মহামান্য রাষ্ট্রপতি মেহমুদ আব্বাস,
প্যালেস্টাইন ওভারতের প্রতিনিধিগণ,
প্রচার মাধ্যমেরসদস্যগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,
সবাহ্ আলি-খের(সুপ্রভাত)
কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীরপ্রথমবারের মত রামাল্লা আসা অনেক আনন্দের বিষয়|
রাষ্ট্রপতি আব্বাস, আপনি আমারসম্মানে যে বক্তব্য রেখেছেন এবং যেভাবে উষ্ণ অভ্যর্থনায় আমার তথা আমার সঙ্গেরপ্রতিনিধিগণকে অসাধারণভাবে স্বাগত জানিয়েছেন, তার জন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনকরছি|
মহামান্য, আপনি আমাকে আজ অনেকপ্রীতির সঙ্গে প্যালেস্টাইনের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করেছেন| এটা গোটা ভারতেরজন্য সম্মানের বিষয়| আর ভারতের জন্য প্যালেস্টাইনের বন্ধুত্ব ও সদ্ভাবনার প্রতীক|
ভারত ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে যেপ্রাচীন ও শক্তিশালী ঐতিহাসিক সম্পর্ক তা সময়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে|প্যালেস্টাইনের স্বার্থে আমাদের সমর্থন আমাদের বিদেশনীতিতে সবসময়ই অগ্রাধিকারেরবিষয় হয়ে আসছে| নিরবিচ্ছিন্নভাবে| দৃঢ়তার সঙ্গে|
তাই, আজ এখানে রামাল্লায় রাষ্ট্রপতিমেহমুদ আব্বাস, যিনি ভারতের অনেক পুরনো বন্ধু, তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে আমি খুব আনন্দিত|গত বছর মে মাসে উনার নয়া দিল্লি সফরের সময় তাঁকে স্বাগত জানানোর সুযোগ পেয়েছিলাম| আমাদেরবন্ধুত্ব এবং ভারতের সহযোগিতাকে নতুনত্ব প্রদান করতে পেরে আমি খুব আনন্দিত|
এই সফরে আবু অমার-এর সমাধিতেশ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করার সুযোগ হয়েছে| তিনি সে সময়কার প্রধান নেতৃত্বদের একজনছিলেন| প্যালেস্টাইনের সংঘর্ষে উনার ভূমিকা ছিল নজিরবিহীন| আবু অমার ভারতেরও একবিশেষ বন্ধু ছিলেন| উনার প্রতি উত্সর্গীকৃত সংগ্রহালয় পরিদর্শনও আমার কাছে অবিস্মরণীয়অনুভূতি| আমি আরও একবার আবু অমারকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি|
ভদ্রমহিলা ওভদ্রমহোদয়গণ,
প্যালেস্টাইনের জনগণ প্রতিনিয়তপ্রতিকুলতা ও সংকটের পরিস্থিতিতে অদ্ভুত দৃঢ়তা ও সাহসের পরিচয় দিয়েছেন| পরিস্থিতিরমোকাবিলায় পাহাড়ের মতো দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন|
আর তারপরও অস্থিরতা ও সুরক্ষাহীনতারপরিবেশ বজায় রয়েছে, যা অগ্রগতিকে বাধা দেয় ও কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জন করাবিষয়গুলোকেও বিপদে ফেলে| যেসব কঠিন পরিস্থিতি ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আপনারাএগিয়ে যাচ্ছেন তা প্রশংসনীয়| আমি আপনাদের অনুভূতি এবং আরো উন্নত ভবিষ্যতের প্রয়াসেআপনাদের বিশ্বাসের প্রসংসা করি|
প্যালেস্টাইন দেশ গঠনের প্রয়াসেভারত অনেক পুরনো সহযোগী| আমাদের মধ্যে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, পরিকাঠামো উন্নয়ন,প্রকল্প সহায়তা ও ব্যয়-বরাদ্দ সহায়তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা রয়েছে|
আমাদের নতুন উদ্যোগের অংশ হিসেবেআমরা এখানে রামাল্লায় একটি টেকনোলজি পার্ক প্রকল্প আরম্ভ করেছি, যার নির্মাণকার্যএখন চলছে| এটা তৈরি হওয়ার পর আমি আশা করি যে, এই সংস্থা কর্মসংস্থানকে এগিয়ে নিয়েযাওয়ার দক্ষতা ও পরিষেবা কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে|
ভারত রামাল্লায় ইনস্টিটিউট অফডিপ্লোম্যাসি তৈরি করার ক্ষেত্রেও সহায়তা করছে| আমার বিশ্বাস যে, এই সংস্থানপ্যালেস্টাইনের যুব কূটনীতিকদের কাছে এক বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ সংস্থান হিসেবে গড়েওঠবে|
আমাদের সক্ষমতা নির্মাণের সহযোগিতায়দীর্ঘকালীন ও স্বল্পকালীন পাঠক্রমের জন্য পরস্পরের প্রশিক্ষণ যুক্ত রয়েছে| বিভিন্নক্ষেত্রে, যেমন ভারতের অগ্রণী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্থ, পরিচালনা, গ্রামীণ বিকাশ ওতথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্যালেস্টাইনের জন্য প্রশিক্ষণ ও বৃত্তির সংস্থানসম্প্রতি বৃদ্ধি করা হয়েছে|
আমি আনন্দিত যে, এই সফরের সময় আমরাআমাদের উন্নয়নের অংশিদারিত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি| ভারত প্যালেস্টাইনে স্বাস্থ্য ওশিক্ষার পরিকাঠামো তথা নারী ক্ষমতায়ন কেন্দ্র এবং একটি মুদ্রণালয় স্থাপনেরপ্রকল্পে বিনিয়োগ করবে|
আমরা কর্মশক্তিপূর্ণ প্যালেস্টাইনেরজন্য এই যোগদানকে ভিত্তি হিসেবে মনে করি|
দ্বিপাক্ষিক ক্ষেত্রে আমরা মন্ত্রীপর্যায়ের যুগ্ম কমিশন সভার মধ্য দিয়ে আমাদের সম্পর্ককে আরও বেশি গভীর করার জন্যএকমত হয়েছি|
প্রথমবারের মতো, গত বছর ভারত ওপ্যালেস্টাইনের যুব প্রতিনিধিদের মধ্যে আদান-প্রদান হয়েছে| আমাদের যুব অংশের জন্যবিনিয়োগ করা ও তাঁদের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায়তা করার বিষয়টি দু’পক্ষেরইঅগ্রাধিকারের ক্ষেত্র|
ভারত প্যালেস্টাইনের মতই তরুণ ও যুবসমাজের দেশ| আমাদের আকাঙ্ক্ষা প্যালেস্টাইনের যুব অংশের ভবিষ্যত নিয়ে ঠিক ততখানিই,যতটুকু আমরা ভারতের যুব অংশের জন্য করে থাকি| যেখানে উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ওআত্মনির্ভরতার সুযোগ থাকবে| এটাই আমাদের ভবিষ্যত এবং আমাদের বন্ধুত্বেরউত্তরাধিকার|
এটা জানাতে পেরে আমি আনন্দিত যে,আমরা এই বছর থেকে যুব অংশের আদান-প্রদান পঞ্চাশ থেকে বাড়িয়ে একশজন পর্যন্ত করব|
ভদ্রমহিলা ওভদ্রমহোদয়গণ,
আমাদের আজকের আলোচনায় আমিরাষ্ট্রপতি আব্বাসকে পুনরায় আশ্বস্ত করেছি যে, ভারত প্যালেস্টাইনের জনগণের স্বার্থরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ|
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্যালেস্টাইনশীঘ্রই এক সার্বভৌম, স্বাধীন দেশ হবে বলে আশা করে ভারত|
রাষ্ট্রপতি আব্বাস ও আমি সাম্প্রতিকসময়ের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা করেছি, যার সম্পর্ক প্যালেস্টাইনেরশান্তি, সুরক্ষা ও শান্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত|
ভারত এই ক্ষেত্রে শান্তি ওস্থায়িত্বের জন্য বিশেষভাবে আশাবাদী|
আমাদের বিশ্বাস যে, শেষ পর্যন্তপ্যালেস্টাইনের সমস্যার স্থায়ী উত্তর এমন এক আলোচনা ও বোঝাপড়ার মধ্যে নিহিত রয়েছে,যার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথ পাওয়া যাবে|
শুধুমাত্র গভীর কূটনীতি ও দূরদর্শিতারমাধ্যমেই সহিংসতার চক্র ও ইতিহাসের ভার থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে|
আমি জানি তা সহজ নয়| কিন্তুআমাদেরকে অনবরত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, কেননা অনেক কিছুই ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে|
মহামান্য, আমি অন্তর থেকে আপনারদর্শনীয় আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি|
আমি সোয়া কোটি ভারতবাসীর পক্ষ থেকেপ্যালেস্টাইনের জনগণের প্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য আন্তরিক শুভকামনা জ্ঞাপন করছি|
ধন্যবাদ|
শুকরান জাজিলান|