প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় নৌ-বাহিনীর জন্য দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব সম্বলিত উদ্যোগ ‘স্প্রিন্ট চ্যালেঞ্জেস’-এর সূচনা করেছেন
“প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আত্মনির্ভর করে তোলার লক্ষ্য পূরণ করা একবিংশ শতাব্দীতে ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ”
“উদ্ভাবন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সেটি দেশীয় উদ্যোগে হওয়া প্রয়োজন; আমদানি করা পণ্য কখনই উদ্ভাবনের উৎস হয়ে উঠতে পারে না”
“দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত বিমানবাহী জাহাজের নৌ-বাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির অপেক্ষার নিরসন শীঘ্রই হতে চলেছে”
“জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে হুমকির ব্যাপ্তি ক্রমশ বাড়ছে আর যুদ্ধ কৌশলও পরিবর্তিত হচ্ছে”
“ভারত আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, ভুল তথ্য, বিকৃত তথ্য এবং ভ্রান্ত প্রচারের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আক্রমণ চালানো হচ্ছে”
“দেশে বা বিদেশে ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী শক্তিকে নির্মূল করতে হবে”
“ ‘সম্পূর্ণ সরকারি উদ্যোগ’-এর মাধ্যমে আত্মনির্ভর ভারত হয়ে ওঠার জন্য এই মুহূর্তে দেশের প্রতিরক্ষার জন্য ‘সম্পূর্ণ জাতির উদ্যোগ’-এর প্রয়োজন”

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী সোমবার ন্যাভাল ইনোভেশন অ্যান্ড ইন্ডিজিনাইজেশন অর্গানাইজেশন বা এনআইআইও-র সম্মেলন ‘স্বাবলম্বন’-এ ভাষণ দিয়েছেন।

এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার লক্ষ্য পূরণ করা একবিংশ শতাব্দীর ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নৌ-বাহিনীকে আত্মনির্ভর করে তোলার জন্য ‘স্বাবলম্বন’ সম্মেলন তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই সময়কালে ৭৫টি দেশীয় প্রযুক্তির উদ্ভাবন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ  অনুপ্রেরণাদায়ক। তিনি আশা করেন, খুব শীঘ্রই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় লক্ষ্যপূরণ সম্ভব হবে। “দেশীয় প্রযুক্তির ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আমাদের নিরলস উদ্যোগ নিতে হবে। যখন ভারত তার স্বাধীনতার ১০০ বছর উদযাপন করবে, তখন যাতে আমাদের নৌ-বাহিনী অপ্রতিরোধ্যভাবে নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে পারে সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে।”

ভারতীয় অর্থনীতিতে মহাসাগর ও সমুদ্র উপকূলের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারতীয় নৌ-বাহিনীর গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে আর তাই নৌ-বাহিনীর আত্মনির্ভর হয়ে ওঠা অত্যন্ত জরুরি।

দেশের সামুদ্রিক বাণিজ্যের গৌরবোজ্জ্বল প্রসঙ্গের উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেছেন, স্বাধীনতার আগেও ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র শক্তিশালী ছিল। স্বাধীনতার সময়ে দেশে ১৮টি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি ছিল, যেখানে আর্টিলারি গান-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম তৈরি হত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ভারতের পরিচিতি ছিল। “ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরিতে তৈরি আমাদের হাউইৎজার, মেশিন গান-এর গুণগত মান সবথেকে ভালো বলে বিবেচিত হত। আমরা অনেক কিছু রপ্তানি করতাম। কিন্তু তারপর কি এমন হল যে আমরা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশ্বের বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ হয়ে উঠলাম?” বিশ্বযুদ্ধের সময় যেসব দেশ সঙ্কটকে কাজে লাগিয়েছে তারা লাভবান হয়েছে। যেমন করোনার সময়কালে ভারত প্রতিকূলতাকে সম্ভাবনায় পরিণত করেছে এবং অর্থনীতি, উৎপাদনশিল্প ও বিজ্ঞানে জোয়ার এসেছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন স্বাধীনতার পর প্রথমের দিকের দশকগুলিতে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের মানোন্নয়নের জন্য কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র সরকারি ক্ষেত্রেই গবেষণা ও উন্নয়নের কাজ সীমাবদ্ধ ছিল। “উদ্ভাবন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সেটি দেশীয় ব্যবস্থাপনায় হওয়া প্রয়োজন। আমদানি করা পণ্য কখনই উদ্ভাবনের উৎস হয়ে উঠতে পারে না।” তিনি আমদানি করা পণ্যসামগ্রীর বিষয়ে আমাদের নতুনভাবে ভাবনাচিন্তার পরামর্শ দেন।

শ্রী মোদী বলেছেন, দেশের অর্থনীতির জন্য স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা কৌশলগত দিক থেকেও সমান তাৎপর্যপূর্ণ। ২০১৪ সালের পর থেকে আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য দেশ উদ্যোগী হয়েছে। আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য তাদের পুনর্গঠিত করা হয়েছে। আজ আইআইটি-গুলির মতো প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নকে আমরা যুক্ত করেছি। “বিগত দশকগুলি থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা সকলের উদ্যোগে নতুন একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলছি। আজ বেসরকারি ক্ষেত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ সংস্থাগুলির জন্যও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের গবেষণা ও উন্নয়নকে উন্মুক্ত করা হয়েছে।” এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া থাকা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের প্রকল্পগুলি গতি পেয়েছে। দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত বিমান বহনকারী জাহাজের নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির অপেক্ষার নিরসন শীঘ্রই হতে চলেছে বলে শ্রী মোদী আশা প্রকাশ করেন।

গত আট বছর ধরে সরকার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে। “দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নির্মাণ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনায় এই অর্থ যাতে যথাযথভাবে ব্যবহার করা যায় আমরা তা নিশ্চিত করেছি। আজ ভারতীয় সংস্থাগুলির থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার জন্য বাজেটে বরাদ্দ অর্থের বৃহৎ অংশ ব্যয় করা হচ্ছে।” ৩০০টি প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের একটি তালিকা প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলি তৈরি করেছে। এইসব সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে না। শ্রী মোদী এই উদ্যোগের জন্য সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের প্রশংসা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গত ৪-৫ বছর ধরে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সরঞ্জাম আমদানির পরিমাণ প্রায় ২১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আজ বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানিকারীর তকমা থেকে বেরিয়ে এসে আমরা বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভের জন্য এগিয়ে চলেছি। গত বছর ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি করা হয়েছে। এই সরঞ্জামের ৭০ শতাংশ বেসরকারি সংস্থাগুলি উৎপাদন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে হুমকির ব্যাপ্তি ক্রমশ বাড়ছে আর যুদ্ধ কৌশলও পরিবর্তিত হচ্ছে। আগে আমরা আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনাকে জল, স্থল ও আকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছিলাম, কিন্তু আজ তা প্রসারিত হয়ে মহাকাশ, সাইবার নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং সামাজিক ক্ষেত্রেও পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে আগে থাকতে প্রস্তুতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হয়ে উঠলেই তা দেশের পক্ষে সহায়ক হবে।

প্রধানমন্ত্রী নতুন বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, “ভারতের আত্মবিশ্বাস ও আমাদের স্বনির্ভর হয়ে ওঠার বিরুদ্ধে যেসব শক্তি সক্রিয় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই আরও শক্তিশালী করতে হবে। ভারত আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। কিন্তু ভুল তথ্য, বিকৃত তথ্য এবং ভ্রান্ত প্রচারের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ভারতের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। দেশে বা বিদেশে ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী শক্তিকে নির্মূল করতে হবে। আজ জাতীয় প্রতিরক্ষা শুধুমাত্র দেশের সীমানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, তার ব্যাপ্তি সীমানা ছাড়িয়ে গেছে।” তিনি আরও বলেছেন, “ ‘সম্পূর্ণ সরকারি উদ্যোগ’-এর মাধ্যমে আত্মনির্ভর ভারত হয়ে ওঠার মতো এই সময়কালে দেশের প্রতিরক্ষার জন্য ‘সম্পূর্ণ জাতির উদ্যোগ’-এর প্রয়োজন আর আমরা সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছি। ভারতের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য জাতীয় স্তরে সর্বাঙ্গীণ সচেতনতা আমাদের বড় শক্তি।”

এনআইআইও সম্মেলন – ‘স্বাবলম্বন’

আত্মনির্ভর ভারতের একটি বড় স্তম্ভ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রকে স্বনির্ভর করে তোলা। এই লক্ষ্যপূরণে ‘স্বাবলম্বন’ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ‘স্প্রিন্ট চ্যালেঞ্জেস’-এর সূচনা করেছেন যার উদ্দেশ্য হল ভারতীয় নৌ-বাহিনীতে দেশীয় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো। ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন সংগঠনের সঙ্গে সহযোগিতায় এনআইআইও ভারতীয় নৌ-বাহিনীর জন্য কমপক্ষে ৭৫টি নতুন দেশীয় প্রযুক্তি / সামগ্রী উদ্ভাবনে উদ্যোগী হয়েছে। এই প্রকল্পের নাম ‘স্প্রিন্ট’ (সাপোর্টিং পোল-ভল্টিং ইন আর অ্যান্ড ডি থ্রু আইডিইএক্স, এনআইআইও অ্যান্ড টিডি এসি)।

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দেশকে স্বনির্ভর করে তোলার জন্য ভারতীয় শিল্প সংস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে যুক্ত করাই এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য। ১৮ এবং ১৯ জুলাই দু’দিনের এই সম্মেলনে শিল্প সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রতিরক্ষা বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্তাব্যক্তিরা এবং উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিকরা মিলিত হয়ে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের জন্য নানা পরামর্শ দেবেন। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে থাকা দেশগুলির কাছে পৌঁছনোর উদ্যোগ ‘সাগর’-এর বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হবে।

সম্পূর্ণ ভাষণ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
Cabinet approves minimum support price for Copra for the 2025 season

Media Coverage

Cabinet approves minimum support price for Copra for the 2025 season
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
সোশ্যাল মিডিয়া কর্নার 21 ডিসেম্বর 2024
December 21, 2024

Inclusive Progress: Bridging Development, Infrastructure, and Opportunity under the leadership of PM Modi