প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার ঘূর্ণিঝড় ‘তৌকতে’-র জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য আগাম সতর্কতা হিসেবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রক/সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রস্তুতি বিষয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে যে ঘূর্ণিঝড় ‘তৌকতে’ ১৮ মে বিকেল অথবা সন্ধ্যের দিকে প্রায় ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার গতি বেগে পোরবন্দর ও নালিয়ার মধ্যবর্তী গুজরাট উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। এর জেরে গুজরাটের উপকূলবর্তী জেলায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এমনকি জুনাগড় ও গির সোমনাথে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সৌরাষ্ট্র, কচ্ছ, দিউ, জুনাগড়, পোরবন্দর, দেবভূমি দ্বারকা, আমরেলি, রাজকোট, জামনগর ইত্যাদি এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর সতর্ক করে জানিয়েছে মোরবি, কচ্ছ, দেবভূমি দ্বারকা এবং জামনগর জেলার উপকূল অঞ্চলে ঝড়ের জেরে দুই থেকে তিন মিটার সমুদ্রে ঢেউ পারে। এমনকি পোরবন্দর, জুনাগড়, দিউ, গিরি সোমনাথ, আমরেলি, ভাবনগরে এক থেকে দুই মিটার এবং গুজরাটের উপকূলবর্তী অন্যান্য জায়গায় ০.৫ থেকে ১ মিটারেরও বেশি সমুদ্রের ঢেউ উঠতে পারে। ১৮ মে বিকেল অথবা সন্ধের দিকে সমুদ্র উত্তাল থাকবে। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর গত ১৩ মে থেকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে এই ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করছে।
এদিনের পর্যালোচনা বৈঠকে ক্যাবিনেট সচিব সমস্ত উপকূলীয় রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রক ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যে যোগাযোগ রেখে চলেছে তা নিয়েও আলোচনা করা হয়।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ২৪ ঘণ্টায় রাজ্য সরকার/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে এই পরিস্থিতি বিষয়ে পর্যালোচনা করার জন্য যোগাযোগ রেখে চলেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ইতিমধ্যেই আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সংশ্লিষ্ট সব রাজ্যে কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একটি দল পাঠিয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা রক্ষা বাহিনীর ৪২টি দলকে ৬টি রাজ্যে পাঠানোর জন্য উদ্ধারকারী নৌকা, গাছ কাটার যন্ত্র, টেলিকম সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আরও ২৬টি দলকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
ত্রাণ, উদ্ধার এবং অনুসন্ধান কাজ চালানোর জন্য জাহাজ ও হেলিকপ্টার নিয়ে ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী এবং নৌ বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার টাস্কফোর্স ইউনিট এবং বায়ু সেনাকে উদ্ধাকারী সরঞ্জাম ও নৌকা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। মানবিক সহায়তা ও বিপর্যয় ত্রাণ ইউনিট সহ ৭টি জাহাজ পশ্চিম উপকূলে প্রস্তুত রয়েছে।এমনকি নজরদারি চালানোর জন্য বিমান ও হেলিকপ্টার পশ্চিম উপকূলে তৈরি রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় ত্রাণ সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য দল এবং চিকিৎসক দলকে ত্রিভন্দ্রম, কান্নুর এবং পশ্চিম উপকূলের বিভিন্ন স্থানে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
বিদ্যুৎ মন্ত্রক জরুরি পরিষেবায় প্রস্তুত রয়েছে এবং বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে ট্রান্সফর্মার, ডিজি সেট এবং অন্যান্য বিদ্যুতিন সরঞ্জাম তৈরি রাখা রয়েছে। টেলিকম মন্ত্রক সমস্ত টেলিফোনের টাওয়ার এবং এক্সচেঞ্জ গুলির ওপর নজর রাখছে। টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য মন্ত্রক তৈরি রয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে কোভিডের বিষয়ে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রস্তুতি এবং পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির জন্য পরামর্শ জারি করেছে। জরুরি ওষুধ সহ ১০টি কুইক রেসপন্স চিকিৎসা দল এবং ৫টি জনস্বাস্থ্য সাহায্যকারী দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্দর, জাহাজ চলাচল এবং জলপথ মন্ত্রক সমস্ত নৌ জাহাজকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং নৌ জাহাজগুলিকে জরুরি কাজে মোতায়েন করা হয়েছে।
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা রক্ষাকারী দল সংশ্লিষ্ট রাজ্যসংস্থাগুলির সঙ্গে সম্ভাব্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্থান থেকে মানুষকে দ্রুত খালি করার কাজে সহায়তা দান করছে এবং ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবিলা করতে হবে তা নিয়ে নিরন্তর জনসচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছে।
পর্যালোচনা করার পরে প্রধানমন্ত্রী উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের প্রত্যেক মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া সুনিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন। রাজ্য সরকার যেসব মানুষদেরকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে গেছে তাদের কাছে পানীয় জল, স্বাস্থ্য, টেলি যোগাযোগ, বিদ্যুতের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পরিষেবা পৌঁছে দিতে বলেন তিনি। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণের আগাম নির্দিশ দেন প্রধানমন্ত্রী।শ্রী মোদী আধিকারিকদের হাসপাতালগুলিতে কোভিড ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। এমনকি কোভিড টিকা সংরক্ষণের জন্য হিম ঘরে যথাযথ বিদ্যুতের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত অক্সিজেন ট্যাঙ্কারের মজুত, এক স্থান থেকে আরেক স্থানে অক্সিজেন ট্যাঙ্কার পরিবহণে সমস্যা দূরীকরণ এবং প্রয়োজনীয় ওষুধের আগাম মজুত ভাণ্ডার করে রাখার জন্য নির্দেশ দেন। তিনি ২৪ ঘণ্টার ভিত্তিতে কন্ট্রোল রুম খোলার জন্য পরামর্শ দেন। পাশাপাশি জামনগর থেকে যাতে অক্সিজেন সরবরাহ কোনোভাবে বাধাপ্রাপ্ত না হয় তার জন্য নজরদারি চালাতে বলেন। সময় মতো সংবেদনশীলতার সঙ্গে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে ত্রাণ ব্যবস্থা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণেরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ।
এদিনের পর্যালোচনা বৈঠকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের প্রধান সচিব, ক্যাবিনেট সচিব, স্বরাষ্ট্র, অসামরিক বিমান চলাচল, বিদ্যুৎ, টেলিকম, জাহাজ চলাচল, মৎস্যজীবী মন্ত্রক ও দপ্তরের সচিব, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের সদস্য, রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান, ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা রক্ষা বাহিনীর মহানির্দেশক উপস্থিত ছিলেন।