মাননীয়প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কু
বন্ধুগণ,
সংবাদমাধ্যমেরপ্রতিনিধিবৃন্দ
প্রেসিডেন্টলুকাশেঙ্কুকে ভারতে স্বাগত জানানোর সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। এ বছর দু’দেশেরকূটনৈতিক সম্পর্কের ২৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। তাঁর এই সফর এই বিশেষ উপলক্ষটির সঙ্গেসম্পৃক্ত।
এর আগে,প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কুকে ভারতে স্বাগত জানানোর আমরা সুযোগ পেয়েছিলাম ১৯৯৭ এবং২০০৭-এ। বর্তমান সফরকালে মাননীয় প্রেসিডেন্ট ভারতের রূপান্তর প্রক্রিয়া ও প্রচেষ্টারঅভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ পাবেন বলে আমরা মনে করি।
আজ আমাদেরমধ্যে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে যে সমস্ত আলাপ-আলোচনা হয়েছে, তা আগামীদিনের পক্ষেবিশেষ বার্তাবহ। গত আড়াই দশকেরও বেশি সময়কাল ধরে আমাদের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতাই এইআলাপ-আলোচনার বাতাবরণকে বিশিষ্টতা এনে দিয়েছে। শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক বিষয়সম্পর্কেই নয়, আঞ্চলিক তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী সম্পর্কেও আমরা মতবিনিময় করেছি।দ্বিপাক্ষিকঅংশীদারিত্বের কাঠামোর বিষয়টিও পর্যালোচিত হয়েছে আমাদের মধ্যে। এই সম্পর্ককে আরওপ্রসারিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ ও চিন্তাভাবনার শরিক হয়েছি আমরা। সহযোগিতারসবক’টি ক্ষেত্রেইআমরাআলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
প্রেসিডেন্টলুকাশেঙ্কুর মধ্যে আমি এমন এক উৎসাহ এবং আগ্রহ লক্ষ্য করেছি যা দু’দেশেরজনসাধারণের কল্যাণে আমাদের পারস্পরিক অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা এনেদিতে পারে।
এই লক্ষ্যকেসামনে রেখে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ করে তোলার জন্য একযোগেকাজ করে যাব আমরা। এই দুটি দেশ যাতে খুব স্বাভাবিকভাবেই পরস্পরের সম্পূরক হয়ে উঠতেপারে, আমরা নজর দেব সেই দিকেই।
কেনা-বেচারমতো বাণিজ্যিক কাঠামোর মধ্যেই আমাদের দু’দেশের সংস্থাগুলির কাজ সীমাবদ্ধ থাকলেচলবে না, এক নিবিড়তর কর্মসহযোগিতার বাতাবরণ খুঁজে নিতে হবে তাদের। তেল ও গ্যাস,ওষুধ, ভারী যন্ত্রপাতি এবং সাজসরঞ্জামের মতো ক্ষেত্রগুলিতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগেরঅফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। গত বছর ভারতীয় সংস্থাগুলি ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনের ক্ষেত্রেতিনটি যৌথ উদ্যোগের এক শুভ সূচনা করেছে যার ফল হয়েছে ইতিবাচক।
টায়ার, কৃষিও শিল্পে ব্যবহার্য যন্ত্রপাতি এবং খনির সাজসরঞ্জাম উৎপাদনের ক্ষেত্রেওঅংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। সমানভাবেই, নির্মাণ সংক্রান্তবৃহদাকারের যন্ত্রপাতি উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ভারতের চাহিদা এখন ক্রমবর্ধমান।অন্যদিকে, বেলারুশের রয়েছে শিল্প শক্তি।
‘মেক ইনইন্ডিয়া’ কর্মসূচির আওতায় প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের যৌথ বিকাশ এবং নির্মাণ ও উৎপাদনসম্পর্কিত কাজকর্মের বিষয়গুলিকেই আমরা উৎসাহ যুগিয়ে যাব। বেলারুশের সুনির্দিষ্টপ্রকল্পগুলিতে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তার যে প্রস্তাব ভারত দিয়েছে, তারযথাযথ ব্যবহারের লক্ষ্যেও আমাদের আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
ইউরেশিয়অর্থনৈতিক ইউনিয়ন (ইইইউ) এবং আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডরের মতোবহুপাক্ষিক উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার আওতায় ভারত ও বেলারুশ পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত।ইউরেশিয় অর্থনৈতিক ইউনিয়নের সঙ্গে এক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রূপায়ণের পথে এগিয়েগেছে ভারত।
বন্ধুগণ,
বলিষ্ঠতরসহযোগিতার আরেকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। এই ক্ষেত্রটিতেবেলারুশ হল আমাদের দীর্ঘকালের অংশীদার।
ধাতবপদার্থ, ন্যানো-প্রযুক্তি, জীব-বৈচিত্র্য, চিকিৎসা-বিজ্ঞান, রসায়ন এবংইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো ক্ষেত্রগুলিতে বাণিজ্য ও উদ্ভাবন প্রচেষ্টায় বিশেষভাবে জোরদেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ায় যুব সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্যও আমরা চেষ্টাচালিয়ে যাব।
বেলারুশেরনিজস্ব প্রযুক্তির উপস্থাপনার লক্ষ্যে ভারতে একটি প্রযুক্তি উপস্থাপনা কেন্দ্র স্থাপনেরসম্ভাবনার বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখছি।
বেলারুশেরসঙ্গে ভারতের সহযোগিতা প্রসারে উন্নয়ন প্রচেষ্টার মতো বিষয়টিও এক নতুন মাত্রা এনেদিতে পারে। ভারতের অর্থনৈতিক তথাপ্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রসার কর্মসূচিতে বেলারুশহল এক সক্রিয় সহযোগী।
আন্তর্জাতিকমঞ্চগুলিতেও পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমাদের এই দুটি দেশ নিবিড় সহযোগিতাও সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গিকে অনুসরণ করে চলেছে।
বহুপাক্ষিকমঞ্চগুলিতে পরস্পরকে সমর্থন জানানোর প্রতিশ্রুতিও পালন করবে ভারত ও বেলারুশ।
বন্ধুগণ,
আমাদেরদু’দেশের জনসাধারণের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের যে সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে, সেসম্পর্কেও প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কুর সঙ্গে আজ আমার আলোচনা হয়েছে। এই ঐতিহ্যের পথধরেই পারস্পরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানিয়ে এসেছেএই দুটি দেশ। ভারতীয় সংস্কৃতি,খাদ্য বৈচিত্র্য, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, নৃত্য, যোগাভ্যাস এবং আয়ুর্বেদ চর্চার প্রতিবেলারুশের বহু নাগরিকেরই যে বিশেষ আগ্রহ রয়েছে সেকথা জেনে আমি খুবই আনন্দ অনুভবকরছি।
আমাদেরপারস্পরিক সম্পর্কের বনিয়াদকে আরও মজবুত করে তুলতে দু’দেশের জনসাধারণের মধ্যেপর্যটন বিনিময় এবং সফরসূচি আয়োজনের বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে বলে আমি মনে করি।
পরিশেষে,আমাদের এক সম্মানিত অতিথি হিসেবে ভারতে উপস্থিত থাকার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাতেআগ্রহী প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কুকে। আজকের বৈঠকে যে সমস্ত বিষয়ে আমরা সহমত হয়েছি তারপথ ধরে এবং বৈঠকের ফলাফলকে অনুসরণ করে ভারত আগামীদিনগুলিতে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাবেবেলারুশের সঙ্গে। প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কুর ভারতে অবস্থান স্মরণীয় হয়ে উঠুক এইপ্রার্থনা জানাই।
ধন্যবাদ।