প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ৩০শে ডিসেম্বর উত্তরাখন্ডের হালদোয়ানী সফর করবেন। তিনি ১৭,৫০০ কোটি টাকার ২৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন। এই ২৩টি প্রকল্পের মধ্যে ১৪,১০০ কোটি টাকার ১৭টি প্রকল্পের শিলান্যাস করা হবে। এদিন সেচ, সড়ক, আবাসন, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, শিল্প, পয়ঃনিষ্কাশন ও পানীয় জল সরবরাহ সহ বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করা হবে। শ্রী মোদী এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাস্তা চওড়া করার প্রকল্প, পিথারোগড়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং নৈনিতালে পয়ঃনিকাশী ব্যবস্থার মানোন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এই ৬টি প্রকল্পের জন্য ব্যয় হয়েছে ৩৪০০ কোটি টাকা।
শ্রী মোদী, লখওয়ার বহুমুখী প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। এই প্রকল্পে খরচ হবে ৫৭৫০ কোটি টাকা। ১৯৭৬ সালে প্রকল্পটির পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ দিন এটি নিয়ে কোনো কাজ করা হয় নি। বকেয়া প্রকল্পগুলি দ্রুত শেষ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তারই অঙ্গ হিসেবে লখওয়ার বহুমুখী প্রকল্পের শিলান্যাস করা হবে। এর ফলে অতিরিক্ত ৩৪ হাজার হেক্টর জমিকে সেচের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে ও ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এছাড়াও উত্তরাখন্ড, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, দিল্লি, হিমাচলপ্রদেশ এবং রাজস্থানে পানীয় জল প্রকল্প গড়ে তুলতে সুবিধা হবে।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকে প্রধানমন্ত্রী অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। এই পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে এদিন ৮৭০০ কোটি টাকার বিভিন্ন সড়ক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করা হবে।
যে প্রকল্পগুলির শিলান্যাস করা হবে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে : মোরাদাবাদ – কাশীপুর সড়ককে চার লেনের করা হবে। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪ হাজার কোটি টাকা। ৫ নম্বর রাজ্য সড়ককে গদরপুর – দীনেশপুর – মাডকোটা – হলদিওয়ানীর মধ্যে ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশটি দুই লেনের করা হবে। ৪৪ নম্বর রাজ্য সড়কের কিচ্ছা থেকে পন্থনগর পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটিকে দুই লেনের করা হবে, উধম সিং নগরে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ খাতিমা বাইপাস তৈরি করা হবে। ১০৯ডি জাতীয় সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা হবে। এই প্রকল্পগুলিতে ব্যয় হবে ১৭৫ কোটি টাকার বেশি। এই প্রকল্পগুলির কাজ শেষ হলে গাড়ওয়াল, কুমায়ুন ও তরাই অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এছাড়াও উত্তরাখন্ড ও নেপালের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবে। এর ফলে রুদ্রপুর ও লালকুয়ার মতো শিল্প অঞ্চলের সুবিধা হবে এবং জিম করবেট জাতীয় উদ্যানের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো ভালো হবে।
উত্তরাখন্ড জুড়ে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার আওতায় বহু রাস্তার শিলান্যাস করা হবে। ১৩৩টি গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে ব্য়য় হবে ৬২৫ কোটি টাকার বেশি। এছাড়াও প্রকল্পগুলিতে ১৫১টি সেতু তৈরি হবে। এর জন্য ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী যে সড়ক প্রকল্পগুলির উদ্বোধন করবেন সেগুলি হল: ৭৪ নম্বর জাতীয় সড়কের নাগিনা থেকে কাশীপুর পর্যন্ত ৯৯ কিলোমিটার দীর্ঘ পথটিকে চওড়া করা হয়েছে। এর জন্য ব্য়য় হয়েছে ২৫০০ কোটি টাকা। ১২৫ নম্বর জাতীয় সড়কের টনকপুর থেকে পিথোরাগড় পর্যন্ত রাস্তাটির তিনটি জায়গা চওড়া করা হয়েছে। এর ফলে বছরে যে কোনো সময়ে এই রাস্তা দিয়ে যান চলাচল করতে পারবে। এই প্রকল্প নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৭৮০ কোটি টাকা। যে অঞ্চলগুলি চওড়া করা হয়েছে, সেগুলি হলঃ- চ্যুরানি থেকে আঞ্চলি (৩২ কিমি), বিলখেত থেকে চম্পাবত পর্যন্ত (২৯ কিমি), তিলোন থেকে চ্যুরানি (২৮ কিমি)। এই রাস্তা চওড়া করার ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এছাড়াও এই অঞ্চলের পর্যটন, শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতি হবে। কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ টকনপুর – পিথোরাগড় সড়কটি বছরে সব সময় ব্যবহার করা যাবে। এর ফলে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের জওয়ানদের যাতায়াত করতে সুবিধা হবে। এছাড়াও কৈলাশ মানস সরোবর যাত্রা পথে উন্নত সড়ক ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
উত্তরাখন্ডে চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য এবং দেশের প্রতিটি অংশের মানুষ যাতে উন্নত চিকিৎসা পেতে পারেন, তার জন্য প্রধানমন্ত্রী উধম সিং নগরে ঋষিকেশ এইমসের স্যাটেলাইন কেন্দ্রের ও পিথোরাগড়ে জগজীবন রাম রাষ্ট্রীয় মেডিকেল কলেজের শিলান্যাস করবেন। ঋষিকেশ এইমসের হাসপাতালগুলি নির্মাণে ব্যয় হবে যথাক্রমে ৫০০ কোটি ও ৪৫০ কোটি টাকা। চিকিৎসা পরিকাঠামোর মানোন্নয়ন হলে শুধুমাত্র কুমায়ুন ও তরাই অঞ্চলের মানুষরাই উপকৃত হবেন না, উত্তরপ্রদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের নাগরিকরাও এর সুফল পাবেন।
শ্রী মোদী উধম সিং নগর জেলার সীতারগঞ্জ ও কাশীপুর শহরের আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষদের জন্য ২৪০০টি গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহরাঞ্চল) –র আওতায় এই বাড়িগুলি তৈরি করা হবে। এর জন্য ব্যয় হবে ১৭০ কোটি টাকা।
রাজ্যের গ্রামাঞ্চলের পানীয় সরবরাহের উন্নতির জন্য প্রধানমন্ত্রী জল জীবন মিশনের আওতায় ১৩টি জেলায় ৭৫টি জল প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ১২৫০ কোটি টাকা। এর ফলে উত্তরাখন্ডের গ্রামাঞ্চলে ১ লক্ষ ৩০ হাজারের বেশি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়াও হরিদ্বার ও নৈনিতালের মতো শহরে নিয়মিতভাবে জল সরবরাহ এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিশ্চিত হবে। এই প্রকল্পে হরিদ্বারে ১৪,৫০০ টি ও হালদোওয়ানীতে ২৪০০ টি জলের সংযোগ দেওয়া হবে। হরিদ্বারে প্রায় ১ লক্ষ মানুষ এবং হালদোওয়ানীতে ১২,০০০ মানুষ এই প্রকল্পের সুফল পাবেন।
এই অঞ্চলের বিভিন্ন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য এবং প্রধানমন্ত্রীর তাঁর নানা পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য কাশীপুরে ৪১ একর জমির ওপর অ্যারোমা পার্ক এবং সিতারগঞ্জে ৪০ একর জমির ওপর প্লাস্টিক শিল্প পার্কের শিলান্যাস করবেন। স্টেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিয়াল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন উত্তরাখন্ড লিমিটেড এই দুটি প্রকল্প রূপায়নের দায়িত্ব পেয়েছে। এর জন্য ব্যয় হবে ১০০ কোটি টাকা। উত্তরাখন্ডের অনন্য ভৌগলিক পরিস্থিতিতে রাজ্যের ফুল চাষের উন্নতির জন্য অ্যারোমা পার্ক সহায়ক হবে। প্লাস্টিক শিল্প পার্কের সাহায্যে রাজ্যের শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
শ্রী মোদী ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রামনগর ও নৈনিতালে দুটি পয়ঃনিকাশী ব্যবস্থার উদ্বোধন করবেন। রামনগরের প্রকল্পের ক্ষমতা ৭ এমএলডি এবং নৈনিতালের প্রকল্পের ক্ষমতা ১.৫ এমএলডি। শ্রী মোদী উধম সিং নগরে ৯টি পয়ঃনিকাশী ব্যবস্থাপনার ট্রিটমেন্ট প্ল্যন্টের শিলান্যাস করবেন। এগুলি নির্মাণে ব্যয় হবে ২০০ কোটি টাকা। এছাড়াও নৈনিতালে একটি পয়ঃনিকাশী ব্যবস্থার মানোন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাস করা হবে। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ৭৮ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী সুরিনগড় – ২ এ ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। উত্তরাখন্ড জলবিদ্যুৎ নিগম লিমিটেড পিথোরাগড় জেলার মুন্সিওয়ারিতে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি নির্মাণ করেছে।