প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ,
দু-দেশের প্রতিনিধিবর্গ,
সংবাদ মাধ্যমের বন্ধুরা,
নমস্কার!
অস্ট্রেলিয়া সফরে আমার এবং আমার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধিদের সমাদরের জন্য আমি অস্ট্রেলিয়াবাসী এবং প্রধানমন্ত্রী আলবানিজকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ-এর ভারত সফরের দু মাসের মধ্যেই আমি অস্ট্রেলিয়ায় এলাম। গত এক বছরে এই নিয়ে ৬ বার মুখোমুখি হয়েছি আমরা।
এর থেকেই আমাদের সম্পর্কের ব্যাপ্তি উপলব্ধি করা যায়। ক্রিকেটের পরিভাষায় বলতে গেলে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা টি২০ মোডে পৌঁছেছে।
সুধী,
গতকালই আপনি বলেছেন যে আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি হল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। বস্তুত আমাদের বোঝাপড়া দাঁড়িয়ে আছে পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ওপর। গত সন্ধ্যায় এখানে বসবাসরত ভারতীয়দের সমারোহে প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ এবং আমি হ্যারিস পার্ক-এ ‘লিটন ইন্ডিয়া’র উদ্বোধন করেছি।
বন্ধুগণ,
আজ আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের বৈঠকে আগামী দশকে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কথা হয়েছে। নতুন নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আমরা বিশদে আলোচনা করেছি। গত বছর ভারত-অস্ট্রেলিয়া অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং বাণিজ্য চুক্তি-ইসিটিএ কার্যকর হয়েছে। আজ আমরা সার্বিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তির বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
খনি এবং গুরুত্বপূর্ণ নানা খনিজ সম্পদ আহরনের বিষয়ে কৌশলগত সহযোগিতা বাড়াতে গঠনাত্মক আলোচনা হয়েছে আমাদের মধ্যে। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির বিষয়ে সহযোগিতা নিবিড়তর করার ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করেছি আমরা। গ্রীন হাইড্রোজেনের বিষয়ে একটি কর্মীগোষ্ঠী গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন সংস্থার মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকদের সঙ্গে নানান ক্ষেত্রে বিনিয়োগের বিষয়ে আমার ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আজ আমি বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে বাণিজ্য গোলটেবিল বৈঠকে কথা বলবো।
আজ অভিবাসন এবং চলমানতা অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর কল্যাণে আমাদের সংযোগ আরও প্রাণবন্ত হবে। আমাদের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককে আরও গভীর করতে ব্রিসবেনে খোলা হবে নতুন ভারতীয় বাণিজ্য দূতাবাস। অস্ট্রেলিয়াও বেঙ্গালুরুতে একটি বাণিজ্য দূতাবাস খোলার ঘোষণা করেছে।
বন্ধুগণ,
অতীতে অস্ট্রেলিয়ায় একাধিক মন্দিরে হামলা এবং বিচ্ছন্নতাবাদীদের সক্রিয়তা নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা হয়েছে। ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার ঘনিষ্ট সম্পর্কে এইসব অনভিপ্রেত মহল যাতে কোনোভাবেই নেতিবাচক প্রভাব না ফেলতে পারে তা নিশ্চিত করা জরুরি। এই লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী আলবানিজকে ধন্যবাদ জানাই। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবেনা বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
বন্ধুগণ,
ভারত-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের প্রভাব শুধু দুটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আঞ্চলিক সুস্থিতি, শান্তি এবং বিশ্বের সার্বিক কল্যাণের প্রশ্ন। কয়েকদিন আগে হিরোশিমায় কোয়াড শিখর সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে আমরা ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। দক্ষিণ বিশ্বের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বসুধৈব কুটুম্বকমের দর্শনে বিশ্বাসী ভারত সারা বিশ্বকে একটি পরিবার হিসেবে দেখে। জি২০-র সভাপতিত্বের দায়িত্ব থাকা ভারত ঐ বিষয়টিকেই মূল মন্ত্র করে এগোতে চায়। জি২০-তে আমাদের উদ্যোগের প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সমর্থনের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী আলবানিজকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
বন্ধুগণ,
এ বছর ভারতে ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসর বসছে। এই উপলক্ষে আমি প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট অনুরাগীদের ভারতে আসার আমন্ত্রন জানাচ্ছি। ক্রিকেট দেখার পাশাপাশি আপনারা দীপাবলী উৎসবেরও সাক্ষী হতে পারবেন।
সুধী,
সেপ্টেম্বরে জি২০ শিখর সম্মেলন উপলক্ষে আপনার ভারত সফরের জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। আবার ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি হিন্দিতে।