শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়া,
মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়েরঅভিভাষণের পর তাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে আমি সংসদে আপনাদের মাঝে কৃতজ্ঞতা প্রস্তাবেরসমর্থন জানিয়ে কিছু কথা অবশ্যই বলতে চাইবো। গতকাল সংসদে রাষ্ট্রপতি মহোদয়েরঅভিভাষণের জবাবে অনেক সম্মানিত সদস্য তাদের বক্তব্য রেখেছেন। শ্রদ্ধেয় মল্লিকার্জনমহোদয়, শ্রদ্ধেয় মহম্মদ সেলিম মহোদয়, শ্রদ্ধেয় বিনোদ কুমার, শ্রদ্ধেয় নিকম্হনঘোটা, শ্রদ্ধেয় তারিক আনোয়ার, শ্রদ্ধেয় প্রেম সিংহ, শ্রদ্ধেয় আনোয়ার রেজা,শ্রদ্ধেয় জয়প্রকাশ নারায়ণ যাদব ছাড়াও কল্যাণ ব্যানার্জী, পি বেনুগোপাল, আনন্দরাওঅডসুল, আর কে ভারতী মোহন- প্রায় ৩৪ জন মাননীয় সদস্য নিজেদের বক্তব্য রেখেছেন।বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কেউ পক্ষে বলেছেন, কেউ বিপক্ষে বলেছেন। কিন্তু সংসদে এইআলোচনা সার্থকভাবে হয়েছে আর রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের ভাষণ কোনও সম্পত্তি নয়। দেশেরআশা-আকাঙ্খার অভিব্যক্তি এবং সেই লক্ষ্যে কী কী কাজ হচ্ছে তার বর্ণনা থাকে।রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের ভাষণকে সেই দৃষ্টিকোন থেকে সম্মান জানাতে হয়। নিছকই বিরোধীতারজন্য বিরোধ করা কতটা উচিত ?
অধ্যক্ষমহোদয়া, আমাদের দেশে শ্রদ্ধেয় অটল বিহারী বাজপেয়ী ও নতুন নতুন রাজ্য সৃষ্টি করেছিলেন। তিনটিনতুন রাজ্য নির্মিত হয়েছিল। উত্তরপ্রদেশের একটা বড় অংশ নিয়ে উত্তরাখন্ড,মধ্যপ্রদেশের অনেকটা অংশ নিয়ে ছত্তিশগড় আর বিহারের দক্ষিণ অংশ নিয়ে গড়ে তোলাঝাড়খন্ড রাজ্য নির্মাণের পেছনে ছিল তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের দূরদৃষ্টি। কোনও সমস্যাছাড়াই তিন রাজ্যের বিভাজন, আধিকারিদের বদলি- সবকিছু মসৃনভাবে হয়েছে। নেতৃত্বদূরদৃষ্টিসম্পন্ন হলে রাজনৈতিক স্বার্থের তাড়াহুড়োয় কোনও সিদ্ধান্ত না নিয়ে কতটাসুস্হ সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, অটল বিহারী বাজপেয়ীর নির্মাণ থেকে দেশে তা প্রত্যক্ষকরেছে, আজও অনুভব করছে। কারণ দেশভাগের যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা এ দেশের রয়েছে। দেশভাগেরসময় যে বিষ বপন করা হয়েছিল, স্বাধীনতার ৭০ বছর পরও ১২৫ কোটি ভারতবাসী তার ফলভুগছে।
আপনাদের রাজ্যভাগও একইপদ্ধতিতে হয়েছে। নির্বাচনকে মাথায় রেখে তাড়াহুড়ো করে সংসদের দরজা বন্ধ করেবিশৃঙ্খল পরিস্হিতিতে অন্ধ্রপ্রদেশের জনগণের ভাবনাকে সমাদর না করেই বিভাজন করেছেন।আমরাও তেলেঙ্গনা সৃষ্টির পক্ষে ছিলাম। আজও আমরা চাই যে তেলেঙ্গানার অগ্রগতি হোক।কিছু নির্বাচনকে মাথায় রেখে তাড়াহুড়োয় আপনারা সেদিন অন্ধ্রের সঙ্গে তেলেঙ্গানারবিভেদের বীজ বপন করেছেন। ফলস্বরূপ আজ চার বছর পরও সমস্যাগুলি ধিকিধিকি করে জ্বলছে।সেজন্য এ ধরণের বিভাজনের উদ্যোগ আপনাদের শোভা দেয় না।
অধ্যক্ষ মহোদয়া, গতকাল আমিকংগ্রেস নেতা শ্রদ্ধেয় খড়গে মহোদয়ের বক্তব্য শুনছিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম না যেতিনি ট্রেজারি বেঞ্চকে সম্বোধিত করছিলেন নাকি কর্ণাটকের জনগণের উদ্দেশে বলছিলেন,নাকি নিজের দলের নীতি নির্ধারকদের খুশি করার চেষ্টা করছিলেন। আর যখন তিনি বশিরবদ্রে শায়েরি বলতে শুরু করেন, আশা করি তাঁর এই আওয়াজ কর্ণাটকের মখ্যমন্ত্রী মহোদয়শুনেছেন। গতকাল তিনি ওই শায়েরিতে বলছিলেন যে- ‘ শত্রুতা খুব করো, কিন্তু এটা মনে রেখ / পরে যখন আমরা বন্ধু হবো, তখন যেন লজ্জিত না হতে হয়! ’
এই প্রয়োজনীয়তার কথা আমিজানি কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী মহোদয় হয়তো আপনার এই বক্তব্য শুনেছেন, কিন্তু ওইশায়েরির যে পঙক্তি আপনি বলেছেন, তার ঠিক আগের লাইনটি যদি উচ্চারণ করতেন তাহলে দেশঅবশ্যই বুঝতে পারতো যে আপনি কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন। আপনার অবস্হান কী ! আগের লাইনে বশির বদ্র লিখেছেন-
‘ মন চায় সত্যি বলি, খুব ইচ্ছেকরে সত্যি বলি,
কী করবো সাহস হয় না! ’
আমিজানিনা কর্ণাটকের নির্বাচনের পর খড়গেজি সেই সঠিক স্হানে থাকবেন কি না, আর সেজন্যএটি একপ্রকার তাঁর ‘ বিদায়ী ভাষণ ’ হিসেবে নথিভুক্ত থাকতে পারে। সাধারণতঃ সংসদেপ্রথমবার যখন কোনও সদস্য বক্তব্য রাখেন প্রত্যেকে যেমন সেই বক্তব্যকে সমীহ করেন,বিদায়ী ভাষণকেও তেমনি অন্য সদস্যরা সমীহ করেন। ভাল হতো গতকাল কয়েক মাননীয় সদস্যসংযম রক্ষা করে মাননীয় খড়গেজির বক্তব্যকে এমনি সমীহ দেখাতেন। গণতন্ত্রের জন্য এসবসৌজন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিরোধীতার অধিকার প্রত্যেকেরই আছে কিন্তু সংসদেরসম্মানহানির অধিকার নেই।
অধ্যক্ষমহোদয়া, আমি লক্ষ্য করছি যে আমাদের মাননীয় বিরোধী সাংসদরা যখন কোনও কাজ আমাদের সমালোচনাকরেন, তাদের ঝুলিতে তথ্য কম থাকে। শুধুই আমাদের শাসনকালে এমন ছিল, আমাদের শাসনকালেএমন করেছি, আমরা এসব করতা, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে এ সব চর্বিত চর্বনেরই ক্যাসেটবাজানো হচ্ছিল। কিন্তু এটা ভুলবে না যে ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে স্বাধীনতা পেয়েবিশ্বের অনেক দেশ তীব্রগতিতে এগিয়ে গেছে, অনেক উন্নতি করেছে। আমরা যে এগোতে পারিনিসেটা স্বীকার করতে হবে। ভারতমাতাকে টুকরো করে দেওয়ার পরও দেশবাসী আপনাদের সঙ্গেথেকেছে। প্রারম্ভিক তিন চার দশকে নামমাত্র বিরোধী ছিলেন, আপনারা একরকম নিষ্কন্টকশাসনক্ষমতা ব্যবহার করতে পেরেছিলেন। তখন সংবাদমাধ্যমের প্রতাপও অনেক কম ছিল, আরতাঁরা আপনাদের নেতৃত্বেই দেশের ভাল হবে, সেই আশা নিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারেরসমর্থনেই কলম ধরতেন। রেডিও সবসময় আপনাদেরই গীত গাইতো। অন্য কোনও স্বর তা থেকে শোনাযেত না। তারপর যখন টিভি এলো তখন টিভিও আপনাদের প্রতি সমর্পিত ছিল। সেই সময় বিচারব্যবস্হায়উচ্চপদ সমূহের নিযুক্তিও কংগ্রেস পার্টি করতো। এতটাই স্বাচ্ছন্দ্য ছিল আপনাদের।সেই সময় আদালতে কোনও পিআইএল হত না, এনজিওদের এত বাহুল্য —— রমরমা ছিল না।আপনারা যেরকম ভাবনাচিন্তায় লালিত-পালিত, তখন দেশে সেরকমই পরিবেশ ছিল। বিরোধীতারনামগন্ধ ছিল না। পঞ্চায়েত থেকে পার্লামেন্ট পর্যন্ত আপনাদেরই পতাকা উড়তো, কিন্তুআপনারা সম্পূর্ণ সময়টাই একটিমাত্র পরিবারের স্তুতি গেয়ে কাটিয়ে দিলেন। দেশেরইতিহাস ভুলে গনগণ যাতে শুধু একটি পরিবারের অবদানকেই মনে রাখে, সমস্ত শক্তি দিয়েসেই প্রচেষ্টা করে গেছেন। তখনও মানুষের মনে স্বাধীনতা আন্দোলনের রেশ ছিল, দেশকেএগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আকাঙ্খা ছিল, আপনারা সামান্য দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে জনগণেরসামর্থ্য হাতিয়ার করে দেশকে কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে দিতে পারতেন। কিন্তু আপনারানিজেদেরই ধুন বাজাতে থাকেন। এটা জানতে হবে যে আপনারা যদি সঠিক লক্ষ্য নির্ধারিতকরে উপযুক্ত নীতি প্রণয়ন করতেন, স্বচ্ছ নিয়ত নিয়ে কাজ করতেন তাহলে দেশ আজ যতটাউন্নতি করেছে, তার চাইতে অনের গুণ উন্নতি করতো। এটা অস্বীকার করতে পারবেন না। এটাদুর্ভাগ্য যে দেশবাসী তথা কংগ্রেস দলের নেতারা ভাবেন যে ভারত নামক দেশের জন্মহয়েছে ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭-এ। যে তার আগে দেশ ছিলই না। আমি গতকালও আপনাদের বক্তব্য শুনেঅবাক হয়েছি, একে আমি অহংকার বলবো, নির্বুদ্ধিতা বলবো, নাকি বর্ষা ঋতুতে নিজেদের ঋতুতেনিজের চেয়ার বাঁচানোর প্রচেষ্টা বলবো ? গতকালও এই সংসদে একথা বলা হয়েছে যেনেহরু দেশকে গণতন্ত্র দিয়েছন, কংগ্রেস দেশকে গণতন্ত্র দিয়েছে। আরে খড়গে সাহেব,একটু তো ভেবে বলুন ! আমি প্রশ্ন করতে চাই, আমাদের দেশেযখন লিচ্ছবি সাম্রাজ্য ছিল, যখন বুধ পরম্পরা ছিল, তখনো কি আমাদের দেশে গণতন্ত্রপ্রতিধ্বনিত হতো না ? শুধুই কংগ্রেস এবং নেহরু দেশেগণতন্ত্র এনে দেয়নি।
বৌদ্ধসঙ্ঘেও আলাপ-আলোচনা এবং সংখ্যাধিক্যের মতপ্রদানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণেরব্যবস্হা ছিল। শ্রদ্ধেয় খড়গেজি, আপনি এই সভায় কর্ণাটকের জনগণের প্রতিনিধি, শুধুইএকটি পরিবারের স্তুতি এবং কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের পর যদি এখানে এসে বসারসুযোগ পান তাহলে নিদেনপক্ষে জগ ৎগুরু বশ্বেশ্বরজির অপমান করবেন না। আপনার জানা থাকা উচিতযে, তিনি দ্বাদশ শতাব্দীতে অনুভব মন্ডপম নামক ব্যবস্হা চালু করেছিলেন, সেখানেগ্রামের সমস্ত সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেওয়া হতো। শুধু তাই নয়, মহিলাক্ষমতায়নের কথা মাথায় রেখে ঐ গ্রামসভায় মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব অনিবার্য ছিল।গণতন্ত্র আমাদের শিরায় ধমনীতে রয়েছে, আমাদের ঐতিহ্যে রয়েছে। আর বিহারের প্রাচীনইতিহাস সাক্ষী আড়াই হাজার বছর আগেই সেখানে লিচ্ছবি সাম্রাজ্যের আমলে গণরাজ্যেরব্যবস্হায় গণতন্ত্রের ঐতিহ্য ছিল। তখন থেকেই আমাদের দেশে জনগণের সম্মতি আরঅসম্মতির গুরুত্ব ছিল। আপনি গণতন্ত্রের কথা বলছেন, শ্রদ্ধেয় মনমোহন সিংহেরমন্দ্রীসভার সদস্য ছিলেন আর আপনারই দলের নেতা সম্প্রতি দলের আভ্যন্তরীন নির্বাচনেরসময় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, জাহাঙ্গীরের জায়গায় শাহজাহান এসেছেন, আর শাহজাহানেরস্হান নিয়েছেন ঔরঙ্গজেব। সেখানে কি নির্বাচন হয়েছিল ? আপনিগণতন্ত্রের কথা বলছেন, আমি জিজ্ঞেস করতে চাই, কোন গণতন্ত্রের কথা বলছেন, যখনআপনাদের পূর্ব প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী হায়দ্রাবাদ বিমানবন্দরে নেমে আপনাদেরদলেরই নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী স্বাগত জানাতে আসা তফশিলী জাতির নেতা সেইমুখ্যমন্ত্রীকে সর্বসমক্ষে অপমান করেছিলেন। যে নেহরুজির নামে আপনি গণতন্ত্রেরসমস্ত পরম্পরা সমপর্ণ করছেন, তাঁরই পৌত্র আপনাদের দলের মুখ্যমন্ত্রী টি অঞ্জয়াকেসর্বসমক্ষে অপমান করেছিলন। সেই ঘটনার প্রতিবাদে বিখ্যাত তেলেগু অভিনেতা এনটিরামারাও ফিল্মী ক্যারিয়ার ছেড়ে তেলেগু দেশম পার্টি গড়ে অন্ধ্রপ্রদেশের জনগণেরসেবায় নির্বাচনে লড়েছিলেন।
আপনিগণতন্ত্র সম্পর্কে বোঝাচ্ছেন। এদেশে ৯০ বার, ৯০ থেকেও বেশিবার ৩৫৬ ধারা অপপ্রয়োগেরমাধ্যমে আপনারা বিভিন্ন বিরোধী দলের ক্ষমতাসীন রাজ্য সরকারকে উপড়ে ফেলে দিয়েছেন।আপনারা পাঞ্জাবে অকালী দলের সঙ্গে কী করেছেন ? এদেশে আপনারা গণতন্ত্রকে অঙ্কুরিত হতে দেননি। আপনারা নিজেদের পারিবারিক গণতন্ত্রতেগণতন্ত্র মানেন আর দেশকে বিভ্রান্ত করছেন। শুধু তাই নয়, কংগ্রেস দলের গণতন্ত্র,যখনই আত্মার আওয়াজ শোনা যায়, তখনই তার টুটি টিপে ধরা হয়। আপনারা জানেন যে কংগ্রেসরাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হিসেবে নীলম সঞ্জীব রেড্ডিকে পছন্দ করেছিল, আর রাতারাতিসেই সিদ্ধান্ত বদলে দেওয়া হল, কাকতালীয়ভাবে তিনিও অন্ধ্রের মানুষ ছিলেন। আপনারাগণতন্ত্রের কথা বলেন ? আমার পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী ডঃমনমোহন সিং মহোদয় ক্যাবিনেটে বসে একরকম সিদ্ধান্ত নিন, সংবিধান দ্বারা গঠিতগণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্হা ক্যাবিনেটের গ্রহণ করা সেই সিদ্ধান্তকে আপনাদেরদলের এক পদাধিকারী সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের ডেকে তাদের সামনে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়েফেলেন। আপনাদের মুখে গণতন্ত্র শোভা পায় না। আর অনুগ্রহ করে আপনারা আমাদেরগণতন্ত্রের পাঠ পড়াবেন না।
আমিএকটু আরেকটি ইতিহাসের কথা আজ বলছি। এটা কি সত্য নয় যে দেশে কংগ্রেসে নেতৃত্ব করারজন্য নির্বাচিত হয়েছি। ১৫টি কংগ্রেস কমিটির মধ্যে ১২টি কংগ্রেস কমিটি সর্দার বল্লভভাইকে নির্বাচন করেছিল। তিনজন ‘ নোটা ’ করেছিলেন। কাউকে ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।তা সত্ত্বেও সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে নেতৃত্ব দেওয়া হয়নি। সেটা কেমন্ গণতন্ত্রছিল ? পন্ডিত নেহরুকে নেতা করা হয়। দেশের প্রথমপ্রধামন্ত্রী যদি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল হতেন তাহলে আমার কাশ্মীরের এত বড় অংশআজ পাকিস্তান অধিকৃত থাকতো না।
গতডিসেম্বর মাসে কি কংগ্রেস দলের অধ্যক্ষ পদের জন্য নির্বাচন ছিল না সিংহাসন আরোহনণছিল ? আপনাদের দলের নবীন সদস্যরা প্রার্থী হওয়ার জন্যমনোনয়ন পত্র ভরতে চাইছিলেন, আপনারা তাদের নিরস্ত করেছেন, মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন।আপনারা গণতন্ত্রের কথা বলছেন, আমি জানি নবীনদের এই আওয়াজ দাবিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টাব্যর্থ হবে। শোনার জন্য হিম্মত চাই, আর সেজন্য অধ্যক্ষ মহোদয়া, আমাদের সরকারেরবৈশিষ্ট্য হল এমন এক সংস্কৃতি চালু করা, যে কর্মসংস্কৃতিতে শুধুই ঘোষণা করে খবরেরকাগজের শিরোনামে স্হান করে নেওয়া নয়, শুধুই প্রকল্প ঘোষণা করে জনগণের চোখে ধুলোদেওয়া নয়। এটা আমাদের সংস্কৃতি নয়। আমরা সেইসব কাজেই হাত দিই যেগুলি সম্পূর্ণ করারপ্রচেষ্টা থাকে। আর যা কিছু ভাল তা যে কোনও সরকারের উদ্যোগে শুরু হোক না কেন, সেটাযদি থেমে থাকে, দেশের লোকসান হচ্ছে বলে মনে করি তাহলে সেটাকে ঠিকঠাক করে সম্পূর্ণকরার প্রচেষ্টা চালাই। কারণ গণতন্ত্রে সরকার আসে যায়, দেশ তেমনি থাকে, আমি এইসিদ্ধান্ত পালনকারী মানুষ। এটা কি সত্য নয় ? সেই কর্মচারীবৃন্দ, সেই ফাইলগুলি, সেই কর্মশৈলী তাহলে বিগত সরকারের সময় দৈনিক ১১কিলোমিটার হারে ন্যাশনাল হাইওয়ে নির্মিত হতো আর আজ একদিনে গড়ে ২২ কিলোমিটারন্যাশনাল হাইওয়ে নির্মিত হচ্ছে কি ভাবে ? বিগত সরকারের শেষ তিন বছরে ৮০ হাজার কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হয়েছে আর বর্তমানসরকারে তিন বছরে ১ লক্ষ ২০ হাজার কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হয়েছে। বিগত সরকারের শেষতিন বছরে প্রায় ১১০০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মিত হয়েছে। বিগত সরকারের শেষ তিনবছরে আড়াই হাজার কিলোমিটার রেললাইনের বৈদ্যুতিকরণ হয়েছে, বর্তমান সরকারের প্রথমতিন বছরে চার হাজার তিনশো কিলোমিটার থেকে বেশি রেললাইনের বৈদ্যুতিকীকরণ হয়েছে।অপটিক্যাল ফাইভার নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রেও আপনাদের দাবি যে, আপনাদের আমলে শুরুহয়েছিল। আমি অস্বীকার করছি না, কিন্তু আপনাদের কাজ করার পদ্ধতি কেমন ছিল ? যতক্ষণ পর্যন্ত আত্মীয়-স্বজন কিম্বা নিজের কারওপ্রয়োজন না পড়ে, ততক্ষণ কাজ হতো না। ২০১১ থেকে ২০১৪-র মধ্যে আপনারা সারা দেশেশুধুই ৫৯টি গ্রামে অপটিক্যাল ফাইবার পৌঁছে দিয়েছেন। আর আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পরবিগত তিন বছরে এক লক্ষেরও বেশি গ্রামে অপটিক্যাল ফাইবার পৌঁছে দিতে পেরেছি। কোথায়৫৯টি আর কোথায় এক লক্ষ ? কোনও তুলনাই হয় না। বিগত সরকার ‘ শহরীআবাস যোজনা ’ ৯৩৯টি শহরে চালু করেছিল। আরবর্তমান সরকার ৪৩২০টি শহরে ‘ প্রধানমন্ত্রীআবাস যোজনা ’ চালু করেছে। আপনারা এক হাজারথেকেও কম, আমরা ইতিমধ্যেই ৪০০০ থেকেও বেশি। বিগত সরকার শেষ তিন বছরে ১২০০০মেগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উ ৎ পাদন করেছেন, বর্তমান সরকারের আমলে তা ২২০০০ মেগাওয়াটথেকেও বেশি যুক্ত হয়েছে। জাহাজ পরিবহন শিল্পে কার্গো হ্যান্ডলিং এ আপনাদের সময়ে ‘ নেগেটিভ গ্রোথ ’ ছিল। বর্তমান সরকার তিন বছরে ১১ শতাংশ থেকে বেশি প্রবৃদ্ধি করে দেখিয়েছে। আপনাদেরযদি মাটির সঙ্গে সম্পর্ক থাকতো তাহলে হয়তো আপনাদের এই দুর্দশা হতো না। খড়গেজিতাঁর বক্তব্য রাখতে গিয়ে যখন রেল এবং কর্ণাটক এই দুটি বিষয়ে বলেন, তখন তাঁর বুকগর্বে ফুলে উঠতে দেখে খুব খুশি হয়েছি। তিনি বিদর-কুলবর্গী রেললাইনের কথা উল্লেখকরেছেন। দেশকে আমি এর পেছনে সত্যটা জানাতে চাই। একথা কেউ কখনও কংগ্রেসীদের মুখথেকে হয়তো শোনননি, কেউ হয়তো কখনও বলেননি। উদ্বোধন সমারোহ কিম্বা তার আগেশিলান্যাসের সময়ও হয়তো বলা হয়নি। সত্য স্বীকার করুন যে এই বিদর-কুলবর্গী ১১০ কিলোমিটারনতুন লাইনের প্রকল্প অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন সরকার মঞ্জুর করেছিল। আর২০১৩ সাল পর্যন্ত আপনাদের সরকার ক্ষমতায় ছিল, আপনি নিজে রেলমন্ত্রী ছিলেন, কাজহচ্ছিলো আপনারই নির্বাচনী এলাকায়। অথচ অটলজীর পর থেকে এত বছরে শুধুই ৩৭ কিলোমিটারকাজ হয়েছে। আর সে কাজটিও তখন হয়েছে যখন ইয়েদুপ্পাজি মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন- তাঁরইউদ্যোগে। তিনি কেন্দ্রীয় সরকার যা যা চেয়েছে সবকিছু দিতে রাজি হয়ে যান। তখন গিয়েআপনারা অটলজীর স্বপ্ন বাস্তবায়ণের কাজ শুরু করেন। তারপর নির্বাচনের আগে আপনাদেরমনে হয় যে এই পথে রেলগাড়ি চললে সুবিধা হবে। সেজন্য ১১০ কিলোমিটারের মধ্যে সাড়েত্রিশ কিলোমিটার হতেই গিয়ে উদ্বোধন করে পতাকা উড়িয়ে চলে এলেন। তারপর আমরাকেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব নিয়ে বাকি ৭২ কিলোমিটার রেললাইন পাতার কাজ সম্পূর্ণকরলাম। আমরা এটা ভাবিনি যে বিরোধী নেতার সংসদীয় ক্ষেত্রের কাজ এখন বন্ধ থাকুক, পরেদেখা যাবে। এরকম পাপ আমরা করি না। আপনার এলাকা, কিন্তু কাজটি দেশের স্বার্থে।দেশের কাজ ভেবেই আমরা এটি সম্পূর্ণ করেছি। আর সেই প্রকল্প সম্পূর্ণ হওয়ার পর আমিতার উদ্বোধন করলে আপনার কষ্ট হচ্ছে। এই কষ্টের ঔষধ দেশের মানুষ অনেক আগেই দিয়েদিয়েছেন।
অধ্যক্ষমহোদয়া, আরেকটি আলোচনা হয়েছে বাড়মের তৈল শোধনাগার নিয়ে। নির্বাচনের আগে, ভোটেরস্বার্থে শিলান্যাস করাকে কি প্রকল্পের সূচনা বলা যায় ? আপনারা বাড়মের তৈল শোধনাগারের শিলান্যাস করেছেন, পাহারে নাম খোদাই করিয়ে স্হাপনকরিয়েছেন, কিন্তু আমরা দায়িত্ব নিয়ে কাগজপত্র খুঁজে দেখি শুধু কাগজে লেখা থাকাছাড়া বাড়মের তৈল শোধনাগারের আর কিছুই নেই, জমি বরাদ্দ হয়নি, প্রকল্প মঞ্জুরহয়নি, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কোনও চূড়ান্ত চুক্তি সম্পাদিত হয়নি, শুধুনির্বাচনকে সামনে রেখে আপনারা পাথর পুঁতে দিয়েছেন। আপনাদের ভুলগুলি ঠিক করেপ্রকল্পটিকে সঠিক রূপ দিতে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজস্হান রাজ্য সরকারকে অনেক কাঠখড়পোড়াতে হয়েছে। তারপরই আজ আমরা সেই কাজ শুরু করতে পেরেছি।
আমিগিয়ে আসামের ধোলা সাদিয়া ব্রিজ উদ্বোধন করায় কেউ কেউ মনে কষ্ট পেয়েছেন। আপনাদেরদাবি এটি আপনাদের আমলের কাজ। কিন্তু আপনারা একথা বলার স ৎসাহস দেখান নি যে এইপ্রকল্পের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল অটল বিহারী বাজপেয়ীর শাসনকালে। আমাদেরবিজেপির এক বিধায়কের অনুরোধে প্রথম এটি নিয়ে বিস্তারিত অধ্যায়নের অনুমতি দিয়েছিলেনবাজপেয়ীজি। কিন্তু আপনাদের দীর্ঘ শাসনকালে এটিকে সম্পূর্ণ করতে পারে নি। ২০১৪ সালেআমাদের সরকার দায়িত্ব নিয়ে উত্তরপূর্ব ভারতের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিলে ওই সেতুনির্মাণের কাজ ত্বরান্বিত হয়েছে, সমাপ্ত হয়েছে, চালু হয়েছে। শুধু তাই নয়, আমিগর্বের সঙ্গে বলতে চাই যে বর্তমান সরকার দেশের মধ্যে দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ, দীর্ঘতমগ্যাস পাইপ লাইন, দীর্ঘতম সমুদ্রের উপর সেতু এবং দ্রুতগতির রেলগাড়ি চালু করাসিদ্ধান্ত এই সরকার নিতে পারে এবং নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সেগুলি বাস্তবায়নেরকাজ চলছে। বিগত তিন বছরে আমরা মহাকাশে ১০৪টি উপগ্রহ উৎক্ষেপনে সাফল্য পেয়েছি।
একথা অস্বীকার করা যায় না,রাষ্ট্রপতিজি যেমন নিজের অভিভাষণে উল্লেখ করেছে, আমি বলতে চাইবো গণতন্ত্র কেমনহওয়া উচিত। শাসনক্ষমতায় থাকা প্রত্যেককে কিভাবে সম্মান জানাতে হয়। আমার লালকেল্লারপ্রকার থেকে প্রদত্ত ভাষণের রেকর্ডিং শুনে দেখবেন। স্বাধীনতার পর থেকে সকল কংগ্রেসনেতার ভাষণের রেকডিং শুনে দেখবেন যে কেউ বিরোধীদের সাফল্যের কথা উল্লেখ করছেন কিনা ! এই নরেন্দ্র মোদীলালকেল্লার প্রকার থেকে প্রদত্ত ভাষণে বলেছে যে, দেশ আজ যেখানে পৌঁছেছে তার পেছনেবিগত সকল কেন্দ্রীয় সরকারের অবদান রয়েছে, রাজ্য সরকারগুলির অবদান রয়েছে।সর্বসমক্ষে একথা স্বীকার করার হিম্মত আমাদের আছে, এটাই আমাদের চরিত্র।
আমি আজ বলতে চাই, আমি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীছিলাম সেই কালখন্ডে গুজরাটের সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হয়েছিল। তখন আমরা বিগত ৫০ বছরেযতজন গুজরাটের রাজ্যপালের দায়িত্ব পালন করেছেন, প্রত্যেকের ভাষণ সংকলিত করে একটিগ্রন্হ প্রকাশ করেছিলাম। আপনারা জানেন যে রাজ্যপালের ভাষণে তাঁর কার্যকালের সকলসরকারের কাজের বিবরণ ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করেছি । এতে মধ্যবিত্তরা খুবই উপকৃত হয়েছেন । ২ কোটি টাকাপর্যন্ত ব্যবসা করা সকল ব্যবসায়ী শুধু ব্যাঙ্কের মাধ্যমে লেনদেন করেন । সরকার তাঁদেরআয়কে মোট ব্যবসার ৮ শতাংশ নয়, ৬ শতাংশ মনে করে । অর্থাৎ তাঁদেরকর-এ ২ শতাংশ লাভ হয় । জিএসটি-তে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসাকে ‘ কমপোজিশন স্কিম ’ দিয়েছে আর ব্যবসার ১শতাংশ মাত্র কর নেওয়া হচ্ছে । এক্ষেত্রেও বিশ্বে ভারত সরকারই সর্বনিম্ন কর নিচ্ছে ।
শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়াজন ধন যোজনার মাধ্যমে ১৩ কোটিরও বেশি দরিদ্রদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা, ১৮কোটিরও বেশি দরিদ্রদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিমা যোজনার লাভ প্রদান, ৯০ পয়সাপ্রতিদিন হিসাবে একটি আর মাসিক ১ টাকা কিস্তি জমা করার মাধ্যমে এতো ভালো বিমারসুযোগ আমরা গরিবদের দিতে পরেছি । আপনারা শুনে খুশি হবেন যে, এত কম সময়ের মধ্যে এ ধরনেরকিছু পরিবার দুর্ভাগ্যের শিকার হওয়ায় এই প্রকল্প থেকে ইতিমধ্যেই মোট ২ হাজার কোটিবিমার টাকা এই দুর্ভাগ্যতাড়িত পরিবারগুলি পেয়েছে!
উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে৩ কোটি ৩০ লক্ষ দরিদ্র মা-বোনকে রান্নার গ্যাসের সংযোগ প্রদান করা হয়েছে । আরে, আগেরান্নার গ্যাসের সংযোগের জন্য সাংসদদের পেছন পেছন ঘুরতে হ ’ ত । আমরা সামনেরদরজা দিয়ে বিনামূল্যে এই গ্যাস সংযোগ পৌঁছে দিচ্ছি । এর লক্ষ্য, ৫কোটি থেকে বাড়িয়ে ৮ কোটি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।
‘ আয়ুষ্মান ভারত যোজনা ’ নিয়ে আমরা বিভ্রান্ত যে, গরিব মানুষদের স্বাস্থ্যপরিষেবা প্রদান করা উচিৎ কি উচিৎ নয়? গরিব মানুষ অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে চায়না । তাঁরা মৃত্যুকে পছন্দ করেন । কিন্তু তাঁরা সন্তানদের জন্য ঋণ রেখে যেতে চান না । এমন গরিবনিম্নবিত্ত পরিবারগুলিকে রক্ষার সিদ্ধান্ত ভুল হতে পারে কি? হ্যাঁ, আপনাদের মনে হয়যে, এই প্রোডাক্টে কোনও পরিবর্তন আনলে ভালো হয়, তা হলে ভালো ইতিবাচক সংস্কার নিয়েআসুন । আমি নিজে এর জন্য সময় দিতে তৈরি! যাতে দেশের গরিব মানুষ বছরে ৫ লক্ষ টাকাপর্যন্ত মূল্যের চিকিৎসার সুবিধা নিতে পারেন । আপনারা এটা নিয়েএত কথা বলছেন কেন? ভালো প্রকল্প, অবশ্যই আপনাদের পরামর্শ দেবেন, আমরা একসঙ্গে বসেআলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে পারি!
অধ্যক্ষ মহোদয়া, আমাদেরসরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে সরকারি কর্মচারীদের ভাবনাচিন্তার পদ্ধতিতেওপরিবর্তন এসেছে । জন ধন যোজনা গরিবের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করেছে । তাঁরা এখনব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমাচ্ছেন । রুপে ডেবিট কার্ড ব্যবহার করা হচ্ছে । তারাও নিজেদেরসমৃদ্ধ পরিবারগুলির সমতুল্য মর্যাদাসম্পন্ন ভাবতে শুরু করেছেন । স্বচ্ছ ভারতমিশন মহিলাদের মনে বড় আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার কাজ করেছে, তাঁদের অনেক প্রকার পীড়াথেকে মুক্তি প্রদানের কারণ হয়ে উঠেছে! উজ্জ্বলা যোজনা গরিব মায়েদের ধোঁয়া থেকেমুক্তি দিয়েছে । আগে আমাদের শ্রমিকরা তুলনামূলক ভালো চাকরি পেলেও পুরনো চাকরি ছাড়ার সাহসকরতেন না, কারণ পুরনো জমা টাকা আর পাবেন না । আমরা তাঁদের এমন ‘ আনক্লেইমড্ ’ ২৭ হাজার কোটি টাকা তাঁদের ব্যাঙ্কের খাতায় পৌঁছেদিয়েছি প্রত্যেককে স্বতন্ত্র ‘ ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বর ’ প্রদানের মাধ্যমে । এরপর থেকে তাঁরাভালো চাকরি পেয়ে অন্য কোথাও যোগদান করলে তাঁদের ‘ ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বর ’ ও অপরিবর্তিতভাবে সঙ্গেনিয়ে যাবেন । দুর্নীতি ও কালো টাকার বিরুদ্ধে আমাদের কড়া পদক্ষেপগুলি অনেকের রাতের ঘুমকেড়ে নিয়েছে । আমি আপনাদের অস্থিরতার কারণ বুঝতে পারি । দুর্নীতিবাজরাজানেন যে, তাঁদের কারও রক্ষা নেই । দেশে এই প্রথমবার চার জন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে আদালতদোষী ঘোষণা করেছে আর তাঁরা জেলে জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন । এটা আমাদেরদায়বদ্ধতা । যাঁরা দেশকে লুটেছেন, তাঁদের উচিৎ শাস্তি পেতে হবে আর একাজে আমি কখনওপিছিয়ে থাকব না । আমি লড়াকু মানুষ, সেজন্য আজ দেশে একটি সততার পরিবেশ গড়ে উঠেছে । একটি সততার উৎসব । আজ অনেক বেশিমানুষ আয়কর দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসছেন । তাঁদের বিশ্বাস যে, সরকারের রাজকোষে অর্থ জমা হলেপ্রতিটি পয়সার হিসাব পাওয়া যাবে, সঠিক খাতে ব্যয় হবে!
আজ আমি একটি বিষয়েসবিস্তারে বলতে চাই । অনেকে তো মিথ্যা কথা বলা, জোরে জোরে মিথ্যে কথা বলা,বারে বারে মিথ্যে কথা বলার ফ্যাশন রপ্ত করেছেন । আমাদেরঅর্থমন্ত্রী বরাবর এনপিএ সম্পর্কে বলেছেন, আমিও এই সংসদের মাধ্যমে ধ্যক্ষ মহোদয়া,আপনার মাধ্যমে আজ দেশকেও বলতে চাই, এই এনপিএ কি? দেশবাসীর জানা থাকা উচিৎ যে,এনপিএ-র জন্য ১০০ শতাংশ পূর্বতন সরকারই দায়ী, ১ শতাংশও অন্য কেউ দায়ীও নয় । আপনারা দেখুন,তাঁরা এমনই ব্যাঙ্কিং নীতি বানিয়েছিলেন যে, ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে ফোনে চাপ সৃষ্টিকরে তাঁদের প্রিয়জনদের বিশাল অঙ্কের ঋণ পাইয়ে দিতেন । আর সেই ঋণেরটাকা কখনই পরিশোধ হ ’ ত না । ব্যাঙ্ক, নেতা,সরকার, দালালরা মিলেমিশে তা পুনর্নির্মাণ করত । কাগজে লেনদেনকরে দেশকে লুটতো । এভাবে তাঁরা লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা লুটেছেন । আমরা সরকারেরদায়িত্ব পেয়ে ব্যাপারটা বুঝতে পারি, এই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করতে চাইলে প্রথম দিনইদেশের সামনে এসব তথ্য তুলে ধরতাম । কিন্তু সেই সময়ে ব্যাঙ্কগুলির দুর্দশার কথা জনসমক্ষেএলে, তা দেশের অর্থনীতিকে বনরবাদ করে দিত । দেশকে সেই অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে বের করে আনা মুশকিলহ ’ ত । সেজন্য আপনাদেরপাপ সম্পর্কে অবহিত হওয়া সত্ত্বেও, যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আমি দেশেরস্বার্থে চুপ ছিলাম । দেশের স্বার্থে আপনাদের মিথ্যে আরোপ সইতে থাকি । কিন্তু এখন আমরাব্যাঙ্কগুলিকে প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চার করতে পেরেছি, এখন দেশের সামনে সত্যটা স্পষ্টহওয়া উচিৎ । আজ এই পবিত্র ভবনে দাঁড়িয়ে বলছি, এই এনপিএ আপনাদের পাপ । আমি গণতন্ত্রের মন্দিরেদাঁড়িয়ে একথা বলছি । আমরা সরকারে আসার পর একটিও এমন ঋণ মঞ্জুর করিনি, যাতে এনপিএ-র সম্ভবনারয়েছে । আপনারা লুকিয়েছেন, ভুল পরিসংখ্যান দিয়ে এসেছেন, আপনারা যতদিন সরকারেছিলেন, বলেছেন যে, এনপিএ ৩৬ শতাংশ । আমরা ২০১৪ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর বললাম মিথ্যাকেপ্রশ্রয় দেওয়া চলবে না, তখন কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেল, এনপিএ ৮২ শতাংশ ছিল । ২০০৮ সালেরমার্চ মাসে ব্যাঙ্কগুলি মোট ১৮ লক্ষ কোটি টাকা অগ্রিম দিয়েছে, ২০১৪ সালের মার্চমাস অব্দি আপনাদের শাসনকালেই সেই ১৮ লক্ষ, ৫২ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছে যায় । দেশের গরিবমানুষের টাকা আপনারা এইভাবেই লুট করেছেন । শুধু কাগজে ‘ রিস্ট্রাকচার ’ হ ’ ত – ঋণ পরিশোধহয়েছে, আবার ঋণ দেওয়া হয়েছে – এভাবেই আপনারা লুন্ঠনকারীদের আগলে রেখেছিলেন । কারণ, মাঝেদালালরা ছিল, তাঁরা আপনাদের প্রিয়জন, এতে আপনাদের কোনও না কোনও স্বার্থ নিহিত ছিল । সেজন্যই আপনারাএসব করেছেন । আমরা দায়িত্ব নিয়ে ভাবলাম, যত কষ্টই হোক না সহ্য করব, কিন্তু সাফ-সাফাইকেশুধু চৌমাথা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখব না! তাই, এদেশের নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠারস্বার্থে আচার-বিচারেও পরিচ্ছন্নতার অভিযান চালু করলাম ।
আমরা চার বছর ধরে ‘ রিক্যাপিটালাইজেশন ’ -এর কাজ করে যাচ্ছি । আমরা বিশ্বেরবিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে পড়াশুনা করে দেশের বঙ্কিং ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শক্তিযুগিয়েছি । চার বছর ধরে বিষয়টিকে সামলে আজ দেশের সামনে তুলে ধরেছি । আপনারা ১৮ লক্ষকোটি থেকে ৫২ লক্ষ কোটি টাকা লুন্ঠনের ভাগীদার । ঐ ৫২ লক্ষের ওপরসুদ জুড়ে বর্তমানে এনপিএ-র পাহাড়প্রমাণ পরিসংখ্যান গড়ে উঠেছে । দেশ আপনাদের এইপাপকে ক্ষমা করবে না, একদিন দেশকে এর হিশাব দিতে হবে আপনাদের ।
আমি লক্ষ্য করেছি,আপনাদের রাজনীতি হ ’ ল ‘ হিট অ্যান্ড রান ’ , নোংরা ছুঁড়ে দিয়েপালিয়ে যাওয়া । মনে রাখবেন, যত বেশি কাদা ছুঁড়বেন, তত বেশি পদ্ম ফুটবে । আরও কাদাছুঁড়ুন, যতটা পারেন কাদা ছড়ান, সেজন্য কোনও অভিযোগ করতে চাই না, দেশ ঠিক করবে কীকরতে হবে! আপনারা কাতার থেকে গ্যাস আমদানির জন্য ২০ বছরের চুক্তি করেছিলেন, আমরাদায়িত্ব নিয়ে বিষয়টি সেই দেশের সঙ্গে কথাবার্তা বলে, দেশের সমস্যার কথা তুলে ধরেতাঁদের সঙ্গে ‘ রিনেগোশিয়েট ’ করে দেশের প্রায় ৮ হাজারকোটি টাকা সাশ্রয় করেছি ।
আপনারা ৮ হাজার কোটি টাকাবেশি দিয়েছিলেন । কেন? কাদের জন্য? কিভাবে? – এসব প্রশ্ন তোলা হবে কি না তা দেশবাসী ঠিক করবেন, আমিকিছু বলছি না । তেমনই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও আপনারা একটি গ্যাস চুক্তি করেছিলেন । আমরা তাদেরসঙ্গেও ‘ রিনেগোশিয়েট ’ করে দেশের ৪ হাজার কোটিটাকা সাশ্রয় করেছি । আমি জানি, দেশবাসী আপনাদের এ নিয়ে প্রশ্ন করবেন ।
কেউ কি আমাকে জবাব দিতেপারবেন, আপনাদের সময়ে একটি এলইডি বাল্বের দাম ৩০০-৩৫০ টাকা কেন ছিল? আমরা কিভাবেপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে কোনও রকম সমঝোতা না করে সেই মূল্য ৪০ টাকায় নামিয়ে আনলাম?আপনাদের জবাব দিতে হবে । আপনাদের শাসনকালে সৌরশক্তির ইউনিট প্রতি ১২-১৫ টাকা কেনদিতে হ ’ ত? এখন সেইসৌরশক্তি ইউনিট প্রতি ২-৩ টাকা দরে কেমন করে নেমে এসেছে? তা সত্ত্বেও আমরা আপনাদেরদুর্নীতিগ্রস্থ বলছি না । দেশবাসী কী বলবেন, সেটা অন্য কথা । এক্ষেত্রে আমিনিজের সংযম রক্ষা করব । কিন্তু আপনাদের আমলে কী চলছিল – তা ক্রমে আমাদের সামনেস্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে ।
আজ বিশ্বের দরবারে ভারতেরমান-সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে । আজ কেউ ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে গেলে গোটা বিশ্ব তাঁকেসম্মানের চোখে দেখেন । বিদেশে গিয়ে দেশের ভুলগুলিকে ভুলভাবে পরিবেশন করতেআপনাদের লজ্জা হয় না? দেশ যখন ডকালামে যুঝছে, আপনারা চিনের সঙ্গে কথা বলতেযাচ্ছেন! আপনাদের মনে রাখা উচিৎ যে সংসদীয় পদ্ধতি, গণতন্ত্রে বিরোধী দলগুলিরদায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিৎ । ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে, প্রস্তাবিত সিমলা চুক্তির আগে,ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বেনজির ভুট্টোর চুক্তি সম্পাদনের আগে সেই দায়িত্ব পালন করারজন্য অটল বিহারী বাজপেয়ীজি গিয়ে ইন্দিরাজির সঙ্গে দেখা করে তাঁকে রাষ্ট্রহিতেনিরস্ত করেছিলেন । কিন্তু বাইরে এসে দেশের ক্ষতি হতে পারে এমন কোনও বিবৃতি দেননি । দেশের স্বার্থসর্বোপরি । অথচ, আমাদের সেনা জঅয়ানরা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করলে আপনারা সন্দেহ প্রকাশকরে বিবৃতি দিয়েছেন! আপনাদের আমলে দেশে আয়োজিত কমনওয়েলথ গেম নিয়ে মানুষের মনে ক ’ র প্রশ্ন উঠেছিল – তা কি মনে আছে? আমাদেরশাসনকালে ৫৪টি দেশের অংশগ্রহণে ভারত-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলন হয়েছে, ব্রিক্স শীর্ষসম্মেলন হয়েছে, ফিফা আন্ডার-১৭ বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছে, সম্প্রতি ২৬ জানুয়ারিতে১০টি আসিয়ান দেশের রাষ্ট্রপ্রধান আমন্ত্রিত ছিলেন । আমার তেরঙ্গাতাঁদের সামনে উড্ডীয়মান । আপনারা কখনও কল্পনাই করেননি, যেদিন নতুন সরকার শপথনিয়েছিল, সেদিনই সার্ক দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানরা এসে উপস্থিত হয়েছিলেন । আপনাদের মনেপ্রশ্ন ছিল, ৭০ বছরে আমরা যা বুঝতে পারিনি – তা কেমন করে হ ’ ল? আসলে ছোট মন নিয়ে বড় কথা বলা যায় না ।
অধ্যক্ষ মহোদয়া, এক নতুনভারতের স্বপ্ন নিয়ে দেশ এগিয়ে যেতে চায় । মহাত্মা গান্ধী নবীন ভারতের কথা বলেছিলেন, স্বামীবিবেকানন্দ নতুন ভারতের কথা বলেছিলেন, আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণবমুখার্জিও সকলের সামনে নতুন ভারতের স্বপ্ন তুলে ধরেছিলেন । আসুন, আমরা সবাইমিলে নতুন ভারত নির্মাণের সংকল্প গ্রহণ করে, তা বাস্তবায়িত করার জন্য নিজেদেরদায়িত্ব পালন করি । সমালোচনা গণতন্ত্রকে শক্তি যোগায় । মন্থন হলে তবেই অমৃত বেরিয়ে আসে ।