ইউটিউব ফ্যানফেস্ট ইন্ডিয়া, ২০২৩ উপলক্ষে ইউটিউবার কমিউনিটির উদ্দেশে প্রদত্ত এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, আমরা সকলে মিলিতভাবে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় এক বড় ধরনের পরিবর্তন সম্ভব করে তুলতে পারি। এজন্য তাঁদের সকলের সঙ্গেই আমাদের সংযোগ ও যোগাযোগ রক্ষা করে চলা প্রয়োজন।
ইউটিউব-এর যাত্রাপথে ১৫টি বছর অতিক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় দৃশ্যতই আনন্দ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ইউটিউব-এর সঙ্গে গত ১৫ বছর ধরে তিনি নিজেও যে যুক্ত রয়েছেন তাও আজ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে তিনি দেশ ছাড়াও বিদেশের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন। তাঁর সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যাও যে কম নয়, একথাও আজ আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
ইউটিউব-এর মাধ্যমে সৃষ্টিকর্মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ – একথার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গেমস, প্রযুক্তি, ফুড ব্লগিং, পর্যটন ব্লগিং এবং জীবনশৈলীর পরিবর্তন সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্লগ-এ ইউটিউব আজ সমৃদ্ধ।
ইউটিউব-এর মঞ্চে যাঁরা কন্টেন্ট রচনা করেন, ভারতীয় জনসাধারণের ওপর তাঁদের প্রভাবের কথা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে এইভাবে আমরা আরও বহুসংখ্যক মানুষের ক্ষমতায়ন ঘটাতে পারি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে কোটি কোটি মানুষকে খুব সহজেই শিক্ষিত ও সচেতনও করে তুলতে পারি।
ইউটিউব চ্যানেলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিডিও বার্তাও তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গের অবতারণা করে তিনি বলেন যে পরীক্ষার দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ, প্রত্যাশা পূরণের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রকে আরও উৎপাদনশীল করে তোলার মতো বিষয়গুলিকে ইউটিউব-এর মাধ্যমে যে বার্তা তিনি সাফল্যের সঙ্গেই সকলের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছেন, সেজন্য তিনি নিজেও বিশেষভাবে সন্তুষ্ট।
এ প্রসঙ্গে ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’-এর কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন যে স্বচ্ছতা অভিযানকে আমরা একটা জন-আন্দোলনের রূপ দিতে পেরেছি। গত ৯ বছরে আমাদের এই অভিযানে সামিল হয়েছেন প্রায় প্রতিটি মানুষই। এমনকি, দেশের শিশুরাও আমাদের এই প্রচেষ্টায় এনে দিয়েছে আবেগ ও অনুভূতির এক বিশেষ শক্তি। আবার, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজন আমাদের অভিযানকে এক নতুন মাত্রা এনে দিতেও নানাভাবে সাহায্য করেছেন। আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই যে ইউটিউবাররা আমাদের এই স্বচ্ছতা অভিযানের প্রসার ঘটাতে নানাভাবে সাহায্য করেছেন।
শ্রী মোদী বলেন, যতদিন না স্বচ্ছতা ও পরিচ্ছন্নতা ভারতের একটি ভাবমূর্তি হয়ে গড়ে উঠবে, ততদিন পর্যন্ত স্বচ্ছতা অভিযান আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে যে আমাদের সকলের জীবনে স্বচ্ছতা তথা পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার মতো বিষয়টিই হয়ে উঠবে আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন ব্যবস্থা আমাদের দেশে কতটা প্রসার লাভ করেছে, সে বিষয়টিরও আজ উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইউপিআই-এর মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রে সাফল্যের আরও একটি ঘটনা হল, এই পদ্ধতিতে সারা বিশ্বে যত লেনদেন হয়ে আসছে, তার ৪৬ শতাংশ স্থানই দখল করে নিয়েছে ভারত। এক্ষেত্রে ইউটিউবারদের ভূমিকা ও অবদানের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন যে দেশবাসীকে ডিজিটাল লেনদেন পদ্ধতিকে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করার জন্য ইউটিউবাররাই তাঁদের অনুপ্রাণিত করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে লেনদেন কিভাবে করতে হয়, খুব সহজবোধ্য ভাষায় তাঁরাই তা বুঝিয়ে বলতে পারেন দেশের সাধারণ মানুষকে।
‘ভোকাল ফর লোকাল’, অর্থাৎ স্থানীয় তথা আঞ্চলিক কোনো বিশেষ পণ্য ও উৎপাদন বিপণনের জন্য সরব হওয়ার বিষয়টিও আজ স্পর্শ করে যায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেক পণ্যই উৎপাদিত হয় স্থানীয় তথা আঞ্চলিক স্তরে এবং সেগুলিকে গড়ে তুলতে শিল্পী ও কারিগরদের দক্ষতাও যথেষ্ট বিস্ময়কর। তাঁদের এই সৃষ্টিকর্মকে বিশ্ব বাজারে তুলে ধরার জন্য ইউটিউবারদের আরও বেশি করে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রতিটি সৃষ্টিকর্মে রয়েছে আমাদের দেশের মাটির পবিত্র স্পর্শ এবং শিল্পী, কারিগর ও সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের স্বেদবিন্দু। খাদি, হস্তশিল্প, হস্তচালিত তাঁতশিল্প অথবা যে কোনো ক্ষেত্রেই হোক না কেন তাঁদের সৃষ্টিকর্ম এইভাবেই ভারতীয় বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যময়। এইভাবে সমগ্র জাতিকে উজ্জীবিত করতে, অর্থাৎ স্থানীয় পণ্যের বিপণনকে এক বিশেষ আন্দোলন রূপে গড়ে তুলতে ইউটিউবারদের বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শ্রী মোদী বলেন যে ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে তুলে ধরা প্রতিটি এপিসোডের শেষে একটি করে প্রশ্ন দেশবাসীর সামনে অবশ্যই রাখা যায়। তা হল – এ বিষয়ে তাঁদের প্রস্তাব ও মতামত কি। এইভাবেই মানুষের সঙ্গে আমাদের এক নিবিড় সম্পর্ক ও বন্ধন গড়ে উঠতে পারে। এইভাবেই আমরা সমগ্র বিষয়টিকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে পারি এবং সাধারণ মানুষ তখন শুধুমাত্র শ্রোতা বা দর্শক হিসেবেই তাঁদের দায়িত্ব পালন করে নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন না, বরং তাঁরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসবেন আরও কিছু করার জন্য।