প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী, ১৪ই ফেব্রুয়ারি তামিলনাডু ও কেরালা সফর করবেন। তিনি সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে চেন্নাইতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন এবং সেনাবাহিনীর হাতে অর্জুন মেইন ব্যাটেল ট্যাঙ্ক (এমকে -১এ)তুলে দেবেন। শ্রী মোদী, বিকেল ৩টে ৩০ মিনিটে কোচিতে জাতির উদ্দেশে একগুচ্ছ প্রকল্প উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন। এই প্রকল্পগুলি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে এবং উন্নয়নের সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করবে।
তামিলনাডুতে প্রধানমন্ত্রী –
প্রধানমন্ত্রী, চেন্নাই মেট্রো রেলের প্রথম পর্বের এক্সটেনশন উদ্বোধন করবেন। ৩৭৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ওসারমেনপেট থেকে উইমকোনগরের মধ্যে যাত্রী পরিষেবার সূচনা করা হবে । ৯.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথ উত্তর চেন্নাইয়ের সঙ্গে বিমানবন্দর ও সেন্ট্রাল রেল স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলবে।
শ্রী মোদী, চেন্নাই বিচ এবং আট্টিপাট্টুর মধ্যে চতুর্থ রেললাইন উদ্বোধন করবেন। ২২.১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথ নির্মাণে ব্য়য় হয়েছে ২৯৩ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। চেন্নাই এবং থিরুভাল্লুর জেলার মধ্য দিয়ে এই লাইন গেছে। এর ফলে চেন্নাই বন্দরের যান চলাচলের সুবিধা হবে। চেন্নাই ও এন্নোড় বন্দরের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলা ছাড়াও ট্রেন, বিভিন্ন ইয়ার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবে। এর ফলে ট্রেন চলাচলের সুবিধা হবে।
প্রধানমন্ত্রী ভিল্লুপুরম – কুড্ডালোর – মাভিলাদুথুরাই – থানজাভুর এবং মাভিলাদুথুরাই – থিরুভারুর শাখার রেললাইনের বৈদ্যুতিকীকরণের উদ্বোধন করবেন। এই প্রকল্পটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪২৩ কোটি টাকা। ২২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথের বৈদ্যুতিকীকরণের ফলে চেন্নাই এগমোর এবং কন্যাকুমারির মধ্যে যাতায়াতে সুবিধা হবে ও ট্যরাকশনের পরিবর্তন ছাড়াই ট্রেন চলবে। এর ফলে প্রতিদিন ১৪ লক্ষ ৬১ হাজার টাকার জ্বালানী বাবদ অর্থের সাশ্রয় হবে।
এই সফরে প্রধানমন্ত্রী, ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে অত্যাধুনিক অর্জুন মেইন ব্যাটেল ট্য়াঙ্ক (এমকে – ১এ) তুলে দেবেন। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মীত এই ট্য়াঙ্কটি সিভিআরডিই, ডিআরডিও এবং ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। নির্মাণ কাজে ৮টি পরীক্ষাগার ও বেশ কিছু অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী, গ্র্যান্ড অ্যানিকুট খালের উন্নতিকল্পের প্রকল্পে শিলান্যাস করবেন। এই খাল বদ্বীপ জেলাগুলির সেচের জন্য় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই খালের আধুনিকীকরণের জন্য ২৬৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে এবং খালের মধ্য দিয়ে জল প্রবাহ বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রী আইআইটি ম্যাড্রাসের ডিসকভারী ক্যাম্পাসের শিলান্যাস করবেন। চেন্নাইয়ের কাছে থাইউরে ২ লক্ষ বর্গমিটার এলাকায় এই প্রকল্পে ১০০০ কোটি টাকা প্রথম পর্বে ব্যয় হবে।
তামিলনাডুর রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী, অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
কেরালায় প্রধানমন্ত্রী –
প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভারত পেট্রোলিয়ামের প্রোপিলিন ডেরিয়েভেটিভ পেট্রোকেমিক্যাল প্রোজেক্ট (পিডিপিপি) –টি উৎসর্গ করবেন। এই প্রকল্পে অ্যাকৃলেট, অ্যাক্রিলিক অ্যাসিড ও অক্সো – অ্যালকোহল উৎপন্ন হবে। বর্তমানে এই সব সামগ্রী বিদেশ থেকে আমদানী করা হয়। প্রকল্পটি কাজ শুরু করলে, বছরে ৩৭০০ – ৪০০০ কোটি টাকার বিদেশী মুদ্রার সাশ্রয় হবে। পিডিপিপি কমপ্লেক্সটি তৈরি করতে ৬০০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তৈল পরিশোধনাগারের খুব কাছে এই কমপ্লেক্সটি গড়ে উঠেছে। এর ফলে শিল্পের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সহজেই এখান থেকে পাওয়া যাবে। অনুসারী শিল্পগুলির বহু অর্থের সাশ্রয় এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের সুবিধা হবে। প্রকল্পটি কাজ শুরু করলে কোচি তৈল পরিশোধনাগার ভারতের প্রথম বিশেষ ধরণের পেট্রোপণ্য উৎপাদন করবে।
প্রধানমন্ত্রী, কোচিনের উইলিংডন দ্বীপে রো-রো ভেসেল পরিষেবা জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। জাতীয় জলপথ – ৩ এ বলগাত্তি ও উইলিংডন দ্বীপের মধ্যে আন্তর্জাতিক জলপথ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ ২টি রোল অন, রোল অফ ভেসেলের পরিষেবার সূচনা করবে। এনভি আদি শঙ্করা এবং এনভি সিভি রমণ রো-রো ভেসেল দুটি আলাদা আলাদাভাবে ৬টি ২০ ফুটের ট্রাক, তিনটি ২০ ফুটের ট্রেলার ট্রাক, ৩টি ৪০ ফুটের ট্রেলার ট্রাক, ৩০জন যাত্রীকে বহন করতে পারবে। এই পরিষেবা পরিবহণ খাতে ব্যয় ও সময় দুটিই কমাবে। এছাড়া কোচি শহরে যানজট হ্রাস পাবে।
প্রধানমন্ত্রী কোচিন বন্দরে “সাগরিকা” আন্তর্জাতিক ক্রুজ টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন। উইলিংডন দ্বীপে এর্নাকুলাম ওয়ার্ফে এটি ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ক্রুজ ট্রার্মিনাল। অত্যাধুনিক এই ট্রার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৫ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা। এই টার্মিনাল পর্যটন ক্ষেত্রের প্রসার ঘটাবে, উন্নয়নে গতি আনবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, রাজস্ব ও বিদেশী মুদ্রার আয় হবে।
প্রধানমন্ত্রী কোচিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট – বিজ্ঞান সাগরের উদ্বোধন করবেন। শিপইয়ার্ডের মধ্যে এধরণের সামুদ্রিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ভারতে আর কোথাও নেই। এখানে জাহাজের নির্মাণ ও মেরামতি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নতুন ব্যবস্থায় ১১৪ জন স্নাতক উত্তীর্ণ এখান থেকে প্রশিক্ষন পাবেন। ভারত ও বিদেশের সামুদ্রিক শিল্পের চাহিদা পূরণ হবে। এই প্রকল্প নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী, কোচিন বন্দরে সাউথ কোলবার্থের সংস্কারের কাজের জন্য শিলান্যাস করবেন। সাগরমালা প্রকল্পের আওতায় এই প্রকল্পের জন্য ব্যয় হবে ১৯ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে কোচিন বন্দরে রাসায়নিক পদার্থ ওঠানো – নামানো যাবে। এই বার্থের সংস্কারের ফলে জাহাজ বন্দরে ঢুকতে এবং বন্দর ছেড়ে বেরোতে সময় কম লাগবে। এর ফলে ব্যয় সাশ্রয় হবে।
কেরালার রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী এবং পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।