প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে গুজরাটে রামকৃষ্ণ মঠ আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন। সমাবেশে ভাষণে শ্রী মোদী শুভেচ্ছা জানান প্রণম্য শ্রীমৎ স্বামী গৌতমানন্দজী, দেশ বিদেশ থেকে আগত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রণম্য সন্ন্যাসী, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল এবং অন্যান্য বিশিষ্ট জনকে। শ্রী মোদী শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন দেবী সারদা, গুরুদেব রামকৃষ্ণ পরমহংস এবং স্বামী বিবেকানন্দকে। তিনি বলেন যে, আজকের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে শ্রীমৎ স্বামী প্রেমানন্দ মহারাজের জন্মবার্ষিকীতে এবং তাঁকে শ্রদ্ধা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহান ব্যক্তিত্বদের প্রাণশক্তি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্বে ইতিবাচক কাজ নির্মাণ এবং গঠন করে চলেছে’। তিনি আরও বলেন যে, স্বামী প্রেমানন্দ মহারাজের জন্মবার্ষিকীতে লেখাম্বায় নবনির্মিত প্রার্থনা গৃহ এবং একটি সাধু নিবাস নির্মাণ ভারতের সন্ত ঐতিহ্যকে লালন করবে। শ্রী মোদী বলেন, সেবা এবং শিক্ষার একটি যাত্রা শুরু হচ্ছে, যা আগামী প্রজন্মের কল্যাণ করবে। তিনি আরও বলেন যে, শ্রী রামকৃষ্ণদেব মন্দির, দরিদ্র ছাত্রদের জন্য ছাত্রাবাস, বৃত্তিমূলক শিক্ষা কেন্দ্র, হাসপাতাল এবং পর্যটকদের নিবাসের মতো মহান কাজ আধ্যাত্মিকতা প্রচার ও মানবতার সেবার কাজের মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে। তিনি সাধু সন্ন্যাসীদের সঙ্গ এবং আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডলে থাকতে পছন্দ করেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।
সানন্দের সঙ্গে জড়িত স্মৃতি রোমন্থন করে শ্রী মোদী বলেন, বহু বছরের অবহেলার পরে এই অঞ্চল বর্তমানে বহু প্রতীক্ষিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাক্ষী থাকছে। তিনি বলেন যে, সন্ন্যাসীদের আশীর্বাদ ও সরকারের প্রয়াস এবং নীতি এই উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সমাজের চাহিদারও বদল ঘটে জানিয়ে শ্রী মোদী তাঁর ইচ্ছে প্রকাশ করে বলেন যে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সানন্দকে আধ্যাত্মিক উন্নয়নের কেন্দ্র হয়ে উঠতে হবে। তিনি আরও বলেন যে, ভারসাম্যের জীবনের সঙ্গে অর্থের পাশাপাশি আধ্যাত্মিকতাও সমান জরুরি। শ্রী মোদী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের সাধু এবং সন্ন্যাসীদের পথ প্রদর্শনায় সানন্দ এবং গুজরাট সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছে।
গাছের ফলের সম্ভাবনা নিহিত থাকে তার বীজে, জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রামকৃষ্ণ মঠ হল সেই বৃক্ষ যার বীজ স্বামী বিবেকানন্দের মতো মহান অধ্যাত্ম পুরুষের অসীম প্রাণশক্তি বহন করছে। তিনি আরও বলেন যে, নিরন্তর প্রসারের এটাই কারণ এবং মানবতার ওপর এর যা প্রভাব তা অনন্ত এবং অসীম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে রামকৃষ্ণ মঠের কেন্দ্রে যে ভাবনা রয়েছে তাকে বুঝতে হলে স্বামী বিবেকানন্দকে বুঝতে হবে এবং তাঁর আদর্শে জীবনযাপন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, তিনি যখন সেই আদর্শে জীবনযাপনের প্রণালী শিখেছেন তখনই নিজেই সেই পথ প্রদর্শক আলোর সন্ধান পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন যে, মঠের সন্ন্যাসীরা খুব ভালোভাবেই জানেন, রামকৃষ্ণ মিশন এবং তাঁর সন্ন্যাসীরা স্বামী বিবেকানন্দের ভাবনা সহ কিভাবে তাঁর জীবনে দিশানির্দেশ করেছে। শ্রী মোদী বলেন যে, সন্ন্যাসীদের আশীর্বাদে তিনি স্বাভাবিকভাবেই মিশনের অনেক কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। ২০০৫-এ পূজ্য স্বামী আত্মস্থানন্দজীর অধীনে থাকা রামকৃষ্ণ মিশনকে বদোদরার দিলারাম বাংলো হস্তান্তরের স্মৃতি রোমন্থন করে শ্রী মোদী বলেন, স্বামী বিবেকানন্দও এখানে দিন কাটিয়েছেন।
এই কর্মসূচিতে এবং মিশনের অনেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারার সুযোগ পেয়েছেন বলে তিনি জানিয়ে শ্রী মোদী বলেন, আজ সারা বিশ্বে রামকৃষ্ণ মিশনের ২৮০-র বেশি শাখা আছে এবং রামকৃষ্ণ দর্শনের অনুসারী প্রায় ১২০০ আশ্রম আছে ভারতে। তিনি আরও বলেন, এই আশ্রমগুলি কাজ করছে মানবতার সেবা করার সংকল্পের ভিত্তি হিসেবে এবং গুজরাট বহু দিন ধরে রামকৃষ্ণ মিশনের সেবার সাক্ষী হয়ে আসছে। তিনি সেই ঘটনাগুলির উল্লেখ করেন, বহু দশক আগে যখন রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে জড়িত মানুষরা এগিয়ে এসে সুরাতের বন্যা পীড়িতদের হাত ধরে ছিলেন, মোরবির বাঁধ দুর্ঘটনার পরে, ভুজে ভূমিকম্পের ফলে বিপর্যয়ের পরে এবং যখনই গুজরাটে কোনো বিপর্যয় নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী ভূমিকম্পের সময়ে বিধ্বস্ত ৮০-টিরও বেশি বিদ্যালয় পুনর্গঠনে রামকৃষ্ণ মিশনের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্মরণ করেন এবং বলেন যে, গুজরাটের মানুষ এখনও সেই সেবা মনে রেখেছেন এবং সেখান থেকেই অনুপ্রেরণাও পাচ্ছেন।
গুজরাটের সঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের আধ্যাত্মিক সম্পর্কের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, গুজরাট তাঁর জীবনযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। তিনি আরও জানান, স্বামী বিবেকানন্দ গুজরাটের অনেক জায়গায় গিয়েছিলেন এবং গুজরাটেই স্বামীজী প্রথম জানতে পারেন শিকাগোর বিশ্ব মহা ধর্মসম্মেলন সম্পর্কে। তিনি আরও বলেন যে, গুজরাটেই তিনি অনেক পুঁথির গভীর অধ্যয়ন করেছিলেন এবং নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন বেদান্ত প্রচারে। শ্রী মোদী বলেন, ১৮৯১-তে স্বামীজী বেশ কয়েক মাস থেকেছিলেন পোরবন্দরের ভোজেশ্বর ভবনে এবং তৎকালীন গুজরাট সরকার সেই বাড়িটি রামকৃষ্ণ মিশনকে দেয় স্মারক মন্দির নির্মাণ করার জন্য। শ্রী মোদী স্মৃতি রোমন্থন করে জানান, ২০১২ থেকে ২০১৪ গুজরাট সরকার স্বামী বিবেকানন্দের ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী পালন করে। সমাপ্তি অনুষ্ঠানটি উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয় গান্ধীনগরের মহাত্মা মন্দিরে, যার সাক্ষী থেকেছিলেন দেশ বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত। শ্রী মোদী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, গুজরাট সরকার এখন গুজরাটের সঙ্গে স্বামীজীর সম্পর্কের স্মৃতিতে স্বামী বিবেকানন্দ ট্যুরিস্ট সার্কিট নির্মাণের নীল নকশা প্রস্তুত করছে।
স্বামী বিবেকানন্দ আধুনিক বিজ্ঞানের বড় সমর্থক ছিলেন, এই কথায় জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্বাস করতেন বিজ্ঞানের গুরুত্ব শুধু কোনো জিনিসের অথবা ঘটনার বিবরণে সীমিত নয় বরং বিজ্ঞানের গুরুত্ব আমাদের অনুপ্রাণিত করা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতের ক্রমবর্ধমান আধিপত্যের উপর জোর দিয়ে শ্রী মোদী বলেন যে, ভারতের পরিচিতি স্বীকৃত হয়েছে অনেক সাফল্যের কারণে, যেমন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্টআপ পরিমণ্ডল, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার লক্ষ্যে পদক্ষেপ, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে আধুনিক নির্মাণ এবং আন্তর্জাতিক সমস্যায় ভারতের সমাধানসূত্র দেওয়ার ঘটনায়। তিনি আরও বলেন, আজকের ভারত এগিয়ে চলেছে তার জ্ঞান, ঐতিহ্য এবং শতাব্দী প্রাচীন শিক্ষার ভিত্তিতে। শ্রী মোদী বলেন, “স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্বাস করতেন একটি দেশের মেরুদণ্ড তার যুবশক্তি”। যুবশক্তি বিষয়ে স্বামী বিবেকানন্দের বাণী উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, এটাই সময় এবং আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি আরও বলেন যে, ভারত বর্তমানে অমৃতকালের নতুন যাত্রা শুরু করেছে এবং উন্নত ভারত গড়ার দৃঢ় সংকল্প নিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই লক্ষ্যপূরণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে শ্রী মোদী বলেন, “ভারত বিশ্বের মধ্যে তরুণতম দেশ”। তিনি আরও বলেন যে, বর্তমানে ভারতের যুবসমাজ তাদের সক্ষমতা এবং দক্ষতা প্রমাণ করেছে বিশ্বে এবং ভারতের যুবশক্তি বিশ্বের বড় বড় কোম্পানীতে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং ভারতের উন্নয়নের ভার নিয়েছে। বর্তমানে দেশের কাছে সময় ও সুযোগ আছে জানিয়ে শ্রী মোদী দেশ গঠনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যুবসমাজকে প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো রাজনীতিতেও দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রয়োজন আছে আমাদের যুবসমাজের। এই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, ২০২৫-এর ১২ জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দের জন্মবার্ষিকী যা যুব দিবস হিসেবে পালন করা হয়, সরকার সেদিন দিল্লিতে ইয়াং লিডার্স ডায়ালগের আয়োজন করছে। তিনি আরও জানান, দেশের নির্বাচিত ২ হাজার যুবাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে এবং দেশের কয়েক কোটি যুবা এতে অংশ নেবেন। তিনি আরও বলেন, যুবসমাজের পরিপ্রেক্ষিতে উন্নত এক ভারতের সংকল্প নিয়ে আলোচনা হবে এবং রাজনীতির সঙ্গে যুবসমাজকে যুক্ত করার পথদিশা প্রস্তুত করা হবে। শ্রী মোদী আগামী দিনে ১ লক্ষ প্রতিভাশালী এবং প্রাণশক্তিতে ভরপুর যুবাকে রাজনীতিতে আনতে সরকারের সংকল্পকে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই যুবরা একবিংশ শতাব্দীতে ভারতীয় রাজনীতিতে হবে নতুন মুখ এবং দেশের ভবিষ্যৎ।
আধ্যাত্মিকতা এবং সুস্থায়ী উন্নয়ন - বিশ্বকে এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দুটি ভাবনার মধ্যে মিলন ঘটিয়ে আমাদের আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, স্বামী বিবেকানন্দ প্রায়শই জোর দিতেন আধ্যাত্মিকতার বাস্তব দিকটির উপর এবং চাইতেন সেই আধ্যাত্মিকতা যা সমাজের প্রয়োজন মেটাবে। তিনি আরও বলেন যে, ভাবনার পবিত্রতার সঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দ জোর দিতেন পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার উপর। শ্রী মোদী জোর দিয়ে বলেন যে, সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন করা যেতে পারে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক কল্যাণ এবং পরিবেশ রক্ষার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এই লক্ষ্যে পৌঁছতে স্বামী বিবেকানন্দের দর্শন আমাদের পথ প্রদর্শন করবে। আধ্যাত্মিকতা এবং সুস্থায়িত্ব দুটিতেই ভারসাম্য রাখা জরুরি জানিয়ে শ্রী মোদী বলেন, একটি মনের ভারসাম্য রক্ষা করে অন্যটি আমাদের পরিবেশের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখার শিক্ষা দেয়। শ্রী মোদীর বিশ্বাস, রামকৃষ্ণ মিশনের মতো প্রতিষ্ঠান মিশন লাইফ, এক পেড় মা কে নাম-এর মতো আমাদের অভিযানকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাদের সাহায্যেই এটা আরও প্রসারিত করা যায়।
শ্রী মোদী বলেন, “স্বামী বিবেকানন্দ চাইতেন ভারত যেন শক্তিশালী এবং আত্মনির্ভরশীল দেশ হয়ে ওঠে”। শ্রী মোদী বলেন, তাঁর সেই লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যেই দেশ এখন এগিয়ে চলেছে। ভাষণের সমাপ্তিতে তিনি জোর দিয়ে বলেন, যথাশীঘ্র সম্ভব এই স্বপ্ন পূরণ করতে হবে এবং শক্তিশালী ও সক্ষম ভারত মানবতাকে আবার নতুন দিশা দেখাবে। তিনি বলেন, এই জন্য দেশের প্রত্যেক নাগরিককে গুরুদেব রামকৃষ্ণ পরমহংস এবং স্বামী বিবেকানন্দের ভাবনাকে আত্মস্থ করতে হবে।