প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল গুয়াহাটি, ইটানগর ও আগরতলা সফরে যাবেন। শ্রী নরেন্দ্র মোদী ইটানগরে গ্রীনফিল্ড বিমানবন্দর ও সেলা সুরঙ্গপথ এবং উত্তরপূর্বাঞ্চল গ্যাস গ্রীডের ভিত্তিপ্রস্তর স্হাপন করবেন। তিনি দূরদর্শনের অরুণপ্রভা চ্যানেল এবং গারজি-বেলোনিয়া রেললাইনের উদ্বোধন করবেন। তিনটি রাজ্যে তিনি একাধিক বিকাশমূলক প্রকল্পেরও উদ্বোধন করবেন।
অরুণাচলপ্রদেশে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল সকালে গুয়াহাটি থেকে ইটানগর পৌঁছাবেন। সেখানে আইজি পার্কে একাধিক বিকাশমূলক প্রকল্পের উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
হলোঙ্গিতে গ্রীনফিল্ড বিমানবন্দর নির্মাণের শিলান্যাস করবেন শ্রী মোদী। বর্তমানে ইটানগরের নিকটবর্তী বিমানবন্দরটি ৮০ কিলোমিটার দূরে অসমের লীলাবাড়িতে অবস্হিত। হলোঙ্গিতে এই বিমানবন্দর গড়ে উঠলে দূরত্ব এক-চতুর্থাংশ কমে যাবে। এই অঞ্চলে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্হা গড়ে তুলতে, বিমানবন্দরটি অরুণাচলপ্রদেশে পর্যটন বিকাশের সম্ভাবনাও বাড়িয়ে তুলবে। এই বিমানবন্দর ঐ অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিকাশ ত্বরান্বিত এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং সারা দেশের জন্য কৌশলগতভাবেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। বিমানবন্দরে একাধিক স্হায়ী ব্যবস্হা থাকবে, যেমন- শব্দদূষণ রোধ করতে বিমানবন্দরের দিকের রাস্তাটির দু ধারে সবুজ বেল্ট, বৃষ্টির জলে সেচ ব্যবস্হা, শক্তি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতির ব্যবহার ইত্যাদি।
অরুণাচলপ্রদেশে প্রধানমন্ত্রী সেলা সুরঙ্গপথের শিলান্যাস করবেন। এটি সারা বছর ধরে তাওয়াং উপত্যকায় সবরকম আবহাওয়ায় সাধারণ মানুষ ও নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য যোগাযোগের ব্যবস্হা করে দেবে। এই সুরঙ্গপথ ব্যবহারে তাওয়াং যাত্রার সময় ১ ঘন্টা কমবে এবং ঐ অঞ্চলের পর্যটন ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বিকাশ সম্ভব হবে।
ইটানগের আইজি পার্কে প্রধানমন্ত্রী অরুণাচলপ্রদেশের জন্য দূরদর্শনে একটি নতুন চ্যানেল- ডিডি অরুণপ্রভার সূচনা করবেন। এটি দূরদর্শনের ২৪তম চ্যানেল হবে। এছাড়া অরুণাচলপ্রদেশে ১১০ মেগাওয়াটের পারে জল বিদ্যুৎ প্রকল্পটিকে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। এই প্রকল্পে ব্রহ্মপুত্রের শাখানদী ডিকরং-এর ওপর জল বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুলেছে নিপকো সংস্হা। এই প্রকল্প থেকে উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে কম মূল্যে জল বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া যাবে, যার ফলে সমগ্র অঞ্চলে বিদ্যুৎ পরিস্হিতির উন্নতি হবে।
অরুণাচলপ্রদেশের জোটে-তে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সিটিটিউট অফ ইন্ডিয়ার স্হায়ী ক্যাম্পাসের শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী। চলচ্চিত্রের ছাত্রছাত্রীরা, বিশেষ করে উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলির ছাত্রছাত্রীরা এরফলে উপকৃত হবেন। অরুণাচলপ্রদেশে আধুনিকীকরণপ্রাপ্ত তেজু বিমানবন্দরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দরটিতে উড়ান প্রকল্পের আওতায় বাণিজ্যিক বিমান চলাচলের জন্য উপযোগী নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী অরুণাচলপ্রদেশে ৫০টি স্বাস্হ্য ও সুস্বাস্হ্য কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন। আয়ুষ্মান ভারত যোজনায় সকলকে স্বাস্হ্য সেবার আওতায় আনতে স্বাস্হ্য ও সুস্বাস্হ্য কেন্দ্রগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অরুণাচলপ্রদেশে সৌভাগ্য যোজনার আওতায় ১০০ শতাংশ বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করবেন।
অসমে প্রধানমন্ত্রী
ইটানগর থেকে প্রধানমন্ত্রী গুয়াহাটি ফিরে আসবেন। সেখানে তিনি উত্তরপূর্বাঞ্চল গ্যাস গ্রীডের শিলান্যাস করবেন। এরফলে ঐ অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্হা চালু থাকে এবং দ্রুত শিল্পের বিকাশ ঘটে। সমগ্র উত্তরপূর্ব ভারতে সস্তায় উন্নতমানের গ্যাস পৌঁছে দেওয়ার সরকারি পরিকল্পনার অঙ্গ হল এই গ্যাস গ্রীড। কামরূপ, কাচের, হাইলাকান্ডি ও করিমগঞ্জ জেলায় সিটি গ্যাস ডিসট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্হাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ঐ অঞ্চলের গৃহস্হালি, শিল্প ও বাণিজ্যিক ইউনিটগুলিকে পরিশ্রুত গ্যাস সরবরাহ করার দায়িত্ব থাকবে সিটি গ্যাস ডিসট্রিবিউশনর হাতে। অসমের তিনসুকিয়াতে হলং মডিউলার গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ কারখানার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এই ব্যবস্হা একবার চালু হলে, অসমে উৎপাদিত মোট গ্যাসের ১৫ শতাংশ পৌঁছে দেবে। উত্তর গুয়াহাটিতে এলপিজি-র ভাসমান মজুত ভান্ডারের ক্ষমতা সম্প্রসারণ প্রকল্পেরও সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী। নুমালিগড়ে এনআরএল জৈব পরিশোধনাগারের শিলান্যাস করবেন। এই অনুষ্ঠানে শ্রী মোদী উদ্বোধন করবেন একটি ৭২৯ কিলোমিটার লম্বা গ্যাস পাইপলাইনের, যা বারাউনি-গুয়াহাটি থেকে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম ও অসম রাজ্যগুলি দিয়ে গেছে।
ত্রিপুরায় প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর এই সফরসূচির শেষ গন্তব্যস্হল হল আগরতলা। সেখানে তিনি স্বামী বিবেকানন্দ ক্রীড়াঙ্গনের ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে গারজি-বেলোনিয়া রেললাইনটিকে জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। এই রেললাইনটি ত্রিপুরাকে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে। প্রধানমন্ত্রী নরসিংগড়ে ত্রিপুরা ইন্সিটিটিউট অফ টেকনোলজির নতুন ভবনের উদ্বোধন করবেন।
আগরতলায় মহারাজা বীরবিক্রম বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের প্রতিমূর্তির আবরণ উন্মোচন করবেন। মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরকে অনেকেই আধুনিক ত্রিপুরার স্রষ্টা হিসেবে সম্মান করা হয়। আগরতলা শহরের পরিকল্পনার কাজের জন্য তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। দেশ গঠনের কাজে অসাধারণ অবদান রেখেছেন, এমন অজানা, অচেনা মহাপুরুষদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির মধ্যে পড়ে। মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের প্রতিমূর্তি উন্মোচন সেই উদ্যোগেরই অঙ্গ।