প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে গোরক্ষপুর সানাসর খেল মহাকুম্ভে ভাষণ দিয়েছেন।
সমাবেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল অ্যাথলিট এই স্তরে পৌঁছতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তিনি বলেন, জীবনের মতো ক্রীড়াক্ষেত্রেও হার-জিৎ আছে। সকল অ্যাথলিট জয়ের শিক্ষা পেয়েছেন। শ্রী মোদী বলেন, ভবিষ্যতে সকল অ্যাথলিটদের জন্য ক্রীড়ামনস্কতা সাফল্যের দরজা খুলে দেবে।
খেল মহাকুম্ভের প্রশংসনীয় এবং উৎসাহব্যাঞ্জক উদ্যোগের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে কুস্তি, কবাডি এবং হকির মতো খেলার পাশাপাশি এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন চিত্রকলা, লোকসঙ্গীত, লোকনৃত্য এবং তবলা, বাঁশি ইত্যাদির শিল্পীরাও। তিনি বলেন, “সে খেলাই হোক অথবা শিল্প-সঙ্গীত, তার মনোভাব এবং প্রাণশক্তি সবই এক।” ভারতীয় ঐতিহ্য এবং লোকশিল্প ধারাকে বয়ে নিয়ে যেতে আমাদের নৈতিক দায়ের ওপর তিনি জোর দেন। তিনি গোরক্ষপুরের সানাসর শ্রী রবি কিষাণ শুক্লার শিল্পী হিসেবে অবদানের উল্লেখ করে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানান।
গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটাই সানাসর খেল মহাকুম্ভের তৃতীয় অনুষ্ঠান যেখানে প্রধানমন্ত্রী যোগ দিলেন। তিনি বলেন, বিশ্বে ক্রীড়াশক্তি হয়ে উঠতে গেলে ভারতের নতুন পথ, নতুন ব্যবস্থার ভাবনা তৈরি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় স্তরের প্রতিভার অন্বেষণে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং বলেন, “আঞ্চলিক স্তরের প্রতিযোগিতায় শুধুমাত্র স্থানীয় প্রতিভার বিকাশই হয় না, বরং সমগ্র অঞ্চলের খেলোয়াড়দের মনোবল বৃদ্ধিও করে।” শ্রী মোদী বলেন, “সানাসর খেল মহাকুম্ভ একটি নতুন পথ, একটি নতুন ব্যবস্থা।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোরক্ষপুর খেল মহাকুম্ভের প্রথম সংস্করণে ২০ হাজার অ্যাথলিট অংশ নিয়েছিলেন। সেই সংখ্যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার যার মধ্যে ৯ হাজারই মহিলা। খেল মহাকুম্ভে অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই ছোট শহর অথবা গ্রাম থেকে এসেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সানাসর খেল মহাকুম্ভ তরুণ খেলোয়াড়দের কাছে সুযোগ এনে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে বয়সেরই হোন না কেন, প্রত্যেকেই চান সুস্থ থাকতে।” এক সময় গ্রামের মেলাগুলিতে আখড়ায় আখড়ায় খেলাধূলার আয়োজন করা হত – একথার উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, সাম্প্রতিককালে পরিবর্তনের যুগে পুরনো সেই প্রথার অবসান ঘটেছে। স্কুলে পিটি পিরিয়ডের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। সেই সময় ঐ পিরিয়ডগুলিকে অবকাশ বলে ভাবা হত। তিনি বলেন, এজন্যই দেশের ক্রীড়া জগতে ৩-৪টি প্রজন্ম হারিয়ে গেছে। টিভিতে ইদানিং প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচির কথা বলেন তিনি যেখানে ছোট ছোট শহরের অনেক শিশুই অংশ নেয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে অনেক সুপ্ত প্রতিভা আছে এবং ক্রীড়া জগতে দেশের ক্ষমতা তুলে ধরতে সানাসর খেল মহাকুম্ভের একটি বিশাল ভূমিকা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, সংসদের কয়েকশ’ সদস্য দেশে এই ধরনের ক্রীড়ানুষ্ঠানের আয়োজন করছেন যেখানে বহু তরুণ খেলোয়াড় উন্নতির সুযোগ পাচ্ছেন। তিনি বলেন, এঁদের মধ্য থেকে বহু খেলোয়াড় রাজ্য ও জাতীয় স্তরে খেলবে এবং অলিম্পিকের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে দেশের জন্য পদক নিয়ে আসবে। শ্রী মোদী বলেন, “সানাসর খেল মহাকুম্ভ ভবিষ্যতের ক্রীড়া জগতে বিশাল পরিকাঠামোর শক্তিশালী ভিত গড়ে দিয়েছে।”
গোরক্ষপুরে আঞ্চলিক স্পোর্টর্স স্টেডিয়ামের উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ছোট ছোট শহরে স্থানীয় স্তরে ক্রীড়া সংক্রান্ত সুবিধা দিতে সরকারের প্রয়াসের ওপর জোর দেন। তিনি জানান, গোরক্ষপুরের গ্রামাঞ্চলের তরুণদের জন্য ১০০-রও বেশি খেলার মাঠ তৈরি করা হয়েছে এবং চৌরি চৌরায় একটি মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়েছে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও ‘খেলো ইন্ডিয়া অভিযান’-এর অধীনে খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়ে শ্রী মোদী বলেন, “এখন দেশ এগোচ্ছে একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে।”
এ বছরের বাজেটের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, “ক্রীড়া মন্ত্রকের বাজেট বরাদ্দ ২০১৪-র তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি।” তিনি বলেন, দেশে অনেক আধুনিক স্টেডিয়াম গড়ে তোলা হচ্ছে। তৈরি করা হয়েছে ‘টপস’ (টার্গেট অলিম্পিক পডিয়াম স্কিম) যেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের জন্য। তিনি ‘খেলো ইন্ডিয়া’, ‘ফিট ইন্ডিয়া’, যোগ-এর মতো অভিযানগুলির উল্লেখ করেন। মিলেটকে ‘শ্রী অন্ন’-এর পরিচিতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জোয়ার, বাজরার মতো মোটা দানার শস্য এই ‘সুপার ফুড’ শ্রেণীতে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী তরুণদের এই প্রচারাভিযানে অংশ নিতে বলেন এবং দেশকে লক্ষ্যে পৌঁছতে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
ভাষণের শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে অলিম্পিক থেকে শুরু করে অন্যান্য বড় প্রতিযোগিতায় শুধুমাত্র আপনাদের মতো তরুণ খেলোয়াড়রাই পদক জেতার ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।” শ্রী মোদী তাঁর বিশ্বাস ব্যক্ত করে বলেন, তরুণরা আরও সাফল্য পাবেন এবং তাঁদের সাফল্যে দেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং গোরক্ষপুরের সানাসর শ্রী রবি কিষাণ শুক্লা সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।