প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও বার্তার মাধ্যমে গুজরাট সরকারের রোজগার মেলায় ভাষণ দেন।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রঙের উৎসব হোলি আসন্ন। এই সময়ে গুজরাট রোজগার মেলার এই আয়োজনের ফলে যাঁরা নিয়োগপত্র পাচ্ছেন, তাঁদের উৎসবের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে উঠবে। গুজরাটে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার রোজগার মেলার আয়োজন হচ্ছে, একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য যুবক-যুবতীদের সামনে সুযোগ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সর্বোচ্চ সংখ্যায় চাকরি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সব বিভাগ এবং এনডিএ শাসিত রাজ্য সরকারগুলি অবিরাম কাজ করতে থাকায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ছাড়াও, ১৪টি এনডিএ শাসিত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রোজগার মেলা আয়োজিত হচ্ছে। যে যুবক-যুবতীরা নতুন দায়িত্ব পাচ্ছেন, তাঁরা অমৃতকালের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ৫ বছরে গুজরাটে ১.৫ লক্ষেরও বেশি যুবক-যুবতী রাজ্য সরকারের চাকরি পেয়েছেন। এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিগত কয়েক বছরে ১৮ লক্ষেরও বেশি যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এবছর আরও ২৫ হাজার যুবক-যুবতীকে চাকরি দেওয়ার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার কাজ করছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মোবাইল অ্যাপ এবং ওয়েবপোর্টালের মতো নানারকম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও প্রযুক্তি ব্যবহারে সমগ্র নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে।
বর্তমান সরকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টির নানা প্রচেষ্টা সম্পর্কে আলোকপাত করে শ্রী মোদী বলেন, পরিকাঠামো ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থানের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। পরিকাঠামো উন্নয়নের ফলে ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রও উজ্জীবিত হচ্ছে। দেশে স্বরোজগারের যথাযথ পরিবেশ গড়ে উঠছে। যুবক-যুবতীদের দক্ষতা উন্নয়নে এবং আর্থিক সহায়তা প্রদানে সরকার বিশেষ নজর দিচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শ্রী মোদী বলেন, “উন্নয়নের চাকা যখন সচল থাকে, তখন প্রতিটি ক্ষেত্রেই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়”। পরিকাঠামো ও তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রের উন্নয়নে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুজরাটে বর্তমানে ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে। এ বছরের বাজেটে পরিকাঠামো ক্ষেত্রের জন্য ১০ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বের প্রায় সব দেশের বিশেষজ্ঞরাই মনে করেন যে, ভারত আগামী দিনে সর্ববৃহৎ ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হয়ে উঠবে”। গুজরাটের দাহোদে রেল ইঞ্জিন কারখানা গড়ে উঠছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ক্ষেত্রে ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে সরকার উন্নয়নের যে নীতি গ্রহণ করেছে, তার ফলে বৃহৎ সংখ্যায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে বলে শ্রী মোদী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, নীতিগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার ফলে স্টার্টআপ-গুলি উজ্জীবিত হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৯০ হাজারেরও বেশি স্টার্টআপ কার্যকর রয়েছে। এর ফলে, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী স্বরোজগারের জন্য উৎসাহিত হচ্ছেন। সরকারের তরফে আর্থিক সাহায্য দেওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দ্রা যোজনা এবং স্ট্যান্ডআপ ইন্ডিয়া প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে যোগদানের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মহিলা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন।
দেশে বৃহৎ সংখ্যায় দক্ষ কর্মীগোষ্ঠী গড়ে তোলার বিষয়ের উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ গড়ে ওঠার ক্ষমতা রয়েছে ভারতের। দক্ষতা উন্নয়ন থেকে সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। দলিত, অনুন্নত, আদিবাসী এবং মহিলা সহ সব ক্ষেত্রের জনগণ সমান সুযোগ পাচ্ছেন। যুবক-যুবতীদের দক্ষতা উন্নয়নে সরকার বিশেষ জোর দিচ্ছে বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনার আওতায় ৩০টি দক্ষ ভারত কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। পিএম বিশ্বকর্মা যোজনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিশ্বের দরবারে পৌঁছনোর সম্ভাবনা খুঁজে পাবেন।
স্বাধীনতার পর বহু দশক ধরে উপেক্ষিত থাকা ক্ষেত্রগুলির উন্নয়নে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে সরকার জোর দিচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এবারের বাজেটে প্রতিটি রাজ্যে একটি একতা মল ও ৫০টি নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। একলব্য বিদ্যালয়ে ৪০ হাজার শিক্ষক নিয়োগের সংস্থান রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি চাকরি একমাত্র লক্ষ্য হলে যুবক-যুবতীদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন থেমে যাবে। নতুন কিছু শেখার জন্য উদ্যমী হতে এবং পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সঙ্গে জীবনযাপনের জন্য তরুণ-তরুণীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। কর্মযোগী ভারত অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন পাঠক্রমের সদ্ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “যেখানেই আপনার নিয়োগ হোক না কেন, সর্বদাই দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়ে মনোযোগী হবেন। প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া আমাদের দায়িত্ব”।