প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী গোয়ায় অনুষ্ঠিত জি-২০ গোষ্ঠীর পর্যটন মন্ত্রীদের বৈঠকে আজ ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে ভাষণ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে অতুল্য ভারতে সকলক স্বাগত জানান এবং বলেন, পর্যটন মন্ত্রীদের পর্যটক হিসেবে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ খুব কম থাকে যদিও তাঁরা আন্তর্জাতিক স্তরে ২ লক্ষ কোটি ডলারের একটি ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করেন। গোয়ায় জি-২০ গোষ্ঠীর পর্যটন মন্ত্রীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই অঞ্চল ভারতের অন্যতম পর্যটন স্থল। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত সকলকে অনুরোধ জানান, গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার পাশাপাশি তাঁরা যেন এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন এবং আধ্যাত্মিক দিকটি অনুভব করেন।
শ্রী মোদী বলেন, সংস্কৃত শ্লোক ‘অতিথি দেব ভবঃ’ যার অর্থ অতিথি ঈশ্বরসম, সেই ভাবনায় ভারতের পর্যটন ক্ষেত্রে কাজ করা হয়। আমাদের পর্যটনের অর্থ শুধু কোনও জায়গা ঘুরে দেখা নয়, নানা বিষয়ে এখানে প্রচুর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা হয়। “সঙ্গীত অথবা খাদ্য, শিল্প অথবা সংস্কৃতি - ভারতের বৈচিত্র্য রাজকীয় মহিমায় আবির্ভূত। সুউচ্চ হিমালয় থেকে গভীর অরণ্য, শুষ্ক মরুভূমি থেকে সুন্দর সমুদ্র সৈকত, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস থেকে ধ্যান – ভারতে সকলের জন্যই কিছু না কিছু রয়েছে।” তিনি বলেন, জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় ভারত দেশজুড়ে ১০০টি পৃথক পৃথক স্থানে প্রায় ২০০ বৈঠকের আয়োজন করেছে। “আপনাদের যেসব বন্ধুরা ইতোমধ্যেই বৈঠকগুলির জন্য ভারত সফর করেছেন তাঁদের যদি আপনারা এ দেশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, আমি নিশ্চিত প্রত্যেকের মতামত আলাদা হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে পর্যটন ক্ষেত্রের মূল লক্ষ্য হল সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্যকে রক্ষা করা। একইসঙ্গে, পর্যটনের জন্য আন্তর্জাতিক মানের পরিকাঠামো গড়ে তোলা। আধ্যাত্মিক পর্যটনের উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পৃথিবীর প্রধান প্রধান ধর্মগুলির তীর্থযাত্রীরা ভারতে আসেন। পরিকাঠামোর মানোন্নয়নের ফলে শাশ্বত শহর বারাণসীতে ৭ কোটি পর্যটক এসেছেন যা আগের চাইতে দশগুণ বেশি। ভারতে স্ট্যাচু অফ ইউনিটির মতো নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। বিশ্বের উচ্চতম মূর্তিটি দেখতে এক বছরের মধ্যে ২৭ লক্ষ পর্যটক এসেছেন। গত ৯ বছরে দেশজুড়ে পর্যটন ক্ষেত্রের বিকাশের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে শ্রী মোদী জানান। “পরিবহণ ক্ষেত্রের পরিকাঠামো গড়ে তোলা, আতিথেয়তা, দক্ষতা বিকাশ এমনকি, আমাদের ভিসা প্রদান ব্যবস্থাতেও আমরা পর্যটনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি।” আতিথেয়তা ক্ষেত্রটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এর মধ্য দিয়ে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হয়। অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রের চাইতেও এই ক্ষেত্রটিতে আরও বেশি মহিলা এবং যুবক-যুবতী যুক্ত হতে পারেন। দ্রুত সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্য পর্যটনের গুরুত্বকে ভারতও স্বীকৃতি দেয়।
শ্রী মোদী বলেন, পরিবেশ-বান্ধব পর্যটন, ডিজিটালাইজেশন, দক্ষতা বিকাশ, পর্যটন ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ এবং নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে ভারত এবং গ্লোবাল সাউথ-এর অন্যান্য রাষ্ট্রগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তিনি কৃত্রিম মেধার মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে আরও কাজে লাগানো এবং বিভিন্ন উদ্ভাবনমূলক কর্মকাণ্ডে আরও বেশি যুক্ত করার প্রস্তাব দেন। তিনি জানান, ভারতে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা হয়। এই ভাষাগুলির অনুবাদের জন্য এখন কৃত্রিম মেধার সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। পর্যটন ক্ষেত্রে এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে সরকার, শিল্প সংস্থা, বিনিয়োগকারী এবং শিক্ষাবিদদের মধ্যে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির আর্থিক ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ এবং দক্ষতা বিকাশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সাহায্য করার জন্য সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সন্ত্রাসবাদ বিভেদের সৃষ্টি করে, আর পর্যটন ঐক্যের।” একটি সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলার জন্য সমাজের সবস্তরের মানুষকে একজোট করার ক্ষমতা পর্যটনের রয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির একটি পর্যটন সংক্রান্ত ড্যাশবোর্ড গড়ে তোলার উদ্যোগে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। এর ফলে, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিষয়ে সবথেকে ভালো নিয়ম, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার ফলাফল এবং অনুপ্রেরণাদায়ক নানা ঘটনাকে এক জায়গায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। পর্যটন ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার বিষয়ে ভারতের যৌথ উদ্যোগ তাঁদের আলোচনায় সহায়ক হয়েছে বলে শ্রী মোদী মত প্রকাশ করেন। গোয়া রোডম্যাপ তৈরিতেও যা সাহায্য করেছে। “আন্তর্জাতিক পর্যটনের ক্ষেত্রে ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ – ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ ধারণাটি কাজে লাগাতে হবে” বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শ্রী মোদী গোয়ায় সাও জোয়াও উৎসব খুব শীঘ্রই উদযাপিত হবে বলে জানান। তিনি বলেন ভারত হল উৎসব ভূমি। আগামী বছর ভারতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি গণতন্ত্র মাতার উৎসব উদযাপনে সম্মেলন উপস্থিত প্রতিনিধিবৃন্দকে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান। এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রায় ১০০ কোটি ভোটদাতা এই উৎসবে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের প্রতি তাঁদের আস্থা পুনর্ব্যক্ত করবেন। “১০ লক্ষেরও বেশি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে আপনারা এই উৎসব প্রত্যক্ষ করতে পারবেন যার মধ্যে বৈচিত্র্য থাকবে।” তাঁর ভাষণের শেষে শ্রী মোদী গণতন্ত্রের উৎসবে সামিল হতে সকলকে ভারতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান।