মঙ্গলবারবার্লিনে চতুর্থ ভারত-জার্মানি আন্তঃসরকারি পরামর্শ বৈঠকে নেতৃত্ব দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীশ্রী নরেন্দ্র মোদী এবং জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল।
বৈঠকেরশেষে সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপনাকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইউরোপতথা সমগ্র বিশ্বের জন্য চ্যান্সেলর মার্কেলের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাভাবনার ভূয়সীপ্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভারত ও জার্মানির সম্পর্কের গতি-প্রকৃতি থেকেই অনুভব করাসম্ভব তার ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতটি।
শ্রীমোদী বলেন, জার্মানি থেকে বিদেশি বিনিয়োগের মাত্রা ভারতে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েচলেছে। বিশেষত, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচিতে জার্মানির বিনিয়োগ উল্লেখ করার মতো।দক্ষ ভারত গড়ে তোলার কাজে জার্মানির অংশীদারিত্ব বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনেকরেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, উন্নয়নের নিরিখে যে মাপকাঠিটি জার্মানিঅনুসরণ করে থাকে তা বিশেষ স্বীকৃতি লাভ করেছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। এই কারণেইভারতের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় জার্মানির অংশগ্রহণ বিশেষভাবে জরুরি। এই দেশটির সহযোগিতারপ্রত্যাশা রয়েছে ক্রীড়াঙ্গনেও, বিশেষত, ফুটবল খেলায়।
অনুষ্ঠিতবৈঠকে পরিবেশ সুরক্ষা এবং স্মার্ট নগরী গড়ে তোলার মতো বিষয়গুলি উঠে আসে বলে জানানভারতের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মতে, জার্মানির উদ্ভাবন প্রতিভা এবং ভারতীয় যুবশক্তিরকর্মোদ্যম স্টার্ট আপ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এক দারুণ কাজ করবে। তিনি বলেন, একগণতান্ত্রিক বিশ্ব শৃঙ্খলা গড়ে তোলা বর্তমানে একান্ত জরুরি। কারণ, আমরা এখন বাসকরছি পরস্পর সংযুক্ত এবং পরস্পর নির্ভরশীল এক বিশ্ব সংসারে।
একপ্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী বলেন, ভারত ও জার্মানি একে অপরের সম্পূরক।জার্মানির ক্ষমতা ও দক্ষতা এবং ভারতের প্রয়োজন ও চাহিদার মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট সমন্বয়ও সঙ্গতি। ইঞ্জিনিয়ারিং, পরিকাঠামো এবং দক্ষতা বিকাশের মতো ক্ষেত্রগুলিতে উৎকর্ষসাধনের লক্ষ্যে ভারতের অনুসন্ধান প্রচেষ্টার কথা তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন ভারতেরপ্রধানমন্ত্রী। উদ্ভাবন ও গণতন্ত্রের মূল্যবোধকে তিনি মানবজাতির পক্ষে এক পরমআশীর্বাদ বলে বর্ণনা করেন। ভারত ও জার্মানি দুটি দেশই এই মূল্যবোধের শরিক।
জলবায়ুপরিবর্তন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী প্রকৃতির লালন ও সুরক্ষায়ভারতের কালোত্তীর্ণ মূল্যবোধের কথা বিবৃত করেন। আগামী ২০২২ সালের মধ্যেপুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির উৎস থেকে ১৭৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের অঙ্গীকারেরকথাও প্রসঙ্গত স্মরণ করেন তিনি। প্রকৃতির সুরক্ষার ওপর জোর দিয়ে শ্রী মোদী বলেন,ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণ ও মঙ্গল নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুধুমাত্র অনৈতিক একটি কাজইনয়, তা এক অপরাধ বিশেষও।
এরআগে, আন্তঃসরকারি পরামর্শ বৈঠককালে নিয়ম-নীতি ভিত্তিক বিশ্ব শৃঙ্খলা গড়ে তোলারকাজে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশেষ ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী । সন্ত্রাসবাদ বিশ্বে যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছেতাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন শ্রী মোদী এবং চ্যান্সেলর মার্কেল। পারস্পরিকসন্ত্রাস বিরোধী উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনতাঁরা।
বিশ্বেরআমদানি-রপ্তানিকারক সংগঠনের সদস্যপদে ভারতের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিকে সমর্থনজানানোর জন্য জার্মানিকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এদিনের বৈঠকে বিশুদ্ধ কয়লাজ্বালানি, বিদ্যুৎ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, সাইবার সুরক্ষা এবংঅসামরিক পরিবহণ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলি উঠে আসে আলোচনাকালে।আফগানিস্তান সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিষয়েও কথা হয় দুই বিশ্ব নেতার মধ্যে।
এদিনদু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় মোট ১২টি চুক্তি। প্রচার করা হয় দু’দেশের পক্ষ থেকেএক যৌথ বিবৃতিও যাতে চুক্তি ও মতৈক্যের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়।