মাননীয় মিঃএমোমালি রহমন,
ভদ্রমহিলা ওভদ্রমহোদয়গণ,
সংবাদ মাধ্যমেরপ্রতিনিধিবৃন্দ,
প্রেসিডেন্টরহমন এবং তাঁর প্রতিনিধিদলকে আমি ভারতে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। তাজিকিস্তান হ’লআমাদের এক মূল্যবান বন্ধুরাষ্ট্র এবং এশিয়ায় এক কৌশলগত অংশীদার। প্রেসিডেন্ট রহমননিজেও ভারত সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগত। তাই, আরও একবার তাঁকে এখানে পেয়ে আমরা সত্যিইবিশেষভাবে আনন্দিত। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে জোরদার করে তোলার ক্ষেত্রে তাঁরনেতৃত্ব ও অবদানের জন্য আমরা অর্থাৎ ভারতবাসীরা গভীরভাবে তাঁর গুণমুগ্ধ। আমাদেরকৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কের মূল ভিত্তি হ’ল আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বিকাশেরক্ষেত্রে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আস্থা এবং মিলিত আগ্রহ। সুগভীর ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যেরশিকড়ে প্রোথিত আমাদের এই দুটি দেশ ও সমাজ ব্যবস্থা। তাই, খুব স্বাভাবিকভাবেই একসমন্বয়ের বাতাবরণ গড়ে উঠেছে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে। অতীতেরসাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত আদান-প্রদান থেকেই দু’দেশের জনসাধারণের মধ্যে গভীরমৈত্রী ও উষ্ণতার মতো বৈশিষ্ট্যগুলি যুক্ত হয়েছে।
আজ কিছুক্ষণআগে প্রেসিডেন্ট রহমন-এর সঙ্গে আমার সফল আলোচনা হয়েছে। আমাদের দ্বিপাক্ষিকসম্পর্কের বিভিন্ন স্তম্ভকে অবলম্বন করে যে বিরাট অগ্রগতি আমরা লাভ করেছি, সেসম্পর্কে পর্যালোচনাও স্থান পেয়েছে আমাদের আলোচনার মধ্যে। প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাক্ষেত্রে আমাদের অংশীদারিত্বের বিষয়গুলিও রয়েছে তার মধ্যে। ভারত ও তাজিকিস্তানেরপ্রতিবেশী-সুলভ সম্পর্কের মধ্যেই অবস্থান। তাই, নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্নচ্যালেঞ্জ ও হুমকির আমরা সম্মুখীন হয়ে পড়েছি। সন্ত্রাসের হুমকি শুধুমাত্র আমাদেরএই দুটি দেশকেই বিপন্ন করে তোলেনি, সমগ্র অঞ্চলের ওপরও তা হিংসা ও অস্থিরতার একদীর্ঘ ছায়া ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের সহযোগিতামূলক কর্মপ্রচেষ্টার একটিগুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হ’ল সন্ত্রাসের মোকাবিলা। মধ্য এশিয়া অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ,উগ্রবাদ এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে একটি অন্যতম মূল শক্তি হিসেবে তাজিকিস্তানেরভূমিকার আমরা প্রশংসা করি। পারস্পরিক সহমতের ভিত্তিতে যে অগ্রধিকারপ্রাপ্তক্ষেত্রগুলি আমরা চিহ্নিত করেছি, সেখানে আমাদের কর্মপ্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করেতোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।
আমরা এই কাজকরে যাব বিভিন্ন পর্যায়ে :-
• সার্বিকদ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরও অটুট করে তোলার মাধ্যমে;
• আরও বেশি করেপ্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধি ও তথ্য বিনিময়ের মধ্য দিয়ে; এবং
• আঞ্চলিক তথাবহুপক্ষীয় ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমন্বয়কে আরও সক্রিয় ও জোরদার করে তোমার মাধ্যমে।
বন্ধুগণ,
অর্থনৈতিককর্মপ্রচেষ্টা, বিশেষত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের আদান-প্রদানের সুযোগ ও মাত্রা বৃদ্ধিরপ্রশ্নেও সম্মত হয়েছি আমরা। এই পরিপ্রেক্ষিতে জলবিদ্যুৎ, তথ্য প্রযুক্তি, ওষুধউৎপাদন এবং স্বাস্থ্য পরিচর্যার মতো বিষয়গুলি নিয়ে আসা হবে অগ্রাধিকারের তালিকায়।দুটি দেশের কল্যাণের স্বার্থে আমাদের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের প্রতিশ্রুতি পালনেভূ-তল যোগাযোগের ওপর যে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, সেই বিষয়টিও স্বীকার করেনিয়েছি আমরা। বর্তমানে বন্দর ও পরিবহণ সংক্রান্ত যে পরিকাঠামো রয়েছে, তার প্রসারঘটিয়ে রেল ও সড়কপথে আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার সঙ্গে এক নেটওয়ার্কগড়ে তোলার উদ্যোগকে ভারত সমর্থন জানিয়েছে। এই প্রসঙ্গে ইরানে চাবাহার বন্দরের মধ্যদিয়ে বাণিজ্য ও সংযোগ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাব আমরা। তাজিকিস্তান সহঅন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ সংক্রান্ত এক আন্তর্জাতিককরিডর গড়ে তোলার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছে ভারত। আশগাবাদ চুক্তির আওতায় আমাদের যেপরিকল্পনা রয়েছে, তা তাজিকিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে আমাদের সংযোগের প্রসারেবিশেষভাবে সাহায্য করবে। ক্ষমতা ও দক্ষতাবৃদ্ধি তথা প্রাতিষ্ঠানিকতার প্রসারে ভারত ও তাজিকিস্তানের মধ্যে গড়ে উঠেছে এক সফলঅংশীদারিত্বের সম্পর্ক। ভারতের প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্পর্কে প্রশিক্ষণকর্মসূচিও এই উদ্যোগের অন্ত্যর্গত। সহযোগিতার এই সম্পর্ককে আরও জোরদার করে তোলার প্রশ্নেওসম্মতি প্রকাশ করেছি আমি এবং প্রেসিডেন্ট রহমন।
ভারত ও তাজিকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কের ২৫তম বার্ষিকী আমরা উদযাপন করতেচলেছি আগামী বছরটিতে। প্রেসিডেন্ট রহমন-এর এই সফরকালে তাঁর সঙ্গে মিলিতভাবে এইদুটি দেশের মধ্যে যে ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী কার্যসূচি আমরা স্থির করা হয়েছে, তাতেআমি বিশেষভাবে উৎসাহিত। আজ সম্পাদিত বিভিন্ন চুক্তি এবং আমাদের মিলিত আলোচনা ভারতও তাজিকিস্তানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারিক সহযোগিতার বিষয়টিকে আরও জোরদার করেতুলবে বলে আমি বিশেষভাবে আশাবাদী। আমি আরও একবার স্বাগত জানাই প্রেসিডেন্টরহমন-কে। কামনা করি, এদেশে তাঁর এই অবস্থান আনন্দময় হয়ে উঠুক।
ধন্যবাদ। আপনাদেরঅনেক অনেক ধন্যবাদ।