

কম্বোডিয়ার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হুন সেন,
আগত প্রতিনিধিদলের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ,
বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ,
সংবাদমাধ্যমের বন্ধুগণ,
ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,
আপনাদের সকলকেই অভিনন্দন!
প্রধানমন্ত্রী হুন সেন-কে আরও একবার স্বাগত জানানোর সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। তাঁর এই রাষ্ট্রীয় সফর আয়োজিত হয়েছে দীর্ঘ ১০ বছরের ব্যবধানে।
প্রধানমন্ত্রী, যদিও আপনি নিজে ভারত সম্পর্কে এবং ভারত আপনার সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত, আমি নিশ্চিত যে আপনার এই সফরকালে এখানকার অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং সামাজিক পরিবর্তনগুলি খুব নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করার একটি সুযোগ আপনি আজ লাভ করেছেন।
দু’দিন আগে, আসিয়ান-ভারত স্মারক শীর্ষ সম্মেলনে আসিয়ান-ভারত সহযোগিতার বিষয়টি সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে।
দশটি আসিয়ান রাষ্ট্র এবং ভারতের নেতারা এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, যাতে অদূর ভবিষ্যতে ভারত-আসিয়ানসহযোগিতার সম্পর্ক এক নতুন শীর্ষে আরোহণ করতে পারে।
এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হুন সেন আমার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে এবং এই শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর উপস্থিতির মাধ্যমে আমাদের সম্মানিত করেছেন।
শুধু তাই নয়, শীর্ষ সম্মেলনের আলোচনা ও ফলাফলের ক্ষেত্রেও আপনি এক মূল্যবান অবদানের স্বাক্ষর রেখেছেন।এজন্য আমি আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।
বন্ধুগণ,
বিগত শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারত ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সুপ্রাচীন ঐতিহাসিক সম্পর্ক আরও নিবিড় হয়ে উঠেছে। ঐ সময় কম্বোডিয়ার রাজনৈতিক পট পরিবর্তনকালে ভারতের অবস্থান ছিল তার এই সুপ্রাচীন বন্ধু রাষ্ট্রের খুবই কাছে।
সমসাময়িককালের চাহিদা ও প্রয়োজনের তাগিদে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক প্রায় সবক’টি ক্ষেত্রেই যে আরও গভীরে নিয়ে যাওয়া উচিৎ, এই প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী হুন সেন ইতিবাচকভাবেই সাড়া দিয়েছেন।
ভারত কম্বোডিয়ার সঙ্গে অংশীদারিত্বের সম্পর্কের প্রসারে শুধুমাত্র আগ্রহীই নয়, প্রতিশ্রুতিবদ্ধও।আর্থ-সামাজিক বিকাশ, দক্ষতা বৃদ্ধি, বাণিজ্য, সংস্কৃতি, পর্যটন এবং দু’দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে সংযোগ ও যোগাযোগের প্রসারের মতো সবক’টি ক্ষেত্রেই সহযোগিতার বাতাবরণকে আরও নিবিড় করে তোলা প্রয়োজন।
দু’দেশের মিলিত ঐতিহ্য আমাদের সাংস্কৃতিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিশেষ। দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত আঙ্করভাট মন্দিরের পুনর্নিমাণ কর্মসূচি এই সহযোগিতারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
কম্বোডিয়ার এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিকাশ ও সংরক্ষণের অংশীদার হতে পেরে ভারত আনন্দিত।
আমাদের দু’দেশের ভাষাগুলির উৎপত্তিও ঘটেছে পালি ও সংস্কৃত থেকে।
খুবই আনন্দের বিষয় যে আমাদের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কের শিকড় প্রোথিত রয়েছে খুবই গভীরে। তাই, পারস্পরিক পর্যটন প্রসার প্রচেষ্টার সম্ভাবনাও রয়েছে বিরাট।
বন্ধুগণ,
আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র কম্বোডিয়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেদ্রুত বিকাশ ঘটিয়ে চলেছে, তা ভারতের পক্ষে একটি আনন্দের বিষয়। ঐ দেশের বিকাশের হার গত দু’দশকে পরিলক্ষিত হয়েছে বছরে ৭ শতাংশের মতো।
ভারত বর্তমানে বিশ্বের দ্রুততম গতিতে বিকাশশীল একটি অর্থনীতি। যেহেতু আমাদের এই দুটি দেশের রয়েছে একই ধরনের মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি, তাই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রসারে খুব স্বাভাবিকভাবেই আমরা আগ্রহী।
কম্বোডিয়ার উদার আর্থিক নীতি এবং আসিয়ান অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠা ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের কাছে কম্বোডিয়ায় বিনিয়োগের এক বিশেষ সুযোগ এনে দিয়েছে। বিশেষত, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি, যানবাহন ও তার যন্ত্রাংশ, বস্ত্রশিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে প্রচুর।
আমি নিশ্চিতভাবেই আশাবাদী যে আগামী বছরগুলিতে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে উত্তরোত্তরভাবে এবং আরও বেশি সংখ্যক ভারতীয় বিনিয়োগকারী ও বাণিজ্য প্রতিনিধিরা কম্বোডিয়ায় তাঁদের উপস্থিতির মাধ্যমে এক লাভজনক অভিজ্ঞতাই লাভ করবেন।
বন্ধুগণ,
কম্বোডিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল উন্নয়ন সহযোগিতা। কম্বোডিয়ার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রচেষ্টায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে ভারত বরাবরই ঐ দেশের পাশে থেকেছে এবং ভবিষ্যতেও এই কাজে অটল থাকবে।
কম্বোডিয়া সরকারের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুসারে এবং বিশেষত স্বাস্থ্য, যোগাযোগ এবং ডিজিটাল সংযোগের মতো ক্ষেত্রগুলিতে বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণে আরও বেশ কিছু ঋণ সহায়তার আমরা প্রস্তাব রেখেছি।
প্রতি বছর দ্রুততা ও সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করা যায় এই ধরনের পাঁচটি প্রকল্প ঐ দেশেভারতরূপায়ণ করে আসছে। এই ধরনের প্রকল্পের সংখ্যা পাঁচ থেকে দশে উন্নীত করার আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এমনকি, ৫০০ কোটি টাকার এক প্রকল্প উন্নয়ন তহবিলও আমরা গঠন করে ফেলেছি।
শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসারে এবং যোগান শৃঙ্খলকে ব্যয়সাশ্রয়ী করে তুলতে এই তহবিলের সদ্ব্যবহার সম্ভব।
তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্যপ্রযুক্তি-ভিত্তিক পরিষেবার প্রসারে কম্বোডিয়ায় আমরা একটি উৎকর্ষকেন্দ্র স্থাপন করছি।
ভারতীয় প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা কর্মসূচিতে পাঁচ দশকেরও বেশি সময়কাল ধরে ভারত এক সক্রিয় অংশীদার হয়ে উঠেছে কম্বোডিয়ার।
কম্বোডিয়ার ১,৪০০ জনেরও বেশি নাগরিক এই কর্মসূচির মাধ্যমে ভারতে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ লাভের সুযোগ গ্রহণ করেছেন।
এই কর্মসূচিকে আমরা ভবিষ্যতেও চালিয়ে নিয়ে যাব। কম্বোডিয়ার চাহিদা ও প্রয়োজন অনুসারে এই কর্মসূচির সম্প্রসারণেও আমরা প্রস্তুত।
বন্ধুগণ,
আন্তর্জাতিক মঞ্চেও আমাদের এই দুটি দেশের মধ্যে রয়েছে এক নিবিড় সহযোগিতার সম্পর্ক। বহু আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমাদের এই দুটি দেশ হল পরস্পরের বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য সহযোগী।
আমাদের বর্তমান সহযোগিতার মাত্রাকে আরও উন্নীত করতে আন্তর্জাতিক মঞ্চগুলিতে সহযোগিতার এই বাতাবরণের প্রসারে ভারত ও কম্বোডিয়া অঙ্গীকারবদ্ধ।
পরিশেষে, এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধু এবং সম্মানিত অতিথি হিসাবে ভারত সফরে আসার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রী হুন সেন-কে। ভারতে তাঁর এই অবস্থানকাল খুবই চিত্তাকর্ষক ও স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলেই আমি মনে করি।
এই প্রসঙ্গে আমি আবার এই মর্মে আশ্বাস দিতে চাই যে অদূর ভবিষ্যতে আরও বেশি মাত্রায় নিবিড় সহযোগিতা প্রসারে ভারত সর্বদাই প্রস্তুত। কম্বোডিয়া এবং ঐ দেশের নাগরিকদের সঙ্গে আমাদের নিবিড় ও ঐতিহ্যমণ্ডিত গভীর সম্পর্ক আরও জোরদার করে তুলতে অদূর ভবিষ্যতেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব।