অষ্টাদশ লোকসভার প্রথম অধিবেশনের শুরু আজ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী সংবাদ মাধ্যমের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন।
সংসদীয় গণতন্ত্রে আজকের দিনটিকে গর্ব ও সাফল্যের দিন বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর নতুন সংসদ ভবনে এই প্রথম সাংসদদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। তিনি বলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে আমি প্রত্যেক নবনির্বাচিত সাংসদকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
নতুন সংসদ ভবন গঠন দেশের সাধারণ মানুষের সংকল্পকে সম্পূর্ণতা দান বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নব গতি ও নব উদ্যম এবং নব উচ্চতায় পৌঁছতে আমাদের এই নতুন সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, আজ অষ্টাদশ লোকসভার সূচনা লগ্ন ২০৪৭ সালের উন্নত ভারত গড়ার লক্ষ্য অর্জনের পথকে প্রশস্ত করবে। ভারতের সাধারণ নির্বাচনকে বিশ্বের বৃহত্তম নির্বাচন বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, ১৪০ কোটি দেশবাসীর কাছে এটি গর্বের বিষয়। তিনি বলেন, ৬৫ কোটিরও বেশি ভোটদাতা এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন। তিনি আনন্দের সঙ্গে বলেন, স্বাধীনতার পর এটি দ্বিতীয়বার দেশের মানুষ কোনও একটি সরকারকে পর পর তিনবারের জন্য ক্ষমতায় আনলো। একে ৬০ বছর পর নিঃসন্দেহে এক গর্বের বিষয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পর পর তিনবার তাঁর সরকারকে শাসনের সুযোগ দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের সদিচ্ছা, নীতি ও জনসাধারণের প্রতি দায়বদ্ধতাকে এর মধ্যে দিয়ে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে আমরা এক প্রথার প্রবর্তন করেছি যেখানে সরকার চালাতে যেমন সংখ্যা গরিষ্ঠতার প্রয়োজন হয়, তেমনই দেশ চালাতেও সহমত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, মা ভারতীর সেবায় তাঁর সরকারের সবসময়েই প্রয়াস ১৪০ কোটি দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহমত গড়ে সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলা।
ভারতীয় সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্য থেকে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এবারের অষ্টাদশ লোকসভায় অনেক তরুণ সাংসদদের শপথ গ্রহণে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ভারতীয় পরম্পরায় সংখ্যার দিক থেকে ১৮’র বিশেষ তাৎপর্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গীতাতে ১৮টি অধ্যায় রয়েছে, যেখানে কর্ম, কর্তব্য এবং ভালোবাসার বার্তা রয়েছে। পুরাণ ও উপ-পুরাণের সংখ্যাও ১৮। শ্রী মোদী বলেন, ‘১৮’ সংখ্যাগতভাবে নিখুঁত। ভারতে ভোটদানে বয়সের শুরুও ১৮ থেকে। তিনি বলেন, ভারতের অমৃতকালে অষ্টাদশ লোকসভার গঠন এক শুভ ইঙ্গিত বহন করছে।
আগামীকাল ২৫ জুন দেশে জরুরি শাসনের ৫০ বছর পূর্ণ হবে। ভারতীয় গণতন্ত্রে এই জরুরি শাসন এক কালো দিন। শ্রী মোদী বলেন, গণতন্ত্রের কন্ঠ রোধ করে দেশকে কারাগার হিসেবে গড়ে তোলার অপচেষ্টাকে ভারতীয় সংবিধান যে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দিয়েছিল, ভারতের নতুন প্রজন্ম তা কোনও দিন ভুলবে না। প্রধানমন্ত্রী জোরের সঙ্গে ভারতের গণতন্ত্রিক ঐতিহ্যের কথা বলেন। তিনি দেশবাসীকে গণতন্ত্র রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। ঐ ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেজন্য সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। শ্রী মোদী বলেন, আমরা উজ্জীবিত গণতন্ত্রের শপথ নেব এবং ভারতীয় গণতন্ত্রের স্বার্থ রক্ষায় সাধারণ মানুষের স্বপ্ন পূরণ করবো।
দেশের মানুষ তৃতীয়বারের জন্য তাঁর সরকারকে নির্বাচন করায় সরকারের দায়বদ্ধতাও তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি দেশবাসীকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, তাঁর সরকার তিনগুণ বেশি পরিশ্রম করবে এবং তিনগুণ বেশি সাফল্য অর্জনে সমর্থ হবে।
সংসদে নবনির্বাচিত সদস্যদের ঘিরে দেশের উচ্চাশার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সমস্ত সাংসদদের জনকল্যাণে, জনপরিষেবায় এবং জনস্বার্থে কাজ করতে বলেন। বিরোধীদের গুরুত্বের উপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ চায় তাঁরা গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষায় কাজ করুন। তিনি বলেন, জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে বিরোধীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করুন। শ্রী মোদী বলেন, মানুষ শ্লোগান চান না, কাজ চান। তিনি আস্থা প্রকাশ করে বলেন, সাংসদরা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে নিজেদের নিয়োজিত করবেন।
সাংসদদের দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংঘবদ্ধভাবে উন্নত ভারতের সংকল্প পূরণ এবং মানুষের বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। দেশের ২৫ কোটি মানুষের দারিদ্র্য মুক্তি দেশে নতুন বিশ্বাস ও আশার সঞ্চার করেছে। শীঘ্রই ভারত দারিদ্র্যের বেড়াজাল কাটিয়ে উঠবে। শ্রী মোদী বলেন, ১৪০ কোটি দেশবাসী কঠোর পরিশ্রমে পিছপা নন। আমাদের উচিৎ, তাঁদের সর্বোচ্চ সুযোগ দেওয়া। তিনি বলেন, সভা হয়ে উঠুক সংকল্পের সভা। এবং অষ্টাদশ লোকসভা সাধারণ মানুষের স্বপ্ন পূরণ করুক। পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়ে তাঁদের নতুন সংকল্প পূরণে পূর্ণ আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান।