ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর সফরের পূর্বে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক বিবৃতিতে বলেছেন, ২৯মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত তিনি ঐ দেশগুলি সফর করবেন। এই তিন দেশের সঙ্গেই ভারতের মজবুত কৌশলগত অংশীদ্বারিত্ব রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইডোডো-র আমন্ত্রনে তিনি আগামী ২৯ মে জাকার্তায় থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটাই তাঁর প্রথম সেদেশ সফর। আগামী ৩০-মে রাষ্ট্রপতি উইডোডো-র সঙ্গে তাঁর আলাপ-আলোচনার বিষয়ে তিনি অত্যন্ত আশাবাদী। ভারত-ইন্দোনেশিয়া সি.ই.ও ফোরামের সঙ্গেও তাঁর ও সেদেশের রাষ্ট্রপতির মত-বিনিময় হবে। ইন্দোনেশিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয়দের উদ্দেশেও তিনি ভাষন দেবেন।
ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে শক্তিশালী ও মৈত্রিপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। উভয় দেশের ঐতিহাসিক ও প্রাচীন সভ্যতাগত যোগসূত্রও অত্যন্ত নিবিড়। দুই দেশেই বহু জাতি, বহু ধর্ম, বহুত্ববাদ ও উদার সমাজ ব্যবস্হায় বিশ্বাসী। তাঁর বিশ্বাস, এই সফরের ফলে এশিয়ার দুই বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও বাড়বে। সেই সঙ্গে, দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কও মজবুত হবে।
আগামী ৩১ মে সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর আগে তিনি সংক্ষিপ্ত সফরে মালয়েশিয়ায় গিয়ে সেদেশের নতুন নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানাবেন। সেদেশের প্রধানমন্ত্রী ডঃ মহাথির মহম্মদ-এর সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট আশাবাদী।
সিঙ্গাপুরে পৌঁছে তিনি দুই দেশের মধ্যে দক্ষতা উন্নয়ন, নগর-পরিকল্পনা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমতা সহ অন্যান্য কয়েকটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেবেন। সেদেশের বেশ কিছু সংস্হা ভারতে নগরোন্নয়ন ও পরিকল্পনা, স্মার্ট সিটি ও পরিকাঠামো উন্নয়নক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে। তাঁর এই সফরের ফলে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ বাড়বে।
আগামী ৩১ মে ভারত-সিঙ্গাপুর শিল্প ও উদ্ভাবন বিষয়ক প্রর্দশনী তিনি ঘুরে দেখবেন। এরপর, তিনি ব্যবসায়ী ও মহলের এক অনুষ্ঠানে ভাষন দেবেন। পরে, সেদেশের প্রথম সারির সি.ই.ওদের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনা করতে এক গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেবেন।
সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রপতি হালিমাহ ইয়াকব-এর সঙ্গে আগামী ১ জুন তাঁর সাক্ষাৎ কর্মসূচি রয়েছে। সেদেশের প্রধানমন্ত্রী লি-এর সঙ্গে তাঁর প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনা হবে। এরপর, তিনি নানইয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন এবং সেখানকার পড়ুয়াদের সঙ্গে মত-বিনিময় করবেন।
ঐদিন সন্ধ্যায় সাংরিলা বৈঠকে তিনি মূল ভাষন দেবেন। এই প্রথম কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ঐ বৈঠকে ভাষন দেবেন। এই বৈঠকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়গুলি এবং সমগ্র অঞ্চলে শান্তি ও স্হিতাবস্হা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের সুযোগ করে দেবে।
আগামী ২ জুন ক্লিফোর্ড পিয়ারে, যেখানে ১৯৪৮-এর ২৭ মার্চ গান্ধীজির চিতাভস্ম সমুদ্রে বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল সেখানে একটি ফলকের আবরন উন্মোচন করবেন তিনি। ভারতের সঙ্গে প্রাচীন সভ্যতাগত যোগসূত্র রয়েছে এমন কয়েকটি উপাসনাস্হলেও তাঁর যাওয়ার কর্মসূচি রয়েছে।
সিঙ্গাপুর সফরে তাঁর শেষ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে চাঙ্গি নৌ-ঘাঁটি পরিদর্শন। সেখানে তিনি ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ সাতপুরায় গিয়ে এই জাহাজের আধিকারিক ও নাবিকদের পাশাপাশি সিঙ্গাপুর নৌ-বাহিনীর আধিকারিকদের সঙ্গে মত বিনিময় করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাস ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে তাঁর এই সফর ভারতের ‘পূর্বে তাকাও’ নীতিকে আরও শক্তিশালী করবে। সেইসঙ্গে, ঐ তিন দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে।