা এই উৎসবে অংশ নিয়েছে, তাঁদের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই শিশুদের আশীর্বাদ জানাই!
ধন্যবাদ!