আমার প্রিয় দেশবাসী, স্বাধীনতার পবিত্র উৎসবেদেশবাসীকে কোটি কোটি শুভেচ্ছা।
আজ গোটা দেশ স্বাধীনতা উৎসবের পাশাপাশি জন্মাষ্টমীউৎসবও পালন করছে। আমি দেখতে পাচ্ছি, আমার সামনে বিপুল সংখ্যায় ছোট ছোট কৃষ্ণরাউপস্থিত হয়েছেন। সুদর্শন চক্রধারী মোহন থেকে শুরু করে চড়কাধারী মোহন পর্যন্তআমাদের সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ঐতিহ্যে আমরা সকলেই সম্পদশালী। দেশের স্বাধীনতা,আত্মমর্যাদা ও গৌরব স্থাপনের জন্য যে মহাপুরুষরা লড়াই করেছেন, অত্যাচার সহ্যকরেছেন, আত্মবলিদান দিয়েছেন, তাঁদের ত্যাগ ও তপস্যার ফলস্বরূপ এই স্বাধীনতা। আজআমি লালকেল্লার প্রাকার থেকে ১২৫ কোটি ভারতবাসীর হয়ে সেই অসংখ্য মহাপুরুষ এবংস্বাধীনতা সংগ্রামী মা ও বোনেদের শত শত প্রণাম জানাই।
মাঝে মধ্যে নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমাদের জন্যনানা সমস্যার কারণ হয়ে ওঠে। ভালো বর্ষা দেশকে সুজলা সুফলা হয়ে উঠতে সাহায্য করে।কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনের ফল হিসাবে কখনও কখনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় ভয়াবহ রূপ ধারণকরে। বিগত দিনে দেশের অনেক অঞ্চলে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।হাসপাতালে অসহায় শিশুদের মৃত্যু হয়েছে। এই চরম সঙ্কট ও দুঃখের সময়ে ১২৫ কোটিভারতবাসীর সমবেদনা ঐ পীড়িত পরিবারগুলির পাশে রয়েছে। আর আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছিযে, বিপর্যয়গ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের সুরক্ষা প্রদানে সরকার কোনওত্রুটি রাখবে না।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এ বছর স্বাধীন ভারতের জন্যএকটি বিশেষ বছর। গত সপ্তাহেই আমরা ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ৭৫তম বছরের উদযাপন শুভারম্ভকরেছি। এ বছর চম্পারণ সত্যাগ্রহের শতবর্ষ, এ বছর সাবরমতী আশ্রমেরও শতবর্ষ ।
এ বছরই লোকমান্য তিলক ঘোষণা করেছিলেন ‘স্বরাজ আমারজন্মসিদ্ধ অধিকার’ । জনসাধারণের মনে জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্যে তিনি সার্বজনীন গণেশ উৎসবশুরু করেছিলেন। এ বছর সেই গণেশ উৎসবের ১২৫তম বার্ষিকী আমরা উদযাপন করছি। আজ আমরাভারতের স্বাধীনতার ৭০তম বর্ষপূর্তি এবং ২০২২ সালে ৭৫তম বর্ষপূর্তি পালন করব।যেভাবে ১৯৪২-৪৭ সালের মধ্যে দেশবাসী স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁদের সমবেত শক্তিপ্রদর্শন করেছিল, ইংরেজদের বাধ্য করেছিল পাঁচ বছরের মধ্যে এদেশ ছেড়ে চলে যেতে,তেমনভাবেই ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে পাঁচ বছরেও আমরা সমবেত সংকল্পশক্তি, সমবেতপৌরুষ এবং আমাদের সমবেত অঙ্গীকার দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্নের দেশ, একনতুন ভারত গড়ে তোলার সংকল্প নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব ।
১২৫ কোটি দেশবাসীর শপথ,সমবেত সংকল্পশক্তি, সমবেতপৌরুষ এবং ত্যাগ ও তপস্যার মূল্য আমরা বুঝি। ভগবান কৃষ্ণ কত শক্তিশালী ছিলেন,কিন্তু গোয়ালারা প্রত্যেকে হাতে লাঠি নিয়ে সমবেত প্রচেষ্টায় গোবর্ধন পর্বত উপরেওঠাতে পেরেছিলেন। প্রভু রামচন্দ্রের লঙ্কাযাত্রা সফল করে তুলতে ছোট ছোট অসংখ্যবানর সৈন্যের সমবেত প্রচেষ্টায় সমুদ্র বন্ধন করে রামসেতু গড়ে তুলতে পেরেছিলেন।মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী দেশের কোটি কোটি মানুষের হাতে তকলি ধরিয়ে দিয়েছিলেন, যাদিয়ে তাঁরা তুলো থেকে সুতো তুলে স্বাধীনতার তাঁত বুনতেন। সেই সমবেত শক্তিই একদিনদেশকে স্বাধীন করেছিল। কেউ ছোট ছোট হয় না, আবার কেউ বড়ও হয় না। আরে, আমরা তো সেইকাঠবিড়ালীর উদাহরণ জানি। একটি কাঠবিড়ালী কিভাবে বিরাট পরিবর্তনের অংশীদার হয়ে উঠতেপারে, তা ভারতবাসী জানেন। সেজন্য আমাদের ১২৫ কোটি ভারতবাসীর মধ্যে কেউ ছোটও নয়আবার কেউ বড়ও নয়। প্রত্যেকে নিজের মতো করে আগামী পাঁচ বছর নিজের কাজটিকে ভালোভাবেকরলে, একটু বেশি করে করলে, নতুন ভারত গড়ার শপথ নিয়ে কাজ করে গেলে ২০২২ সালেস্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ উদযাপনের সময় ‘নতুন ভারত’ আধুনিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিরক্ষেত্রে বিশ্বে উন্নততম দেশগুলির অন্যতম হয়ে উঠবে।
স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা ভাবলে আমাদের মনে নানাঅনুভূতি জাগ্রত হয়। স্বাধীনতা সংগ্রাম যখন চলছিল, তখনও শিক্ষকরা স্কুলে পড়াতেন,কৃষকরা ক্ষেতে কাজ করতেন, মজুররা পরিশ্রম করতেন, কিন্তু প্রত্যেকের মনেই এই ভাবনাছিল যে, আমরা দেশকে স্বাধীন করার জন্য কিছু করব। এই ভাবনার অত্যন্ত গুরুত্ব রয়েছে।পরিবারে রোজই খাবার তৈরি হয়। নানারকম সব্জি রান্না হয় কিন্তু সেই রান্নাই যখনঈশ্বরের সামনে ভোগ দেওয়া হয় তারপর সেটা হয়ে ওঠে প্রসাদ। তেমনই আমরা রোজগারের জন্যযে দৈনন্দিন পরিশ্রম করি, তা যদি ভারতমাতার অস্মিতা রক্ষার জন্য, দেশবাসীকে দারিদ্র্যমুক্ত করার জন্য, সামাজিক প্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে বুনন করার কাজে প্রতিটি কর্তব্যজাতীয়তাবোধ ও রাষ্ট্রভক্তি নিয়ে দেশকে সমর্পণ করি, তা হলে সেই শক্তি কয়েকগুণবৃদ্ধি পায়।
আগামী ২০১৮ সালের পয়লা জানুয়ারি’কে আমি একটিসাধারণ পয়লা জানুয়ারি বলে মনে করি না। যাঁরা একবিংশ শতাব্দীতে জন্মগ্রহণ করেছেন,তাঁদের জন্য ঐদিন একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর শুরু হবে। তাঁরা ১৮ বছরে পা দেবেন। আরতাঁরা যেদিন ১৮ বছর বয়স্ক হবেন, সেদিন থেকে তাঁরাই একবিংশ শতাব্দীর ভাগ্যবিধাতাহয়ে উঠবেন। আমি সেই নবীনদের হৃদয় থেকে স্বাগত ও সম্মান জানাই। তাঁদেরকে অভিনন্দনজানিয়ে বলি, আসুন আপনারা এখন ১৮ বছরের চৌকাঠে পা রেখেছেন, দেশের ভাগ্য গঠনের সুযোগআপনারা পাবেন। দেশের উন্নয়নযজ্ঞে অংশগ্রহণ করার জন্য দেশ আপনাদের আমন্ত্রণজানাচ্ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর আগেঅর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে অনেক প্রশ্ন করেছিলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ জবাব দিয়েছিলেন যে, আমরাযতটা ভাবতে পারি, আমাদের কাজের পরিণামও ততটাই সম্ভব। মানুষ যেকথা বিশ্বাস করেন,সেটাই তার পরিণামে পরিণত হয়। সেই দিশাতেই সে এগিয়ে চলেন। আমরাও যদি উজ্জ্বল ভারতগড়ার জন্য সংকল্পবদ্ধ হই, আমাদের আত্মবিশ্বাস যদি পোক্ত হয়, তা হলে আমি নিশ্চিতযে, সাফল্য আসবেই। কোনও রকম নিরাশাকে প্রশ্রয় দিলে চলবে না। চলছে – চলবে ভাব নিয়েকাজ করলে চলবে না, সে যুগ চলে গেছে, সময় বদলেছে। সময়ের দাবি হ’ল, দৃঢ় বিশ্বাস নিয়েসাধনার মাধ্যমে সামর্থ্যবান হয়ে উঠতে হবে। ত্যাগ ও তপস্যাই আমাদের মধ্যে বড় পরিবর্তনআনতে সক্ষম। আর শপথই সিদ্ধিতে পরিবর্তিত হয়।
ভাই ও বোনেরা, স্বাধীন ভারতে প্রত্যেক দেশবাসীরমনে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক। আমাদের দেশ, আমাদেরসেনাবাহিনীগুলিতে কর্মরত বীরেরা জল, স্থল ও আকাশে দাপটের সঙ্গে কর্তৃত্ব বজায় রাখামানুষেরা যখনই সুযোগ এসেছে নিজেদের সামর্থ্য ও দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন,আত্মবলিদানের ক্ষেত্রেও তাঁর পিছিয়ে থাকেননি। বহিঃশত্রুর আক্রমণ ছাড়াওউগ্রবামপন্থী সন্ত্রাসবাদ, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ এবং অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে লড়াইয়েতাঁদের আত্মবলিদানের মাধ্যমে দেশকে গর্বিত করেছেন। বিগত দিনে যখন সার্জিক্যালস্ট্রাইক হয়েছিল, বিশ্ববাসী আমাদের কর্তৃত্বকে, আমাদের সেনাবাহিনীর শক্তিকেস্বীকার করে নিয়েছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এটা পরিস্কার যে দেশেরনিরাপত্তাকে আমাদের অগ্রাধিকার দিই, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকেও আমরা অগ্রাধিকার দিই।সমুদ্র হোক কিংবা সীমান্ত, সাইবার হোক কিংবা মহাকাশ সকল প্রকার নিরাপত্তা রক্ষায়ভারত সামর্থ্যবান। আর দেশের বিরুদ্ধে কেউ কিছু করতে চাইলে, তাদের নিরস্ত্র করারক্ষমতা আমদের রয়েছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যুগ যুগ গরিব মানুষদের লুন্ঠনকরে যারা নিজেদের সিন্দুক ভরছিলেন, তারা আজ আর সুখে ঘুমোতে পারছেন না। ফলে, দেশেরপ্রতি পরিশ্রমী ও সৎ মানুষদের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সৎ মানুষেরা অনুভব করছেনযে, আমরা যদি সততার পথে রোজগার করি, তা হলে সরকার আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আজ দেশেসততার মহোৎসব পালন করা হচ্ছে। বেইমানরা মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। আমাদেরদেশে একটি নতুন ভরসার আবহ তৈরি হয়েছে।
বেনামী সম্পত্তি যাদের ছিল, বছরের পর বছর ধরে নানাআইনের বলে তারা সুরক্ষিত ছিলেন। আমরা সম্প্রতি এ বিষয়ে নতুন আইন এনে ব্যবস্থাকেক্ষুরধার করেছি। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ৮০০ কোটিরও বেশি টাকা সরকার বাজেয়াপ্তকরেছে। এই ব্যবস্থা দেখে সাধারণ মানুষের মনে সততার প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিগত ৩০-৪০ বছর ধরে আমাদের সেনাদের ‘এক পদ একপেনশন’-এর দাবি ঝুলে ছিল। আমরা তাদের দাবি মেনে নিয়েছি, বাস্তবায়িত করেছি। আমাদেরসৈন্যদের আশা আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করার ক্ষেত্রে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় দেশের শক্তিকয়েকগুণ বেড়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় সরকার ছাড়াও দেশে অনেক রাজ্য সরকাররয়েছে। সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয়তা এবং প্রতিযোগিতামূলক সহযোগীযুক্তরাষ্ট্রীয়তার একটি নতুন পরিণাম জিএসটি। এর সাফল্যের পেছনে কোটি কোটি মানবকর্মদিবসের পরিশ্রম রয়েছে। প্রযুক্তির যাদু রয়েছে। বিশ্ববাসী অবাক হয়ে গেছে যে, এতকম সময়ে এত বড় দেশে জিএসটি’র মতো ‘এক দেশ, এক কর’ ব্যবস্থা এভাবে বাস্তবায়িত করা,নতুন উচ্চতায় ভারতের সামর্থ্যকে প্রদর্শিত করেছে। এই ঘটনা দেশের প্রত্যেকপ্রজন্মের জনগণকে প্রেরণা যুগিয়েছে।
অনেক নতুন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। আজ দ্বিগুণ গতিতেসড়ক ও রেলপথ প্রসারের কাজ এগিয়ে চলেছে। তিন বছর আগে পর্যন্ত যে ১৮ হাজার গ্রামেবিদ্যুতের খুঁটি পর্যন্ত পৌঁছায়নি, তেমন ১৪ হাজার গ্রামে ইতিমধ্যেই ঘরে ঘরেবিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। ২৯ কোটি গরিব মানুষ প্রথমবারের মতো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতেপেরেছেন। ৯ কোটিরও বেশি কৃষকদের হাতে ইতিমধ্যেই মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড পৌঁছেগেছে। আড়াই কোটিরও বেশি গরিব মা ও বোনেরা কাঠকয়লার উনুনের ধোঁয়া থেকে মুক্তিপেয়েছেন, তাঁদের ঘরে রান্নার গ্যাস পৌঁছে গেছে। এভাবে দরিদ্র ও আদিবাসী মানুষদেরআত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির মাধ্যমে তাঁদেরকে মুখ্য ধারার সঙ্গে যুক্ত করে দেশ প্রগতিরপথে এগিয়ে চলেছে।
৮ কোটিরও বেশি যুবক কোনও রকম গ্যারান্টি ছাড়াইস্বরোজগারের জন্য কম সুদে ব্যাঙ্ক ঋণ পেয়েছেন। ফলে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ করাগেছে। মধ্যবিত্ত মানুষ নিজস্ব বাড়ি বানাতে চাইলে কম সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করাহয়েছে। তবেই তো তাঁরা দেশের জন্য কিছু করতে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে মহা উৎসাহেকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন।
সময় বদলে গেছে। এখন সরকার যা বলে, তা করার জন্যসংকল্পবদ্ধ। আমরা ইন্টারভিউ প্রথা তুলে দিয়েছি, চাকরির প্রক্রিয়া সরল করেছি। শুধুশ্রম ক্ষেত্রে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকেও ৫০-৬০টি ফর্ম ভরতি করতে হ’ত, আমরা তাকমিয়ে মাত্র ৫টি ফর্ম ভরা নিশ্চিত করেছি। অর্থাৎ সুশাসন, সরল শাসন প্রক্রিয়া কায়েমকরার লক্ষ্যে আমরা দ্রুৎগতিতে এগিয়ে চলেছি। ১২৫ কোটি ভারতবাসী আমাদের পাশে আছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী আজ বিশ্বে ভারতের গুরুত্ববৃদ্ধি পেয়েছে। দেশবাসী জেনে খুশি হবেন যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আজ আমরাআর একা নই। বিশ্বের অনেক দেশ এখন আমাদের সক্রিয়ভাবে সাহায্য করছে। হাওয়ালা ব্যবসারক্ষেত্রে আমরা বিশ্বের অধিকাংশ দেশ থেকেই সংবাদ সংগ্রহ করতে পারছি।সন্ত্রাসবাদীদের গতিবিধি সম্পর্কে সকল তথ্য আমাদের নখদর্পণে চলে আসছে। বিশ্বের যেসকল দেশ আমাদের এই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সঙ্গ দিচ্ছেন, তাদের সঙ্গ পেয়েআমরা গর্বিত। আমি হৃদয় থেকে সেই দেশগুলির নেতৃবৃন্দ ও দেশবাসীকে অভিনন্দন জানাই।এই নতুন নিবিড় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ভারতে শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও একটি নতুনমাত্রা যোগ করেছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নতি, উন্নয়ন, সেই রাজ্যেরসাধারণ মানুষের সকল অসম্পূর্ণ স্বপ্নের বাস্তবায়নে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা সবাইআরেকবার কাশ্মীরকে স্বর্গ হিসাবে অনুভব করতে চাই। সেই পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে যাকরার সবকিছু করতে আমরা সংকল্পবদ্ধ। জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে অনেক আরোপ-প্রত্যারোপবক্তৃতা আমরা শুনেছি। হাতে গোনা কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী এই আরোপ-প্রত্যারোপেরফাঁকগোলে নতুন নতুন কৌশলের মাধ্যমে এই সমস্যাকে জিইয়ে রেখেছে। কিন্তু আমি মনে করি,গালি কিংবা গুলির মাধ্যমে কোনও সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সমস্যার সমাধান করতে হলেকাশ্মীরবাসীদের বুকে জড়িয়ে ধরতে হবে। এটাই ভারতীয় পরম্পরা। ১২৫ কোটি ভারতবাসীপরস্পরকে বুকে জড়িয়ে ধরলে সহজেই সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কোনও রকম শিথিলতা মেনেনেওয়া হবে না। আমরা বার বার তাদেরকে আহ্বান জানিয়েছি যে, আপনারা মূল ধারায় ফিরেআসুন। ভারতীয় গণতন্ত্রে প্রত্যেকের কথা বলার অধিকার রয়েছে। প্রত্যেকের ক্ষোভপ্রকাশের অধিকার রয়েছে। মূলধারাই প্রত্যেকের জীবনে নতুন শক্তি প্রদান করতে পারে।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আমাদের অভ্যন্তরীণনিরাপত্তা বাহিনীগুলির সমবেত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন উগ্রবামপন্থা অধ্যুষিত অঞ্চলেরঅসংখ্য পথভ্রষ্ট যুবক-যুবতী আত্মসমর্পণ করে মূলধারায় ফিরে এসেছেন।
সীমান্ত রক্ষার জন্য আমাদের সৈনিকরা মোতায়েনরয়েছেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আজ ভারত সরকার এমন একটি ওয়েবসাইট চালু করছে,যেখানে সকল গ্যালেন্টারি অ্যাওয়ার্ড বিজেতাদের সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য সেইপোর্টালে থাকবে। এরজন্য আমরা প্রত্যেকেই গর্ব করতে পারব। আর দেশের নতুন প্রজন্ম এইবীর আত্মবলিদানকারীদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
প্রযুক্তির সাহায্যে, দেশের সততার গুরুত্বপুনরুদ্ধারে, কালো টাকা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি থাকবে। আমরা ধীরেধীরে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আধার ব্যবস্থার মাধ্যমে লেনদেনে স্বচ্ছতা আনতে সক্ষমহয়েছি। বিশ্বের অনেক দেশ এখন ভারতের এই মডেল’কে নিয়ে গবেষণা করছে।
এখন যে কোনও প্রান্তিক গ্রামে বসেও কোনও ব্যবসায়ীসরকারকে পণ্য বিক্রি ও সরবরাহের সুবিধা পাচ্ছেন। তাঁদেরকে আর দালাল ধরতে হবে না।জিইএম নামে একটি পোর্টাল আমরা চালু করেছি। এর মাধ্যমে সরকারি প্রয়োজনে কেনাবেচারক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে আমরা সাফল্য পেয়েছি।
ভাই ও বোনেরা, সরকারি প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নে গতিবেড়েছে। সরকারি কাজে বিলম্ব হলে শুধু কোনও ঐ নির্দিষ্ট প্রকল্পটাই বিলম্বিত হয় না,সময়ের সঙ্গে খরচও বৃদ্ধি পায়। তারমানে কোনও কাজ আটকে থাকলে সবচেয়ে বেশি লোকসান হয়দেশের গরিব পরিবারগুলির।
আমাদের বৈজ্ঞানিকরা মাত্র ৯ মাসে পৃথিবী থেকেমঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে মঙ্গলযানকে প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। এটা আমাদেরসামর্থ্য। আমি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সরকারের কাজকর্মের ইতিহাস ঘেঁটে অভিজ্ঞতাঅর্জন করছিলাম। তখন দেখতে পাই যে, ৪২ বছর পুরনো একটি প্রকল্প তখনও বাস্তবায়িতহয়নি। সেটি ছিল, মাত্র ৭০-৭২ কিলোমিটার রেলপথ সম্প্রসারণের একটি প্রকল্প। ভাই ওবোনেরা, যে দেশের মানুষ মাত্র ৯ মাসে মঙ্গলগ্রহে মঙ্গলযান পাঠাতে সক্ষম, সেই দেশেই৭০-৭২ কিলোমিটার রেলপথ বাস্তবায়িত হতে ৪২ বছর লেগে গেল। তখন একজন গরিবের মনে যদিপ্রশ্ন ওঠে যে, এই দেশের ভবিষ্যৎ কী? সেটা অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত। আমরা সকল স্থগিতপ্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছি। এই প্রক্রিয়ায় গতি প্রদান করতে আমরা জিওটেকনোলজি এবং মহাকাশ প্রযুক্তির মতো আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে এগিয়ে চলেছি।
ইউরিয়া নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে প্রতি বছরইবাক্বিতণ্ডা চলত। কেরোসিন নিয়েও চলত। তখন কেন্দ্রকে বড় ভাই আর রাজ্যকে ছোট ভাইবলে মনে করা হ’ত। আমি দীর্ঘকাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকায় এই বিষয়ে রাজ্যেরঅভিমানগুলি নিয়ে অবহিত। একজন মুখ্যমন্ত্রীর কতটা গুরুত্ব, রাজ্য সরকারগুলির কতটাগুরুত্ব – তা আমি ভালোভাবেই বুঝি। তাই, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে সহযোগিতামূলকযুক্তরাষ্ট্রীয়তা এবং প্রতিযোগিতামূলক সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রীয়তাকে আমি অত্যাধিকগুরুত্ব দিয়ে সকল সিদ্ধান্ত মিলেমিশে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
আপনাদের হয়ত মনে পড়বে, দেশে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলিরদুর্দশা নিয়ে আমরা একজন প্রধানমন্ত্রীকে লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রদত্ত ভাষণেআক্ষেপ করতে শুনেছি। আমরা রাজ্যগুলিকে সঙ্গে নিয়ে ‘উদয় যোজনা’য় বাস্তবায়নেরমাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলির নানা সমস্যা দূরীকরণ ও বিদ্যুৎ সংস্থাগুলিরযথাযথ নিয়ন্ত্রণে সাফল্য পেয়েছি। এটাও সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয়তার একটিপ্রকৃষ্ট উদাহরণ।
জিএসটি’র পাশাপাশি স্মার্ট সিটি গঠন, স্বচ্ছ ভারতঅভিযান, শৌচাগার নির্মাণ, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রক্রিয়ায় সরলীকরণ – এই সকল বিষয়ে এখনকেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে অনেক সাফল্যপেয়েছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হ’লগণতন্ত্র। কিন্তু আমরা জানি যে, আমাদের গণতন্ত্র এতদিন ভোটবাক্সে ভোট দেওয়াপর্যন্ত সীমিত ছিল। কিন্তু নতুন ভারতে আমরা চাই যে, গণতন্ত্র শুধুই ভোটদান পর্যন্তসীমিত থাকবে না। তন্ত্র জনগণকে পরিচালিত করবে না, জনগণ তন্ত্রকে পরিচালনা করবে।নতুন ভারতে আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চাই।
লোকমান্য তিলকজি বলেছিলেন, ‘স্বরাজ আমার জন্মসিদ্ধঅধিকার’। স্বাধীন ভারতে আমাদের সকলের মন্ত্র হওয়া উচিৎ ‘সুশাসন আমার জন্মসিদ্ধঅধিকার’, সুশাসন আমাদের সকলের দায়িত্ব, সবাই নিজের দায়িত্ব পালন করলে সরকারকেও তারদায়িত্ব পালন করতে হবে।
‘স্বাধীনতা থেকে সুশাসন’ এই প্রক্রিয়ায় দেশবাসীকেসঙ্গে নিয়েই চলতে হবে । আমি যখন গ্যাসেভর্তুকি পরিত্যাগের আবেদন জানিয়েছিলাম , তখনদেশবাসী স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছিলেন। পরিচ্ছন্নতার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম, সেইথেকে আজ পর্যন্ত দেশের সর্বত্র পরিচ্ছন্নতা অভিযান জারি রয়েছে। বিমুদ্রাকরণেরক্ষেত্রেও বিশ্ববাসী অবাক হয়ে এদেশকে দেখেছেন। অনেকে ভেবেছিলেন, এবার মোদী গেল।কিন্তু আমার ১২৫ কোটি দেশবাসী যে ধৈর্য্য প্রদর্শন করেছেন, যে আস্থা দেখিয়েছেন –তার পরিণামস্বরূপ আজ দুর্নীতি হ্রাসে আমাদের অভূতপূর্ব সাফল্য সামনে এসেছে। এভাবেইএকটি নতুন গণঅংশীদারিত্বের পরম্পরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, শ্রদ্ধেয় লালবাহাদুর শাস্ত্রীযখন ‘জয় জওয়ান, জয় কিষাণ’ মন্ত্র উচ্চারণ করেছিলেন, আমাদের দেশের কৃষকরা তাতে সাড়াদিয়ে এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন যে তাঁদের রেকর্ড ফসল উৎপাদন সবুজ বিপ্লবের জন্মদিয়েছিল। সেই থেকে আমাদের দেশের কৃষকদের হিম্মত বেড়েছে। নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়েওতাঁরা নতুন নতুন পথ খুঁজে সিদ্ধিলাভ করছেন । আমি দেশেরকৃষকদের আহ্বান জানিয়েছিলাম যে , আপনারা ডাল চাষ করুন। আমারপ্রিয় ভাই ও বোনেরা, আপনারা শুনলে খুশি হবেন যে, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে কখনওকৃষকদের থেকে সরকারকে ডাল কিনতে শোনা যায়নি। এ বছর এত রেকর্ড ডাল উৎপাদন হয়েছে যে,সরকার ইতিমধ্যেই ১৬ লক্ষ টন ডাল কিনেছে। এটি একটি ঐতিহাসিক সাফল্য।
প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা রূপে একটি বিরাটরক্ষাকবচ হাতে পেয়েছেন আজকের কৃষকেরা। তিন বছর আগে অন্যনামে যে সরকারি ফসল বিমাপ্রকল্প চালু ছিল সারা দেশের তিন কোটি কৃষক তার সুবিধাপ্রাপক ছিলেন । কিন্তু বর্তমান প্রকল্পে ইতিমধ্যেই ৫ কোটি ৭৫ লক্ষ কৃষক যুক্ত হয়েছেন।
আমাদের দেশের কৃষকরা সময় মতো নির্দিষ্ট পরিমাণে জলপেলে সহজেই মাটি থেকে সোনা উৎপাদন করার ক্ষমতা রাখেন। সেজন্য আমি লালকেল্লারপ্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চাই যোজনা’র কথা ঘোষণা করেছিলাম। যে ৯৯টিপ্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল, তার মধ্যে ২১টি প্রকল্প ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ বাস্তবায়িতহয়েছে। আরও ৫০টি প্রকল্প কিছুদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ হবে। আর ২০১৯ সালের আগেই সবকটিপ্রকল্প একসঙ্গে বাস্তবায়িত হওয়ার পর সারা দেশে কৃষকরা সময় মতো নির্দিষ্ট পরিমাণেজল পাবেন।
যতদিন পর্যন্ত আমরা বীজ থেকে বাজার পর্যন্তসম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় কৃষকের পাশে দাঁড়াতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত তাঁদের ভাগ্যপরিবর্তন সম্ভব নয়। সেজন্য যথাযথ পরিকাঠামো ও সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তুলতে হবে। প্রতিবছর লক্ষ কোটি টাকার সব্জি, ফল ও অন্যান্য ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ায়পরিবর্তন আনতে আমরা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগেউৎসাহ দিয়েছি।
উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে কেন্দ্রীয় সরকারপ্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্পদা যোজনা চালু করেছে। এর মাধ্যমে যে ব্যবস্থা গড়ে উঠবে,তা কৃষককে বীজ সরবরাহ করা থেকে বাজারে ফসল বিক্রি করা পর্যন্ত সকল পর্যায়ে সাহায্যকরবে, আমাদের কৃষকদের জীবনে এক নতুন পরিবর্তন আসবে।
চাহিদা এবং প্রযুক্তি আমাদের দেশে কাজ ও কাজেরবাজারের প্রকৃতিকে দ্রুত বদলে দিচ্ছে। কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখে প্রশিক্ষণেরপদ্ধতিও একবিংশ শতাব্দীর প্রয়োজন অনুসারে গড়ে তোলা জরুরি। সেজন্য মানবসম্পদ বিকাশেকেন্দ্রীয় সরকার বেশ কিছু নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। মেধাবী যুবক-যুবতীরা যাতেকোনও গ্যারান্টি ছাড়া ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেতে পারেন, সেদিকে লক্ষ্য রেখেপ্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা চালু করা হয়েছিল। আমরা লক্ষ্য করেছি যে, এর মাধ্যমেবিগত তিন বছরে কয়েক কোটি যুবক-যুবতী শুধু নিজেরাই প্রতিষ্ঠিত হননি, আরও কয়েক কোটিকর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছেন।
শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেবিশ্বমানের করে তুলতে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি। ২০টি বিশ্বমানেরবিশ্ববিদ্যালয়কে আহ্বান জানিয়েছি যে, সরকার তাঁদের প্রত্যেককে ১ হাজার কোটি টাকাপর্যন্ত সাহায্যের জন্য প্রস্তুত। তাঁদের কাজে সরকার নাক গলাবে না। আমার বিশ্বাস,তারা আসবেন এবং তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মানওউন্নত হবে।
বিগত তিন বছরে ৬টি আইআইটি, ৭টি নতুন আইআইএম এবং৮টি নতুন আইআইআইটি চালু করা হয়েছে। আর শিক্ষান্তে কর্মসংস্থান আবশ্যক করারক্ষেত্রেও আমরা কাজ করছি।
আমার মা ও বোনেরা, আজ সারা দেশেই কর্মক্ষেত্রেমেয়েরা আগের থেকে বেশি যুক্ত হচ্ছেন। তাঁরা যাতে রাতেও কাজ করতে পারেন, কারখানায়কাজ করতে পারেন, সেজন্য শ্রম আইনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আমাদের মা ও বোনেরা পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য। আর সেজন্য আমরা তাঁদেরমাতৃত্বকালীন সবেতন ছুটি ১২ সপ্তাহ থেকে বৃদ্ধি করে ২৬ সপ্তাহ করে দিয়েছি।
আমি আজ নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে সেই বোনেদেরবিশেষ করে অভিনন্দন জানাতে চাই, যাঁরা এতদিন ‘তিন তালাক’-এর শিকার হতেন। সেইনিরাশ্রয় পীড়িত বোনেরা সারা দেশে একটি আন্দোলন শুরু করেছিলেন। দেশেরবুদ্ধিজীবীবর্গ এবং সংবাদ মাধ্যম তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। গোটা দেশে ‘তিনতালাক’-এর বিরুদ্ধে একটা আবহ গড়ে ওঠে। আমি সেই আন্দোলনকারী মা ও বোনেদের হৃদয় থেকেঅভিনন্দন জানাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনাদের অধিকার অর্জনে এই লড়াইয়ে ভারতবাসীআপনাদের সঙ্গে থাকবে। গোটা দেশের সাহায্যে মহিলা ক্ষমতায়নে এই গুরুত্বপূর্ণপদক্ষেপ অবশ্যই সফল হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কখনও আস্থার নামে ধৈর্যচ্যুতিথেকে মানুষ এমন কিছু কাজ করে বসে, যা সমাজের শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে। শান্তি,সদ্ভাবনা ও একতাকে তছনছ করে দেয়। জাতিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিষ কখনোই কোনও দেশকেএগিয়ে নিয়ে যেতে পারে না। আর এটা তো গান্ধীজির দেশ, বুদ্ধের মাটি। সবাইকে সঙ্গেনিয়ে চলাই এদেশের সংস্কৃতি। এটাই আমাদেরর পরম্পরা। এর সাফল্যই আমাদেরকে এগিয়ে নিয়েযেতে পারবে। সেজন্য আস্থার নামে হিংসাকে প্রশ্রয় দেওয়া যায় না।
হাসপাতালে কোনও রোগীর কিছু হয়ে গেল, আরহাসপাতালটাই জ্বালিয়ে দেবেন! পথে দুর্ঘটনা হলেই গাড়ি জ্বালিয়ে দেবেন, আন্দোলনকরবেন, সরকারি সম্পত্তি জ্বালিয়ে দেবেন? এগুলি কার সম্পত্তি? এগুলি আমাদের ১২৫কোটি ভারতবাসীর সম্পত্তি। এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ১২৫ কোটি ভারতবাসীর ঐতিহ্য। ঈশ্বরেবিশ্বাস কিংবা আস্থা সেটাও ১২৫ কোটি ভারতবাসীর চরিত্র। সেজন্য আস্থার নামে হিংসাকেএদেশ সহ্য করব না। আমি দেশবাসীকে অনুরোধ করব, সে সময়ের মন্ত্র ছিল ‘ভারত ছাড়ো’, আরআজকের মন্ত্র হওয়া উচিৎ ‘ভারত জোড়ো’। প্রত্যেক ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে সমাজেরপ্রতিটি উপাদানকে কাজে লাগিয়ে তবেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
সমৃদ্ধ ভারত গড়ে তুলতে আমাদের চাই শক্তিশালী অর্থব্যবস্থা, ভারসাম্যযুক্ত উন্নয়ন এবং আধুনিকতম পরিকাঠামো তবেই আমরা নতুন ভারতেরস্বপ্নকে সফল করতে পারব।
ভাই ও বোনেরা, বিগত তিন বছরে আমরা এমন অসংখ্যসিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা পরিবর্তনের পথে সকল প্রতিবন্ধকতাকে দূর করে দ্রুতগতিতে এগিয়েযেতে সাহায্য করবে। একটি ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে চলতে থাকা ট্রেন যখন স্টেশনেরকাছাকাছি আসে, সেখানে না থামলেও গতি কমিয়ে ঘন্টায় ৩০ কিলোমিটারের নীচে নামাতে হয়।ট্র্যাক বদলানোর সময়ও গতি কমাতে হয়। কিন্তু আমরা এমন কার্যশৈলী গ্রহণ করেছি, যাতেউন্নয়নের গতিতে কোথাও মন্দা না আসে। জিএসটি প্রণয়ন থেকে শুরু করে যে কোনও নতুনব্যবস্থা বাস্তবায়নে আমরা সেই গতি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছি।
আমরা পরিকাঠামোকেই অগ্রাধিকার দিয়েছি। পরিকাঠামোক্ষেত্রেই বাজেটে সর্বাধিক বরাদ্দ হয়েছে। রেল স্টেশন আধুনিকীকরণ, ছোট ছোট শহরেবিমানবন্দর নির্মাণ, জলপথের সংস্কার, সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন, গ্যাস গ্রিড নির্মাণ,পানীয় জলের গ্রিড, অপ্টিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ইত্যাদি সকল ধরনের আধুনিকপরিকাঠামো নির্মাণে আমরা কাজ করে চলেছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, একবিংশ শতাব্দীতে ভারতকেএগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সর্বাধিক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হ’ল আমাদের পূর্ব ভারত। এত অপারসম্ভাবনা, পরিশ্রমী ও সক্ষম মানবসম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য ঠিকভাবেব্যবহারই করা হয়নি। আমি পূর্ব উত্তর প্রদেশ, বিহার, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবংউত্তর-পূর্বাঞ্চলের কথা বলছি। আমরা এই পূর্ব ভারতের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছি।
ভাই ও বোনেরা, দুর্নীতিমুক্ত ভারত গড়া সবচেয়েগুরুত্বপূর্ণ কাজ, আর আমরা সেই কঠিন কাজটাই করার চেষ্টা করছি। সরকারে দায়িত্বনেওয়ার পর প্রথম কাজটাই আমরা করেছিলাম দুর্নীতি দমনের জন্য একটি ‘সিট’ গঠন। আজ তিনবছর পর অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে আমি দেশবাসীকে বলতে চাই যে, এই ‘সিট’ এই তিন বছরেরমধ্যেই প্রায় ১২৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি কালো টাকার সন্ধান আমাদের দিয়েছে। তাদেরকেগ্রেপ্তার করা হয়েছে অথবা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
তারপরই আমরা বিমুদ্রাকরণের সিদ্ধান্ত নিলাম।বিমুদ্রাকরণের মাধ্যমে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য পেয়েছি, অনেক লুকিয়ে রাখাকালো টাকা মুখ্য ধারায় চলে এসেছে। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, আমরা ৭-১০-১৫ দিনকরে সময় বাড়িয়ে পেট্রোল পাম্প, ওষুধের দোকান, রেল স্টেশনের মাধ্যমেও ৫০০ ও ১,০০০টাকার নোট সংগ্রহ করে এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছি। এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত যেগবেষণা হয়েছে, এই গবেষণা সরকার করেনি, বাইরের বিশেষজ্ঞরা করেছেন, বিমুদ্রাকরণেরফলে ভারতীয় ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে অতিরিক্ত ৩ লক্ষ কোটি টাকা এসেছে।
ব্যাঙ্কে যে টাকা জমা হয়েছে তার মধ্যে ১৭৫ লক্ষকোটি টাকারও বেশি সন্দেহের আওতায় রয়েছে। যারা এই টাকা জমা দিয়েছেন, এবার তাদেরজবাবদিহি করতে হবে। ফলে, নতুন করে কালো টাকা তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া থেমে গেছে। এরপরিণাম স্বরূপ এ বছর পয়লা এপ্রিল থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে প্রায় ৫৬ লক্ষ ব্যক্তিগতকরদাতা ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছেন। গত বছর এই সময়ের মধ্যে জমা দিয়েছিলেনমাত্র ২২ লক্ষ করদাতা। এক বছরের মধ্যেকরদাতার পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেল। কালো টাকার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়েরপরিণাম।
১৮ লক্ষেরও বেশি মানুষকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যাদেরআয় তাদের দেওয়া হিসাব থেকে অনেক বেশি অথবা কিছুটা বেশি। এই পার্থক্যের জন্য তাদেরজবাবদিহি করতে হবে। এর মধ্যে সাড়ে চার লক্ষ মানুষ নিজেদের ভুল স্বীকার করে সততারপথে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ১ লক্ষ মানুষ এরকম চিহ্নিত হয়েছেন, যারা কখনও কর দেওয়াতো দূরের কথা আগে ইনকাম ট্যাক্সের নামইশোনেননি। এখন তাদেরকেও কর দিতে হবে।
ভাই ও বোনেরা, আমাদের দেশে ৪টি কোম্পানি কখনও বন্ধহলে ২৪ ঘন্টা তা নিয়ে সমালোচনা হয়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তর্ক-বিতর্ক চলতে থাকে।অর্থনীতির সঙ্কট নিয়ে আলোচনা হয়। আপনারা শুনলে অবাক হবেন, কালো টাকার ব্যবসায়ীরাএই বিমুদ্রাকরণের ফলে এমন নাস্তানাবোধ হয়েছেন, বিমুদ্রাকরণের পর তথ্য খননেরমাধ্যমে ৩ লক্ষ ভুয়ো কোম্পানি আবিষ্কৃত হয়। তারা হাওয়ালা ব্যবসা করত। আমরাইতিমধ্যেই এগুলির মধ্যে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দিয়েছি।যেদেশে ৪টি কোম্পানি কখনও বন্ধ হলে ২৪ ঘন্টা তা নিয়ে সমালোচনা হয়, সেদেশের সংবাদমাধ্যমে এই ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোম্পানি বাতিল হওয়ার পরও কেউ টু শব্দটিও করল না।কিন্তু আমরা এ কাজটি করে দেখিয়েছি।
আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, এরকম অনেক ভুয়োকোম্পানি ছিল, যারা একই ঠিকানা থেকে ৪০০টি কোম্পানি চালাত। তদারকি করার কেউ ছিলনা। ভাগ-বাঁটোয়ারা চলত। সেজন্যই আমার ভাই ও বোনেরা, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইশুরু করেছি গরিব মানুষ ও দেশের নবীনদের ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য।
ভাই ও বোনেরা, এর পরের পদক্ষেপ হ’ল জিএসটি। এবারলেনদেনে স্বচ্ছতা আরও বৃদ্ধি পাবে। পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে দেশের এক প্রান্ত থেকেআরেক প্রান্তে ট্রাকে করে পণ্য নিয়ে যেতে প্রত্যেক রাজ্যের সীমান্তে চেকপোস্টগুলিতে দাঁড়াতে হ’ত। জিএসটি এই প্রতিবন্ধকতা দূর করে দেওয়ায়, পণ্য পরিবহণেসময়ের অপচয় হ্রাস করা সম্ভব হওয়ায় শস্যের অপচয়ও অনেক কমেছে। ফলে, দেশের হাজার হাজারকোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বিমুদ্রাকরণের কারণেই আজব্যাঙ্কগুলির হাতে প্রভূত অর্থ এসেছে । প্রত্যেকব্যাঙ্কই সুদের হার কমিয়ে দিচ্ছে। মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে গরিব ও মধ্যবিত্ত সাধারণমানুষও ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে সাবলম্বী হতে পারছেন। এভাবে দেশের অর্থনীতি অনেকশক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সময় বদলেছে। একবিংশ শতাব্দীতেআজ বিশ্বের সর্বাধিক নবীন দেশ ভারত। ইতিমধ্যেই তথ্য প্রযুক্তি এবং ডিজিটালক্ষেত্রে আমাদের নবীন প্রজন্ম সারা পৃথিবীতে এগিয়ে। কাজেই এখন আমরা আর পুরনো দিনেরচিন্তাভাবনাকে আকড়ে ধরে চলব না। আরে এক সময় তো চামড়ার মুদ্রা চলত – তা কেউ মনেরাখেননি। আজকে যে কাগজের টাকা চালু রয়েছে, সময়ের সঙ্গে একদিন সবই ডিজিটালকারেন্সিতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। আমরা এই দূরদৃষ্টি নিয়েই ভীম অ্যাপ চালু করেছি।আমি দেশবাসীকে সকল ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে ভীম অ্যাপ ব্যবহার করার জন্যআহ্বান জানাচ্ছি। আমরা প্রি-পেইড-এর মাধ্যমেও কাজ করতে পারি। আমি অত্যন্ত আনন্দিতযে ইতিমধ্যেই ডিজিটাল লেনদেন অনেক বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। আরপ্রি-পেইড – এর ক্ষেত্রে ৪৪ শতাংশ লেনদেন বেড়েছে। আর সেজন্যই ন্যুনতম নগদ লেনদেনেরব্যবস্থার দিকে আমরা এগোচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দেশের সাধারণ মানুষেরসাশ্রয়ের কথা ভেবে সরকার আরও কিছু প্রকল্প চালু করেছে। যেমন – আপনারা যদি নিজেরবাড়িতে ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিতে এলইডি বাল্ব লাগান, তা হলে সারা বছরে ২-৫হাজার টাকা কিংবা তারও বেশি সাশ্রয় হতে পারে। স্বচ্ছ ভারত অভিযানে সাফল্য এলেপ্রত্যেক গরিব পরিবারে বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা ওষুধের খরচ বাঁচবে। দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি রোধে আমাদের সাফল্যও তো পরোক্ষভাবে আপনাদের সাশ্রয়কেই সুনিশ্চিত করে।
এখন সরকারের চালু করা ‘জন ঔষধি কেন্দ্র’গুলি থেকেগরিব মানুষেরা সুলভে ওষুধ কিনতে পারছেন। আমাদের এখানে শল্য চিকিৎসার পেছনে,স্টেন্ট প্রতিস্থাপনের খরচও কমানো হয়েছে। আগামীদিনে হাঁটু অপারেশনের সুযোগও পাওয়াযাবে। আমরা চেষ্টা করছি যে, দরিদ্র এবং মধ্যবিত্তদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে আর কিভাবেসাশ্রয় করা যায়।
আগে আমাদের দেশে প্রত্যেক রাজ্যের রাজধানীগুলিতেডায়ালিসিস-এর ব্যবস্থা ছিল। আমরা ঠিক করেছি যে, ভারতের প্রতিটি জেলা-শহরেডায়ালিসিস-এর ব্যবস্থা পৌঁছে দেব। ইতিমধ্যেই প্রায় ৪০০টি জেলায় আমরা গরিবদের জন্যনিঃশুল্ক ডায়ালিসিস-এর ব্যবস্থা চালু করতে পেরেছি।
দেশ আজ গর্ব করতে পারে যে, আমরা বিশ্বের সামনেনিজেদের বিভিন্ন অত্যাধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পেরেছি। যেমন – জিপিএস সিস্টেমেরমাধ্যমে ‘নাভিক’ নেভিগেশন ব্যবস্থা। আমরা সার্ক উপগ্রহ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেপ্রতিবেশী দেশগুলিকেও সাহায্য করার ক্ষেত্রে সফল হয়েছি। ‘তেজস’ বিমানের মাধ্যমে আজআমরা বিশ্বে নিজেদের অস্মিতা স্থাপন করতে পেরেছি। ‘ভীম-আধার অ্যাপ’ বিশ্বে ডিজিটাললেনদেনের ক্ষেত্রে একটি নতুন মডেল হয়ে উঠেছে। ভারতের কোটি কোটি গরিব মানুষের হাতেআমরা ইতিমধ্যেই ‘রূপে কার্ড’ পৌঁছে দিতে পেরেছি। এটা যেদিন অপারেশনাল হবে, সেদিনদেশ আরেকটি পরিবর্তন দেখতে পাবে।
আর এজন্যই আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের প্রতি আমারবিনম্র অনুরোধ যে, সময় হাতে থাকতে নতুন ভারতের সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলুন। আমাদেরশাস্ত্রে বলা হয়েছে – ‘অনিয়ত কালঃ অনিয়ত কালঃ প্রভুতয় বিপ্লবন্তে প্রভুতয়বিপ্লবন্তে’ অর্থাৎ সঠিক সময়ে নির্ধারিত কাজ সম্পূর্ণ না করলে যথাসময়ে ইপ্সিতপরিণাম পাওয়া সম্ভব হয় না। ১২৫ কোটি মানুষের টিম ইন্ডিয়া’কে আজ শপথ নিতে হবে ২০২২সালের মধ্যে আমরা নিজেরাই নতুন ভারত গড়ে তুলব। কেউ এসে আমাদের করে দেবে না। আমরানিজেরাই করব আর আগের থেকে ভালোভাবে করব। সমর্পণের মনোভাব নিয়ে কাজ করব তবেই ২০২২সালে আমরা একটি ‘ভব্য-দিব্য’ ভারত দেখব।
আর সেজন্য আমরা সবাই মিলে এমন একটি ভারত তৈরি করব,যেখানে সকল গরিব মানুষের পাকা বাড়ি থাকবে, সেই বাড়িতে বিদ্যুৎ থাকবে, পানীয় জলথাকবে, শৌচাগার থাকবে।
আমরা সবাই মিলে এমন একটি ভারত তৈরি করব, যেখানেকৃষক শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন। আজ যত টাকা রোজগার করেন, ২০২২ সালের মধ্যে তারদ্বিগুণ রোজগার করবেন।
আমরা সবাই মিলে এমন একটি ভারত তৈরি করব, যেখানেনবীন প্রজন্মের যুবক-যুবতীদের স্বপ্ন সফল করার সম্পূর্ণ সুযোগ থাকবে।
আমরা সবাই মিলে এমন একটি ভারত তৈরি করব, যেদেশসন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এবং জাতপাত থেকে মুক্ত হবে।
আমরা সবাই মিলে এমন একটি ভারত তৈরি করব, যেখানেদুর্নীতি এবং স্বজন পোষণ থাকবে না।
আমরা সবাই মিলে এমন একটি ভারত তৈরি করব, যেখানেসবাই সুস্থ, পরিচ্ছন্ন থাকবেন এবং প্রকৃত অর্থে স্বাধীন হয়ে উঠবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা সবাই মিলে উন্নয়নযজ্ঞেঝাঁপিয়ে পড়ব।
স্বাধীনতার ৭০ বছর সম্পূর্ণ হওয়ার পর আমরা ৭৫ বছরপূর্তির অপেক্ষায় এই ৫ বছর ‘দিব্য-ভব্য’ ভারতের স্বপ্ন নিয়ে একসঙ্গে কাজ করব – এইমনোভাব নিয়ে আরেকবার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রণাম জানাই।
১২৫ কোটি ভারতবাসীর নতুন বিশ্বাস ও আকাঙ্খাকেপ্রণাম জানাই আর নতুন সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলার জন্য টিম ইন্ডিয়াকে আহ্বান জানাই।
এই ভাবনা নিয়েই আপনাদের সবাইকে হৃদয় থেকে অনেকঅনেক শুভেচ্ছা।
ভারতমাতা কি জয়, বন্দে মাতরম জয় হিন্দ।
জয় হিন্দ। জয় হিন্দ। জয় হিন্দ। জয় হিন্দ।
ভারতমাতা কি জয়, ভারতমাতা কি জয়, ভারতমাতা কি জয়।
বন্দে মাতরম, বন্দে মাতরম, বন্দে মাতরম, বন্দেমাতরম।
সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।