মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়, মাননীয় উপ-রাষ্ট্রপতি মহোদয়, লোকসভার মাননীয়অধ্যক্ষ মহোদয়া, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাননীয় দেবগৌড়া মহোদয়, আমার মন্ত্রীপরিষদের সাথীবৃন্দ, সংসদের সকল সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, আর নানা ক্ষেত্র থেকে সমাগতসকল মাননীয় ব্যক্তিবর্গ,
রাষ্ট্র নির্মাণে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যখন আমরা কোনও মোড়ে পৌঁছাই, নতুনলক্ষ্যে পৌঁছনোর চেষ্টার সূত্রপাত হয়। আজ মধ্যরাত্রে আমরা সবাই মিলে দেশে আগামীদিনের চলার পথকে সুনিশ্চিত করতে যাচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর, দেশ একটি নতুন ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাবে। ১২৫ কোটি দেশবাসীএই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। জিএসটি’র এই প্রক্রিয়া, এটা কেবলই অর্থ ব্যবস্থার মধ্যেসীমিত বলে আমি মনে করি না। বিগত অনেক বছর ধরে, অনেক মহানুভব ব্যক্তির নেতৃত্বেভিন্ন ভিন্ন টিমের দ্বারা এই প্রক্রিয়া চলেছে, যা এক প্রকার আমাদের ভারতেরগণতন্ত্রের, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর, কো-অপারেটিভ ফেডারেলিজমের ধারনার একটি বড়উদাহরণ রূপে আজ আমাদের সামনে এই উপলক্ষ এনে দিয়েছে। এই পবিত্র উপলক্ষে আপনারা সকলেনিজেদের বহুমূল্য সময় এখানে এসেছেন, সেজন্য আমি হৃদয় থেকে আপনাদের স্বাগত জানাই,আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাই।
এই যে লক্ষ্য আমরা সবাই নির্ধারিত করেছি, যে পথ আমরা নির্বাচন করেছি, যেব্যবস্থা আমরা বিকশিত করেছি; এটা কোনও একটি দলের সিদ্ধি নয়, কোনও একটি সরকারেরসাফল্য নয়, এটি আমাদের সকলের মিলিত ঐতিহ্য, আমাদের সকলের মিলিত প্রয়াসের পরিণাম।আর রাত ১২টায় আমরা এই সেন্ট্রাল হল-এ একত্রিত হয়েছি, এটা সেই জায়গা যা এদেশের বহুবিশিষ্ট মানুষের পদচিহ্নে পবিত্রতা লাভ করেছে। এহেন পবিত্রস্থানে আমরা বসে আছি। আরসেজন্য আজ সেন্ট্রাল হল, এই ঘটনার সঙ্গে আমরা স্মরণ করি, ৯ ডিসেম্বর, ১৯৪৬,সংবিধানসভার প্রথম বৈঠকের সাক্ষী এই সভাগৃহ।আমরা সেই স্থানে বসে আছি। সংবিধানসভারপ্রথম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন – পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ,সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল, বাবাসাহেব আম্বেদকর, আচার্য কৃপালনী, ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ, সরোজিনী নাইডু; এমনই সব মনীষীরা সারিবদ্ধ হয়ে বসেছিলেন।
এই সভা ১৯৪৭ সালে ১৪ আগস্ট রাত ১২টায় দেশ স্বাধীন হওয়ার সেই মহান ঘটনারসাক্ষী। ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর তারিখে দেশ যখন সংবিধানকে স্বীকার করে নিয়েছে, এইকক্ষ সেই মহান ঘটনার সাক্ষী। আর আজ অনেক বছর পর একটি নতুন অর্থ ব্যবস্থাযুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর একটি নতুন শক্তি রূপে জিএসটি সূচনা উপলক্ষে এই পবিত্রস্থান থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে বলে আমার মনে হয় না।
সংবিধানসভার আলাপ-আলোচনার মন্থন প্রক্রিয়া চলেছিল ২ বছর ১১ মাস ১৭ দিন।ভারতের নানা প্রান্ত থেকে নানা ক্ষেত্রের পণ্ডিতরা এই বিতর্কে অংশ নিতেন পথখুঁজতেন। কখনও এদিক কিংবা ওদিকে না যেতে পারে, মাঝের পথটি খুঁজে নিতে হয়েছে। ঠিকতেমনই জিএসটি-ও একটি দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার প্রক্রিয়ার পরিণাম। প্রত্যেক রাজ্যসমানভাবে, কেন্দ্রীয় সরকারও তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বছরের পর বছর ধরে এইপ্রক্রিয়া জারি রেখেছে। বর্তমান সংসদের, পূর্বতন সংসদের এবং তারও আগে সংসদেরসাংসদরা এই বিষয়ে লাগাতার বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছেন। একপ্রকার দেশের শ্রেষ্ঠমস্তিষ্কগুলির লাগাতার পরিশ্রমের ফসল আজকের এই জিএসটি’র বাস্তবায়ন।
যখন সংবিধান লেখা হয়েছিল, সংবিধান প্রণেতারা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-ভাষানির্বিশেষে দেশের সকল মানুষকে সমান সুযোগ, সমান অধিকার দানের ব্যবস্থা করে গেছেন।আজ জিএসটি সকল রাজ্যের মুক্তোগুলিকে একটি সুতোয় গেঁথে ভারতের অর্থ ব্যবস্থার একটিসুনিয়ন্ত্রিত রূপ ধারণ করেছে। জিএসটি এদেশের কো-অপারেটিভ ফেডারেলিজমের একটিউজ্জ্বল উদাহরণ, যা সর্বদাই কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিকে একসঙ্গে চলার শক্তি দেবে।জিএসটি’কে টিম ইন্ডিয়ার পরিণাম বলা যেতে পারে। এই টিম ইন্ডিয়া কর্তব্যশক্তি আরসামর্থ্যের পরিচায়ক।
এই জিএসটি পরিষদ কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি মিলেমিশে গড়ে তুলেছে, যাতে দরিদ্রমানুষদের পরিষেবা প্রদানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক দল, প্রত্যেক সরকারঅত্যন্ত সংবেদনশীল দৃষ্টিকোণ থেকে দেশের দরিদ্র মানুষের কথা ভেবে এই জিএসটি রচনাকরেছে। আমি জিএসটি পরিষদকে অভিনন্দন জানাই। এখনও পর্যন্ত যাঁরা এই কর্মযজ্ঞেনেতৃত্ব দিয়েছেন, অরুণজি বিস্তারিতভাবে তাঁদের কথা বলেছেন। আমি তার পুনরাবৃত্তিকরছি না, আমি তাঁদের সবাইকে অভিনন্দন জানাই। এই প্রক্রিয়াকে যাঁরাই এগিয়ে নিয়েগেছেন, তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
আজ জিএসটি পরিষদের ১৮তম বৈঠক হয়েছিল। আর একটু পরই এই ব্যবস্থার সূচনা হবে।আমি এটাকে সংযোগ বলব, কিন্তু গীতারও অষ্টাদশ অধ্যায় রয়েছে। জিএসটি পরিষদেরও ১৮টিবৈঠক হয়েছে। আর তাদের সাফল্য নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়, অনেকপরিশ্রম, অনেক আশংকা, রাজ্যগুলির মনে গভীর সন্দেহ ছিল। কিন্তু অনেক পরিশ্রম এবং অনেক মেধার শক্তির সম্মিলিতপ্রয়াসে এই কঠিন কাজটি সম্পাদিত হচ্ছে।
চাণক্য বলেছিলেন –
য়দ দুরং য়দ দুরাদয়ম, য়দ চ দুরৈ, ব্যবস্থিতম,
তৎ সর্বম তপসা সাধ্যম তপোহিদুর্তিক্রমম।
চাণক্যের এই বাক্যের দ্বারা আমাদের সম্পূর্ণজিএসটি প্রক্রিয়াকে ভালভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। কোনও বস্তু যত দূরেই থাকুক না কেন,তাকে পাওয়া যত কঠিনই হোক না কেন, তাতে পৌঁছনো যত কঠিনই হোক না কেন, কঠিন তপস্যা আরপরিশ্রমের মাধ্যমে তাকে পাওয়া যেতে পারে। আর আজ সেটাই হয়েছে।
একবার ভাবুন, দেশ যখন স্বাধীন হয়েছিল তখন ৫০০-রওবেশি ছোট-বড় দেশীয় রাজ-রাজড়াদের অধীন রাজ্য ছিল। সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল যেভাবেসেই দেশীয় রাজ-রাজড়াদের অধীন রাজ্যগুলিকে একত্রিত করে রাষ্ট্রীয় ঐক্যের কাজকরেছেন, আজ জিএসটি’র মাধ্যমে তেমনই আর্থিক ঐক্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়াহচ্ছে। ২৯টি রাজ্য, ৭টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আর কেন্দ্রীয় সরকারের ৭টি কর, রাজ্যসরকারের ৮টি কর এছাড়া প্রত্যেক জিনিসের আলাদা-আলাদা কর-এর হিসাব রাখা সারা দেশেপ্রায় এমনই ৫০০টি নানা প্রকারের কর দিতে হ’ত। আজ ঐ সবকটি কর থেকে মুক্তি পেয়েগঙ্গানগর থেকে ইঁটানগর আর লে থেকে লাক্ষ্মাদ্বীপ ‘এক দেশ, এক কর’ ব্যবস্থা আমাদেরএই স্বপ্ন আজ সফল হতে চলেছে।
আজ দেশে প্রায় ৫০০টি কর রয়েছে। বিশিষ্ট বিজ্ঞানীঅ্যালবার্ট আইনস্টাইন একবার একটা মজার কথা বলেছিলেন, তিনি বলেছিলেন যে, এইপৃথিবীতে যে জিনিসটা বোঝা সবচেয়ে বেশি মুশকিল, সেটা হ’ল ‘ইনকাম ট্যাক্স’। আমিভাবি, যদি আজ আমাদের দেশে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন থাকতেন, তা হলে তিনি আমাদের দেশেএতগুলি কর দেখে কী বলতেন, কী ভাবতেন? আমি ভাবছিলাম, উৎপাদন ক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্যনিজেদের বাজারে থাকলে তেমন অসাম্য থাকে না। কিন্তু বাইরে পাঠালে বিভিন্ন রাজ্যেরভিন্ন ভিন্ন কর-এ অসাম্য পরিলক্ষিত হয়। একই জিনিস দিল্লিতে একটা দাম হবে, আর ২০-২৫কিলোমিটার দূরে গুরুগ্রামে আরেক রকম দাম, আবার অন্যদিকে নয়ডা’তে গেলে আরেক রকমদাম। কারণ, হরিয়ানার কর আলাদা, উত্তর প্রদেশের কর আলাদা আর দিল্লির কর আলাদা। এইবৈচিত্র্যের কারণে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন ওঠে যে, গুরুগ্রামে গেলে এই জিনিসটাআমি এত টাকায় পাব, নয়ডায় গেলে এত টাকায় পাব আর দিল্লিতে গেলে আলাদা। অনেকবিভ্রান্তির সুযোগ থাকায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই এইপ্রশ্ন করতেন যে, আমরা কোনটাকে মানব? আপনাদের দেশে এক জায়গায় কাজ করলে একরকমব্যবস্থা আর আরেক জায়গায় অন্যরকম। আমরা কোনটা মানব? আজ ভারতে বিনিয়োগ করলে কাউকেআর এই বিভ্রান্তির মধ্যে পড়তে হবে না। আজ আমরা সেই বিভ্রান্তি থেকে মুক্তির পথে পাবাড়িয়েছি।
অরুণজি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন যে, জিএসটিচালু হলে অক্টরয় ব্যবস্থা হোক, প্রবেশ কর হোক কি বিক্রয় কর হোক, মূল্যযুক্ত কর হোকআরও অনেক কর থেকে মানুষ মুক্তি পাবেন। আমরা জানি যে, যে কোনও রাজ্যের প্রবেশের আগেপণ্যবাহী গাড়িগুলিকে ঘন্টার পর ঘন্টা চুঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, দাঁড়িয়ে থেকেপণ্য নষ্ট হয়ে গেলে দেশের কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়। এতক্ষণ জ্বালানি পোড়ানোর ফলেপরিবেশ দূষণ হয়। এখন গোটা ব্যবস্থা একসূত্রে বাঁধা থাকায় ঐ সকল অব্যবস্থা থেকেমুক্তির পথ প্রশস্ত হয়েছে।
কখনও পচনশীল পণ্য ঠিক সময়ে পৌঁছনোর প্রয়োজনথাকে, না হলে উৎপাদকের যেমন ক্ষতি পরিবাহকেরও তেমনই ক্ষতি। প্রক্রিয়াকারকের যেমনক্ষতি, বিক্রেতারও তেমনই ক্ষতি। আজ আমরা এই সকল অব্যবস্থা থেকে মুক্তি পেতেযাচ্ছি। জিএসটি রূপে আজ দেশে একটি অত্যাধুনিক কর ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। যে ব্যবস্থা অত্যন্ত সরল, অত্যন্তস্বচ্ছ। এই ব্যবস্থা কালো ধন ও দুর্নীতিকে রুখতে সক্ষম। সততাকে, সৎভাবে বাণিজ্যকরার উৎসাহ ও উদ্দীপনা যোগাবে এই ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা নতুন প্রশাসনিক সংস্কৃতিপ্রণয়ন করবে।
বন্ধুগণ,
কর সন্ত্রাস আর পরিদর্শক রাজ নতুন কথা নয়। এইশব্দগুলি সম্পর্কে আমরা সবাই পরিচিত। দীর্ঘকাল ধরে এই শব্দগুলি শুনে আসছি। জিএসটিপ্রণয়নকারীরা প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে এই কর সন্ত্রাস আর পরিদর্শকরাজকে নির্মূল করার চেষ্টা করেছে। এর ফলে, আমলাতন্ত্র আর এক্ষেত্রে ধূসর ক্ষেত্রএকদম নির্মূল হয়ে যাবে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা, ক্ষুদ্র শিল্পপতিরা আমলাদের দ্বারাযেভাবে সন্ত্রস্ত হতেন, তা থেকে মুক্তির পথ এই জিএসটি। কোনও সৎ ব্যবসায়ীকে যাতেকোনও অনাবশ্যক দুর্ভোগ না ভুগতে হয়, সেদিকে জিএসটি প্রণয়নকারীরা কড়া নজর দিয়েছেন। এইসম্পূর্ণ ব্যবস্থায় যে ব্যবসায়ীদের মোট ব্যবসা ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত, তাঁদেরকে এইকর থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আর যাঁদের ব্যবসা ৭৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত, তাঁদের জন্যওঅনেক ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। একথা ঠিক যে, পরিকাঠামো খাতে কিছু ব্যবস্থা রাখতেহয়েছে, কিন্তু তা হল ন্যূনতম ব্যবস্থা, নাম মাত্র ব্যবস্থা, যা সাধারণ মানুষেরপক্ষে বোঝা হয়ে দাঁড়াবে না।
বন্ধুগণ,
জিএসটি বড় বড় আর্থিক শব্দাবলী দিয়ে যা বোঝানোযায়, সেখানেই সীমাবদ্ধ নয়। কিন্তু সরল ভাষায় বলা হলে এই ব্যবস্থা দেশের গরিবদেরপক্ষে সর্বাধিক সার্থক প্রতিপন্ন হবে। স্বাধীনতার ৭০ বছর পরও আমরা দরিদ্রদের কাছেপৌঁছতে পারিনি। কারণ, এটা নয় যে চেষ্টা হয়নি। প্রত্যেক সরকারই চেষ্টা করেছে।কিন্তু সাধে সঙ্গে সাধ্যের পার্থক্য থাকায় আমরা আমাদের দেশের দারিদ্র্য মেটাতেপারিনি।
আমরা যদি উপায়গুলিকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহারকরি, যাতে কারও বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়, অনুভূমিকভাবে আমরা যতটা ছড়িয়ে দিতে পারব ততটাইদেশকে উল্লম্বভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। আর সেজন্যই সেই লক্ষ্যে কাজ করা হয়েছে।এখন ঐ কাঁচা বিল আর পাকা বিলের খেলা শেষ হয়ে যাবে। আমাদের আর্থিক জীবন আরও সরলহবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, দেশের গরিবরা লাভবান হবেন আর গরিবরা লাভবান হলে দেশওএগিয়ে যাবে।
কখনও আশঙ্কা হয় যে, এটা হবে না, সেটা হবে না,আমাদের দেশে আমরা জানি যখন প্রথম একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার ফল অনলাইনেপ্রকাশিত হওয়া শুরু হয়েছে, প্রথম দিন পুরো ব্যবস্থাই হ্যাংআপ হয়ে গিয়েছিল আর পরেরদিন এটাই ছিল সমস্ত সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম। কিন্তু এখন সব ঠিক হয়ে গেছে।
এটা ঠিক যে সবাই দ্রুত নতুন প্রযুক্তির সঙ্গেখাপ খাইয়ে নিতে পারেন না। কিন্তু প্রায় প্রত্যেক পরিবারেই দশম বা দ্বাদশ শ্রেণীরছাত্রছাত্রীরা থাকেন। আপনাদের কাছে কঠিন মনে হলে তাদের কাছে যান, তারা এত সহজ করেদেবে যে কল্পনা করতে পারবেন না। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও এভাবে নবীন প্রজন্মের সাহায্যনিয়ে নিজেরা প্রযুক্তির ব্যবহার শিখে নিতে পারবেন।
যাঁরা আশঙ্কা করেন যে, তাঁদেরকে অনুরোধ দয়া করেএরকম করবেন না। আরে আপনার পুরনো ডাক্তারবাবু, যাঁকে দিয়ে আপনি নিয়মিত চোখ দেখান,তিনি যখন প্রত্যেকবার আপনার পাওয়ার দেন, আপনার চশমার কাঁচ বদলাতে হয়, তখন দু-একদিনচোখ উপর-নীচ করে মানিয়ে নিতে হয়। প্রযুক্তির ব্যবহারও এমনই। সামান্য চেষ্টা করলেইআমরা সহজে এই ব্যবস্থাকে আপন করে নিতে পারব। আমি আপনাদের অনুরোধ করব যে, গুজবে কানদেবেন না, এখন যখন দেশ প্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে এর সাফল্য কিভাবে আসবে, দেশেরগরিবদের ভালর জন্যে আমরা কিভাবে কাজ করবো সেটা মাথায় রেখে আমরা এগিয়ে চলবো।
জিএসটি’র এই সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক বিশ্বে একটিঅত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যাঁরা ভারতে পুঁজি বিনিয়োগ করতে চান, তাঁদের জন্যএদেশের কর ব্যবস্থা সরল হওয়ায় এখন বিশ্বের তাবড় তাবড় বাণিজ্য গোষ্ঠীগুলির কাছেভারত একটি প্রিয় বিনিয়োগ গন্তব্য হয়ে উঠবে। ভারত ইতিমধ্যেই সব ধরনের স্বীকৃতিপেয়েছে। সেজন্য আমি মনে করি, নতুন কর ব্যবস্থা বিশ্ব বাণিজ্যে ভারতের স্থানকে অনেকউন্নত করবে।
জিএসটি দেশের বাণিজ্য ক্ষেত্রে এমন এক অনুঘটকরূপে কাজ করবে, যা সকল রকম ভারসাম্যহীনতাকে সমাপ্ত করবে। জিএসটি এমন অনুঘটক রূপেকাজ করবে, যা দেশের রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক হবে। এই ব্যবস্থারমাধ্যমে দেশের যে রাজ্যগুলি বাণিজ্যে উন্নত, তাদের উন্নয়নের সুযোগ বাড়বে আর যেরাজ্যগুলি পিছিয়ে রয়েছে, যারা প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ যেমন – বিহার, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি এই নতুন কর ব্যবস্থারমাধ্যমে দ্রুত উন্নয়নের সুযোগ পাবে। এই কর ব্যবস্থা ভারতের সকল রাজ্যের উন্নয়নকেসমান সুযোগ দেবে।
আমাদের রেলপথ যেমন কেন্দ্র ও রাজ্য মিলেপরিচালনা করে। তবুও আমরা একে ভারতীয় রেল হিসাবেই দেখি। আবার প্রত্যেক রাজ্য নিজেরস্বার্থেই রেলকে স্থানীয়ভাবে সাহায্য করে। আমাদের সেন্ট্রাল সার্ভিসের আধিকারিকরাকেন্দ্র ও রাজ্যে সমানভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। তবুও তাঁরা উভয় দিক থেকে মিলেমিশে কাজকরেন। জিএসটি এমন কর ব্যবস্থা, যাতে প্রথমবার কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি মিলেমিশেনিশ্চিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। এটা ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর সপক্ষে এখনও পর্যন্তযত ভাল ব্যবস্থা হয়েছে তার মধ্যে উৎকৃষ্টতম। এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। ভবিষ্যৎপ্রজন্ম গর্বের সঙ্গে আমাদের এই পদক্ষেপকে স্বীকার করে নেবে।
২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিহচ্ছে। আমরা ‘নিউ ইন্ডিয়া’র স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছি। ১২৫ কোটি ভারতবাসী এই ‘নিউইন্ডিয়া’র স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ভাই ও বোনেরা, এই ‘নিউ ইন্ডিয়া’র স্বপ্ন সফলকরতে জিএসটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। লোকমান্য তিলকজি যে ‘গীতা রহস্য’গ্রন্থটি লিখেছিলেন, সেই ‘গীতা রহস্য’তে শেষে তিনি একটি বেদমন্ত্র উদ্ধৃতকরেছিলেন।
সেই মন্ত্রটি আজও আমাদের প্রেরণা যোগায়। সেটি মূলত ঋগ্বেদের একটি শ্লোক –
সওয়াণিওয়াহঃ আকৃতি সমানা রুদয়নিবাহঃ
সমান বস্তু উহ মনো যথাবা সুসহাসি তি
আপনাদের সংকল্প, নিশ্চয় এবং ভাব অভিপ্রায়-এসাম্য থাকুক, আপনাদের হৃদয়ে সাম্য থাকুক, যাতে আপনারা সর্বত্র একসঙ্গে ভালভাবেপরস্পরের কাজ করতে পারেন। লোকমান্য তিলকজি এই দর্শনকে আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত করেগেছেন বলেই আজ তা জিএসটি রূপে সুফলদায়ক হয়েছে। জিএসটি ‘নিউ ইন্ডিয়া’র কর ব্যবস্থা।জিএসটি ডিজিটাল ভারতের কর ব্যবস্থা। জিএসটি কেবল সহজ বাণিজ্য নয়, জিএসটি কিভাবেবাণিজ্য করতে হবে, তারও পথপ্রদর্শন করে। জিএসটি নিছকই কর সংস্কার নয়, তা নতুনভারতের আর্থিক সংস্কারেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জিএসটি আর্থিক সংস্কার থেকেওএগিয়ে একটি সামাজিক সংস্কারের নতুন পর্যায়, যাকে সততার উৎসবের পথে ধাবিত করছে।আইনের ভাষায় জিএসটি’কে ‘গুডস্ অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স বলা হলেও এ থেকে যে লাভপাওয়া যাবে, সেগুলির কথা ভেবে আমি একে বলব ‘গুড অ্যান্ড সিম্পল ট্যাক্স’। ‘গুড’এজন্য যে কর-এর ওপর কর, তার ওপর কর প্রয়োগ করা হ’ত, সেগুলি থেকে মুক্তি পাওয়া গেল।‘সিম্পল’ এজন্য যে গোটা দেশে একটাই ফর্ম হবে, একটাই ব্যবস্থা থাকবে আর সেইব্যবস্থাই সর্বত্র প্রযোজ্য হবে।
আমি আজ এই উপলক্ষে মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছেকৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, কারণ তিনি তাঁর মূল্যবান সময় দিয়েছেন বলে নয়, এই সম্পূর্ণযাত্রার তিনিই অন্যতম পথপ্রদর্শক সঙ্গী রূপে সহযাত্রী রূপে এর প্রত্যেক পর্যায়কেভালভাবে দেখে, জেনে, যাচাই করে একে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। তাঁর এইপথপ্রদর্শকের ভূমিকা আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমাদের সকলের জন্যএকটি অত্যন্ত প্রেরণার উৎস। নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে আমরা সকলেই একে এগিয়ে নিয়েযাব।
আমি এই পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করার জন্যআমাদের সকলের পক্ষ থেকে মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করব, আপনারনেতৃত্ব আমাদের নতুন প্রেরণা যুগিয়ে যাবে। আমি আরেকবার এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্তসকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে আমার বক্তব্যে ইতি টানছি। আর শ্রদ্ধেয়রাষ্ট্রপতিজিকে অনুরোধ জানাচ্ছি যে, আপনি আপনার মূল্যবান বক্তব্যের মাধ্যমে আমাদেরপথ দেখান।