প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ শিল্প প্রসার ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য দপ্তর আয়োজিত বাজেট-পরবর্তী ওয়েবিনারে বক্তব্য রেখেছেন। এটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর অষ্টম বাজেট পরবর্তী ওয়েবিনার। এই ওয়েবিনারের মূল ভাবনা ছিল ‘বিশ্বের জন্য মেক ইন ইন্ডিয়া’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেটে আত্মনির্ভর ভারত ও মেক ইন্ডিয়ার জন্য বহু গুরুত্বপূ্র্ণ সংস্থান রয়েছে। তিনি বলেন, ভারতের মতো একটি দেশ শুধু যে একটি বৃহৎ বাজার হয়ে থাকবে, তা মেনে নেওয়া যায় না। মেক ইন্ডিয়া নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী অতিমারীর সময়ে সরবরাহশৃঙ্খলে ব্যাঘাত ও অন্যান্য অনিশ্চয়তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অন্যদিকে তিনি বলেন, দেশের জনসংখ্যার অধিকাংশ কমবয়সী ও প্রতিভাবান হওয়া, এখানকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ আমাদের দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে মেক ইন ইন্ডিয়ার পথে এগোতে উৎসাহিত করবে। এই প্রসঙ্গে তিনি স্বাধীনতা দিবসে লাল কেল্লায় দেশে ত্রুটিহীন উৎপাদনের যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তারও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকে দেখলে আত্মনির্ভরতা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব আজ ভারতকে উৎপাদন শক্তির আধার হিসেবে দেখে। বর্তমানে ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ১৫ শতাংশ উৎপাদন ক্ষেত্র থেকে আসে, কিন্তু মেক ইন ইন্ডিয়ার সম্ভাবনা অসীম এবং দেশে একটি শক্তিশালী উৎপাদন ভিত্তি গড়ে তুলতে আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী সেমি-কন্ডাক্টর ও বৈদ্যুতিক যানবাহনের মতো ক্ষেত্রে সৃষ্টি হওয়া নতুন চাহিদা ও সম্ভাবনার উদাহরণ দিয়ে বলেন, এইসব ক্ষেত্রে বিদেশের উপর আমাদের যে নির্ভরতা রয়েছে দেশীয় উৎপাদকদের তা দূর করতে হবে। একইভাবে ইস্পাত ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো ক্ষেত্রেও দেশীয় উৎপাদনের উপর মনোনিবেশ করা দরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজারে কোনো একটি পণ্য থাকা এবং মেড ইন ইন্ডিয়া পণ্য থাকার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তিনি বলেন, ভারতে বিভিন্ন উৎসবের সময় আমাদের বিদেশ থেকে নানা জিনিস আমদানি করতে হয়, অথচ সেগুলি খুব সহজেই স্থানীয় উৎপাদকরা তৈরি করতে পারেন। ‘ভোকাল ফর লোকাল’-এর যে শ্লোগান তিনি দিয়েছিলেন তা যাতে দীপাবলির সময় মাটির প্রদীপ কেনাতেই সীমাবদ্ধ না থাকে তা নিয়ে সতর্ক করে দেন তিনি। বেসরকারি সংস্থাগুলিকে তাদের বিপণন ও ব্র্যান্ডিং-এর ক্ষেত্রে ‘ভোকাল ফর লোকাল’ ও ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর উপর জোর দিতে অনুরোধ জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনার সংস্থা যেসব পণ্য তৈরি করে তা নিয়ে গর্বিত হন এবং আপনার ভারতীয় ক্রেতাদের মধ্যেও এই গর্ববোধ জাগিয়ে তুলুন”। এজন্য অভিন্য ব্র্যান্ডিংও করা যেতে পারে।
স্থানীয় পণ্যগুলির নতুন বাজার খোঁজার উপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। বেসরকারি সংস্থাগুলিকে পণ্যের গবেষণা ও উন্নয়নের উপর জোর দিয়ে পণ্যশৃঙ্খলকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তোলার আহ্বান জানান। ২০২৩ সালকে আন্তর্জাতিক বাজরা বছর হিসেবে ঘোষণার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব বাজারে বাজরার চাহিদা বাড়ছে। সেই চাহিদা বিশ্লেষণ করে আমাদের উচিত দেশের বাজরা উৎপাদক মিলগুলির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো এবং উন্নত প্যাকেজিং-এর ব্যবস্থা করা।
খনি, কয়লা ও প্রতিরক্ষার মতো ক্ষেত্রগুলি উন্মুক্ত হওয়ায় এই সব ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এইসব ক্ষেত্রের উৎপাদকদের নতুন কৌশল উদ্ভাবনার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের পণ্যকে বিশ্বমানের সমতুল হতে হবে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার যোগ্য হয়ে উঠতে হবে।
এবারের বাজেটে সহজ ঋণ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকার এই ক্ষেত্রের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকার একটি ব়্যাম্প কর্মসূচি (রেজিং অ্যান্ড অ্যাকসিলারেটিং এমএসএমই পারফর্মেন্স) ঘোষণা করেছে। বাজেটে কৃষক, বৃহৎ শিল্প এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য রেলের মাধ্যমে সরবরাহের সুবিধার কথাও বলা হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে ডাক ও রেল নেটওয়ার্কের সংযুক্তিকরণ, সেখানকার ক্ষুদ্র সংস্থাগুলির সংযোগের সমস্যার সমাধান করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য ঘোষিত পিএম ডিইভিআইএনই মডেলের ব্যবহার করে আঞ্চলিক উৎপাদন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা যেতে পারে। একইভাবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইনের সংস্কার, রপ্তানিকে উৎসাহিত করবে।
সংস্কারের প্রভাব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড়মাত্রায় ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎপাদন ভিত্তিক উৎসাহদান পদ্ধতি (প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ - পিএলআই)-র প্রয়োগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ১ লক্ষ কোটি টাকার উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আরও বেশ কিছু উৎপাদন ভিত্তিক উৎসাহদান প্রকল্প রূপায়ণের বিভিন্ন স্তরে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ২৫ হাজার পুরনো বিধিনিয়ম তুলে নেওয়ায় এবং লাইসেন্সের স্বয়ংক্রিয় পুনর্নবীকরণের ব্যবস্থা করায় বিধিনিয়মের বোঝা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। একইসঙ্গে ডিজিটাইজেশনের ফলে নিয়ন্ত্রণ কাঠামোতে গতি ও স্বচ্ছতা এসেছে। তিনি বলেন, সাধারণ একটি ফর্ম থেকে শুরু করে কোম্পানী স্থাপনের জন্য জাতীয় স্তরে এক জানালা পদ্ধতি – সব ক্ষেত্রেই প্রতি পদক্ষেপে সরকারের উন্নয়ন সহায়ক দৃষ্টিভঙ্গির নিদর্শন পাওয়া যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী অগ্রণী উৎপাদকদের কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্র চিহ্নিত করে সেখানে বিদেশের উপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই ধরণের ওয়েবিনারের মাধ্যমে নীতি রূপায়ণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বক্তব্য শোনা যায়, এমন উদ্যোগ এই প্রথম। বাজেটের সংস্থানগুলির সঠিক, সময় নির্দিষ্ট ও নির্বিঘ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতা প্রার্থনা করেন।