আজ এক ভিডিও কনফারেন্সের মঞ্চে আহমেদাবাদে আয়োজিত কার্যকর সুবর্ণ মহোৎসবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। এই উপলক্ষে সমাবেশে ভাষণদানকালে তিনি বলেন যে কার্যকর সুবর্ণ মহোৎসব হল দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে সেবা করে যাওয়ার কাজে এক মাইলফলক বিশেষ। আজ থেকে ৫০ বছর আগে স্বেচ্ছাসেবকদের নথিভুক্তকরণের মাধ্যমে সেবার কাজে তাঁদের যুক্ত করার প্রচেষ্টা শুরু হয়। লক্ষ লক্ষ সেবাকর্মী অবিচলিত নিষ্ঠা ও উৎসর্গের মানসিকতা নিয়ে সেবাকর্মে ব্রতী হন। কার্যকর সুবর্ণ মহোৎসব তাই ভগবান স্বামী নারায়ণের মানবতাবাদী শিক্ষাদর্শের এক বিশেষ উদযাপন। প্রতিষ্ঠানের বহু দশকের গৌরবজনক সেবাপরাণতা কোটি কোটি মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। বিভিন্ন সময় ও পরিস্থিতেতে তিনি নিজেও এই নিষ্ঠা ও সেবাপরাণতার সাক্ষী থেকেছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভূজ-এর ভূমিকম্প, নরনারায়ণ নগর গ্রামের পুনর্গঠন, কেরলের বন্যা পরিস্থিতি, উত্তরাখন্ডের ভূমিধ্বস এবং সাম্প্রতিক করোনা অতিমারীকালে এই প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবকরা ছুটে গিয়েছিলেন আর্তের সেবায়। সাধারণ মানুষের পাশে সর্বদাই থেকেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। কোভিড পরিস্থিতিকালে বিএপিএস মন্দিরগুলি কিভাবে সেবা কেন্দ্রে রূপান্তরিতি হয়েছিল তা প্রত্যক্ষ করছেন বহু মানুষই। এমনকি, ইউক্রেনের সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে উদ্ধার করে নিয়ে আসার কাজেও স্বেচ্ছাসেবীরা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ইউরোপের হাজার হাজার বিএপিএস কর্মী রাতারাতি বহু ভারতীয়কে ইউক্রেন থেকে উদ্ধার করে পোল্যান্ডে পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এই ভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবতার স্বার্থে নিষ্ঠার সঙ্গে সেবা করে যাওয়ার ঘটনা নিসন্দেহে প্রশংসনীয়। বিএপিএস কর্মীরা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী তাঁদের সেবা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। মানুষের ক্ষমতায়ন প্রচেষ্টাতেও তাঁদের অবদান এককথায় অনবদ্য।
বিএপিএস কর্মীদের সেবাকর্ম সারা বিশ্বের কাছে ভারতের প্রভাব ও সম্ভাবনাকেও তুলে ধরতে পেরেছে। বিশ্বের ২৮টি দেশে ভগবান স্বামী নারায়ণের মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৮০০-রও বেশি। এছাড়াও বিশ্বজুড়ে রয়েছে ২১ হাজারেরও বেশি আধ্যাত্মিক কেন্দ্র। এই কর্মপ্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে ভারতের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য এবং এক স্বতন্ত্র পরিচিতি। কারণ, বিএপিএস মন্দিরগুলি হল ভারতীয় ঐতিহ্যেরই এক সাংস্কৃতিক প্রতিফলন।
শ্রী মোদী বলেন, ভগবান স্বামী নারায়ণের কর্মজীবন বহু সেবাকর্মীর সংকল্প গ্রহণের মানসিকতাকে সুদৃঢ় করে তুলেছিল। প্রতিটি মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন তিনি। অর্থাৎ স্বামীজী তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন মানব কল্যাণের স্বার্থে। এই ভাবেই তাঁর মূল্যবোধ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। প্রমুখ স্বামী মহারাজের কাছ থেকে তিনি নিজে যে স্নেহ ও ভালোবাসা লাভ করেছিলেন তা তাঁর ব্যক্তি জীবনে এক অমূল্য সম্পদ বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত বহু ঘটনাই তাঁর জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে মিশে রয়েছে। নর্মদা নদীর জল যখন সবরমতীতে নিয়ে আসা হয়েছিল তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন পরমপুজ্য প্রমুখ স্বামীজী স্বয়ং।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সেবা পরম ধর্ম'- এই উক্তিটির অর্থ সেবা করে যাওয়াই হল সব থেকে বড় ধর্ম। এটি শুধুমাত্র কয়েকটি শব্দের সমষ্টি মাত্র নয়, বরং তা হল আমাদের জীবনের এক মূল্যবোধ। কারণ সেবা হল এমনই একটি ধর্ম যার মধ্যে নিজের স্বার্থ বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকতে পারে না। বর্তমান ভারত যখন এক উন্নততর ভারত গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে, তখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণ মানুষ সমষ্টিগত ভাবে বড় কিছু একটা করার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে আসছেন। স্বচ্ছ ভারত মিশন, প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতি, পরিবেশ সচেতনতা, কন্যাসন্তানদের শিক্ষা, আদিবাসী কল্যাণ এ সমস্ত কিছুই বাস্তবায়নে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সরকারকে সমর্থন জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকারের মিশন লাইফ এবং 'এক পেড় মা কে নাম', ফিট ইন্ডিয়া, ভোকাল ফর লোকাল, মিলেট উৎপাদন ইত্যাদি কর্ম প্রচেষ্টায় সাধারণ মানুষকে সামিল হতে লক্ষ্য করেছেন সমস্ত দেশবাসী।
শ্রী মোদী বলেন, আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে 'বিকশিত ভারত তরুণ নেতাদের আলোচনা ও সম্মেলন' অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এর লক্ষ্য হল বিকশিত ভারত গঠনে গৃহীত সংকল্পকে আরও জোরদার করে তোলা। তরুণ কার্যকরদেরও এই প্রচেষ্টায় আরও বেশি করে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।