প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও বার্তার মাধ্যমে কলকাতায় আয়োজিত জি-২০ দুর্নীতি বিরোধী মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে বক্তব্য রেখেছেন।
নোবেল পুরস্কার বিজয়ী গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শহর কলকাতায় প্রতিনিধিদের স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রথম জি-২০ দুর্নীতি বিরোধী বৈঠক মুখোমুখি বসলো। রবীন্দ্রনাথের লেখার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুরুদেব তাঁর লেখায় আমাদের লোভের হাত থেকে সতর্ক থাকতে বলেছেন, কারণ লোভ আমাদের সত্যের উপলব্ধি থেকে দূরে নিয়ে যায়। প্রাচীন উপনিষদেও বলা হয়েছে - 'মা গৃধা', অর্থাৎ 'লোভ করো না'।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির প্রভাব সব থেকে বেশি পড়ে গরীব ও প্রান্তিক মানুষের ওপর। সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের ক্ষেত্রে লোভ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, এটি বাজারকে বিনষ্ট করে, পরিষেবা প্রদানকে ব্যাহত করে এবং শেষ পর্যন্ত মানুষের জীবনযাত্রার মানকে নামিয়ে আনে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের দায়িত্ব হল জনসাধারণের কল্যাণের জন্য দেশের সম্পদ বাড়ানো। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে দুর্নীতিকে দমন করতে হবে। আর সেজন্যই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা দেশের মানুষের প্রতি সরকারের পবিত্র কর্তব্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কঠোর নীতি রয়েছে। স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে প্রযুক্তি ও ই-গভর্নেন্সের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বিভিন্ন সরকারি কল্যাণ মূলক প্রকল্পের ছিদ্রগুলি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, ভারতের লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি সুবিধা হস্তান্তরের সুযোগ পেয়েছেন। এই সব হস্তান্তরের মূল্য ৩৬০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ছিদ্রগুলি বন্ধ করতে পারায় ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি অপচয় বন্ধ করা গেছে। তাঁর সরকার ব্যবসা করার পদ্ধতিকে সহজ করেছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি পরিষেবাকে স্বয়ংক্রিয় এবং ডিজিটাইজ করে তোলায় মধ্যস্বত্বভোগীদের নির্মূল করা গেছে। সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি ই-মার্কেটপ্লেস, জেম পোর্টাল অনেক বেশি স্বচ্ছতা নিয়ে এসেছে। ২০১৮ সালে ইকোনমিক অফেন্ডার্স অ্যাক্ট কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার অর্থনৈতিক অপরাধগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এপর্যন্ত অর্থনৈতিক অপরাধী পলাতকদের কাছ থেকে ১.৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের সম্পদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের আওতায় তাঁর সরকার ২০১৪ সাল থেকে ১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
পলাতক অর্থনৈতিক অপরাধীদের বিষয়টি জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত সব দেশ এবং গ্লোবাল সাউথের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে তাঁর প্রথম জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনেই তিনি এই বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন। ২০১৮ সালের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে পলাতক অর্থনৈতিক অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং সম্পদ পুনরুদ্ধার নিয়ে তিনি নয় দফা কর্মসূচি পেশ করেছিলেন। কর্মীগোষ্ঠী এবিষয়ে নির্ণায়ক পদক্ষেপ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষপ্রকাশ করেন। তিনটি অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে কর্ম ভিত্তিক যে উচ্চস্তরীয় নীতি নেওয়া হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী তাকে স্বাগত জানান। এগুলি হল - তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা; সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা; এবং দুর্নীতি বিরোধী এজেন্সিগুলির সংহতি ও কার্যকারিতা বাড়ানো। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির মধ্যে এব্যাপারে ঘরোয়া সমঝোতা হওয়ায় সন্তোষপ্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে যে সব অপরাধী সীমানা পেরিয়ে আইনের ফাঁক-ফোঁকরের সাহায্যে পালাতে চায়, তাদের আটকানো যাবে। এক্ষেত্রে দ্রুত তাদের সম্পত্তি ও আয় চিহ্নিত করার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অভ্যন্তরে সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের যে প্রক্রিয়া রয়েছে, তা শক্তিশালী করে তোলার দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। বিদেশে থাকা সম্পদ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে জি-২০ দেশগুলিকে সাজার আগেই সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এতে বিচার প্রক্রিয়ার পর অপরাধীদের দ্রুত প্রত্যর্পণে সুবিধা হবে এবং একই সঙ্গে এই পদক্ষেপ দুর্নীতির বিরুদ্ধে যৌথ লড়াইয়ের জোরালো বার্তা দেবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জি-২০-র সম্মিলিত প্রয়াস, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে অনেকটা এগিয়ে দিতে পারে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়িয়ে এবং কড়া পদক্ষেপ নিয়ে দুর্নীতির মূলে আঘাত হানা সম্ভব। এক্ষেত্রে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ভূমিকাকেও যথাযথ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার পাশাপাশি মূল্যবোধ ও নৈতিকতার এক সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একমাত্র এই ভাবেই এক সুস্থিত ন্যায়পূর্ণ সমাজের ভিত্তি স্থাপন করা যাবে। জি-২০ দুর্নীতি বিরোধী মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকের সাফল্য কামনা করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।