প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ১১ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্র ও গোয়া সফর করবেন।
সকাল ৯:৩০ মিনিটে তিনি নাগপুর স্টেশন থেকে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের যাত্রার সূচনা করবেন। বেলা ১০টায় শ্রী মোদী নাগপুর মেট্রো রেলের প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন করবেন এবং ফ্রিডম পার্ক থেকে খাপরি স্টেশন পর্যন্ত মেট্রো রেলে সফর করবেন। এই কর্মসূচিতে নাগপুর মেট্রো রেলের দ্বিতীয় পর্যায়ের শিলান্যাস করা হবে। ১০:৪৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী নাগপুর ও শিরডির মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী সমৃদ্ধি মহামার্গের প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন করবেন এবং ওই মহাসড়ক দিয়ে যাত্রা করবেন। এরপর ১১:১৫ মিনিটে তিনি জাতির উদ্দেশে নাগপুর এইমস উৎসর্গ করবেন।
১১:৩০ মিনিটে নাগপুরে এক অনুষ্ঠানে শ্রী মোদী ১৫০০ কোটি টাকার বেশি একগুচ্ছ রেল প্রকল্প জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ ও শিলান্যাস করবেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি নাগপুরে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ওয়ান হেল্থ এবং নাগ নদী দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। এছাড়াও চন্দ্রপুরে সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট অফ পেট্রোকেমিক্যালস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (সিপেট) এবং সেন্টার ফর রিসার্চ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কন্ট্রোল অফ হিমোগ্লোবিনোপ্যাথিস জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন তিনি।
গোয়ায় বিকেল ৩:১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী নবম বিশ্ব আয়ুর্বেদ কংগ্রেসের সমাপ্তি অধিবেশনে ভাষণ দেবেন এবং তিনটি জাতীয় আয়ুষ প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করবেন। বিকেল ৫:১৫ মিনিটে গোয়ার মোপা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর উদ্বোধন করবেন তিনি।
নাগপুরে প্রধানমন্ত্রী
সমৃদ্ধি মহামার্গ
প্রধানমন্ত্রী ৫২০ কিলোমিটার দীর্ঘ নাগপুর ও শিরডির মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী সমৃদ্ধি মহামার্গের প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন করবেন। দেশজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে নাগপুর-মুম্বাই সমৃদ্ধি মহামার্গ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ৫৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৭০১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে দেশের দীর্ঘতম এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে উঠতে চলেছে। অমরাবতী, ঔরঙ্গাবাদ এবং নাসিকের মতো বিখ্যাত শহরাঞ্চলের পাশাপাশি মহারাষ্ট্রের ১০টি জেলার মধ্য দিয়ে এই মহাসড়ক যাবে। এর ফলে পার্শ্ববর্তী ১৪টি জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নতি হবে। ফলস্বরূপ বিদর্ভ, মারাঠাওয়াড়া এবং উত্তর মহারাষ্ট্রের ২৪টি জেলার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
পিএম গতিশক্তি প্রকল্পের মাধ্যমে একটি সুসংহত পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের যে স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী দেখেছেন তারই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ সমৃদ্ধি মহামার্গ। এই মহামার্গ দিল্লি-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ে, জওহরলাল নেহরু পোর্ট ট্রাস্ট এবং অজন্তা-ইলোরা গুহা, শিরডি, ভেরুল, লোনারের মতো পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবে। মহারাষ্ট্রের আর্থিক বিকাশে এই মহাসড়ক আগামীদিনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
নাগপুর মেট্রো
নাগপুর শহরে যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটানোর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী নাগপুর মেট্রো রেলের প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন করবেন। তিনি অরেঞ্জ লাইনের খাপরি থেকে অটোমোটিভ স্কোয়্যার পর্যন্ত এবং অ্যাকুয়া লাইনে প্রজাপতি নগর থেকে লোকমান্য নগর পর্যন্ত মেট্রো রেল চলাচলের সূচনা করবেন। ৮ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নাগপুর মেট্রোর প্রথম পর্যায়টি নির্মিত হয়েছে। শ্রী মোদী নাগপুর মেট্রো রেলের দ্বিতীয় পর্যায়েরও শিলান্যাস করবেন। এই প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
নাগপুর এইমস
দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর মানোন্নয়নের যে অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রী করেছেন তারই অঙ্গ হিসেবে তিনি জাতির উদ্দেশে নাগপুর এইমস উৎসর্গ করবেন। এই হাসপাতালটি প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনার আওতায় নির্মিত হয়েছে। ২০১৭র জুলাই মাসে তিনি এই প্রকল্পটির শিলান্যাস করেছিলেন।
১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নাগপুর এইমস-এ বর্হিবিভাগ, অন্তর্বিভাগ, ডায়গোনেস্টিক শাখা, অপারেশন থিয়েটার এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের ৩৮টি বিভাগ থেকে রোগীরা স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবেন। বিদর্ভ অঞ্চলের মানুষ নাগপুর এইমস থেকে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন। এছাড়াও গড়চিরোলি, গোন্ডিয়া এবং মেলঘাটে আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের জনগণও উপকৃত হবেন।
রেল প্রকল্প
প্রধানমন্ত্রী নাগপুর স্টেশন থেকে নাগপুর-বিলাসপুরের বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের যাত্রার সূচনা করবেন। এছাড়াও ৫৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে নাগপুর এবং ৩৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে আজনি রেল স্টেশনের মানোন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাসও করবেন তিনি। এই অনুষ্ঠানে আজনিতে গভর্নমেন্ট মেন্টেনেন্স ডিপো এবং নাগপুর-ইটারসি তৃতীয় রেললাইন প্রকল্পের কোহলি-নারখের শাখার উদ্বোধন করা হবে।
নাগপুরে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ওয়ান হেল্থ,
ওয়ান হেল্থ কর্মসূচির আওতায় নাগপুরে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ওয়ান হেল্থের শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী। মানুষের স্বাস্থ্যের সঙ্গে পশুপাখিদের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের যোগসূত্রের বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিতে ওয়ান হেল্থ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাণীদের থেকে অনেক ব্যাধি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় গবেষণার জন্য ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হবে।
অন্যান্য প্রকল্প
প্রধানমন্ত্রী নাগপুরে নাগ নদী দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। জাতীয় নদী সংরক্ষণ পরিকল্পনার আওতায় ১৯২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
বিদর্ভ অঞ্চলে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে সিকল সেল অসুখ একটি বড় সমস্যা। এছাড়াও থ্যালাসেমিয়া এবং এইচবিই-র মতো হিমোগ্লোবিনোপ্যাথির অন্তর্ভুক্ত অসুখগুলির কারনে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় গবেষণার জন্য ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রপুরে সেন্টার ফর রিসার্চ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কন্ট্রোল অফ হিমোগ্লোবিনোপ্যাথিস-এর শিলান্যাস করেছিলেন। ১১ ডিসেম্বর এই প্রকল্পটি তিনি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। আগামীদিনে এই সংস্থা হিমোগ্লোবিনোপ্যাথিস-এর গবেষণা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং মানব সম্পদ সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি উৎকর্ষ কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রপুরে সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট অফ পেট্রোকেমিক্যালস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (সিপেট) জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। পলিমার এবং অনুসারি শিল্পের জন্য এই প্রতিষ্ঠান থেকে মানব সম্পদের চাহিদা পূরণ হবে।
গোয়ায় প্রধানমন্ত্রী
গোয়া মোপা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর
প্রধানমন্ত্রী ২ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গোয়ার মোপা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর উদ্বোধন করবেন। দেশজুড়ে আন্তর্জাতিক মানের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে ২০১৬র নভেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী এই বিমান বন্দরের শিলান্যাস করেছিলেন। বিমান বন্দরটিতে সুস্থায়ী পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প, পরিবেশ বান্ধব ভবন, রানওয়েতে এলইডি আলোর ব্যবহার, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, পয়ঃনিকাশী ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও বিমান বন্দরে বাড়ি তৈরির সময় ত্রিমাত্রিক মোনোলিথিক প্রযুক্তি, ফাইভ-জি প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তির পরিকাঠামোর সুবিধার বিষয়গুলি নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৪টি পার্কিং বে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রথম পর্বে এই বিমান বন্দর থেকে প্রতি বছর ৪৪ লক্ষ যাত্রী আসা-যাওয়া করতে পারবেন। পরবর্তীতে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩ কোটি ৩০ লক্ষ যাত্রী পরিবহণ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই বিমান বন্দর সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের পর্যটনের প্রসার ঘটাতে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ণ নিশ্চিত করবে। বিশ্বমানের এই বিমান বন্দরে পর্যটকরা গোয়ার বিভিন্ন বৈচিত্র্যের স্বাদ পাবেন। বিমানবন্দরের ভবন নির্মাণের সময় স্থানীয় আজুলেজোস টাইল্স ব্যবহার করা হয়েছে। এখানকার ফুড কোর্টটিতে গোয়ার বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী রাখা থাকবে।
নবম বিশ্ব আয়ুর্বেদ কংগ্রেস এবং জাতীয় আয়ুষ প্রতিষ্ঠান
প্রধানমন্ত্রী নবম বিশ্ব আয়ুর্বেদ কংগ্রেসের সমাপ্তি অধিবেশনে ভাষণ দেবেন এবং তিনটি জাতীয় আয়ুষ প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করবেন। এই তিনটি প্রতিষ্ঠান হল, গোয়ার অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ আয়ুর্বেদ, গাজিয়াবাদের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ইউনানি মেডিসিন এবং দিল্লির ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হোমিওপ্যাথি। এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে যেসব গবেষণাধর্মী কাজ করা হবে তার সুফল সাধারণ মানুষ পাবেন। ভবিষ্যতে আয়ুষ ব্যবস্থাপনায় স্বল্প মূল্যে রোগীরা চিকিৎসা করাতে পারবেন। এই প্রতিষ্ঠান নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯৭০ কোটি টাকা। আরো ৪০০ জন ছাত্রছাত্রী এখানে লেখাপড়ার সুযোগ পাবেন। এছাড়াও এই তিনটি হাসপাতাল থেকে অতিরিক্ত ৫০০ জন চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন।
নবম বিশ্ব আয়ুর্বেদ কংগ্রেস এবং আরোগ্য এক্সপো-তে ৫০টিরও বেশি দেশের ৪০০ জন প্রতিনিধি এসেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আয়ুর্বেদ নিয়ে পড়াশোনা করছেন এ রকম ছাত্রছাত্রীরা এই কংগ্রেসে অংশগ্রহণ করেছেন। নবম বিশ্ব আয়ুর্বেদ কংগ্রেসের মূল ভাবনা ছিল ‘আয়ুর্বেদ ফর ওয়ান হেল্থ’।