জার্মানি,স্পেন, রাশিয়া এবং ফ্রান্স সফরের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী একবিবৃতিতে বলেছেন :
“জার্মানচ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের আমন্ত্রণে চতুর্থ ভারত-জার্মানি আন্তঃসরকারিপরামর্শ বৈঠকে (আইজিসি) অংশগ্রহণের উদ্দেশে ২৯ ও ৩০ মে, ২০১৭-তে আমি জার্মানি সফরকরব।
ভারতও জার্মানি হল আঞ্চলিক তথা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুই বৃহৎ গণতন্ত্র ও প্রধানঅর্থনীতির দেশ। আঞ্চলিক তথা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে এই দুটি দেশের ভূমিকাযথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও অঙ্গীকারের ওপর গড়ে উঠেছে আমাদেরকৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক। এর লক্ষ্য হল উদার, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নিয়ম-নীতিনির্ভর এক বিশ্ব শৃঙ্খলা গঠন করা। আমাদের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় জার্মানি হল একমূল্যবান অংশীদার। ভারতের রূপান্তরের লক্ষ্যে আমার চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গিরসঙ্গে জার্মানির কর্মদক্ষতা যথেষ্ট সঙ্গতিপূর্ণ।
জার্মানিরবার্লিন শহরের অদূরে অবস্থিত মেসমার্গ থেকে শুরু হবে আমার সফরসূচি। সেখানে আঞ্চলিকতথা আন্তর্জাতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে আলোচনার জন্য আমাকে বিশেষভাবেআমন্ত্রণ জানিয়েছেন চ্যান্সেলর মার্কেল।
আগামী৩০ মে চ্যান্সেলর মার্কেল এবং আমি আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়গুলিপর্যালোচনার জন্য অংশগ্রহণ করব চতুর্থ ভারত-জার্মানি আন্তঃসরকারি আলোচনা-বৈঠকে।বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস মোকাবিলা, দক্ষতা বিকাশ, নাগরিকপরিকাঠামো, রেল ও অসামরিক বিমান পরিবহণ, বিশুদ্ধ জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা,স্বাস্থ্য ও বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি এবং উদ্ভাবন ও বিজ্ঞান তথা প্রযুক্তি ক্ষেত্রেভবিষ্যৎ সহযোগিতার একটি রূপরেখা স্থির করব আমরা।
জার্মানিযুক্তরাষ্ট্রীয় সাধারণতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট মাননীয় ডঃ ফ্র্যাঙ্ক-ওয়াল্টারস্টেনমায়ারের সঙ্গেও এক সাক্ষাৎকারে আমি মিলিত হব।
বাণিজ্য,বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে জার্মানি হল আমাদের এক অন্যতম প্রধান অংশীদার।আমাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ককে আরও জোরদার করে তোলার লক্ষ্যে দু’দেশেরবাণিজ্যিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বার্লিনে এক আলোচনা-বৈঠকে মিলিত হব আমি এবংচ্যান্সেলর মার্কেল।
আমারএই সফর জার্মানির সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক নতুন অধ্যয়ের সূচনা করবেবলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। একইসঙ্গে, তা আরও গভীরে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে আমাদেরকৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে।
সরকারিভাবেআমি স্পেন সফর করব ৩০-৩১ মে, ২০১৭ তারিখে। প্রায় তিন দশক পরে এটিই হবে একজন ভারতীয়প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ঐ দেশ সফর।
এইসফরকালে আমি সাক্ষাৎকারে মিলিত হব মাননীয় রাজা চতুর্থ ফিলিপের সঙ্গে।
আগামী৩১ মে প্রেসিডেন্ট ম্যারিয়ানো রেজয়-এর সঙ্গে বৈঠকের জন্য আমি আগ্রহের সঙ্গেঅপেক্ষা করছি। বিশেষত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক কর্মপ্রচেষ্টা প্রসারের উপায়উদ্ভাবনের লক্ষ্যে এবং সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা সহ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের সাধারণউদ্বেগের বিষয়গুলিতে সহযোগিতাকে জোরদার করে তুলতে এক আলোচনা-বৈঠকে মিলিত হব আমরা।
দ্বিপাক্ষিকবাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ককে গভীরতর করে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে প্রচুর। পরিকাঠামো,স্মার্ট নগরী, ডিজিটাল অর্থনীতি, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি, প্রতিরক্ষা এবংপর্যটন সহ বিভিন্ন ভারতীয় প্রকল্পে স্পেনের শিল্প সংস্থাগুলির সক্রিয় অংশগ্রহণআমরা প্রত্যাশা করি।
স্পেনেরশিল্প সংস্থাগুলির শীর্ষ স্থানীয় কর্তা-ব্যক্তিদের সঙ্গেও আমি আলোচনায় মিলিত হব এবংআমাদের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচিতে অংশীদারিত্বের জন্য আমি তাঁদের উৎসাহিত করব।
আমারএই সফরসূচির পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হবে ভারত-স্পেন সিইও ফোরামের প্রথম বৈঠকটি। ভারত ওস্পেনের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে তোলার লক্ষ্যেতাদের মূল্যবান প্রস্তাব ও সুপারিশগুলির জন্য আমি অপেক্ষা করে রয়েছি।
অষ্টাদশভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ বৈঠক উপলক্ষে আগামী ৩১ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত আমি সফরকরব রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ।
২০১৬-রঅক্টোবর মাসে গোয়ায় অনুষ্ঠিত আমাদের শেষ শীর্ষ বৈঠকের আলোচনাকে আরও এগিয়ে নিয়েযাওয়ার লক্ষ্যে আগামী ১ জুন এক বিশদ আলোচনা-বৈঠকে মিলিত হব প্রেসিডেন্ট পুতিনেরসঙ্গে । আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে অর্থনৈতিকসম্পর্ক প্রসারের ওপর। দু’দেশের সিইও-দের সঙ্গেও আলোচনা ও মতবিনিময়ে মিলিত হব আমিএবং প্রেসিডেন্ট পুতিন।
পরেরদিন,প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আমি ভাষণ দেব সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিকফোরামে (এসপিআইইএফ)। এবছর এই মঞ্চটিতে সম্মানিত অতিথিরূপে উপস্থিত থাকার জন্যতাদের আমন্ত্রণকে আমি সাধুবাদ জানাই। এবছর এসপিআইইএফ-এ ভারত হল অতিথি রাষ্ট্র ।
এইধরনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এই প্রথমবার। সেখানে রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলেরপ্রশাসকদের সঙ্গে আমার আলোচনা ও মতবিনিময়ের সুযোগ ঘটবে। এর লক্ষ্য হল, আমাদেরদ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরও প্রসারিত করা এবং এই কাজে সেখানকার বিভিন্নপ্রদেশ/অঞ্চল এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীদারদের সক্রিয়ভাবে যুক্ত করা।
সফরেরশুরুতেই আমি পিসকারভ্সকয় সমাধি ক্ষেত্রে গিয়ে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাব তাঁদের উদ্দেশে,যাঁরা লেনিনগ্রাদ অবরোধের সময় তাঁদের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন। বিশ্ব বিখ্যাত স্টেটহার্মিটেজ মিউজিয়ামটিও আমি পরিদর্শন করব। ঘুরে দেখব দ্য ইনস্টিটিউট অফ ওরিয়েন্টালম্যানুস্ক্রিপ্টসও।
দু’দেশেরকূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এই বিশেষবছরটিতে সেন্ট পিটার্সবার্গ পরিদর্শনের জন্য আমি আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছি।
আমিফ্রান্স সফর করব ২-৩ জুন, ২০১৭ তারিখে। ঐ দেশ সফরকালে নবনির্বাচিত ফরাসীপ্রেসিডেন্ট মাননীয় মিঃ ইমানুয়েল ম্যাকঁরের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে আমি এক বৈঠকেমিলিত হব।
ফ্রান্সহল আমাদের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদারদের অন্যতম।
প্রেসিডেন্টম্যাকঁর-এর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়ে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার জন্যআমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার এবংসেখানে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টেরসঙ্গে মতবিনিময় ঘটবে আমার। এছাড়াও, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত বিভিন্নআন্তর্জাতিক মঞ্চের সদস্যপদে ভারতের অন্তর্ভুক্তি, সন্ত্রাস মোকাবিলার ক্ষেত্রেসহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় সমবেত কর্মপ্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক সৌরসমঝোতা ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রসারের প্রশ্নেও আমরা আলোচনায় মিলিত হব ।
ফ্রান্সহল আমাদের নবম বৃহত্তম বিনিয়োগ সহযোগী এবং প্রতিরক্ষা, মহাকাশ, পরমাণু ওপুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি, নগরোন্নয়ন এবং রেলের মতো ক্ষেত্রগুলিতে আমাদের উন্নয়নপ্রচেষ্টার এক বিশেষ অংশীদার। ফ্রান্সের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদেরঅংশীদারিত্বের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে এবং তাকে আরও শক্তিশালী করেতোলার লক্ষ্যে আমি অঙ্গীকারবদ্ধ।”