ভারতে কোভিড পরিস্থিতির বিষয়ে সংসদের উভয় কক্ষের সব রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী বৈঠক করেছেন। এই মহামারীকে প্রতিহত করতে জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কি কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তিনি সে বিষয়েও বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য সকল নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান। তাঁরা বৈঠকে বিভিন্ন বাস্তবোচিত তথ্য এবং পরামর্শ দিয়েছেন। শ্রী মোদী বলেছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের থেকে পাওয়া তথ্যের সাহায্যে নীতি প্রণয়ণে সুবিধে হবে।
শ্রী মোদী বলেন, মহামারী রাজনীতির বিষয় হতে পারে না, এটি সারা মানবজাতির কাছে উদ্বেগের বিষয়। গত ১০০ বছরে মানবজাতি এধরণের মহামারী দেখেনি।
দেশের প্রতিটি জেলায় যাতে একটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট থাকে তার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। ভারতে টিকাকরণ অভিযান কিভাবে গতি পাচ্ছে সে প্রসঙ্গে জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিকাকরণ অভিযানে প্রথম ১০ কোটি মানুষ ৮৫ দিনে টিকা পেয়েছেন কিন্তু এখন ১০ কোটি মানুষ ২৪ দিনের মধ্যে টিকা পেয়েছেন। তিনি বলেন, দিনের শেষে গড়পরতা দেড় কোটি টিকা মজুত থাকছে।
শ্রী মোদী জেলাস্তরে টিকাকরণ অভিযানের বিষয়ে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। সাধারণ মানুষ যাতে কোনো অসুবিধের শিকার না হন সেটি নিশ্চিত করতে কেন্দ্র আগেভাগে কত টিকা রয়েছে সে বিষয়ে জানাতে পরামর্শ দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে টিকাকরণ অভিযান শুরুর ৬ মাস পরেও অনেক স্বাস্থ্য কর্মী ও সামনের সারির কর্মী টিকা পাননি – যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। রাজ্যগুলিকে এর জন্য আরও সক্রিয় হতে হবে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে শ্রী মোদী সকলকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন, এই অসুখের ক্ষেত্রে ভাইরাসের অভিযোজনের কারণে রোগটি সম্পর্কে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া যাচ্ছে না, তাই আমাদের সকলকে একজোট হয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী, বৈঠকে এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের প্রযুক্তি ব্যবহারের অনন্য অভিজ্ঞতা – কো-উইন এবং আরোগ্য সেতুর বিষয়ে জানান।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী এইচ ডি দেবেগৌড়া মহামারীর সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নিরলসভাবে নজরদারি চালানোর বিষয়টি প্রশংসা করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানান। বিভিন্ন দলের নেতা-নেত্রীরা তাঁদের নিজের অভিজ্ঞতার কথা বৈঠকে জানান। বিভিন্ন রাজ্যে মহামারীর ফলে উদ্ভুত পরিস্থতি নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেন এবং নিজ নিজ রাজ্যে টিকাকরণের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। নেতৃবৃন্দ কোভিড সংক্রান্ত যথাযথ আচরণবিধি মেনে চলার উপর গুরুত্ব দেন। তাঁদের কাছে মহামারীর বিষয়ে যেভাবে তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে দলমত নির্বিশেষে সকলে তার প্রশংসা করেন। এই তথ্য সমৃদ্ধ উপস্থাপনাটি যথেষ্ট সহায়ক হবে বলে তাঁরা মত প্রকাশ করেছেন।
স্বাস্থ্য সচিব শ্রী রাজেশ ভূষণ মহামারী সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে মাত্র ৮টি রাজ্যে ১০ হাজার সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে মহারাষ্ট্র ও কেরালায় সংক্রমিতের সংখ্যা বেশি। মাত্র ৫টি রাজ্যে সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের উপরে।
মহামারীর এই সময়কালে প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে মোট ২০টি বৈঠক করেছেন। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে ২৯টি বৈঠকে যোগ দেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সচিব রাজ্যগুলির মুখ্য সচিবদের ৩৪ বার পরিস্থিতির সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন। এছাড়াও ৩৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কোভিড-১৯ –এর উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৬৬টি কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হয়েছে।
এই মহামারীর সময়কালে ভারতে ওষুধের যোগান বাড়ানো হয়েছে। মার্চ মাসে রেমডেসিভির দেশের ২২টি জায়গায় উৎপাদিত হতো। সিডিএসসিও উৎপাদন কেন্দ্র বাড়ানোর অনুমতি দেওয়ায় জুন মাসে ৬২টি কেন্দ্রে এই ওষুধ উৎপাদিত হচ্ছে। এর ফলে আগে রেমডেসিভির প্রতি মাসে ৩৪ লক্ষ ভায়াল উৎপাদিত হতো, বর্তমানে প্রতি মাসে ১ কোটি ২২ লক্ষ ভায়াল উৎপন্ন হচ্ছে। এছাড়াও লিপোজোমাল অ্যাম্ফোটেরিসিন আমদানির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে ৪৫ হাজার ৫০টি অ্যাম্ফোটেরিসিন বরাদ্দ করা হতো, বর্তমানে এই পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৪ লক্ষ ৮১ হাজার করা হয়েছে। বর্তমানে সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কমপক্ষে ৮ দিনের ওষুধ তারা যাতে মজুত করে রাখে, এর ফলে ভবিষ্যতে কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যাবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক যে ওষুধগুলিকে মজুত রাখতে পরামর্শ দিয়েছে সেগুলি হলো – এনোক্সাপেরিন, মিথাইল প্রেডনিসোলোন, ডেক্সা মেথাজোন, রেমডেসিভির, টোসিলিজুমাব (কোভিড-১৯ –এর চিকিৎসার জন্য), অ্যাম্ফোটেরিসিন বি ডি অক্সিকোলেট, পুজাকোনাজোল (কোভিডের কারণে মিউকরমাইকোসিসের জন্য), ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (শিশুদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য)। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির জন্য এই ওষুধ সংগ্রহ করবে।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সকলকে ভারতের কোভিড-১৯ টিকাকরণের কৌশল সম্পর্কে জানানো হয়েছে। এই কৌশলের মূল উদ্দেশ্য হলো :
সকল প্রাপ্ত বয়স্ক ভারতীয়কে নিরাপদে যত দ্রুত সম্ভব বিনামূল্যে টিকা দেওয়া
স্বাস্থ্য কর্মী ও সামনের সারিতে থাকা কর্মীদের সুরক্ষিত করার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে
৪৫ বছর এবং তার ঊর্ধ্বে থাকা জনগোষ্ঠী অর্থাৎ ঝুঁকিপূর্ণ নাগরিকদের সুরক্ষিত করতে হবে, দেশে কোভিডের কারণে মৃত্যুর ৮০ শতাংশই এই জনগোষ্ঠীর মানুষ।
বিজ্ঞান সম্মত ও মহামারীর বিভিন্ন লক্ষণ বিবেচনা করে টিকাকরণের প্রতিটি পর্যায়ে নতুন নতুন গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে তাঁদের টিকাকরণে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে ভারতে কোভিড-১৯ টিকার উৎপাদন এবং টিকার সহজলোভ্যতার দিকটি বিবেচনা করা হচ্ছে।
এপর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (৩৩ কোটি ৮০ লক্ষ), ব্রাজিল (১২ কোটি ৪০ লক্ষ), জার্মানি (৮ কোটি ৬০ লক্ষ), ব্রিটেনের (৮ কোটি ৩ ০লক্ষ) তুলনায় ভারতে অনেক বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে। এই সংখ্যা ৪১ কোটি ২০ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। শহরাঞ্চলে মোট টিকার ৪২ শতাংশ অর্থাৎ ১২ কোটি ৩০ লক্ষ এবং গ্রামাঞ্চলে ৫৮ শতাংশ অর্থাৎ ১৭ কোটি ১১ লক্ষ টিকা দেওয়া হয়েছে। পয়লা মে থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মোট টিকার ৫৩ শতাংশ বা ২১ কোটি ৭৫ লক্ষ টিকা পুরুষরা এবং ৪৭ শতাংশ বা ১৮ কোটি ৯৪ লক্ষ মহিলা টিকা নিয়েছেন। তৃতীয় লিঙ্গের ৭২,৮৩৪ জন টিকা পেয়েছেন।
কোভিড-১৯ –এর বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ে নমুনা পরীক্ষা, সংক্রমিতদের সনাক্ত করা, তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, টিকাকরণ এবং কোভিড সংক্রান্ত যথাযথ আচরণবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
At today’s All-Party meeting, we discussed the various steps being taken to mitigate the COVID-19 situation and strengthening health related infrastructure. https://t.co/cTrwWh6VUy
— Narendra Modi (@narendramodi) July 20, 2021